–এরপর তুমি কি করলে?
বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। লাঞ্চের সময় হয়নি বলে পেছনের বাগানে একটু ঘুরেছিলাম।
ওয়ারগ্রেভ বললেন, রজার্সের সাক্ষ্যই বাকি রইল। তবে তা শুনে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।
যথারীতি রজার্সেরও সাক্ষ্য নেওয়া হল। সে জানাল, সে সকাল থেকে রান্নার কাজেই ব্যস্ত ছিল। জেনারেলের ব্যাপারে কিছু জানে না। সবার শেষে বলল, তবে তখন আমি পুতুল আটটাই দেখেছিলাম।
লমবার্ড বলাল, মিঃ ওয়ারগ্রেভ এবারে আপনার শুনানি বলুন।
ওয়ারগ্রেভ এজলাসে রায় ঘোষণার মত করে বললেন, এতক্ষণ তিনজন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম।
কিন্তু কারোর ওপর সন্দেহ করা হয়নি। যদিও আমরা কেউই সন্দেহমুক্ত নই। শয়তান আমাদের মধ্যেই রয়েছে।
আমার এটাই পরামর্শ, যেভাবেই হোক উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে। তবে অপরাধী এখন থেকে যথেষ্ট সাবধান হয়ে যাবে। কোন রকম ঝুঁকি নেওয়া কারোরই উচিত হবে না।
লমবার্ড বলল, তাহলে আলোচনা আজকের মত এখানেই শেষ হল।
.
১০.
নির্জন ঘরে লমবার্ড আর ভেরা কথা বলছে। বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। শার্সি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভেরা এক সময় জিজ্ঞেস করল, বিচারপতি যা বললেন, তা আপনি বিশ্বাস করেন?
–ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
–আমি বিশ্বাস করি না ওসব কথা।
–সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে। একটা ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মত লাগছে। এর শেষ হলে বাঁচি।
-আমিও সেকথাই ভাবছি।
–তবে সতর্ক আমাদের সকলকেই থাকতে হবে; নইলেই বিপদ।
–ওকথা বললে তো আমাকেও ওদের দলে ফেলা হয়। কিন্তু আমি হত্যাকারী নই।
লমবার্ড মুগ্ধ দৃষ্টিতে ভেরার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি মিস। আপনার সততা সম্পর্কে আমার কোন প্রশ্ন নেই।
–ধন্যবাদ। ভেরা নতমুখে বলল, তবে গ্রামাফোনে আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ জানানো হয়েছে, আমার ধারণা, আপনি তা থেকে মুক্ত নন।
লমবার্ড স্মিত হেসে বলল, আপনার অনুমান যথার্থ। দেখুন, আমি বাস্তব মেনে চলা পছন্দ করি। প্রয়োজন হলে কাউকে হত্যা করতেও অরাজি হব না। তবে এরকম হত্যা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।
একটু থেমে লমবার্ড আবার বলল, আমাদের বাকি পাঁচজনের মধ্যে কাকে আপনার সন্দেহ হয়? আমি কিন্তু ওয়ারগ্রেভকে সন্দেহ করি।
–সে কী, কেন?
-বৃদ্ধ জীবনে অনেক কিছু দেখেছে। একদিন বিচারকের আসনে বসে বিচারও করেছে। সেই অভ্যাস এখনো হয়তো ছাড়তে পারেনি। এখন চাইছে স্বয়ং ভগবানের ভূমিকা নিতে।
ভেরা বলল, আশ্চর্য কিছু নয়। তবে আমার দৃষ্টি কিন্তু ডাক্তারের ওপর।
–কেন? ওঁকে আমার কখনোই সন্দেহজনক মনে হয়নি।
-দেখুন, প্রথম দুটো মৃত্যুর কারণ ছিল বিষ। ডাক্তারের পক্ষেই সেই বিষ সংগ্রহ করা সবচেয়ে সহজ। রজার্সের বউকে অবশ্য ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল।
-হ্যাঁ, মিথ্যে বলেননি। তবে জেনারেলের মৃত্যুর ব্যাপারে তাকে আপনি জড়াতে পারবেন না। কেন না উনি সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। আমি অবশ্য একটু সময়ের জন্য অন্যত্র গিয়েছিলাম। ওই সময়ে তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
তখন আপনাদের সঙ্গে থাকলেও পরে তো সুযোগ ছিল।
–কি রকম?
লাঞ্চের সময় অনুপস্থিত থাকায় ডাক্তারই তাকে ডাকতে গেছিলেন। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই।
–হ্যাঁ।
–তারপর দেখুন, মৃতদেহ পরীক্ষা করে তিনি বললেন এক ঘন্টা আগে মারা গেছে। ডাক্তারই এই কাজ করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিবাদ করবে কে?
–আপনার কথায় যুক্তি আছে স্বীকার করছি, তবে …
.
–আমাদের মধ্যে একজন অপরাধী, বিচারপতি বলেছেন, তাহলে সেই লোকটি কে? ব্লোরকে জিজ্ঞেস করল রজার্স।
-ওটা অনুমানের কথা।
–হ্যাঁ। নিশ্চিত হবার তো কোন উপায় নেই তবে অপরাধী যেই হোক, যেমন বুদ্ধিমান তেমনি নিষ্ঠুর। পর পর খুনগুলো ঠান্ডা মাথায় করে চলেছে।
-আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বড্ড ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।
.
বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। তার দৃষ্টি দূরে। চশমাটা বাঁ হাতে ধরা, নাড়াচাড়া করছেন।
ডাক্তার আরমস্ট্রং সেদিকে তাকিয়ে বললেন, যে ভাবেই হোক আমাদের এখান থেকে চলে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিচারপতি বললেন, আবহাওয়ার যা অবস্থা দেখছি, তাতে আগামী চব্বিশঘন্টার মধ্যে জলঝড় থামবে বলে মনে হচ্ছে না।
আকাশ পরিষ্কার না হলে, বোটের আসারও সম্ভাবনা নেই।
তার মধ্যে হয়তো আমরাও শেষ হয়ে যাব।
বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ জানালার কাছ থেকে সরে এসে বললেন, তা যাতে হতে না হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।
ডাক্তার এবারে অন্তরঙ্গ সুরে বললেন, আচ্ছা, কার দ্বারা এসব কাজ সম্ভব হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
–আদালতে যেমন কিছু প্রমাণ করবার জন্য তথ্যের প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রেও তাই। এখনো তেমন কিছু সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে এটা বুঝতে পারছি সব ঘটনার মূলে একজন রয়েছে।
ডাক্তার খানিকটা অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।
এমিলির মন অশান্ত হয়ে আছে। তিনি একটা বাইবেল পড়বার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু মন বসাতে পারছিলেন না।
শেষে বাইবেল রেখে ড্রয়ার খুলে ডায়েরিটা বার করে আনলেন।
কলম তুলে নিয়ে ডায়েরীর পাতায় লিখতে শুরু করলেন–
জেনারেল ডগলাস মারা গেলেন। তাকেও হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে আজ লাঞ্চের পরে বিচারপতি চমৎকার বক্তৃতা দেন। তার ধারণা আমাদের মধ্যেই কেউ আত্মগোপন করে রয়েছে, যে একের পর এক এমন কাণ্ড করে চলেছে। আমি আগেই বলেছিলাম, কোন একজনের কাঁধে শয়তান ভর করেছে…