ব্লোর তাকে ডাক্তারের কথা বলে। দুজনে মিলে ডাক্তারের দরজায় আসে। টোকা দেয়, ডাকে। কোন সাড়া আসে না। এবারে দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে যায়। ঘরে কেউ নেই, ঘর ফাঁকা।
এবারে ওরা দুজন ভেরার দরজার সামনে আসে। ভেরা সাড়া দেয় কিন্তু দরজা খোলে না।
লমবার্ড বলে, আমিও ডাক্তারকে খুঁজতে যাচ্ছি। যদি ডাক্তার এসে ডাকে আপনি দরজা খুলবেন না। যদি আমি ও ব্লোর একসঙ্গে এসে ডাকি তাহলেই কেবল দরজা খুলবেন।
এরপরে সে ব্লোরকে বলে, চলো ডাক্তারের সন্ধান করা যাক।
ব্লোর বলে, কিন্তু একটা কথা ভাবছি–
–কি কথা?
–রিভলভারটা ডাক্তারের কাছে থাকা অসম্ভব নয়।
লমবার্ড বলে, না, ওটা আমার কাছে আছে। রাতে শুতে যাবার আগে ড্রয়ারেই পেয়েছি। অস্ত্রটা সে ব্লোরকে দেখায়।
ব্লোর কেমন থমকে যায়। কিন্তু মনে মনে বলে, না, ওই অস্ত্রকে আমি ভয় করি না। ভয় রহস্য আর গুপ্তঘাতককে।
.
ভেরার আর ঘুম আসে না। সে কিছুক্ষণ বিছানায় বসে থাকে। সে ভাবে তবে কি ডাক্তারই হত্যাকারী? লমবার্ড আর ব্লোর তাকে খুঁজতে গেছে। এই অবস্থায় তিনি কোন ছলনা করে দরজা খোলাবার চেষ্টা করতে পারেন। হয়তো বলবেন, ওরা দুজনেই মারা গেছে। কিংবা বাড়িতে আগুন লেগেছে?
ভেরা বিছানা থেকে নেমে দরজাটা একবার পরীক্ষা করল। তারপর জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। চোখে মুখে ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়া লাগে।
বুঝতে পারে, ভোর হতে বেশি দেরি নেই।
ভেরার দরজায় টোকা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে কথা ভেসে আসে আমি ব্লোর–আমি লমবার্ড।
দরজা খুলে ভেরা ওদের দুজনকে দেখতে পায়। পাজামা হাঁটু পর্যন্ত জলে ভেজা। দুজনকেই বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
ওরা হতাশভাবে জানায় ছোট্ট দ্বীপটা তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছে, কিন্তু ডাক্তারকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না।
ভেরা বলল, তিনি হয়তো বাড়ির ভেতরেই কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
ব্লোর বলল, কোথাও দেখতে বাদ দেইনি আমরা।
লমবার্ড বলে, আরও একটা খবর আছে—
কি?
–পুতুল মাত্র তিনটা আছে–মানে আমরা তিনজনই মাত্র বেঁচে আছি।
ভেরার মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়। অস্ফুট আর্তনাদের শব্দ করে সে।
.
১৫.
আজ আকাশ নির্মেঘ নীল। ঝকঝকে রোদ। গত কদিনের আবহাওয়ার সঙ্গে আজ কোন মিলই নেই।
ওরা তিনজন–ভেরা, লমবার্ড আর ব্লোর, সমুদ্রের ধারে বসে আছে। আজ, ওরা যেন খানিকটা হাল্কা, ভার মুক্ত বোধ করছে।
ডাক্তারের কথাই ভাবছিল তারা তিনজন।
লমবার্ড বলে, প্রতিমুহূর্তের মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন ডাক্তার। এভাবে বেঁচে থাকা মৃত্যুরও বাড়া।
ভেরা বলে, কিন্তু তিনি যে মারা গেছেন, এমন কোন প্রমাণ তো হাতে নেই।
–প্রমাণ সেই পুতুল। একটা উধাও।
–হ্যাঁ, অন্যদের ক্ষেত্রেও এরকমই হয়েছে। কিন্তু মৃতদেহটা উধাও হয়ে যাবে কেন?
–হয়তো হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল, ভাসতে ভাসতে দূরে চলে গেছে।
লমবার্ড কর্কশ গলায় বলল, কিন্তু তাকে হত্যা করল কে? তুমি না আমি? তুমি তো আমাকে ডাকলে–আমি তোমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। এর মধ্যে ডাক্তারকে হত্যা করার, সময় কখন পেলাম।
তাছাড়া সমুদ্রে ফেলে দিতে হলে তো কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য অনেক সময়ের দরকার।
ব্লোর বলে, ওসব হিসেব মিলবে না। আমি ভাবছি রিভলভারের কথা, ওটা সব সময় তোমার কাছেই ছিল।
–একদম বাজে কথা। আমাকে তো তোমরা তল্লাশি করেছিলে।
–তা করেছিলাম। তখন কোথাও হয়তো লুকিয়ে রেখেছিলে।
লমবার্ড উত্তেজিতভাবে বলে উঠল, না, না–আমি বলছি কাল রাতে ওটা ড্রয়ারের মধ্যেই আবার পেয়েছি।
–তোমার কথাই যদি মেনে নিই তাহলে ওটা কে ফেরত দিল, কখন, কিভাবে ফেরত দিল, তা নিশ্চয় তুমি জান না।
–না।
–এখন ওটা তোমার কাছেই আছে তো?
–হ্যাঁ।
–তাহলে কি দাঁড়াল? আমার আর মিস ভেরার জীবন মরণ তোমার দয়ার ওপর নির্ভর করছে। তবে–
–বলো, তবে কি?
–ওষুধগুলো যেখানে আছে রিভলভারটাও যদি সেখানে রেখে দাও আর দুটো চাবি একটা করে আমাদের দুজনের কাছে থাকে–তবে তোমার কথা বিশ্বাস হতে পারে।
–অসম্ভব।
–অসম্ভব কেন? ব্লোর তীক্ষ্ম চোখে তাকায় লমবার্ডের দিকে।
–তোমার কথার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আমিই তাহলে আওয়েন। যদি তাই হতাম তাহলে তো কাল রাতেই তোমাকে খতম করে দেবার সুযোগ ছিল।
এবারে ভেরা কথা বলে, মাথায় ঝুলছে মরণের খাঁড়া, আর আপনারা এখন ঝগড়া করছেন। ভাবুন কি করে আমরা বাঁচতে পারি।
ব্লোর আর লমবার্ড কথা বন্ধ করে ভেরার দিকে তাকায়।
ভেরা আবার বলে, আমার কি মনে হচ্ছে জানেন, ডাক্তার মারা যাননি, কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
.
ব্লোর হাত ঘড়ি দেখে বলল, বেলা দুটো বাজে, লাঞ্চের কি হবে?
ভেরা বলে, আমি আর ওই বাড়িতে যাচ্ছি না।
–কিন্তু কিছু খাওয়া তো দরকার।
লমবার্ড বলে, আমার এখন খাবার ইচ্ছা নেই। আমি এখানেই থাকব আপাতত।
ব্লোর ভেরার দিকে তাকিয়ে বলল কিন্তু–
ভেরা বুঝতে পারল ব্লোর কি বলতে চাইছে। সে বলল, আপনার অনুপস্থিতিতে লমবার্ড আমাকে গুলি করে মারবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
ব্লোর বলল, আমি তা বলতে চাইনি। কথা হয়েছিল, আমরা সব সময় একসঙ্গে থাকবো। আমি সেই কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম।
লমবার্ড বলল, বেশ চল আমি তোমার সঙ্গে যাচ্ছি।
-না, তুমি থাকো, আমি যাচ্ছি। এই বলে ব্লোর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।