দুর্যোগের রাত তো নয় যেন একটা দুঃস্বপ্নের রাত, শেষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা। সবার মুখে হাসি ফুটেছে, নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে সবাই। আশার ছলনায় কি ফল লভিনু। আশার ফল যে আশানুরুপ হয় না, তা জানা সত্ত্বেও ওঁরা ভাবেন আশা থাকে বলেই তো মানুষ আজও বেঁচে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আর এই আশাটা না থাকলে কবেই মানুষ পাগল হয়ে যেতো। এ দ্বীপ ছেড়ে পালাবার আশা নিয়েই তো বেঁচে আছি আজও। এখানে কেই বা মরতে চান বলুন।
এবার আমাকেও উঠে পড়ে লাগতে হবে। লম্বার্ড বলে সূর্যের আলোয় হিলিওগ্রাফে সংকেত পাঠাবার চেষ্টা করবো প্রথমে। তাতে সফল না হলে আজ সন্ধ্যায় আগুন জ্বেলে স্টিকলহ্যাভেনের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবো।
আপনার দুটো পন্থাই যথেষ্ট আশাপ্রদ বলে মনে হচ্ছে আমার, তাকে সমর্থন করে বললো ভেরা, মানুষের নজর পড়তে বাধ্য।
তবে অসুবিধেও যে একেবারে নেই তা নয়। লম্বার্ড আরো বললো সমুদ্র এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, আর একটা রাত কাটাতে হবে এই ভুতুড়ে দ্বীপে।
সবে তো সকাল, রাত নামতে অনেক দেরী মিস ক্লেথর্ন। দেখুন দিনেই না আমরা সাবাড় হয়ে যাই। তাই বলি কি, রাতের ভাবনা রাতেই করা যাবেক্ষণ।
ডঃ আর্মস্ট্রং এর ব্যাপারে আমরা কিছুই ভাবছি না। বাধা দিয়ে বলেছেন ব্লোর তার কি হলো বলুন তো?
যা হবার হয়েছে। তিনি মারা গেছেন। প্রত্যুত্তরে লম্বার্ড বলে কেন খাবার ঘরে মাত্র তিনটে পুতুল অবশিষ্ট থাকতে দেখেন নি। তার মানে, আপনি, আমি আর মিস্ ক্লেথর্ন–
বেশ তো মারাই যদি গিয়ে থাকে, তার মৃতহেটা তাহলে গেলোই বা কোথায়? একটা ভাল প্রশ্ন করলো ভেরা।
উত্তরটা দিলেন ব্লোর সম্ভবত, মৃতদেহটা খুনী সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে–
রাখুন তো মশাই আপনার সব কাল্পনিক গল্প। ধমকে উঠলো লম্বার্ড কে, কে ফেলতে পারে? আপনি। নাকি আমি? প্ৰথম খবরটা তো আপনিই দিলেন ডঃ আর্মস্ট্রং তাঁর ঘরে নেই। প্রাসাদের প্রধান ফটক পেরিয়ে তাকে আপনিই বাইরে চলে যেতে দেখেছেন। তারপর ছুটে এসে আমাকে ডাকলেন। আপনার কথা মতো দুজনে মিলে সারাটা নিগার দ্বীপে খুঁজে দেখলাম, কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া গেলো না। এখন আপনিই বলুন, এই অল্প সময়ে তাকে হত্যা করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া কি আমার পক্ষে সম্ভব?
অতএব আমি জানি না বাপু, তবে আপনার কাছে পিস্তল আছে বলেই সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক।
কি যে বলেন মশাই? আপনাকে বলিনি পিস্তলটা আমি ফিরে পাই রাতে শোবার সময়। তা এর মধ্যে আপনি সন্দেহের কি এমন কারণ দেখতে পেলেন?
রাতে শুতে যাবার সময় পিস্তলটা ফিরে পাওয়ার গল্পটা বানানোও তো হতে পারে। আমি যদি বলি পিস্তলটা আগাগোড়াই আপনার কাছে ছিলো? তল্লাশীর ভয়ে কোথায় লুকিয়ে রেখে থাকবেন, রাতে শোবার সময় সেটা আবার বার করে রেখেছেন।
চঞ্চল হলো লম্বার্ড, জোরে জোরে মাথা দুলিয়ে বললো, আপনি নেহাতই একটা গবেট?
তার মানে আপনার বানানো গল্পটা আপনি আমাকে জোর করে বিশ্বাস করাতে চাইছেন? আরে মশাই, বানানো গল্প আরো একটু বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়, তা না হলে বাজারে চালানো যায় না।
ঠিক আছে, এখন কাজের কথায় আসা যাক। জোর দিয়ে বললেন ব্লোর আমার সাফ কথা হলো, আপনার কাছে পিস্তলটা থাকা মানেই আমাদের দুজনকে আপনার আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে বাধ্য করা। সেট আমার চাই না। আগেকার ব্যবস্থা মতো পিস্তলটা আপনি সেই বাক্সে রেখে দিন। তারপর বাক্সটা আলমারিতে রেখে চাবি যেমন দুজনের কাছে থাকার কথা থাকবে।
বোকার মতো কথা বলবেন না
অর্থাৎ এ প্রস্তাব আপনি মানতে রাজী নন, এই তো?
হ্যাঁ, মানেটা তো তাই দাঁড়ায়। পিস্তল আমি কিছুতেই হাতছাড়া করবো না।
তা হলে আপনার সম্পর্কে অন্য রকম ধারণা করে নিতে হয়।
কি ধারণা শুনি? আমি মিঃ ওয়েন এই তো। আপনি তো একজন গোয়েন্দা, আপনাকে খুন করার মতলব যদি আমার থাকতো, তাহলে কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত আপনাকে বহুবার একলা পেয়েছি, ইচ্ছে করলে অনায়াসে তখন কাজটা সেরে ফেলতে পারতাম, কিন্তু কেন পারিনি জানেন?
সে আপনিই জানেন, আপনার ব্যাপার, হয়তো কোনো কারণ থাকতে পারে, যার জন্য আপনি
বোকার মতো আপনারা দুজনে কি ঝগড়া করতে শুরু করে দিয়েছেন, এবার ভেরা চুপ করে থাকতে পারলো না, থামবেন আপনারা।
থামতে যাবো কেন? ভেরার দিকে তাকিয়ে বললো লম্বার্ড। আর বোকামিই বা বলছেন কেন?
কি আশ্চর্য। এটা বোকামো নয়? মিঃ ব্লোরের প্রশ্নের উত্তরটা আপনি জানেন না? সে তো সেই কবিতাটার মধ্যেই আছে। সেই যে চারটি কালো মানিক সাগর জলে নাচে ধিন ধিন্ একটি গেলো সিন্ধুপাখীর পেটে ফিরলো বাকী তিন। কিন্তু এখানে সেই কবিতাটির একটি ব্যতিক্রম আছে বলে আমার ধারণা, অর্থাৎ আর্মস্ট্রং সিন্ধু পাখীর পেটে যায় নি? বেঁচে আছে। মনে হয় এই দ্বীপেরই কোথাও লুকিয়ে আছে সে। যদি বলেন, সেই পুতুলটাই বা গেলো কোথায়? তার উত্তরও আমার জানা হয়ে গেছে, আমাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য এই প্রাসাদ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় একটা পুতুল সে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে থাকবে।
গভীর ভাবে চিন্তা করার পর মাথা নেড়ে তার দিকে তাকালো লম্বার্ড, হ্যাঁ, মনে হচ্ছে। তুমিই ঠিকই বলেছে, তোমার যুক্তিটাই ঠিক। তুমি একজন জিনিয়াস ভেরা–