“ভেবে দেখুন, আউটার প্রভিন্সগুলো স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরেও কি এম্পায়ার সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে? আজকের বর্বর গ্যালাক্সিতে স্যিউয়েনা যদি একটা শক্তিশালী নেভির সহায়তা না পায় তা হলে কি বিচ্ছিন্ন বারবারিয়ান ওয়ার্ল্ড হিসেবে টিকতে পারবে?”
“এতটাই খারাপ-এত তাড়াতাড়ি?” ফিসফিস করে বললেন স্যিউয়েনিয়ান।
“না,” স্বীকার করলেন রিয়োজ। “কোনো সন্দেহ নেই আমরা যতদিন বাঁচব ততদিন নিরাপদেই থাকব। কিন্তু আমি লড়াই করছি এম্পায়ারের জন্য; এবং একটা সামরিক ঐতিহ্যের জন্য যার প্রতি আমি নিবেদিত।”
“আপনি কেমন রহস্যময় আচরণ করছেন, আর অন্য ব্যক্তির রহস্যময়তা ভেদ করা আমার জন্য সবসময়ই কঠিন।”
“কোনো ব্যাপার না। ফাউণ্ডেশন-এর ক্রমবর্ধমান হুমকি আপনি বুঝতে পারছেন?”
“আপনি যেটাকে বিপদ বলছেন সেটা আমিই সর্বপ্রথম আপনাকে দেখিয়ে দিই।”
“তা হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। অন্য কেউ শোনার আগেই আপনি ফাউণ্ডেশন-এর কথা শুনেছেন। এম্পায়ারের অন্য যে কারো থেকে এদের ব্যাপারে আপনি সবচেয়ে বেশি জানেন। সম্ভবত বলতে পারবেন কীভাবে ওদেরকে আক্রমণ করা যায়; এবং ওরা কীরকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে সে ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিতে পারেন। আসুন আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করি।”
ডুসেম বার উঠে দাঁড়ালেন। হালকা গলায় বললেন, “আমার সাহায্য অর্থহীন। বরং আপনি কী চান সেটা বলুন।”
“অর্থহীন কিনা তার বিচার করব আমি।”
“না, আমি সত্যিই সিরিয়াস। এম্পায়ারের সমস্ত শক্তি দিয়েও এই ক্ষুদ্র বিশ্বকে দমন করা যাবে না।”
“কেন পারব না?” বেল রিয়োজের চোখে রাগের ঝলক। “না, ওখানেই দাঁড়ান। যাওয়ার সময় হলে আমি বলব। কেন পারব না? যদি ভেবে থাকেন এই শত্রুকে আমি খাটো করে দেখছি তা হলে ভুল করবেন, প্যাট্রিশিয়ান।” নিশ্বাস না ফেলেই কথা বলছেন তিনি। “ফেরার পথে আমি একটা মহাকাশযান হারিয়েছি। ফাউণ্ডেশন এর হাতে পড়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই; আবার দুর্ঘটনায় পড়লে আমি যে পথে আসা-যাওয়া করেছি তার আশপাশে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যেত। ক্ষতি খুব সামান্য হলেও এর মাধ্যমে ফাউণ্ডেশন তার মনোভাব প্রকাশ করেছে। তাদের শক্তি সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই নেই। আপনি কি মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমার উপকার করতে পারেন? ওদের সামরিক শক্তি কী পরিমাণ?”
“আমার কোনো ধারণাই নেই।”
“তা হলে কেন বললেন যে এই সামান্য শত্রুকে আমরা পরাজিত করতে পারব না?”
আবার বসলেন স্যিউয়েনিয়ান, রিয়োজের স্থির দৃষ্টির সামনে থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলেন। গম্ভীর সুরে বললেন, “কারণ সাইকোহিস্টোরির মূল নীতির উপর আমার বিশ্বাস আছে। এটা অদ্ভুত একটা বিজ্ঞান। হ্যাঁরী সেলডনের হাতে এর গাণিতিক পরিপূর্ণতা অর্জিত হয় এবং তার সাথেই শেষ হয়। কারণ হ্যারি সেলডনের মৃত্যুর পর আর কেউই এটাকে সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণে এটাই সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার। একজন মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ না করে এটা দলবদ্ধ মানুষের আচরণ বিশ্লেষণের গাণিতিক সূত্র তৈরি করেছে।”
“তো-”
“সেলডন এবং তার সহকারীরা সাইকোহিস্টোরির সাহায্যে ফাউণ্ডেশন তৈরি করেন। সেকেণ্ড গ্যালাকটিক এম্পায়ার গড়ে তোলার জন্য, সময়, শর্তসমূহ সবই গাণিতিক ভাবে নির্বাচন করা হয়।”
“বিরক্ত সুরে বললেন রিয়োজ, “অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন আমি ফাউণ্ডেশন আক্রমণ করব এবং পরাজিত হব এবং এরকম এরকম কারণে এমন একটা যুদ্ধ হবে। আপনার ধারণা আমি একটা রোবট যে শুধু পূর্ব নির্ধারিত ধ্বংসের পথ অনুসরণ করছে।”
“না,” তীব্র গলায় বললেন বৃদ্ধ প্যাট্রিশিয়ান। “আগেই বলেছি এই বিজ্ঞান একজন মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে না। আরো বিশাল পরিব্যাপ্তির ভবিষ্যদ্বাণী করে।”
“তা হলে আমরা গডেস অব হিস্টোরিক্যাল নেসেসিটির শক্ত হাতে বন্দি।”
“সাইকোহিস্টোরিক্যাল নেসেসিটি, নরম গলায় শুদ্ধ করে দিলেন বার।
“আর যদি আমি আমার বিশেষ স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করি। সামনের বছর আক্রমণ করি বা মোটেই আক্রমণ না করি? এই গডেস কতখানি প্রভাবিত হবে? কতখানি সহযোগিতা করবে।”
কাঁধ নাড়লেন বার। “এখনই আক্রমণ করেন বা মোটেই না করেন; একটা মহাকাশযান দিয়ে অথবা এম্পায়ারের পুরো শক্তি দিয়ে আক্রমণ করেন; সামনাসামনি লড়াই অথবা গেরিলা যুদ্ধ; যা ইচ্ছা হয় করেন। তারপরেও আপনি পরাজিত হবেন।”
“কারণ হ্যারি সেলডনের অদৃশ্য হাত?”
“কারণ মানবীয় আচরণিক গণিতের অদৃশ্য হাত যা কখনো থামানো যায় না, গতি পরিবর্তন করা যায়, দেরি করানো যায় না।”
হিমশীতল দৃষ্টিতে দুজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর এক পা পিছিয়ে গেলেন জেনারেল।
স্বাভাবিক গলায় বললেন, “আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। একটা অদৃশ্য হাতের বিরুদ্ধে একটা জীবিত ইচ্ছার প্রতিযোগিতা।”
*
ক্লীয়ন, দ্বিতীয়….তাকে বলা হয় “দ্য গ্রেট।” ফার্স্ট এম্পায়ারের সর্বশেষ শক্তিশালী সম্রাট। তার দীর্ঘ শাসনামলে রাজনৈতিক এবং শিল্পকলার ক্ষেত্রে যে পুনর্জাগরণ সুচিত হয় সেজন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। আবার বেল রিয়োজের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণেও তিনি বেশ আলোচিত, এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি শুধুই ছিলেন “রিয়োজের সম্রাট।” এটা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের শাসনের সুফলকে ঢেকে দেওয়ার জন্য তার রাজত্বের শেষ বয়সের ঘটনাগুলো…