ডাক্তার বললেন, হঠাৎ একথা কেন বলছেন–
ব্লোর বলল, ওঁর বেশি বেশি ধর্মের ভাবটা আমার ভালো লাগে না। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গ্রামাফোনের অভিযোগ শোনার পর আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব কথা খুলে জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনি কিছু বলেন নি।
ভেরা বলে, পরে উনি আমাকে সব কথা খুলে বলেছেন।
তাই বলে সে সকলকে বিয়াত্রিচে টেলরের কথা জানায়।
বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ বলেন, সব শোনার পর আর ওঁকে দোষারোপ করা যায় না। আচ্ছা ভেরা, তোমার কি মনে হয়েছিল, বিয়াত্রিচের মৃত্যুর জন্য মিস এমিলির মনে দুঃখ বা অনুতাপ ছিল?
-না।
ব্লোর ওয়ারগ্রেভকে বলে, ওই মহিলা সম্পর্কে কোন ব্যবস্থা নেবেন না? অসুস্থ দেখাচ্ছিল–
-ডাক্তারই যা ভাল বুঝবেন করবেন। চলুন, বরং খাওয়ার ঘরেই যাওয়া যাক।
সকলে খাওয়ার ঘরে আসে।
এমিলি এখনো চেয়ারে বসে আছেন। কারোর পায়ের শব্দ তিনি শুনতে পাননি।
ব্লোর এমিলির দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েই থমকে দাঁড়ায়। এ কী দেখছে সে?
এমিলির মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ঠোঁট নীল হয়ে গেছে। দেহ প্রাণহীন।
সবার আগে কথা বললেন ওয়ারগ্রেভ, ধরা গলায় বললেন, আমাদের সকল সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে মিস এমিলি চলে গেলেন।
ডাক্তার এমিলির দেহ ভাল করে পরীক্ষা করে দেখছেন। বললেন, ঘাড়ের কাছে কিসের একটা দাগ দেখা যাচ্ছে।
ভেরা ঝুঁকে পড়ে দেখে বলে, মনে হচ্ছে কোন পোকার কামড়ের দাগ।
ডাক্তার বললেন, না, না, পোকার কামড় নয়। ওটা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জের দাগ।
ওয়ারগ্রেভ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, কি বলছেন আপনি? ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জে করে ওকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে?
ডাক্তার বললেন, হ্যাঁ, তাই। কোনরকমের সায়ানাইডই হওয়া সম্ভব। একই পটাসিয়াম মার্সটনকে দেওয়া হয়েছিল। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছে। আমাদের ডাক্তারি নাম অ্যাসফিকসিয়েশন।
হঠাৎ জানলার কাছে একটা গুঞ্জন শব্দ।
জানালার কাছে একটা মৌমাছি দেখা গেল।
ভেরা সেদিকে তাকিয়ে বলে, মৌমাছি এই কাণ্ড ঘটায়নিতো?
ডাক্তার গম্ভীর স্বরে বললেন, মনে হচ্ছে ওটাকে হত্যাকারী কাজে লাগিয়েছে। সুচারু কাজ সন্দেহ নেই।
ভেরা হঠাৎ ডাক্তারকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা আপনি আসার সময় হাইপোডারমিকের সিরিঞ্জ সঙ্গে এনেছিলেন?
–হ্যাঁ। সব ডাক্তারের ব্যাগেই ওই সিরিঞ্জ থাকে।
সঙ্গে চারজোড়া চোখ ডাক্তারের দিকে ফেরে।
ওয়ারগ্রেভ বললেন, কিছু যদি মনে করেন, দয়া করে আপনার সিরিঞ্জটা বার করে দেখাবেন? নিশ্চয়ই সেটা আপনার ব্যাগেই রয়েছে এখনো?
-আমার হাতব্যাগেই রয়েছে। সেটা আছে আমার ঘরে সুটকেসের ভেতরে।
–আপনার কথার সত্যতা আমরা যাচাই করতে চাইলে নিশ্চয় আপনার আপত্তি হবে না?
–কোন আপত্তি নেই। তাহলে চলুন—
ডাক্তারের পেছন পেছন মিছিল করে সকলে ওপর তলায় তার ঘরে গিয়ে ঢোকে। তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল, কিন্তু সিরিঞ্জ কোথাও পাওয়া গেল না।
–নিশ্চই চুরি করেছে কেউ। আমি হলপ করে বলতে পারি। ডাক্তার কর্কশ গলায় বলেন।
ওয়ারগ্রেভ বললেন, আমরা পাঁচজন এই ঘরেই রয়েছি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, এর মধ্যেই একজন হত্যাকারী। নিরপরাধ চারজন এবারে তার লক্ষ্য।
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, আচ্ছা ডাক্তার, আপনার কাছে একটা ওষুধের বাক্স আছে?
-হ্যাঁ। এই তো। ডাক্তার বাক্সটা এগিয়ে ধরলেন।
-আমার হাতে কিছু ঘুমের ওষুধ আছে। ঘুম না এলে খেতে হয়। তবে বেশি খেলে অনিবার্য মৃত্যু। লমবার্ড, তোমার কাছে তো একটা রিভলভার রয়েছে–
লমবার্ড জানায়, হ্যাঁ, আছে, তাতে কি?
-আমি বলতে চাইছি, ডাক্তারের ওষুধের বাক্স, আমার ঘুমের বড়ি এবং রিভলভার–এই ধরণের জিনিস যার কাছে যা আছে, সব একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে দেওয়া উচিত।
লমবার্ড বলে, কিন্তু রিভলভার হাতছাড়া করলেই তো বিপদে পড়ে যাব।
-লমবার্ড, তুমি শক্তিমান যুবক। কিন্তু ব্লোরও যুবক, গায়েও তার যথেষ্ট শক্তি। আমি ডাক্তার ও ভেরা ওকে সাহায্য করলে তুমি বাধা দিয়ে পারবে না, বুঝতেই পারছ।
লমবার্ড অগত্যা বলে, বেশ, কী করতে হবে বলুন?
–এই তো মাথায় বুদ্ধি ফিরেছে। তোমার রিভলভারটা কোথায়?
আমার ঘরে, খাটের পাশের টেবিলের ড্রয়ারে।
–বেশ। চল আমরা সকলে যাচ্ছি।
লমবার্ড দ্বিমত করল না। সকলে মিলে তার ঘরে হাজির হল। কিন্তু বিস্ময় সেখানেও অপেক্ষা করছিল। দেখা গেল যথাস্থানে রিভলভার নেই।
.
–এ তো দেখছি ভেল্কি। লমবার্ড হতবাক হয়ে যায়।
ওয়ারগ্রেভ বলেন, ভেরা তুমি একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়াও।
ভেরা বাইরে চলে গেলে লমবার্ডের শরীর তল্লাশি করা হলো। তারপর বাকি তিনজনও বাদ গেল না। কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই কারোর কাছে পাওয়া গেল না।
এরপর ওয়ারগ্রেভ ভেরাকে ডাকলেন। সে এলে বললেন, তুমি কিছু মনে করো না। এই সময়ে আমি নিরুপায়। তোমার কাছে সাঁতারের পোশাক আছে?
-হ্যাঁ। –
-তাহলে, এই পোশাক বদলে তা পরে এসো।
ভেরা চলে যায়। একটু পরেই সাঁতারের পোশাক পরে ফিরে আসে।
ওয়ারগ্রেভ তাকে বললেন, তুমি এখানে একটু দাঁড়াও, আমরা তোমার একটু পরীক্ষা করব।
ভেরার ঘরে কিছু পাওয়া গেল না। সকলে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ভেরাও পোশাক পাল্টে সকলের সঙ্গে এসে যোগ দিল।
আবার সকলে বসার ঘরে।
ওয়ারগ্রেভ সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল যে আমাদের কারোর কাছেই জীবন হানিকর কিছু নেই। এখন এই ওষুধগুলো নিচের খাবার ঘরে বাসন রাখার সিন্দুকে রেখে দিতে হবে।