- বইয়ের নামঃ রক্তচক্ষু
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার
রক্তচক্ষু
এক
পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডে আরেকটি ব্যস্ত দিন। ট্রাক থেকে মাল নামাচ্ছে তিন গোয়েন্দা। ছোট অফিসের বাইরে একটা লোহার চেয়ারে বসে তাদের কাজ দেখছেন মেরি চাচী।
কিশোর, ডেকে বললেন তিনি, মূর্তিগুলো ওই টেবিলটায় রাখিস। দেখিস, ভাঙে না যেন। ভালই কাটতি হবে ওগুলোর, মনে হচ্ছে।
একসঙ্গে অনেক পুরানো মাল নিলামে কিনেছেন রাশেদ পাশা, এক ট্রাক রেখে গেছেন, আরও আনতে গেছেন বোরিস আর রোভারকে নিয়ে।
পুরু করে ক্যানভাস বিছিয়ে তার ওপর যত্ন করে সারি দিয়ে রাখা হয়েছে মূর্তিগুলো। আবক্ষ মূর্তি, শুধু বুক থেকে ওপরের অংশটুকু।
ট্রাকে উঠে মূর্তিগুলো দেখছে তিন গোয়েন্দা। অবাক হয়ে ভাবছে, এগুলো কার দরকার? কে কিনতে আসবে? নিয়ে গিয়ে করবেটা কী? মোটা তেরোটা মূর্তি, বহুদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থেকে রঙ চটে গেছে, ধুলো জমেছে পুরু হয়ে।
চারকোনা বনিয়াদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মূর্তিগুলো, প্রতিটির আলাদা আলাদা নাম খোদাই করা রয়েছে: জুলিয়াস সিজার, অকটেভিয়ান, দান্তে, হোমার, ফ্রানসিস বেকন, শেকসপিয়ার, জোরে জোরে পড়ল কিশোর। সব দেখছি বিখ্যাত লোক।
অগাস্টাস অভ পোল্যাণ্ড, রবিন পড়ল। অচেনা। কখনও শুনিনি।
লুথার, বিসমার্ক, আঙুল তুলে দুটো মূর্তি দেখাল মুসা। এসব। নামও শুনিনি।
কিন্তু থিওডর রুজভেল্ট-এর নাম তো শুনেছ, কিশোর বলল। কিংবা ওয়াশিংটন, ফ্র্যাঙ্কলিন আর লিঙ্কন?
নিশ্চয়, মুসা বলল। এসো, ওয়াশিংটনকে দিয়েই শুরু করি। নিচু হয়ে জর্জ ওয়াশিংটনকে তুলে নিল। আউফ! কী ভারি।
মুসা, সাবধান! ডেকে বললেন মেরি চাচী। পায়ের ওপর ফেলো না, দেখো!
আমি নিচে নামছি, তারপর দিও, লাফিয়ে ট্রাক থেকে নামল কিশোর।
দুহাতে মূর্তিটা জাপটে ধরে হাঁটু গেড়ে বসল মুসা। সাবধানে নামিয়ে দিল কিশোরের ছড়ানো বাহুতে। টলে উঠল কিশোর, বাঁকা হয়ে গেল পেছন দিকে। কোনমতে বয়ে এনে টেবিলে ফেলল আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্টকে। কপালের ঘাম মুছল।
চাচী, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল কিশোর, আমরা পারব না। একটা ফেলে দিলে যাবে পঞ্চাশ ডলার। তার চেয়ে বোরিস আর রোভার আসুক।
ঠিক, মাথা ঝোঁকালেন মেরি চাচী। থাক। আসুক ওরা। তোরা জিরিয়ে নে গে, যা।
বেশিক্ষণ জিরাতে পারল না তিন গোয়েন্দা, গেট দিয়ে আরেকটা বড় ট্রাক ঢুকল। গাড়ি চালাচ্ছে রোভার, পাশে বসে আছেন রাশেদ পাশা। ছোটখাট মানুষ, প্রথমেই চোখে পড়ে তার ইয়া বড় গোফ। ট্রাকের পেছনে মালের বোঝার ওপর আরাম করে বসে আছে বোরিস।
প্রথম ট্রাকটার কাছে এনে দ্বিতীয়টাকে রাখল রোভার। তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন মেরি চাচী। ট্রাকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে রয়েছে অনেকগুলো পুতুল; দরজিরা পোশাক তৈরি করতে যে ডামি ব্যবহার করে, ওই জিনিস। স্বাভাবিক উচ্চতার মেয়েমানুষের সমান ডামিগুলো ধাতু দিয়ে তৈরি, গলার ওপরে আর কিছু নেই, এক কোপে মুণ্ডু ফেলে দেয়া হয়েছে যেন, পা-ও নেই, দাঁড়িয়ে আছে একটা ধাতব দণ্ডের ওপর। পুরানো আমলের জিনিস, এগুলো আজকাল আর বিশেষ ব্যবহার হয় না।
বোকা হয়ে মূর্তিগুলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলেন মেরি চাচী। চেঁচিয়ে উঠলেন হঠাৎ, আরে! এগুলো কী এনেছ! মাথা খারাপ হয়েছে তোমার? এক ট্রাক পুরানো ডামি! হায় হায় হায় হায়! সব পয়সা। পানিতে ফেলে এসেছে!
তোমার তাই মনে হচ্ছে? শান্ত কণ্ঠে বললেন রাশেদ পাশা। কম পয়সায় পেলে যে-কোন বাতিল মাল কিনতে তিনি আগ্রহী। জানেন, কোনটাই পড়ে থাকে না ইয়ার্ডে। বিক্রি হয়ে যায়ই। কিশোরের দিকে ফিরলেন। তোর কী মনে হয়?
আমার তো ধারণা বিক্রি হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল কিশোর। আরচারি ক্লাবের ওরাই এসে কিনে নিয়ে যাবে, তীর ছোঁড়া প্র্যাকটিস করার জন্যে।
হুমম! ধীরে ধীরে মাথা দোলালেন রাশেদ চাচা। নিতে পারে। ভাব, আরও ভেবে দেখ। কাদের কাছে বিক্রি করা যাবে, ভেবে বের কর। তোর কথা ঠিক হলে ফাইভ পারসেন্ট কমিশন তোর। …তা, হ্যাঁ রে, মূর্তিগুলোর ব্যাপারে কী মনে হয়? খুব ভাল জিনিস কিনেছি, না?
প্রথমে বুঝিনি ওগুলো দিয়ে কী হবে, জবাবটা দিলেন মেরি চাচী। অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করেছি। বিজ্ঞাপন দের। বাগানে সাজাতে পারবে লোকে। ফুলের ঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকে মন্দ লাগবে না।
খামোকাই তো রেগে যাও, সুযোগ পেয়ে গলার জোর বাড়ল রাশেদ চাচার। আসলে, সব জিনিসই কাজে লাগে।
তাই বলে ওই ডামিগুলো কোন কাজে লাগবে না!
লাগবে, লাগবে। কিশোর ঠিক একটা উপায় বের করে ফেলব, দেখো। এই, রোভার, বোরিস, মূর্তিগুলো নামিয়ে ফেললো। দেখো, ভাঙে টাঙে না যেন। চলটা উঠলেও আর কেউ কিনতে চাইবে না। সাবধানে নামাও।
ছায়ায় গিয়ে বসলেন রাশেদ পাশা, পাইপ বের করে ধরালেন। দুই ব্যাভারিয়ান ভাইয়ের ওপর চোখ। দুজনেই বিশালদেহী, গায়ে ভীষণ। জোর। ভারি মূর্তিগুলোকে এমনভাবে নামাচ্ছে, যেন ওগুলো তুলার পুতুল।
পাহাড়ের মাথায় বিরাট এক পুরানো বাড়িতে ছিল মূর্তিগুলো, বললেন রাশেদ চাচা। বাড়ি না ওটা, আস্ত এক দুর্গ! মালিক নেই, মারা গেছে। পুরানো জিনিসপত্র সব বেচে দিয়েছে, আমি যাওয়ার আগেই সব। সাফ। মূর্তিগুলো, অকাজের ভেবে কেউ নেয়নি। আর কিছু বই। একটা পুরানো সূর্যঘড়ি আর গোটা কয়েক চেয়ার পেয়েছি, বাগানে বসার চেয়ার। কিনে ফেললাম।