অন্য প্রান্ত ডাক্তার ও ব্লোরকে দিয়ে বলল, শক্ত করে ধরতে হবে। আমি যাচ্ছি। বলেই সে উঁচু পাড় বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগল।
ব্লোর নিচু গলায় ডাক্তারকে বলল, কিছু মনে করবেন না, আমার কেবলই একটা কথা মনে হচ্ছে–
–আমি লমবার্ডকে একদম বিশ্বাস করতে পারছি না।
–বুঝতে পারছি। কিন্তু মানুষটা একটু অন্যরকম তাই অমন মনে হচ্ছে। খুবই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ।
-হ্যাঁ, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, সেই কারণেই সবসময় সঙ্গে রিভলভার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
–ওটা একরকমের বাতিক।
–না, না, ডাক্তার। আপনি বা আমি তো এরকম করি না। বাতিক তো কতরকমেরই মানুষের হতে পারে। সব ছেড়েছুঁড়ে এরকম বাতিক হবে কেন? তাছাড়া–
–কি তাছাড়া?
–তাছাড়া, দেখুন, এখানে তো আমরা সকলেই বেড়াতে এসেছি। কিন্তু কেউ তো স্লিপিং, ব্যাগ, ছারপোকা মারার পাউডার, জলের বোতল, ফাস্ট-এড বক্স এসব সঙ্গে করে নিয়ে আসিনি। অথচ আমি দেখেছি এই সমস্ত কিছুই ওর ব্যাগে রয়েছে।
ডাক্তার কোন কথা বলেন না, ব্লোরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
ব্লোর ফের বলে, না, না, ডাক্তার, আমরা ছায়ার পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কেউ কোথাও নেই। যদি থেকে থাকে, আমাদের মধ্যেই রয়েছে।
.
প্রাসাদের মত বাড়িটাও তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখা হল। কিন্তু কাউকে কোথাও পাওয়া গেল না। একতলা দেখা হলে দোতলা দেখা হল।
ছাদের দক্ষিণ দিকে তেতলার ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ব্লোর বলল, একবার ওপরটা দেখা দরকার।
ঠিক সেই সময়েই ওপাশের ঘরে থেকে একটা শব্দ পাওয়া গেল। রজার্সের স্ত্রীর মৃতদেহ ওখানে রয়েছে।
শব্দটা লক্ষ্য করে ব্লোর পা টিপে টিপে ঘরটার দিকে এগিয়ে চলল। অন্যরা তাকে অনুসরণ করে চলল।
দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ করে টান মেরে কপাট দুটো হাট করে খুলে ফেলল। সকলে অবাক হয়ে দেখল, কতগুলো জামাকাপড় হাতে করে রজার্স দাঁড়িয়ে আছে।
.
ব্লোর বলল, ওহে রজার্স, কিছু মনে করো না। কি রকম একটা শব্দ হল তাই–
রজার্স বলল, মনে করবার কিছু নেই। আমি আর এঘরে থাকতে পারছি না। তাই দু-চারটে জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছি, ভাবছি ওপাশের ছোট ঘরটায় থাকব।
–ডাক্তার বললেন, হ্যাঁ, তাই ভালো।
ঘরের ভেতরে খাটের ওপরে রজার্সের স্ত্রীর মৃতদেহ সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। সেদিকে কেউই তাকিয়ে দেখল না।
ওখান থেকে সরে এসে তিনতলার ছাদটা দেখা হল। জলের ট্যাঙ্কের নিচে, ভেতরে কিছুই বাদ গেল না।
খোঁজার পালা শেষ হলে ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে সকলে একটা সত্য নতুন করে উপলব্ধি করল। দশজনের মধ্যে তারা আটজন জীবিত, দুজন মৃত।
এই কজন ছাড়া আর কোনো লোক বাড়িতে বা দ্বীপের কোথাও নেই।
.
০৯.
একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল তারা। নীরবতা ভঙ্গ করল লমবার্ড। বলল, মনে হচ্ছে, আমরা সবাই ভুলই করেছি।
আমরা ছাড়া অন্য লোক এখানে নেই। যে দুটো মৃত্যু এখানে পর পর ঘটল, এগুলোর মধ্যে কোন রহস্য নেই।
ডাক্তার প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, না, একথা আমি মেনে নিতে পারি না। একজন ডাক্তার হিসাবে আত্মহত্যার কেস আমি কিছু কম দেখিনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মার্সটন আত্মহত্যা করার মত মানুষ ছিল না–অসম্ভব।
ব্লোর বলল, ওটা নিশ্চয়ই একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু রজার্সের স্ত্রীর ঘটনাটাকে কিছুতেই দুর্ঘটনা। বলা চলে না।
একটুক্ষণ থেমে পরে পুনরায় বলল, একটা কথা বলব ডাঃ আরমস্ট্রং?
স্বচ্ছন্দে।
–গতকাল রাতে রজার্সের স্ত্রীকে আপনি কিছু খেতে দিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, একটা ঘুমের ওষুধ।
–মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে যাওয়া কিন্তু অসম্ভব নয়।
ডাক্তার প্রতিবাদ করে বললেন, একথার কোন অর্থ হয় না। ডাক্তারদের এরকম ভুল হয় না, হলে চলে না।
ব্লোর বলল, কিন্তু গ্রামাফোনের কথাটা আমরা অবিশ্বাস করতে পারছি না। সেখানে আপনার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছিল।
শেষ দিকে ব্লোরের কথার সুর এবং চোখের দৃষ্টির কোন পরিবর্তন ঘটেছিল কি?
লমবার্ড সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, এভাবে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবার কোন মানে হয় না। বিপদ থেকে কি করে উদ্ধার পাওয়া যায় এখন আমাদের সেকথাই ভাবা উচিত। তা না করে তুমি এখন গ্রামাফোনের কথা তুলছ। তালিকায় তো তুমিও বাদ ছিলে না।
–ওসব ডাহা মিথ্যে। আমি গ্রাহ্য করছি না। কিন্তু ওসব বলে তুমি আমাকে চুপ করিয়ে দিতে পারবে না। তোমার সম্পর্কেও আমি জানতে চাই। ব্লোর বলল দৃঢ় স্বরে।
লমবার্ড বলল, আমার কথা বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। তবু বলছি, এখানে কোনরকম বিপদ হতে পারে এই কথা ভেবেই ওটা সঙ্গে এনেছি। তবে, সকলকে জানাবার জন্য আরো একটু বলা দরকার যে আমার এখানে আসাটা একটু অন্যরকম। অন্য সকলেই এসেছেন নিমন্ত্রণের চিঠি পেয়ে।
মরিস নামে একটা লোক আমাকে বলেছিল, এখানে এলে আমি একটা কাজ পেতে পারি। কাজটা সাহসের। আমি রাজি হয়ে যেতে, সে আমাকে কিছু টাকাও দেয়।
লমবার্ড ব্লোরের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার সম্পর্কে কিছু বলার আছে?
ব্লোর হেসে বলে, না, নেই।
ডাক্তার জানতে চাইলেন, মরিস তোমায় আর কিছু বলেছিল?
–না, আর কিছু বলেনি। আমিও পীড়াপীড়ি করিনি। আমার টাকার দরকার ছিল, তাই কথা না বাড়িয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
ব্লোর বলল, গতকাল রাতে তাহলে একথাটা তুমি চেপে গেলে কেন?
–চেপে যেতে চাইনি। এরকম একটা পরিস্থিতির যে উদ্ভব হবে আমি তা ভাবতেই পারিনি।