• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
শুক্রবার, জুন 9, 2023
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result
  • বইয়ের নামঃ ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার
  • লেখকের নামঃ আইজাক আসিমভ
  • প্রকাশনাঃ সন্দেশ
  • বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার

১. প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল

ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার (১৯৫২) (সায়েন্স ফিকশন) – আইজাক আসিমভ
অনুবাদ : নাজমুছ ছাকিব

.

উৎসর্গ
আমার বাবা
যার কাছ থেকে পেয়েছি বই পড়ার অদম্য নেশা

.

ভেঙে পড়ছে গ্যালাকটিক এম্পায়ার।

এটা ছিল কল্পনাতীত সুবিশাল এম্পায়ার, স্প্রিং-এর মতো প্যাচানো মিল্কি ওয়ে গ্যলাক্সির এক বাহু থেকে আরেক বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পতনটাও ছিল একই রকম সুবিশাল এবং দীর্ঘস্থায়ী।

এই পতনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রায় এক শতাব্দী পরে মাত্র একজন মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠেন। তিনি হ্যারি সেলডন, সেই ঘুণে ধরা সময়ে তিনি একাই উদ্ভাবনী শক্তি এবং সৃষ্টিশীলতা নিয়ে অগ্নিশিখার মতো প্রজ্বলিত হয়ে উঠেন। তিনিই গড়ে তোলেন সাইকোহিস্টোরি বিজ্ঞান এবং তার হাতেই এই বিজ্ঞান শীর্ষ অবস্থায় পৌঁছায়।

সাইকোহিস্টোরি একজন মানুষ নয়, বরং দলবদ্ধ অসংখ্য মানুষ নিয়ে আলোচনা করে। এটা নির্দিষ্ট উদ্দীপনায় আচরণ কেমন হবে নিখুঁতভাবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে, যেমন প্রচলিত বিজ্ঞানের কম গুরুত্বপূর্ণ কোনো তত্ত্বের সাহায্যে নিখুঁতভাবে বলে দেওয়া সম্ভব একটা বিলিয়ার্ড বল-এ টোকা দিলে সেটা গড়িয়ে গিয়ে কোথায় থামবে। একজন মানুষের প্রতিক্রিয়া কোনো ধরনের গণিতের সাহায্যেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়; কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ব্যাপার।

সেই সময়ের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক গতি বিশ্লেষণ করে হ্যারি সেলডন পূর্বানুমান করে নেন যে অব্যাহত এবং দ্রুতগতিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সভ্যতা, এবং এই ধ্বংসপ থেকে আরেকটা এম্পায়ার গড়ে উঠার মাঝখানে শুরু হবে ত্রিশ হাজার বছর স্থায়ী অরাজকতা এবং বর্বর যুগ।

এই পতন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই, কারণ দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু বর্বর যুগটাকে কমিয়ে আনার সময় এখনো পেরিয়ে যায় নি। হ্যারি সেলডন দুটো ফাউণ্ডেশন তৈরি করে সেগুলো স্থাপন করেন “অ্যাট দ্য অপোজিট এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি” এবং সেগুলোর অবস্থান এমনভাবে বেছে নেওয়া হয় যার ফলে সহস্রাব্দের ঘটনাপ্রবাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদেরকে আরো উন্নত, সুসংগঠিত, শক্তিশালী এবং নিরাপদ সেকেণ্ড এম্পায়ার গড়ে তোলার পথে পরিচালিত করে।

ফাউণ্ডেশন নামক গ্রন্থে দুই ফাউণ্ডেশনের একটার প্রথম দুই শতাব্দীর ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এই ফাউণ্ডেশনের যাত্রা শুরু হয় গ্যালাক্সির এক স্পাইরাল বাহুর একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত টার্মিনাস নামক গ্রহে ফিজিক্যাল সায়েন্টিস্টদের বসতি স্থাপনের মাধ্যমে। এম্পায়ার-এর কোলাহল থেকে অনেক দূরে, তারা এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা তৈরি করে মহাবিশ্বের তাবৎ জ্ঞান সংগ্রহ করে রাখার কাজে শুরু করে, কিন্তু জানাতই না যে এরই মধ্যে মৃত হ্যারি সেলডন অন্য কিছুর পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তাদের জন্য।

এম্পায়ার ভেঙে যাওয়ার কারণে আউটার রিজিওন-এর বিশ্বগুলো স্বাধীন রাজাদের অধীনে চলে যায়। তারা ফাউণ্ডেশনের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু প্রথম মেয়র স্যালভর হার্ডিনের অধীনে এই বর্বর বিশ্বগুলোর মাঝে বিরোধ তৈরি করে তারা নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। যেখানে প্রতিবেশী বিশ্বগুলো ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছিল কয়লা এবং খনিজ তেলের যুগে, সেখানে একা ফাউণ্ডেশনের হাতে ছিল এটমিক পাওয়ার। তারা এক অদ্ভুত ধরনের প্রভুত্ব বিস্তার করে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর ধর্মীয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়।

ধীরে ধীরে ফাউণ্ডেশন এনসাইক্লোপেডিস্টদের হটিয়ে বণিক অর্থনীতি গড়ে তোলে। তাদের বণিকদের কাছে যে সকল ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ছিল এম্পায়ারও সেগুলো তৈরি করতে পারত না। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তারা চলে যেতে পারত পেরিফেরি থেকে বহু আলোকবর্ষ দূর দূরান্তে।

হোবার ম্যালো, প্রথম বণিক রাজপুত্র, তার অধীনেই তারা অর্থনীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কৌশল আবিষ্কার করে। এই অস্ত্র দিয়েই পরাজিত করে রিপাবলিক অব কোরেল, যদিও সেই বিশ্ব তখন এম্পায়ারের এক প্রভিন্স-এর সাহায্য পেত।

দুশ বছর পরেই ফাউণ্ডেশন পরিণত হয় গ্যালাক্সির সবচেয়ে শক্তিশালী স্টেট-এ, এম্পায়ারের অবশিষ্ট অংশ বাদ দিয়ে। এম্পায়ার-এর অবশিষ্ট অংশ বিস্তৃত ছিল মিল্কি ওয়ের অভ্যন্তরভাগে, যার অধীনস্থ ছিল এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা এবং মহাবিশ্বের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ।

কাজেই এটা স্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায় যে ফাউণ্ডেশনের পরবর্তী বিপদ হয়ে দেখা দেবে মৃত্যুপথযাত্রী এম্পায়ার-এর শেষ ছোবল।

ফাউণ্ডেশন এবং এম্পায়ারের মাঝে যুদ্ধ শুরু করার পথ পরিষ্কার করে দিতে হবে।

সূচিক্রম

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল

১. জাদুকরের সন্ধানে

২. জাদুকর

৩. অদৃশ্য হাত

৪. সম্রাট

৫. যুদ্ধ শুরু

৬. দ্য ফেভারিট

৭. ঘুষ

৮. ট্রানটরের পথে

৯. ট্রানটরের বুকে

১০. যুদ্ধ শেষ

.

দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল

১১. বর কনে

১২. ক্যাপ্টেন এবং মেয়র

১৩. লেফটেন্যান্ট এবং ক্লাউন

১৪. দ্য মিউট্যান্ট

১৫. দ্য সাইকোলজিস্ট

১৬. সম্মেলন

১৭. দ্য ভিজি সোনার

১৮. ফাউণ্ডেশন-এর পতন

১৯. অনুসন্ধান শুরু

২০. ষড়যন্ত্রকারী

২১. মহাকাশে অবকাশ

২২. নিও ট্রানটরে মরণ থাবা

২৩. ট্রানটরের ধ্বংসস্তূপ

২৪. কনভার্ট

২৫. সাইকোলজিস্টের মৃত্যু

২৬. অনুসন্ধানের সমাপ্তি

.

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল

বেল রিয়োজ… স্বল্পস্থায়ী কর্মজীবনে রিয়োজ যোগ্যতার সাথে “দ্য লাস্ট অব দ্য ইম্পেরিয়ালস” উপাধি অর্জন করেন। তার সামরিক অভিযানগুলো পর্যালোচনা করে সামরিক কলাকৌশলের ক্ষেত্রে তাকে পিউরিফয়-এর সমকক্ষ বলে মনে করা হয়, এবং সম্ভবত তার নেতৃত্ব দানের গুণাবলি ছিল আরো বড় মাপের। এম্পায়ারের পতনের সময় তার জন্ম হয়েছিল বলে পিউরিফয়-এর যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল কম, তারপরেও ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম অমর করে রাখার সুযোগ তিনি পান, যখন এম্পায়ারের প্রথম জেনারেল হিসেবে তিনি মুখোমুখি হন ফাউণ্ডেশন-এর–

এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা*

[* এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকার সকল উদ্ধৃতি এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা পাবলিশিং কোং টার্মিনাস-এর আদেশক্রমে ১০২০ এফ.ই.তে প্রকাশিত ১১৬তম সংখ্যা থেকে নেওয়া হয়েছে।]

.

১. জাদুকরের সন্ধানে

বেল রিয়োজ এসকর্ট ছাড়াই চলাচল করেন। গ্যালাকটিক এম্পায়ারের অগ্রযাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়ে আছে এমন এক স্টেলার সিস্টেমে অবস্থানরত সামরিক বহরের প্রধানের জন্য কাজটা ইম্পেরিয়াল কোর্ট এর নিয়ম বহির্ভূত।

কিন্তু বেল রিয়োজ তরুণ এবং উদ্যমী-নিরাবেগ এবং হিসেবি রাজদরবারের নির্দেশে মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে ছুটে যাওয়ার মতো যথেষ্ট উদ্যমী-তা ছাড়াও তিনি কৌতূহলী। লোক মুখে ছড়ানো অদ্ভুত চমকপ্রদ কিছু কাহিনী তার কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে। একটা সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা তার প্রথম বৈশিষ্ট্য দুটোকে একত্রিত করেছে। সব মিলে তিনি হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য।

পুরোনো গ্রাউণ্ড কার থেকে নেমে জীর্ণ ভবনের দরজার সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন। দরজার ফটোনিক দৃষ্টি জীবন্ত হয়ে উঠল। কিন্তু দরজা খোলার পর দেখা গেল সেটা হাতে ধরা।

বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে হাসলেন রিয়োজ। “আমি রিয়োজ-”

“চিনতে পেরেছি।” নিজের জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে থাকলেন বৃদ্ধ। “কী। প্রয়োজন?”

এক পা সরে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করলেন রিয়োজ। “শান্তি। যদি আপনি ডুসেম বার হন, তা হলে একটু কথা বলার সুযোগ চাই।”

ডুসেম বার সরে দাঁড়ালেন একপাশে, ঘরের দেয়ালগুলো আলোকিত হয়ে উঠল। জেনারেল যেন দিনের আলোয় প্রবেশ করলেন।

ভেতরের দেয়াল স্পর্শ করে তিনি আঙুলের দিকে তাকালেন। “আপনাদের সিউয়েনায় এই জিনিস আছে?”

বার-এর মুখে চিকন হাসি। “সবার কাছে নেই। নিজের হাতে যতদূর সম্ভব মেরামত করে আমি এতদিন টিকিয়ে রেখেছি। দরজায় অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র অতিথির আগমন রেজিস্ট্রার করতে পারলেও দরজা খুলে দিতে পারে না।”

“ঠিক মতো মেরামত করতে পারেননি?” ঠাট্টার সুরে বললেন জেনারেল।

“যন্ত্রপাতিগুলো দুর্লভ হয়ে পড়েছে। বসুন, স্যার। চা খাবেন?”

“মাই গুড স্যার, স্যিউয়েনায় সামাজিক মেলামেশায় চা না খেয়ে পারা যায়?”

সম্ভ্রান্ত বৃদ্ধ লোকটি চলে গেলেন নিঃশব্দে, তার আগে আস্তে করে মাথা নিচু করে অভিবাদন করলেন। ভঙ্গিটা তিনি গত শতাব্দীর সোনালি দিনের অভিজাত পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন।

রিয়োজ তার মেজবানের অপসৃয়মান কাঠামোর দিকে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলেন। তিনি পূর্ণ সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত। অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ ভারী। কিন্তু তারপরেও একটা প্রাচীন কক্ষের সেকেলে পরিবেশে হঠাৎ করেই টুয়েন্টিয়েথ ফ্লিটের । পাষাণ হৃদয়ের নেতা কেমন যেন ঠাণ্ডা অনুভব করতে লাগলেন।

শেলফে সারি সারি সাজানো নিকষ কালো বক্সগুলোকে বই বলে চিনতে পারলেন জেনারেল। সব অপরিচিত শিরোনাম। ঘরের কোণায় বড় একটা যন্ত্রকে তিনি অনুমানে ধরে নিলেন রিসিভার যা বইগুলোকে শব্দ এবং দৃশ্যে পরিণত করে। কীভাবে কাজ করে তিনি স্বচক্ষে কখনো দেখেননি, তবে শুনেছেন।

বহু আগে যখন পুরো গ্যালাক্সি জুড়ে এম্পায়ার বেড়ে উঠছিল সেই সময় প্রতি দশটার মধ্যে নয়টা বাড়িতেই এরকম সারি সারি বই এবং রিসিভার থাকত।

কিন্তু সময় পাল্টেছে। বই এখন বৃদ্ধ লোকের সঙ্গী। এবং যে কাহিনী থাকে তার অর্ধেকেরও বেশি কাল্পনিক।

চা এসে গেছে, বসলেন জেনারেল। ডুসেম বার নিজের পেয়ালা তুলে বললেন, “আপনার সম্মানে।”

“ধন্যবাদ। আপনার সম্মানে।”

ডুসেম বার বললেন, “শুনেছি আপনি তরুণ। পঁয়ত্রিশ?”

“প্রায় কাছাকাছি। চৌত্রিশ।”

“সেক্ষেত্রে,” হালকা গুরুত্বের সাথে বললেন বার “দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি আমি আপনার বিনোদনের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছি না। পানীয়, ধূমপান বা কোনো সুন্দরী তরুণীকে আপনার মনোরঞ্জনের জন্য হাজির করতে পারব না।”

“এসবের কোনো প্রয়োজন নেই, স্যার।” বলার সুরে পরিষ্কার বোঝা যায় মজা পেয়েছেন জেনারেল। “এরকম অনুরোধ কি আপনি অনেক বেশি পান?”

“যথেষ্ট। দুর্ভাগ্যক্রমে অজ্ঞ লোকেরা স্কলারশিপের সাথে জাদুবিদ্যাকে গুলিয়ে ফেলে এবং মনে করে যে ভোগবিলাসের জন্য অনেক বেশি জাদুকরী প্রলেপ প্রয়োজন।”

“এবং সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি ভিন্নমত। আমার মতে স্কলারশিপ জটিল প্রশ্নের সমাধান বের করার একটা কায়দা।”

স্যিউয়েনিয়ান গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ ভাবলেন। “হয়তো আপনিও তাদের মতো ভুলপথে চলছেন।”

“সেটা পরে বোঝা যাবে।” তরুণ জেনারেল পুনরায় খালি কাপে চা ঢেলে নিলেন, তবে স্বাদ বৃদ্ধিকারক ক্যাপসুল নিলেন না।” বলুন প্যাট্রিশিয়ান, জাদুকর কারা? সত্যিকারের জাদুকর?”

বহুদিনের অব্যবহৃত উপাধিটি শুনে কেঁপে উঠলেন বার। “কোনো জাদুকর নেই।”

“কিন্তু তাদের কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। স্যিউয়েনার আকাশে বাতাসে তাদের কাহিনী ছড়িয়ে আছে। তাদের ঘিরে একটা কাল্ট তৈরি হয়েছিল। আপনার স্বদেশী যারা তথাকথিত স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করেছে তাদের সাথে এটার অদ্ভুত একটা যোগাযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।”

মাথা নাড়লেন বৃদ্ধ। “আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি বিদ্রোহের গন্ধ পেয়েছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি?”

কাঁধ নাড়লেন রিয়োজ। “মোটেই না। মোটেই না। আবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। আপনার বাবা ছিলেন নির্বাসিত; আপনি নিজে উগ্র স্বদেশী। অতিথি হিসেবে কথাটা আমার বলা হয়তো একটু অশোভন। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। তিন প্রজন্ম পরেও সিউয়েনার সাহসিকতা কমেনি।”

প্রতিউত্তর দিতে একটু সমস্যা হল বৃদ্ধের। “মেজবান হিসেবে কথাটা বলা আমার জন্যও অশোভন। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই অনেক আগে একজন ভাইসরয় ঠিক আপনার মতোই সিউয়েনিয়ানদের পদানত রাখার কথা চিন্তা করেছিল। সেই একই ভাইসরয়ের নির্দেশেই আমার বাবা পলাতক এবং কপর্দকশূন্যে পরিণত হন, আমার ভাই হন শহীদ, আত্মহত্যা করে আমার বোন। আবার এই পরাধীন স্যিউয়েনিয়ানদের হাতেই সেই ভাইসরয় নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করে।”

“ও হ্যাঁ, আর এখানে একটা কথা আমাকে বলতেই হচ্ছে। তিন বছর আগেই সেই ভাইসরয়ের মৃত্যুরহস্য আমি সমাধান করেছি। তরুণ এক সৈনিকের আচরণ ছিল কৌতূহলউদ্দীপক। আপনি সেই সৈনিক। আমার মনে হয় না বিস্তারিত বলার প্রয়োজন আছে।”

শান্ত হয়ে গেলেন বার।”কোনো দরকার নেই। আপনার প্রস্তাব?”

“কিছু প্রশ্নের উত্তর।”

“হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমার বয়স হয়েছে, মৃত্যুর ভয় নেই।”

“মাই গুড স্যার। এখন কঠিন সময়,” অর্থবহ সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং আপনার সন্তান আছে, বন্ধু আছে, একটা দেশ আছে যাকে আপনি প্রচণ্ড ভালবাসেন। শুনুন যদি আমি শক্তি প্রয়োগ করতে চাই, তা হলে আপনাকে আঘাত করার মতো দুর্বল কিছু করব না।”

“কী চান আপনি?” ঠাণ্ডা গলায় বললেন বার।

কথা বলার সময় খালি পেয়ালা তুলে নিলেন রিয়োজ। “শুনুন, প্যাট্রিশিয়ান, এখন একজন সফল সৈনিক বলা যায় তাকেই যার মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের ময়দানে ড্রেস প্যারেডে নেতৃত্ব দেওয়া এবং হিজ ইম্পেরিয়াল এর প্রমোদতরীগুলোকে জাঁকজমকপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন অবকাশ গ্রহে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি…আমি ব্যর্থ, চৌত্রিশ বছর বয়সেই ব্যর্থ, এবং আমি তাই থাকতে চাই। কারণ আমি যুদ্ধ পছন্দ করি আর সে কারণেই ওরা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। রাজদরবারে আমি একটা উৎকট সমস্যা। নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারি না। লর্ড অ্যাডমিরালদের বিরোধিতা করি। কিন্তু মহাকাশযান এবং যে সৈনিকরা মহাকাশে নির্বাসিত হতে চায় তাদের নেতা হিসেবে আমি যথেষ্ট ভালো। কাজেই বেছে নেওয়া হল স্যিউয়েনা। এটা সীমান্তবর্তী বিশ্ব; বন্ধ্যা এবং বিদ্রোহে পরিপূর্ণ। এটা যথেষ্ট দূরে, সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো দূরে।

“কিন্তু আমি নিরাশ। দমন করার মতো কোনো বিদ্রোহ ঘটেনি, এবং সীমান্তের ভাইসরয়রাও অনেকদিন থেকে বিদ্রোহ করছে না। অন্তত যতদিন হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির স্বর্গীয় পিতার মহিমান্বিত স্মৃতি মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত করবে না।”

“একজন শক্তিশালী সম্রাট।” ফিসফিস করে বললেন বার।

“হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আরো বেশি। তিনি আমার মালিক; কথাটা মনে রাখবেন। আমি শুধু তার ইচ্ছাই রক্ষা করছি।”

নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কাঁধ নাড়লেন বার। “বর্তমান বিষয়ের সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?”

“দুই কথায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। যে জাদুকরদের কথা বললাম তারা এসেছিল সীমান্তের অনেক দূর থেকে, যেখানে নক্ষত্ররা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে”।

“যেখানে নক্ষত্রেরা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে-” আবৃত্তি করলেন বার, “এবং মহাকাশ জমে আছে ঠাণ্ডায়।”

“এটা কবিতা?” কপাল কুঁচকালেন রিয়োজ। “যাই হোক, তারা পেরিফেরি থেকে এসেছিল- সম্রাটের মর্যাদা ধরে রাখার জন্য যে অংশে আমি স্বাধীনভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারি, সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় তারা।”

“এবং হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির ইচ্ছা রক্ষা হবে আর আপনার একটা জবরদস্ত লড়াইয়ের আশা পূরণ হবে।”

“ঠিক। কিন্তু কিসের সাথে লড়ব সেটা জানতে হবে। আর এখানেই আপনার সাহায্য প্রয়োজন।”

“কীভাবে বুঝলেন?”

হালকা চালে বিস্কিটের কোণা ভাঙলেন রিয়োজ। গত তিন বছর আমি জাদুকরদের সম্বন্ধে প্রতিটা গুজব, গল্পকাহিনী অনুসরণ করেছি, বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমার মনে হয়েছে দুটো পৃথক ঘটনা আসলেই সত্য এবং পরস্পর সম্পৃক্ত। প্রথমটা হচ্ছে জাদুকররা এসেছিল সিউয়েনার ঠিক উল্টোদিকের গ্যালাক্সির একেবারে শেষ সীমানা থেকে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আপনার বাবা একজন জীবিত সত্যিকার জাদুকরের সাথে কথা বলেছিলেন।”

বৃদ্ধ সিউয়েনিয়ানের দৃষ্টি নিরাসক্ত। রিয়োজ বললেন, “আমাকে সব খুলে বললেই ভালো করবেন

“কয়েকটা ব্যাপার বললে ভালোই হবে। নিজস্ব সাইকোহিস্টোরিক এক্সপেরিম্যান্ট হবে এটা।”

“কী ধরনের এক্সপেরিম্যান্ট?”

“সাইকোহিস্টোরিক।” বৃদ্ধের মুখে নিরানন্দ হাসি। “বরং আরো চা নেন। আমি অনেক কথা বলব।”

চেয়ারে আরো ভালোভাবে হেলান দিয়ে বসলেন তিনি। দেয়াল থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে স্নান লাল আলো। ফলে এমনকি সৈনিকের কঠোর মুখাবয়বও কেমন যেন নরম হয়ে এসেছে।

ডুসেম বার শুরু করলেন, “আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা দুটো দুর্ঘটনার ফসল। প্রথম দুর্ঘটনা আমার পিতার সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়া। দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই বিশ্বের স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে জন্ম নেওয়া। ঘটনার শুরু চল্লিশ বছর আগে, ভয়ানক গণহত্যার ঠিক পরপরই যখন আমার বাবা দক্ষিণের জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আমি ছিলাম ভাইসরয়ের ব্যক্তিগত বাহিনীর একজন গোলন্দাজ। সেই একই ভাইসরয় যার নির্দেশে গণহত্যা সংগঠিত হয় এবং পরে সে নিজেও নৃশংস মৃত্যুবরণ করে।”

আমুদে ভঙ্গিতে হাসলেন বার, তারপর আবার শুরু করলেন, “আমার বাবা ছিলেন এম্পায়ারের একজন অভিজাত ব্যক্তি এবং স্যিউয়েনার সিনেটর। নাম ওনাম বার।

অধৈর্য ভঙ্গিতে বাধা দিলেন রিয়োজ, “কেন তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন আমি জানি। বিস্তারিত বলতে হবে না।”

সিউয়েনিয়ান তাকে পাত্তা না দিয়ে একই ভঙ্গিতে বলে যেতে লাগলেন, “নির্বাসিত থাকাকালে এক আগন্তুক দেখা করতে আসে তার সাথে গ্যালাক্সির শেষ সীমানার একজন বণিক; বয়সে তরুণ, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি, সমসাময়িক ইম্পেরিয়াল হিস্টোরি সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য তার কাছে ছিল একটা ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড।”

“ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড? আপনি যা বলছেন তা একেবারেই অসম্ভব। কোন ধরনের শক্তিশালী জেনারেটর মাত্র একজন মানুষের দেহের আকৃতিতে শিল্ড জমাট বাধাতে পারবে? গ্রেট গ্যালাক্সি, সে কি চাকাঅলা ছোট গাড়িতে করে নিজের সাথে পাঁচ হাজার মিরিয়াটন নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স বহন করছিল?”

“এই জাদুকর সম্বন্ধেই আপনি গুজব, গল্প-কাহিনী শুনেছেন।” শান্ত গলায় বললেন বার। “জাদুকর উপাধি এত সহজে অর্জিত হয়নি। চোখে পড়ার মতো কোনো জেনারেটর তার সাথে ছিল না, অথচ সবচেয়ে ভারী যে অস্ত্র আপনি হাতে নিতে পারবেন সেটা দিয়ে তার শিন্ডে তিল পরিমাণ ফুটো করাও সম্ভব ছিল না।”

“পুরো গল্প এইটুকুই? নির্বাসিত এবং ভুক্তভোগী একজন বৃদ্ধের কল্পনা থেকে জাদুকরের জন্ম?”

“জাদুকরের গল্প আমার বাবার জন্মের আগে থেকেই প্রচলিত, স্যার। জোরালো প্রমাণও আছে তার। উক্ত বণিক যাকে আমরা জাদুকর বলি পরে শহরের একজন টেক-ম্যানের সাথে দেখা করে। আমার বাবাই নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ঠিক নিজেরটার মতো একটা শিল্ড জেনারেটর রেখে যায় সে। নিষ্ঠুর ভাইসরয়ের মৃত্যুদণ্ডের পর নির্বাসন থেকে ফিরে এসে বাবা সেটা উদ্ধার করেন। অনেক সময় লেগেছিল–

“জেনারেটরটা আপনার পিছনে দেয়ালে ঝোলানো আছে, স্যার। কাজ করে না। প্রথম দুইদিনের পর কখনোই কাজ করেনি। তবে দেখলেই বুঝবেন যে এম্পায়ারের কেউ এটার ডিজাইন তৈরি করেনি।”

দেয়ালে ঝোলানো ধাতব বেল্ট ভালোভাবে দেখার জন্য হাত বাড়ালেন রিয়াজ। মৃদু শব্দ করে দেয়াল থেকে খুলে এলো সেটা। বেল্টের কিনারায় ডিম্বাকৃতির জিনিসটা তার মনযোগ কেড়ে নিল। আয়তনে একটা বাদামের সমান।

“এটা–” বললেন তিনি।

“জেনারেটর” মাথা নাড়লেন বার। “কীভাবে কাজ করতো এখন আর বের করা সম্ভব নয়। সাব ইলেকট্রিক অনুসন্ধানে দেখা যাবে যে এটা এক টুকরো ধাতু গলিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং বর্ণালিছটার সতর্ক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও গলিয়ে ফেলার আগে বিভিন্ন অংশগুলো কি ছিল সেটা বের করা যাবে না।”

“তা হলে আপনার জোরালো প্রমাণ শুধুই বাগাড়ম্বর যার শক্ত কোনো ভিত্তি নেই।”

“আপনি আমার কথা শুনতে চেয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন যেন কোনো কিছু গোপন না করি। এখন সন্দেহ হলে তো আমার কিছু করার নেই। কথা বন্ধ করে দেব?”

“বলে যান!” কর্কশ সুরে বললেন জেনারেল।

“বাবার মৃত্যুর পর আমি তার গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই এবং তখনই দ্বিতীয় দুর্ঘটনা যার কথা আগে বলেছি সেটার সাহায্য পাই আমি, কারণ সিউয়েনা হ্যারি সেলডনের কথা জানতে পারে।”

“হ্যারী সেলডন কে?”

“সম্রাট চতুর্থ ডালুবেন এর শাসনামলের একজন বিজ্ঞানী। তিনি একজন সাইকোহিস্টোরিয়ান; সর্বশেষ এবং সবার সেরা। তিনি একবার এখানে এসেছিলেন, যখন সিউয়েনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শিল্প এবং বিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী।”

“হুমম,” তিক্ত সুরে বললেন রিয়োজ, “কোন গ্রহটা দাবি করে না যে প্রাচীন যুগে তারাই ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী?”

“আমি দুইশ বছর আগের কথা বলছি, যখন সবগুলো নক্ষত্র ছিল সম্রাট এর শাসনাধীন: স্যিউয়েনা সীমান্তের কোনো আধা বর্বর বিশ্ব নয়, বরং ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় বিশ্ব। সেই সময় হ্যারি সেলডন ইম্পেরিয়াল পাওয়ারের পতন এবং পরবর্তীতে পুরো গ্যালাক্সি জুড়ে সীমাহীন বর্বরতার পদধ্বনি বুঝতে পারেন।”

হঠাৎ করেই হাসলেন রিয়োজ। “তিনি বুঝতে পেরেছিলেন? তা হলে ভুল বুঝেছিলেন, মাই গুড সায়েন্টিস্ট। নিজেকে বোধহয় তাই বলেন আপনি। গত এক হাজার বছরের মধ্যে এম্পায়ার এখন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সীমান্তের ঠাণ্ডা শূন্যতা আপনার বৃদ্ধ চোখকে অন্ধ করে দিয়েছে। ইনার ওয়ার্ল্ডগুলোয় আসুন একবার। কেন্দ্রের উষ্ণতা এবং প্রাচুর্য দেখে যান।”

“পচন ধরবে প্রথমে বাইরের প্রান্তে। সেটা কেন্দ্রে পৌঁছতে কিছুটা সময় লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। গত পনের শতাব্দীর পুরোনো গল্প এটা।”

“তো, হ্যারি সেলডন বুঝতে পারলেন গ্যালাক্সিতে ধারাবাহিকভাবে সীমাহীন বর্বরযুগ শুরু হতে যাচ্ছে।” আমুদে গলায় বললেন রিয়োজ। “তারপর কী, হ্যাঁ?”

“তাই তিনি গ্যালাক্সির দুই বিপরীত শেষ প্রান্তে দুটো ফাউণ্ডেশন তৈরি করলেন-তরুণ, উদ্যমী এবং মেধাবীদের নিয়ে ফাউণ্ডেশন যেখানে তারা বংশ বৃদ্ধি করবে, বেড়ে উঠবে। সতর্কতার সাথে তাদের জন্য একটা গ্রহ নির্বাচন করা হল; একই সাথে সময় এবং পারিপার্শ্বিকতা। এমনভাবে ব্যবস্থা করা হল যেন সাইকোহিস্টোরির অপরিবর্তনীয় গণিতের সাহায্যে ভবিষ্যতের যে ছবি ফুটে উঠেছে সেটা থেকে এবং ইম্পেরিয়াল সিভিলাইজেশনের মূল স্রোত থেকে অনেক দূরে পুরোপুরি নিঃসঙ্গভাবে তারা বেড়ে উঠতে পারে-যেন ত্রিশ হাজার বছরের অবশ্যম্ভাবী বর্বরতার যুগকে কম বেশি এক হাজার বছরে কমিয়ে আনা যায়।”

“মনে হচ্ছে আপনি বিস্তারিত সবই জানেন। কীভাবে?”

“জানি না, জানতামও না।” শান্ত গলায় বললেন প্যাট্রিশিয়ান। পুরো বিষয়টাই আমার বাবার কিছু আবিষ্কার এবং আমার নিজের কিছু গবেষণার কষ্টকর যোগফল। ভিত্তিটা বেশ দুর্বল এবং এই কাঠামোর মাঝে অনেক ফাঁক আছে। সেগুলো পূরণ করার জন্য কোথাও কোথাও অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে আমি ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস করি।

“আপনি খুব সহজেই বিশ্বাস করেন?”

“তাই? এগুলো বের করতে আমার চল্লিশ বছর গবেষণা করতে হয়েছে।”

“হুম্। চল্লিশ বছর! আমি চল্লিশ দিনেই সমাধান করতে পারব। করতেই হবে। সেটা হবে-ভিন্নরকম।”

“কীভাবে করবেন?”

“যেভাবে করতে হয়। ফাউণ্ডেশন আমি খুঁজে বের করব, নিজের চোখে দেখব। দুটোর কথা বলেছেন?”

“রেকর্ডে দুটোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সহায়ক তথ্য প্রমাণ আছে শুধু একটার। বাকিটা সম্বন্ধে বলা হয়েছে সেটা গ্যালাক্সির দীর্ঘ অক্ষের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত।”

“বেশ, আমরা যেটা কাছে হয় সেটাতেই যাব।” উঠে দাঁড়িয়ে কোমরের বেল্ট ঠিক করতে লাগলেন জেনারেল।

“কোথায় যেতে হবে আপনি জানেন?” জিজ্ঞেস করলেন বার।

“মোটামুটি। শেষ ভাইসরয়, আপনি যাকে খুন করেন তার রেকর্ডে আউটার বারবারিয়ানদের সম্বন্ধে সন্দেহজনক কিছু কথা আছে। সত্যি কথা বলতে কি একজন বারবারিয়ান প্রিন্সের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। আমি খুঁজে নেব।”

হাত বাড়ালেন তিনি। “আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ।

ডুসেম বার আলতোভাবে তার আঙুল ছুঁয়ে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে কুর্নিশ করলেন। “আপনি আসায় আমি সম্মানিত।”

“যে তথ্য আপনি দিয়েছেন, আবার বললেন রিয়োজ, “ফিরে আসার পর বুঝতে পারব কীভাবে তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানো যায়।”

অতিথিকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন বার। অপসৃয়মান গ্রাউণ্ড কারের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “যদি ফিরতে পারেন।”

.

ফাউণ্ডেশন…চল্লিশ বছর পূর্ণ গতিতে অগ্রসর হওয়ার পর ফাউণ্ডেশন রিয়োজ এর আগ্রাসন এর স্বীকার হয়। হার্ডিন এবং ম্যালোর মহাকাব্যিক উত্থান পর্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই, সেই সাথে শেষ হয়েছে বীরত্ব এবং অসম সাহসিকতা…

এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

২. জাদুকর

কামরায় চারজন ব্যক্তি চারটা পৃথক টেবিলে বসেছে, এবং কামরাটা মূল ভবন থেকে আলাদা, যেন অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে না পারে। তারা দ্রুত একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করল, তারপর অলসভাবে তাকিয়ে থাকল যার যার টেবিলের দিকে। টেবিলে চারটা বোতল এবং সমান সংখ্যক পূর্ণ গ্লাস, কিন্তু কেউ সেগুলো স্পর্শ করেনি।

দরজার কাছে বসা লোকটা টেবিলে মৃদু লয়ে তাল ঠুকল, তারপর বলল, “ এভাবে বসে থাকবে তোমরা? কে প্রথম কথা বলবে, এটা কোনো ব্যাপার?”

“তা হলে তুমিই বল প্রথমে,” ঠিক বিপরীত দিকের বিশালদেহী ব্যক্তি বলল। “তোমার দুশ্চিন্তাই সবচেয়ে বেশি।”

নিরানন্দ ভঙ্গিতে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল সিনেট ফোরেল। “কারণ তোমাদের ধারণা আমি সবচেয়ে ধনী। বেশ-নাকি তোমরা চাও যেভাবে শুরু করেছিলাম সেভাবে চালিয়ে যাই আমি। আশা করি ভুলে যাওনি যে আমার নিজস্ব ট্রেড ফ্লিট ওদের স্কাউট শিপকে ধরেছে।”

“তোমার ফ্লিট সবচেয়ে বড়,” তৃতীয়জন বলল, “এবং সেরা পাইলট; এভাবেও বলা যায় তুমি সবচেয়ে ধনী। ঝুঁকিটা ভয়ংকর; এবং আমাদের জন্য অনেক বেশি।”

আবারও ঠোঁট চাটল সিনেট ফোরেল। “জায়গা বুঝে ঝুঁকি নেওয়ার গুণটা আমি বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। লাভের পরিমাণ যখন অনেক বেশি হয় তখন বড় ঝুঁকি নেওয়া যায়। যেমন শত্রুদের মহাকাশযান দেখার পর নিজেদের কোনো ক্ষতি না করে এবং ওদেরকে সতর্ক না করেই সেটাকে ধরে ফেললাম।”

ফাউণ্ডেশন-এর সবাই জানে ফোরেল মহান হোবার ম্যালোর বংশধর। সবাই তাকে ম্যালোর অবৈধ পুত্র হিসেবে মেনে নিয়েছে।

ধীরে ধীরে ঘোট চোখগুলো কয়েকবার পিটপিট করল চতুর্থজন। তার পাতলা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে শব্দগুলো যেন হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল, “আমরা খুব ভাগ্যবান এটা ভেবে খুশি হওয়ার কিছু নেই, মহাকাশযান আটকে রাখায় ওই তরুণ বরং আরো রেগে উঠবে।”

“তোমার ধারণা ওর রাগ করার জন্য একটা উদ্দেশ্য দরকার?” তিরস্কারের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল ফোরেল।

“হ্যাঁ, এবং আমরা ঠিক তাই করছি অথবা কষ্ট করে ওকে একটা উদ্দেশ্য তৈরি করে নিতে হবে না। হোবার ম্যালো বা স্যালভর হার্ডিন কাজ করতেন অন্যভাবে। পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতিপক্ষকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতেন।”

ফাঁধ নাড়ল ফোরেল। “এই মহাকাশযান তার গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। আমরা এটাকে লাভজনক দামে বেচতে পারব।” জন্ম বণিকের কণ্ঠে সন্তুষ্টির সুর। “তরুণ পুরোনো এম্পায়ার থেকে এসেছে।”

“আমরা জানি,” বিশালদেহী দ্বিতীয়জন গমগমে গলায় বলল

“আমরা সন্দেহ করেছিলাম,” হালকা গলায় সংশোধন করে দিল ফোরেল। “পয়সাঅলা কেউ এসে যদি বন্ধুত্ব এবং বাণিজ্যের প্রস্তাব দেয় তাকে নিরাশ করা উচিত হবে না, অন্তত যতক্ষণ না প্রমাণ হচ্ছে যে এর ভেতরে কোনো কূটকৌশল আছে। কিন্তু এখন-”

তৃতীয়জন যখন কথা বলল তার গলায় একটা আর্তভাব ফুটে উঠল। “আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। লোকটাকে ছেড়ে দেওয়ার আগেই সবকিছু জেনে নিতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”

“এটার ফায়সালা হয়ে গেছে,” বলল ফোরেল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো করে হাত নেড়ে বিষয়টা থামিয়ে দিল সে।

“সরকার অনেক বেশি নরম,” অভিযোগের সুরে বলল তৃতীয়জন। “মেয়র একটা ইডিয়ট।

চতুর্থজন পালাক্রমে বাকি তিনজনের দিকে তাকাল। মুখ থেকে সিগারের অবশিষ্টাংশ নামিয়ে ফেলে দিল তার ডানদিকের একটা সুটে। চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল সেটা।

তিরস্কারের সুরে বলল সে, “আশা করি যে ভদ্রলোক কথাগুলো বলেছেন তিনি অভ্যাসবশেই বলেছেন। কষ্ট করে একথা মনে করিয়ে দিতে চাই না যে আমরাই সরকার।”

সম্মতির গুঞ্জন উঠল সবার ভেতর।

চতুর্থজনের দৃষ্টি টেবিলের উপর নিবদ্ধ। “তা হলে সরকারের নিয়ম নীতি নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। এই তরুণ–এই আগম্ভক একজন সম্ভাব্য ক্রেতা হতে পারে। কিন্তু তোমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছ সে অ্যাডভান্স কন্টাক্ট হিসেবে কাজ করছে। আমাদের ভেতরে একটা ভদ্রলোকের চুক্তি থাকার পরেও তোমরা চেষ্টা করছ।”

“তুমিও করেছ,” গজগজ করে বলল দ্বিতীয়জন।

“আমি জানি,” শান্ত সুরে বলল চতুর্থজন।

“তা হলে আগে কি করেছি ভুলে যাও।” অধৈর্য ভঙ্গিতে বাধা দিল ফোরেল। “এখন কী করব সেটা ভাবো। যদি তাকে বন্দি করে রাখি বা মেরে ফেলি কী হবে তখন? তার আসল উদ্দেশ্য এখনো আমরা জানি না, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে একটা লোককে মেরে ফেললেই পুরো এম্পায়ার ধ্বংস হবে না। হয়তো তার ফেরার অপেক্ষায় অন্যদিকে নেভির পর নেভি অপেক্ষা করছে।”

“ঠিক,” একমত হল চতুর্থজন। “আটক মহাকাশযান থেকে কি জানতে পেরেছ তুমি।”

“অল্প কথাতেই সব বলে দেওয়া যাবে,” বলল ফোরেল,মুখে দন্ত বিকশিত হাসি। “সে একজন ইম্পেরিয়াল জেনারেল বা সেই সমপর্যায়ের কিছু একটা। তরুণ বয়সেই নিজের সামরিক দক্ষতা প্রমাণ করেছে। অন্তত: আমি তাই জেনেছি-এবং নিজের লোকদের কাছে সে একজন আদর্শ। কোনো সন্দেহ নেই এই লোকের সম্বন্ধে তারা যা বলেছে অর্ধেকই মিথ্যে, কিন্তু তারপরেও বলতে হবে সে এক আশ্চর্য মানুষ। বেশ রোমান্টিক ক্যারিয়ার।”

“এই ‘তারা কারা?” প্রশ্ন করল দ্বিতীয়জন।

“আটক মহাকাশযানের নাবিক। শোন, তাদের সব বক্তব্য আমি মাইক্রোফিল্মে রেকর্ড করে নিরাপদ স্থানে রেখেছি। পরে ইচ্ছা হলে তোমরা দেখতে পারবে। প্রয়োজন মনে করলে ওই লোকগুলোর সাথে তোমরা নিজেরা কথা বলতে পারো। আমি শুধু মূল বিষয়গুলো বলছি।”

“কথা বের করলে কীভাবে? কীভাবে জানো ওরা সত্যি কথা বলছে?”

ভুরু কোঁচকালো ফোরেল। “আমি ভালোমানুষের মতো ব্যবহার করিনি। হুমকি দিয়েছি, ভয় দেখিয়েছি, নির্দয়ের মতো প্রোব ব্যবহার করেছি। ওরা কথা বলেছে। বিশ্বাস করো সত্যি কথাই বলেছে।”

“প্রাচীন যুগে” অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল তৃতীয়জন, “ব্যবহার করা হতো পিওর সাইকোলজি। ব্যথাহীন এবং তুমি নিশ্চয়ই জানো তাতে মিথ্যা কথা বলার কোনো সুযোগই থাকতো না।”

“বেশ, প্রাচীন যুগের অনেক কিছুই ভালো ছিল,” শুকনো গলায় বলল ফোরেল। “এখন বর্তমান যুগ।”

“সে কি চায় এখানে,” ক্লান্ত অথচ একগুয়ে গলায় বলল চতুর্থজন। “এই অদ্ভুত রোমান্টিক চরিত্রের জেনারেল?”

তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকাল ফোরেল। “তোমার কি ধারণা সে তার অধীনস্থদের সাথে রাষ্ট্রের সব বিষয় নিয়েই কথা বলবে? ওরা কিছুই জানে না। চেষ্টা করেও কোনো কথা বের করতে পারিনি, গ্যালাক্সি জানে।”

“অর্থাৎ আমাদের সামনে একটাই পথ-”

“নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” আবার নিঃশব্দে টেবিলের উপর আঙুল দিয়ে তাল ঠুকতে লাগল ফোরেল! “এই তরুণ এম্পায়ারের একজন সামরিক নেতা, অথচ ভান করছে যেন একজন ধনী ব্যক্তি পেরিফেরির এই অদ্ভুত কোণায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নক্ষত্রগুলো ভ্রমণে বেরিয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে আসল উদ্দেশ্য সে আমাদের জানাতে চায় না। এম্পায়ার একবার আমাদের হামলা করার চেষ্টা করেছিল, এই ঘটনার সাথে এটা যোগ দিলেই একটা অশুভ সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রথম হামলা ব্যর্থ হয়েছিল। সেকারণে এম্পায়ার আমাদের ভালবাসবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।”

“তুমি কিছুই জানতে পারোনি, রক্ষনাত্মক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল চতুর্থজন, “তুমি কোনো তথ্যই বের করতে পারোনি?”

“আমি কিছুই বের করতে পারবো না।” অলস সুরে জবাব দিল ফোরেল। “কোথাও বাণিজ্যিক বিদ্রোহের কোনো খবর নেই। একতা আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“দেশ প্রেম?” তৃতীয়জনের কণ্ঠে অবজ্ঞার সুর।

“গোল্লায় যাক দেশপ্রেম।” শান্ত সুরে বলল ফোরেল। “তোমার কি ধারণা ভবিষ্যৎ সেকেণ্ড এম্পায়ারের জন্য আমি তিল পরিমাণ নিউক্লিয়ার ইমেনেশন ত্যাগ করব? কোনো ট্রেড মিশনের উপর ঝুঁকি নেব? তোমার কি মনে হয় এম্পায়ারের আগ্রাসন তোমার বা আমার ব্যবসায়ে সাহায্য করবে? যদি এম্পায়ার বিজয়ী হয় তখন যুদ্ধের সুফল ভোগ করার জন্য ভূঁইফোঁড়ের মতো অনেকেই দাঁড়িয়ে যাবে।”

“ঠিকই বলেছে।” শুকনো গলায় বলল চতুর্থজন।

আচমকা নিজের নীরবতা ভাঙল দ্বিতীয়জন। রাগের সাথে এমনভাবে চেয়ারে নড়ে চড়ে বসল যার ফলে শরীরের ওজনে আর্তনাদ করে উঠল চেয়ারটা। “কিন্তু এই কথা বলে লাভ কী? এম্পায়ার জিততে পারবে না, পারবে? সেলডন নিশ্চয়তা দিয়েছেন আমরাই সেকেণ্ড এম্পায়ার তৈরি করব। এটা শুধু মাত্র আরেকটা ক্রাইসিস। আগে আরো তিনটা হয়েছিল।”

“আরেকটা ক্রাইসিস, হ্যাঁ!” ধ্যানমগ্ন সুরে বলল ফোরেল। “কিন্তু প্রথম দুটোর ক্ষেত্রে পথ দেখানোর জন্য ছিলেন স্যালভর হার্ডিন; তৃতীয়বারে ছিলেন হোবার ম্যালো। তাদের কেউই এখন আমাদের সাথে নেই।”

বাকি সবার দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে আবার শুরু করল সে, “সেলডনের সাইকোহিস্টোরির যে নিয়মের উপর নির্ভর করে আমরা ভরসা পাই তার ভেতর সম্ভবত এমন কোনো চালক আছে যার জন্য বিশেষ করে ফাউণ্ডেশন-এর জনগণের নিশ্চিত স্বাভাবিক উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। সেলডন ল’এর সহায়তা পেতে হলে আগে নিজেকে চেষ্টা করতে হবে।”

“সময়ের প্রয়োজনেই মানুষ তৈরি হয়,” বলল তৃতীয়জন। “আরেকটা প্রবাদ।”

“এটার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না,” স্বীকার করল ফোরেল। “আমার · মনে হচ্ছে, যদি এটা চার নম্বর ক্রাইসিস হয় তা হলে সেলডন পূর্বানুমান করে রেখেছেন। যদি করে রাখেন তা হলে এটা ঠেকানো যাবে এবং কোনো-না-কোনো উপায় অবশ্যই আছে।

“এম্পায়ার আমাদের চেয়ে শক্তিশালী; সবসময়ই ছিল। কিন্তু এই প্রথমবার আমরা তার সরাসরি আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি, ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাকে ঠেকানো যাবে, কিন্তু সরাসরি শক্তি প্রয়োগ না করে ঠেকাতে হবে পূর্বের ক্রাইসিসগুলোর সময়ে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে সেরকমই কোনো পদ্ধতিতে। শত্রুর দুর্বল দিক খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”

“সেই দুর্বল দিকটা কী?” জিজ্ঞেস করল চতুর্থজন। “তোমার কোনো ধারণা?”

“না। এই কথাটাই আমি বলার চেষ্টা করছি। আমাদের অতীতের মহান নেতারা সবসময়ই শত্রুর দুর্বল দিক খুঁজে বের করে সেদিকেই লক্ষ্য স্থির করতেন। কিন্তু এখন-”

তার কণ্ঠে ফুটে উঠল অসহায়ত্ব, কিন্তু কয়েক মুহূর্ত কেউ কিছু বলল না।

তারপর চতুর্থজন বলল, “আমাদের গুপ্তচরের প্রয়োজন।”

আগ্রহের সাথে তার দিকে ঘুরল ফোরেল। “ঠিক! এম্পায়ার কখন আক্রমণ করবে জানি না। নিশ্চয়ই একটা সময় ধরা আছে।”

“হোবার ম্যালো নিজে ইম্পেরিয়াল ডমিনিয়নের ভেতরে ঢুকেছিলেন।” দ্বিতীয়জনের প্রস্তাব।

কিন্তু মাথা নাড়ল ফোরেল। “এত সরাসরি কিছু করা যাবে না। অমাদের বয়স নেই; এবং সকলেই লাল ফিতা আর প্রশাসনিক জটিলতায় ফেঁসে আছি। আমাদের প্রয়োজন তরুণ একজন যে এখনো সরাসরি ফিল্ডে কাজ করছে।”

“স্বাধীন বণিক?” জিজ্ঞেস করল চতুর্থজন। এবং মাথা নেড়ে ফিসফিস করে বলল ফোরেল, “যদি এখনো সময় থাকে।”

.

৩. অদৃশ্য হাত

বেল রিয়োজ বিরক্তিকর পায়চারী থামিয়ে তার এইডের দিকে আশা নিয়ে তাকালেন। “স্টারলেট থেকে কোনো সংবাদ?”

“কিছুই না। স্কাউটিং পার্টি প্রায় এক চতুর্থাংশ স্পেস চষে ফেলেছে, কিন্তু যন্ত্রে কিছুই ধরা পড়েনি। কমাণ্ডার ইয়ুম রিপোর্ট করেছেন তিনি পাল্টা আক্রমণের জন্য তৈরি।”

মাথা নাড়লেন জেনারেল। “না, একটা পেট্রল শিপের জন্য এখনই এত বড়ো ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। তাকে বল-দাঁড়াও! লিখে দিচ্ছি। কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে ট্রান্সমিট করবে।

কথা বলতে বলতেই মেসেজটা তিনি কাগজে লিখে ফেললেন, তারপর বাড়িয়ে ধরলেন অপেক্ষারত অফিসারের দিকে।”স্যিউয়েনিয়ান এসে পৌঁছেনি এখনো?”

“এখনো পৌঁছেনি।”

“ঠিক আছে, পৌঁছানোর সাথে সাথে আমার কাছে নিয়ে আসবে।”

কেতাদুরস্তভাবে স্যালুট করে চলে গেল এইড। আবার পায়চারী শুরু করলেন জেনারেল।

দ্বিতীয়বার দরজা খোলার পর ডুসেম বারকে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। এইডের পিছু নিয়ে ধূসর কামরায় ঢুকলেন তিনি। ছাঁদে গ্যালাক্সির, হলোগ্রাফিক মডেল এবং ঠিক তার কেন্দ্রের নিচে ফিল্ড ইউনিফর্ম পরে বেল রিয়োজ দাঁড়িয়ে আছেন।

“প্যাট্রিশিয়ান, শুভদিন!” পায়ের ঠেলায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন জেনারেল। এইড কে বললেন, “আমি না খোলা পর্যন্ত ঐ দরজা বন্ধ থাকবে। “ তারপর হাত নেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

পা ফাঁক করে সিউয়েনিয়ান এর মুখোমুখি দাঁড়ালেন তিনি, হাত পিছনে, চিন্তিত, ধীরে ধীরে পায়ের গোড়ালির উপর ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছেন।

তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন, “প্যাট্রিশিয়ান, আপনি সম্রাটের প্রতি অনুগত?”

নিশ্চুপ বার শুধু একটা ভুরু বাঁকা করলেন, “ইম্পেরিয়াল রুল পছন্দ করার কোনো কারণ আমার নেই।”

“অর্থাৎ অন্যভাবে বলা যায় আপনি বিশ্বাসঘাতক হতে পারেন।”

“ঠিক। আবার এভাবেও দেখতে পারেন, বিশ্বাসঘাতক না হয়ে সক্রিয় সাহায্যকারী হতে পারি।”

“এটাও ঠিক। তবে এই মুহূর্তে সাহায্য করতে না চাইলে,” জোর গলায় বললেন রিয়োজ, “সেটাকে বিশ্বাসঘাতকতা ধরা হবে।”

বার-এর দুই ভুরু এক হয়ে গেল। “চোখা বাক্যবান অধীনস্থদের জন্য তুলে রাখুন। আপনি কী চান এবং কী প্রয়োজন সেটা বলাই যথেষ্ট।”

পায়ের উপর পা তুলে বসলেন রিয়োজ। “বার, ছয় মাস আগে আমাদের কিছু আলোচনা হয়েছিল।”

“আপনার সেই জাদুকরের ব্যাপারে?”

“হ্যাঁ। আমি কী করব বলেছিলাম, সেটা আপনার মনে আছে?”

মাথা নাড়লেন বার। হাত দুটো অলসভাবে কোলের উপর ফেলে রেখেছেন। “বলেছিলেন ওদেরকে খুঁজে বের করবেন। চারমাস বেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। পেয়েছেন ওদেরকে?

“পেয়েছি,” আর্তনাদ করে উঠলেন রিয়োজ। কথা বলার সময় শক্ত হয়ে গেল ঠোঁট দুটো। যেন অনেক কষ্টে দাঁত দিয়ে পিষে ফেলা থেকে নিবৃত্ত করলেন। “প্যাট্রিশিয়ান, ওরা জাদুকর নয়; ওরা শয়তান। আউটার গ্যালাক্সির ধ্যানধারণার সাথে এর কোনো মিল নেই। একটা নখের সমান ছোট বিশ্ব সম্পদ নেই, জ্বালানি নেই, জনসংখ্যা এতই কম যে ডার্কস্টারের অন্তর্গত অনগ্রসর বিশ্বগুলোতেও এর থেকে বেশি মানুষ বাস করে। অথচ এটা নিয়েই এই অহংকারী এবং উচ্চাকাক্ষী মানুষগুলো নিঃশব্দে এবং ধাপে ধাপে গ্যালাকটিক শাসনের স্বপ্ন দেখছে।

“কেন ওরা এত নিশ্চিত, কোনো তাড়াহুড়ো করছে না। অলসভাবে একটার পর একটা বিশ্ব দখল করে নিচ্ছে; একটা করে শতাব্দীর পরিকল্পনা করে ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে; হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ছে সিস্টেমগুলোর ভেতরে।

“এবং তারা সফল হচ্ছে। থামানোর কেউ নেই। একটা জঘন্য বণিক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে ওরা, যার শিকড় বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে তাদের খেলনা জাহাজগুলো পর্যন্ত যেতে সাহস করে না। নিজেদের প্রতিনিধিদের ওরা বলে বণিক। এই বণিকরা বহু পারসেক দূরদূরান্তে চলে যেতে পারে।”

মাঝখানে বাধা দিয়ে রাগের প্রবাহ থামালেন ডুসেম বার। “তথ্যগুলোর কতখানি সঠিক; কতখানি আপনার রাগের বহিঃপ্রকাশ?”

সৈনিক শান্ত হলেন। “আমি রাগে অন্ধ হয়ে যাইনি। আপনাকে বলেছি আমি প্রথমে সিউয়েনা তারপর ফাউণ্ডেশন-এর নিকটতম বিশ্বগুলোতে গেছি, যেখানে এম্পায়ার অনেক দূরের কিংবদন্তির গল্পের মতো আর বণিকেরা জীবন্ত সত্য। বণিকদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা ছিল ভুল।”

“ফাউণ্ডেশন নিজের মুখে আপনাকে বলেছে যে তারা গ্যালাকটিক ডমিনিয়ন অর্জন করতে চায়?”

“আমাকে বলবে!” আবার রেগে উঠলেন রিয়োজ। “বলার দরকার নেই। কর্মকর্তারা ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু আমি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি; তাদের ধ্যানধারণা; তাদের সুস্পষ্ট গন্তব্য’, সুমহান ভবিষ্যতের ব্যাপারে তাদের নীরব অনুমোদন নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। এসব বিষয় লুকিয়ে রাখা যায় না। এমনকি এই মহাজাগতিক আশাবাদ তারা লুকিয়ে রাখার চেষ্টাও করেনি।”

সিউয়েনিয়ানের মুখে সন্তুষ্টির ছাপ। “খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই ব্যাপারটা আমার গবেষণার ফলাফলের সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে।”

“কোনো সন্দেহ নেই,” বললেন রিয়োজ, তার কণ্ঠে সীমাহীন কৌতুক। “আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রশংসা না করে পারছি না। একই সাথে এটা হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির শাসনের বিরুদ্ধে মারাত্মক বিপদ এবং হুমকিস্বরূপ।”

নিরাসক্তভাবে কাঁধ নাড়লেন বার, আর রিয়োজ হঠাৎ সামনে ঝুঁকে বৃদ্ধের কাঁধে হাত রাখলেন। তীব্র কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালেন তার চোখের দিকে।

বললেন,” শুনুন প্যাট্রিশিয়ান, ওসব বাদ। নিষ্ঠুর হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। ইম্পেরিয়ামের বিরুদ্ধে সিউয়েনার বিদ্রোহ আমার কাছে একটা বোঝার মতো, এবং যে-কোনো মূল্যে আমি সেটা দূর করব। কিন্তু আমি সামরিক লোক, বেসামরিক বিষয়ে নাক গলানো অসম্ভব। আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। বুঝতে পেরেছেন? আমি জানি আপনি বুঝতে পেরেছেন। চল্লিশ বছর আগে কি ঘটেছিল সেটা ভুলে যেতে পারি। আপনার সাহায্য আমার প্রয়োজন। খোলাখুলি স্বীকার করছি।”

তরুণের কণ্ঠে জরুরি তাগাদার সুর। কিন্তু ডুসেম বার নীরবে এবং দৃঢ়ভাবে না বোধক ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন।

আবেদনের সুরে বললেন রিয়োজ, “আপনি বুঝতে পারছেন না, প্যাট্রিশিয়ান, সন্দেহ হচ্ছে আমিও বোঝাতে পারছি না। আপনার গবেষণার বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ আপনি একজন স্কলার। তবে একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। এম্পায়ার সম্বন্ধে আপনার ধারণা যাই হোক, এটা যে বৃহৎ সার্ভিস দিচ্ছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আর্মড ফোর্স বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়ম দুর্নীতি করলেও সামগ্রিকভাবে তারা সভ্যতা, শান্তি বজায় রাখতে বাধ্য। ইম্পেরিয়াম নেভি-ই হাজার হাজার বছর একটা প্যাক্স-ইম্পেরিয়াম তৈরি করে শাসন করছে গ্যালাক্সি । পুরোনো দিনের দীর্ঘস্থায়ী বর্বরতা এবং অরাজকতা দূর করে নক্ষত্র এবং মহাকাশযান চিহ্নের অধীনে গত কয়েক হাজার বছর যে শান্তি বজায় রেখেছে তার কি কোনো মূল্য নেই?

“ভেবে দেখুন, আউটার প্রভিন্সগুলো স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরেও কি এম্পায়ার সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে? আজকের বর্বর গ্যালাক্সিতে স্যিউয়েনা যদি একটা শক্তিশালী নেভির সহায়তা না পায় তা হলে কি বিচ্ছিন্ন বারবারিয়ান ওয়ার্ল্ড হিসেবে টিকতে পারবে?”

“এতটাই খারাপ-এত তাড়াতাড়ি?” ফিসফিস করে বললেন স্যিউয়েনিয়ান।

“না,” স্বীকার করলেন রিয়োজ। “কোনো সন্দেহ নেই আমরা যতদিন বাঁচব ততদিন নিরাপদেই থাকব। কিন্তু আমি লড়াই করছি এম্পায়ারের জন্য; এবং একটা সামরিক ঐতিহ্যের জন্য যার প্রতি আমি নিবেদিত।”

“আপনি কেমন রহস্যময় আচরণ করছেন, আর অন্য ব্যক্তির রহস্যময়তা ভেদ করা আমার জন্য সবসময়ই কঠিন।”

“কোনো ব্যাপার না। ফাউণ্ডেশন-এর ক্রমবর্ধমান হুমকি আপনি বুঝতে পারছেন?”

“আপনি যেটাকে বিপদ বলছেন সেটা আমিই সর্বপ্রথম আপনাকে দেখিয়ে দিই।”

“তা হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। অন্য কেউ শোনার আগেই আপনি ফাউণ্ডেশন-এর কথা শুনেছেন। এম্পায়ারের অন্য যে কারো থেকে এদের ব্যাপারে আপনি সবচেয়ে বেশি জানেন। সম্ভবত বলতে পারবেন কীভাবে ওদেরকে আক্রমণ করা যায়; এবং ওরা কীরকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে সে ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিতে পারেন। আসুন আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করি।”

ডুসেম বার উঠে দাঁড়ালেন। হালকা গলায় বললেন, “আমার সাহায্য অর্থহীন। বরং আপনি কী চান সেটা বলুন।”

“অর্থহীন কিনা তার বিচার করব আমি।”

“না, আমি সত্যিই সিরিয়াস। এম্পায়ারের সমস্ত শক্তি দিয়েও এই ক্ষুদ্র বিশ্বকে দমন করা যাবে না।”

“কেন পারব না?” বেল রিয়োজের চোখে রাগের ঝলক। “না, ওখানেই দাঁড়ান। যাওয়ার সময় হলে আমি বলব। কেন পারব না? যদি ভেবে থাকেন এই শত্রুকে আমি খাটো করে দেখছি তা হলে ভুল করবেন, প্যাট্রিশিয়ান।” নিশ্বাস না ফেলেই কথা বলছেন তিনি। “ফেরার পথে আমি একটা মহাকাশযান হারিয়েছি। ফাউণ্ডেশন এর হাতে পড়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই; আবার দুর্ঘটনায় পড়লে আমি যে পথে আসা-যাওয়া করেছি তার আশপাশে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যেত। ক্ষতি খুব সামান্য হলেও এর মাধ্যমে ফাউণ্ডেশন তার মনোভাব প্রকাশ করেছে। তাদের শক্তি সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই নেই। আপনি কি মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমার উপকার করতে পারেন? ওদের সামরিক শক্তি কী পরিমাণ?”

“আমার কোনো ধারণাই নেই।”

“তা হলে কেন বললেন যে এই সামান্য শত্রুকে আমরা পরাজিত করতে পারব না?”

আবার বসলেন স্যিউয়েনিয়ান, রিয়োজের স্থির দৃষ্টির সামনে থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিলেন। গম্ভীর সুরে বললেন, “কারণ সাইকোহিস্টোরির মূল নীতির উপর আমার বিশ্বাস আছে। এটা অদ্ভুত একটা বিজ্ঞান। হ্যাঁরী সেলডনের হাতে এর গাণিতিক পরিপূর্ণতা অর্জিত হয় এবং তার সাথেই শেষ হয়। কারণ হ্যারি সেলডনের মৃত্যুর পর আর কেউই এটাকে সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণে এটাই সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার। একজন মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ না করে এটা দলবদ্ধ মানুষের আচরণ বিশ্লেষণের গাণিতিক সূত্র তৈরি করেছে।”

“তো-”

“সেলডন এবং তার সহকারীরা সাইকোহিস্টোরির সাহায্যে ফাউণ্ডেশন তৈরি করেন। সেকেণ্ড গ্যালাকটিক এম্পায়ার গড়ে তোলার জন্য, সময়, শর্তসমূহ সবই গাণিতিক ভাবে নির্বাচন করা হয়।”

“বিরক্ত সুরে বললেন রিয়োজ, “অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন আমি ফাউণ্ডেশন আক্রমণ করব এবং পরাজিত হব এবং এরকম এরকম কারণে এমন একটা যুদ্ধ হবে। আপনার ধারণা আমি একটা রোবট যে শুধু পূর্ব নির্ধারিত ধ্বংসের পথ অনুসরণ করছে।”

“না,” তীব্র গলায় বললেন বৃদ্ধ প্যাট্রিশিয়ান। “আগেই বলেছি এই বিজ্ঞান একজন মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে না। আরো বিশাল পরিব্যাপ্তির ভবিষ্যদ্বাণী করে।”

“তা হলে আমরা গডেস অব হিস্টোরিক্যাল নেসেসিটির শক্ত হাতে বন্দি।”

“সাইকোহিস্টোরিক্যাল নেসেসিটি, নরম গলায় শুদ্ধ করে দিলেন বার।

“আর যদি আমি আমার বিশেষ স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করি। সামনের বছর আক্রমণ করি বা মোটেই আক্রমণ না করি? এই গডেস কতখানি প্রভাবিত হবে? কতখানি সহযোগিতা করবে।”

কাঁধ নাড়লেন বার। “এখনই আক্রমণ করেন বা মোটেই না করেন; একটা মহাকাশযান দিয়ে অথবা এম্পায়ারের পুরো শক্তি দিয়ে আক্রমণ করেন; সামনাসামনি লড়াই অথবা গেরিলা যুদ্ধ; যা ইচ্ছা হয় করেন। তারপরেও আপনি পরাজিত হবেন।”

“কারণ হ্যারি সেলডনের অদৃশ্য হাত?”

“কারণ মানবীয় আচরণিক গণিতের অদৃশ্য হাত যা কখনো থামানো যায় না, গতি পরিবর্তন করা যায়, দেরি করানো যায় না।”

হিমশীতল দৃষ্টিতে দুজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর এক পা পিছিয়ে গেলেন জেনারেল।

স্বাভাবিক গলায় বললেন, “আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। একটা অদৃশ্য হাতের বিরুদ্ধে একটা জীবিত ইচ্ছার প্রতিযোগিতা।”

*

ক্লীয়ন, দ্বিতীয়….তাকে বলা হয় “দ্য গ্রেট।” ফার্স্ট এম্পায়ারের সর্বশেষ শক্তিশালী সম্রাট। তার দীর্ঘ শাসনামলে রাজনৈতিক এবং শিল্পকলার ক্ষেত্রে যে পুনর্জাগরণ সুচিত হয় সেজন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। আবার বেল রিয়োজের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণেও তিনি বেশ আলোচিত, এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি শুধুই ছিলেন “রিয়োজের সম্রাট।” এটা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের শাসনের সুফলকে ঢেকে দেওয়ার জন্য তার রাজত্বের শেষ বয়সের ঘটনাগুলো…

এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

.

৪. সম্রাট

দ্বিতীয় ক্লীয়ন, লর্ড অব দ্য ইউনিভার্স। দ্বিতীয় ক্লীয়ন অজানা এক কঠিন রোগে ভুগছেন। মানুষের চরিত্রের অস্বাভাবিক নষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর বিচারে দুটো বক্তব্য যেমন একটা থেকে আরেকটাকে পৃথক করা যায় না, তেমনি সঙ্গতিহীন।

ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। কিন্তু এসব ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় ক্লীয়নের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ তাতে তার ব্যক্তিগত দুর্ভোগ ইলেকট্রন পরিমাণও কমবে না। এটা ভেবে তিনি একটুও শান্তি পান না যে তার পরদাদার পরদাদা ছিল একটা বর্বর গ্রহের জবরদখলকারী রাজা, আর তিনি নিজে সুদূর অতীতের গ্যালাকটিক রুলারের বংশধর হিসেবে অ্যামেনটিক দ্য গ্রেটের বিশাল জমকালো প্রাসাদে বাস করছেন। এই কথা মনে করে তিনি মোটেই আরাম বোধ করেন না যে তার বাবার প্রচেষ্টার কারণেই সুদীর্ঘ অরাজকতা এবং বিদ্রোহ দমন করে ষষ্ঠ স্ট্যানিলের অধীনে যে শান্তি এবং একতা ছিল তা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়; যার ফলশ্রুতিতে তার পঁচিশ বছরের রাজত্বকালে ছোটখাটো কোনো বিদ্রোহও রাজকীয় মহিমাকে কলুষিত করতে পারেনি।

গ্যালাক্সির সম্রাট এবং সকল দুর্ভোগের লর্ড তার বালিশের শক্তিবর্ধক ক্ষেত্রে মাথাটা একটু পিছনের দিকে সরানোর সময় আর্তনাদ করে উঠলেন। একটু আরামবোধ করলেন, দেহ শিথিল হল। কষ্ট করে উঠে বসলেন তিনি। গোমড়া মুখে তাকিয়ে রইলেন গ্র্যাণ্ড চেম্বারের দূরের দেয়ালের দিকে। এই শয়নকক্ষেই তিনি কিছু সময়ের জন্য একা হতে পারেন। বিশাল কামরা। সব কামরাই বিশাল।

তবে দরবারের ফিটফাট ভাব, তাদের মিথ্যে ছলনা, ভোতামুখের চেয়ে এখানে একা একা পঙ্গুত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ভালো। ঐসব মুখোশের আড়ালে তার মৃত্যুর পর সিংহাসন দখলের যে নীরব হিসাব-নিকাশ প্রতিনিয়ত চলছে সেগুলো দেখার চেয়ে একা থাকাই ভালো।

তিন পুত্রের কথা মনে পড়ল তার। সুস্থ, সবল, উদ্যমী সম্ভাবনাময় তিন তরুণ। এই দুর্দিনে তারা কোথায়? অপেক্ষা করছে, সন্দেহ নেই। একজন আরেকজনের উপর নজর রাখছে; আর সবাই নজর রাখছে তার উপর।

অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। ব্রুডরিগ এখন তার সাক্ষাত লাভের জন্য ব্যগ্রভাবে অপেক্ষা করছে। নীচু জাত, বিশ্বস্ত ব্রুডরিগ; বিশ্বস্ত এই কারণে যে সে সকলের ঘৃণার পাত্র এবং এই একটা ক্ষেত্রে যে কয়েক ডজন ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী দল তার দরবারকে বিভক্ত করে রেখেছে তারা সকলে একমত।

ব্রুডরিগ বিশ্বস্ত ফেভারিট, যার বিশ্বস্ত না হয়ে উপায় নেই, কারণ তার কাছে যদি গ্যালাক্সির সবচেয়ে দ্রুততম মহাকাশযান না থাকে এবং সম্রাটের মৃত্যুর পরপরই যদি সে সেটা নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে তা হলে পরেরদিনই তার স্থান হবে রেডিয়েশন চেম্বার।

দ্বিতীয় ক্লীয়ন তার রাজকীয় শয্যার হাতলে একটা মসৃণ বোতাম স্পর্শ করলেন এবং শেষ মাথায় বিশাল দরজা স্বচ্ছ হয়ে উঠল।

ক্রিমসন কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে এসে ডরিগ হাটু গেড়ে বসে সম্রাটের দুর্বল হাতে চুমু খেল।

“কেমন আছেন, মহানুভব?” নিচু উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করল প্রিভি সেক্রেটারি।

“বেঁচে আছি,” হাত নেড়ে উন্মা প্রকাশ করলেন সম্রাট। “যদি এটাকে বেঁচে থাকা বল, ঐ গর্দভগুলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের বই পড়তে পারে বলেই আমাকে গবেষণার নতুন বিষয় বলে মনে করে। নিরাময়ের নতুন কোনো উপায়, কেমিক্যাল, ফিজিক্যাল, বা নিউক্লিয়ার যা আগে কখনো চেষ্টা করা হয়নি-এমন কিছু পেলেই হল, আগামী কালই তারা এসে হাজির হবে সেটা আমার উপর প্রয়োগ করার জন্য। আর তার কার্যকারীতা প্রমাণ করার জন্য নতুন আবিষ্কৃত কোন প্রাচীন বই মেলে ধরবে সামনে।

“আমার বাবার মতে, রাগের সাথে কথা বলছেন তিনি এমন কোনো দ্বিপদ প্রাণী নেই যে নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ না করে কোনো রোগ নিরাময়ের গবেষণা করতে পারবে। এমন কেউ নেই যে সামনে প্রাচীন যুগের একটা বই না রেখে পালস দেখতে পারবে। আমি অসুস্থ, আর ওরা বলছে ‘অজানা। সব গাধা! হাজার বছর ধরে মানব শরীরে যে পরিবর্তন হচ্ছে সেটা প্রাচীন যুগের মানুষেরা কীভাবে গবেষণা করবে, কীভাবেই বা নিরাময়ের ব্যবস্থা করবে। প্রাচীন যুগের মানুষগুলো বেঁচে থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম।”

নিচু স্বরে অভিশাপ দিলেন সম্রাট আর ব্রুডরিগ কর্তব্যপরায়ন ভূতত্যর মতো অপেক্ষা করতে লাগলো। দ্বিতীয় ক্লীয়ন জড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “বাইরে কতজন অপেক্ষা করছে?”

মাথার ইশারায় তিনি দরজার দিকে দেখালেন। ধৈর্যের সাথে উত্তর দিল ব্রুডরিগ। “গ্রেট হল স্বাভাবিক সংখ্যা ধারণ করছে।”

“বেশ, অপেক্ষা করতে দাও। রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ আমাকে সবসময়ই ঘিরে রেখেছে। গার্ড ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিয়েছে? আর নইলে ঘোষণা করতে বল যে আমি আজকে দরবারে বসব না। গার্ডের চেহারা যেন শোক কাতর দেখায়। শেয়াল গুলোর ভেতর সবচেয়ে চতুরগুলো নিজেদের ভেতর বেঈমানী করে বসতে পারে।” বিরক্তিতে নাক কুঁচকালেন তিনি।

“গুজব শোনা যাচ্ছে, মহানুভব” হালকা গলায় বলল ব্রুডরিগ, “আপনার সমস্যা আসলে হার্টে।”

একটু আগে সম্রাটের বিরক্তিতে কুঁচকানো মুখ ছোট হাসিতে পাল্টে গেল। “এটা আমার চেয়ে অন্যদেরই বেশি কষ্ট দেবে। যাই হোক, তুমি কি কাজে এসেছ শোনা যাক।”

নির্দেশ পেয়ে হাটু গাড়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালো ব্রুডরিগ। “ব্যাপারটা জেনারেল বেল রিয়োজকে নিয়ে, সিউয়েনার মিলিটারি গভর্নর।”

“রিয়োজ?” দ্বিতীয় ক্লীয়ন ক্লান্তভাবে ভুরু কুঁচকালেন। আমি তাকে নিয়োেগ দেইনি। সেই কি কয়েক মাস আগে একটা অদ্ভুত সংবাদ পাঠিয়েছিল? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এম্পায়ার এবং সম্রাটের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটা এলাকায় সামরিক অভিযান শুরুর অনুমতি চেয়েছিল।”

“ঠিক মহানুভব।”

হাসলেন সম্রাট। “এইরকম জেনারেল এখনো আমার সাথে আছে, ব্রুডরিগ? মনে হয় তার ভেতরে পুরোনো ধ্যান ধারণার পুনর্জন্ম ঘটেছে। তারপরে কী হল? তুমি নিশ্চয়ই একটা জবাব দিয়েছ?”

“দিয়েছি, মহানুভব। তাকে নির্দেশ দিয়েছি আরো তথ্য পাঠাতে এবং ইম্পেরিয়ামের নির্দেশ ছাড়া কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ যেন না নেয়।”

“হুমম্। যথেষ্ট নিরাপদ। কে এই রিয়োজ। কখনো দরবারে ছিল?”

মাথা নাড়ল ব্রুডরিগ। দশ বছর আগে গার্ড বাহিনীর ক্যাডেট হিসেবে জীবন শুরু করে। লেমুল ক্লাস্টারের ঘটনায় তার কিছু ভূমিকা ছিল।”

“লেমুল ক্লাস্টার? তুমি জানো আমার স্মরণশক্তি-ঐ যে এক তরুণ সৈনিক সামনের সারির দুটো যুদ্ধযান মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করেছিল…আহ– এধরনের কিছু একটা?” অধৈর্যভাবে তিনি হাত নাড়লেন। “আমার বিস্তারিত মনে নেই। বেশ সাহসী ভূমিকা ছিল।”

“রিয়োজই সেই সৈনিক।” শুকনো গলায় বলল ব্রুডরিগ। এজন্য তার পদোন্নতি হয়। একটা যুদ্ধযানের ক্যাপ্টেন হিসেবে ফিল্ড ডিউটি পায়।”

“আর এখন একটা বর্ডার সিস্টেমের মিলিটারি গভর্ণর এবং এখনো তরুণ। যোগ্য লোক, ব্রুডরিগ!”

“বিপজ্জনক, মহানুভব। সে অতীতে বাস করে। প্রাচীন যুগের একজন স্বপ্নচারী। এধরনের লোকগুলো নিজেদের কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু তাদের বাস্তব জ্ঞানের অভাব অন্যদের বিপদ ডেকে আনে। আমি যতদূর জানি অধীনস্থরা পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে। সে আপনার জনপ্রিয় জেনারেলদের একজন।”

“তাই?” খুশি হলেন সম্রাট।”বেশ, শোন, ব্রুডরিগ, আমি শুধু অযোগ্য লোকের সেবা পেতে চাই না। নিজেদের বিশ্বস্ততা তারা প্রমাণ করতে পারেনি।”

“অযোগ্য বিশ্বাসঘাতকদের দিয়ে কোনো বিপদ হবে না। বরং যোগ্য লোকগুলোর উপরই চোখ রাখতে হবে।”

“তুমিও তাদের একজন, ফ্রডরিগ?” হাসলেন দ্বিতীয় ক্লীয়ন তারপরই কাতরে উঠলেন ব্যথায়। “বেশ, ওসব কথা ভুলে যাও। তরুণ সেনাপতির বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি? তুমি নিশ্চয়ই আমাকে শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে আসনি?”

“জেনারেল রিয়োজ এর কাছ থেকে আরেকটা মেসেজ এসেছে, মহানুভব।”

“তাই? কী সংবাদ পাঠিয়েছে?”

“এই অসভ্যদের গ্রহে তিনি গুপ্তচর পাঠিয়েছেন এবং জোরপূর্বক অনুসন্ধান চালিয়েছেন। তার রিপোর্ট দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর। ইওর ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির বর্তমান অবস্থায় সেগুলো বলে বিরক্ত করতে চাই না। তা ছাড়া কাউন্সিল অব লর্ডদের অধিবেশনে সব বিস্তারিত আলোচনা হবে।” বলেই সে আড়চোখে ম্রাটের দিকে তাকাল।

ভুরু কুঁচকালেন দ্বিতীয় ক্লীয়ন। “দ্য লর্ডস? বিষয়টা তাদের সামনে নিতে হবে, ফ্রডরিগ? অর্থাৎ রাজকীয় সনদের আরো বিস্তারিত ব্যখ্যার দাবি উঠবে। সবসময়ই তাই হয়।”

“এড়ানো যাবে না, মহানুভব। হতে পারে আপনার পিতা রাজকীয় সনদ ছাড়াই সর্বশেষ বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু ওটা আছে, আমাদের কিছু সময়ের জন্য তা মেনে চলতেই হবে।”

“ঠিকই বলেছ। তা হলে লর্ডদের অধিবেশন ডাকতেই হয়। কিন্তু এত রাখঢাক কেন। অল্প কিছু সৈন্যের সাহায্যে সুদূর সীমান্তে সাফল্য অর্জন পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় বিষয়।”

পাতলা একটু হাসল ফ্রডরিগ। ঠাণ্ডা গলায় বলল, “বিষয়টা একজন আবেগপ্রবণ ইডিয়টের; কিন্তু একজন আবেগপ্রবণ ইডিয়টও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যদি কোনো আবেগহীন বিদ্রোহী তাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে। মহানুভব, লোকটা ইম্পেরিয়াল কোর্ট এবং সীমান্ত দুজায়গাতেই জনপ্রিয়। বয়সে তরুণ। যদি সে একটা বা দুটো বর্বর গ্রহ দখল করতে পারে তবে সে বিজয়ী সেনাপতির সম্মান লাভ করবে। এখন একজন তরুণ সেনাপতি যে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলার জন্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে সে যে-কোনো সময়ই বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি আপনার বাবা যেভাবে রাইকার-এর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছিল আপনার সাথে সেরকম কিছু করার ইচ্ছা তার না থাকলেও, আমাদের ডোমেইন এর কোনো অনুগত লর্ড তাকে নিজের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।”

একটা হাত সামান্য একটু নাড়তেই ব্যথায় শক্ত হয়ে গেলেন দ্বিতীয় ক্লীয়ন। দেহ খানিকটা শিথিল করলেন, কিন্তু মুখের হাসি দুর্বল, কণ্ঠস্বর ফিসফিসানির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। “তুমি কাজের লোক, ব্রুডরিগ। বরাবরই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সন্দেহ করো। আর নিজের নিরাপত্তার জন্য তার অর্ধেক আমাকে শুনতে হয়। লর্ড কাউন্সিলকে বিষয়টা জানাও। ওরা কি বলে শুনি, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। ঐ তরুণ আশা করি এর মধ্যে কোনো আগ্রাসী ভূমিকা নেয়নি।”

“সেরকম কোনো রিপোর্ট আসেনি। তবে এরই মধ্যে সে রিইনফোর্সমেন্ট চেয়েছে।”

“রিইনফোর্সমেন্ট!” বিস্ময়ে চোখ ছোট হয়ে গেল সম্রাটের। “তার হাতে কি পরিমাণ ফোর্স আছে?”

“দশটা যুদ্ধযান, মহানুভব, সেইসাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিলিয়ারি ভেসেল। পুরোনো গ্র্যান্ড ফ্লিট থেকে উদ্ধারকৃত দুটো মোটর চালিত যান, একটার শক্তির উৎস ব্যাটারি। অন্য দুটো গত পঞ্চাশ বছরের নতুন আবিষ্কার তবে মেরামতযোগ্য।”

“যে-কোনো যুক্তিসঙ্গত দখলের জন্য দশটা যুদ্ধযান যথেষ্ট। কেন, আমার বাবা দশটারও কম যুদ্ধযান দিয়ে প্রথম যুদ্ধজয় করেননি। যে অসভ্যদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করতে চাইছে তারা কারা?”

অবজ্ঞার সাথে একজোড়া ভুরু কপালে তুলল প্রিভি সেক্রেটারি। সে নাম বলেছে ‘ফাউণ্ডেশন’।”

“ফাউণ্ডেশন? সেটা আবার কী?”

“কোনো রেকর্ড নেই, মহানুভব। আর্কাইভ খুঁজে দেখেছি। গ্যালাক্সির যে অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে সেটা প্রাচীন অ্যানাক্রন প্রদেশের অংশ যেখানে গত দুই শতাব্দী ধরে চলছে দস্যুতা, বর্বরতা এবং অরাজকতা। ঐ প্রদেশে ফাউণ্ডেশন নামে কোনো গ্রহ নেই। তবে একটা রেকর্ডে আছে যে ঐ প্রদেশ আমাদের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে একদল বিজ্ঞানীকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল একটা এনসাইক্লোপেডিয়া তৈরি করার দায়িত্ব দিয়ে।” মুখ বাঁকা করে হাসল সে। “সম্ভবত বিজ্ঞানীরা সেটার নাম দিয়েছিল এনসাইক্লোপেডিয়া ফাউণ্ডেশন।”

“বেশ,” গম্ভীর গলায় বললেন সম্রাট, “খুব সামান্য অগ্রগতি।”

“আমি নিজে অগ্রসর হচ্ছি না, মহানুভব। ঐ অঞ্চলে অরাজকতা বেড়ে যাওয়ার পর বিজ্ঞানীদলের আর কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। যদি তাদের বংশধরেরা এখনো বেঁচে থাকে এবং একই নাম ব্যবহার করে তা হলে কোনো সন্দেহ নেই তারাও বর্বর হয়ে গেছে।”

“আর তাই সে রিইনফোর্সমেন্ট চায়।” সম্রাট হিংস্র দৃষ্টিতে তার সেক্রেটারির দিকে তাকালেন। “অদ্ভুত; প্রথমে যুদ্ধ শুরু করার অনুমতি আর আক্রমণ শুরু করার আগেই রিইনফোর্সমেন্ট। এখন এই রিয়োজের কথা আমার মনে পড়ছে। অভিজাত বংশের সন্তান। ব্রুডরিগ, এখানে এমন কোনো জটিলতা আছে আমি যা ধরতে পারছি না। আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

যে চকচকে শিট তার অসাড় পা দুটোকে ঢেকে রেখেছে সেটার উপর আনমনে আঙুল বুলালেন তিনি। বললেন, “ওখানে আমার একজন লোক দরকার; যার চোখ আছে, বুদ্ধি আছে এবং অনুগত। ব্রুডরিগ-”

অনুগতভাবে কুর্নিশ করল সেক্রেটারি। “এবং যুদ্ধযান মহানুভব?”

“এখনই না!” দেহকে একটু নড়ানোর ফলে ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করলেন সম্রাট। কাঁপা কাঁপা আঙুল তুলে বললেন, “যতক্ষণ না আমি আরো জানতে পারছি। আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ পরে কাউন্সিল অব লর্ডদের অধিবেশন শুরু করতে বল।”

বালিশের আরামদায়ক ফোর্সফিল্ডে মাথা রাখলেন তিনি, “এখন যাও, ফ্রডরিগ, এবং ডাক্তারকে পাঠিয়ে দাও। সবগুলোর মাঝে ওই বেটাই সবচেয়ে অযোগ্য।”

*

৫. যুদ্ধ শুরু

স্যিউয়েনার রেডিয়েটিং পয়েন্ট থেকে এম্পায়ারের বাহিনী সতর্কতার সাথে পেরিফেরীর অজানা অন্ধকারে পৌঁছল। যে সীমাহীন দূরত্ব গ্যালাক্সির এই প্রান্তের নক্ষত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সেই দূরত্ব পেরিয়ে তারা ছুটে চলল ফাউণ্ডেশন প্রভাবিত অঞ্চলের বাইরের সীমানার দিকে।

গত দুই শতাব্দী থেকে বিচ্ছিন্ন বিশ্বগুলো নিজেদের মাটিতে আবার অনুভব করল ইম্পেরিয়াল ওভারলর্ডদের উপস্থিতি। ভয়ানক মারণাস্ত্র দেখে তারা আত্মসমর্পণ করল বিনাশর্তে।

দখল করা প্রতিটি বিশ্বে স্থাপন করা হল গ্যারিসন। সৈনিকদের পরনে ইম্পেরিয়াল ইউনিফর্ম, কাঁধে মহাকাশযান এবং নক্ষত্রচিহ্ন। এগুলো দেখে বৃদ্ধের মনে পড়ল দাদার দাদার আমলের কথা যখন মহাবিশ্বে আসলেই শান্তি ছিল এবং এই একই চিহ্ন শাসন করত সবকিছু।

বিশাল যুদ্ধযানগুলো ফাউণ্ডেশনকে ঘিরে আরো ঘাঁটি তৈরি করার জন্য এগিয়ে চলল। কাজটা যেন কাপড়ের নিখুঁত বুনন। প্রতিটা বিশ্ব বুনটের নির্দিষ্ট স্থানে নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলার পর রিপোর্ট আসতে লাগলো নক্ষত্রের আলো বঞ্চিত এক রুক্ষ পাথুরে গ্রহে, যেখানে বেল রিয়োজ তার হেডকোয়ার্টার তৈরি করেছেন।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ডুসেম বারের দিকে ঘুরলেন তিনি, “বেশ, কী মনে হচ্ছে আপনার প্যাট্রিশিয়ান?”

“আমার? তার কি কোনো গুরুত্ব আছে? আমি বেসামরিক লোক।” দেয়াল থেকে বেরিয়ে থাকা এলোমেলো পাথরের আঁকাবাঁকা ছায়াগুলোর দিকে তিনি অস্বস্তি নিয়ে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। এই ছোট কামরার ভেতরের কৃত্রিম আলো এবং কৃত্রিম বাতাস নিপ্রাণ গ্রহে জীবনের একমাত্র অস্তিত্ব।

“আমার সাহায্যের বিনিময়ে,” বিরবির করে বললেন তিনি, “আপনি আমাকে স্যিউয়েনায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন?”

“এখন না। এখন না।” জেনারেল প্রাচীন অ্যানাক্রন প্রিফেক্ট এর চমৎকার স্বচ্ছ বৃত্তাকার মানচিত্রের দিকে চেয়ার ঘোরালেন। “এই ঝামেলাটা শেষ হলেই আপনি ফিরে যেতে পারবেন। আমি দেখব যেন পুরোনো এস্টেট আবার ফিরে পান এবং বংশ পরম্পরায় ভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করব।”

“ধন্যবাদ।” বললেন বার, কণ্ঠে তিরস্কার। “তবে আমার মনে হয় না সফল পরিসমাপ্তি হবে।”

কর্কশভাবে হাসলেন রিয়োজ। “আবার সেই আধ্যাত্মিক ভবিষ্যদ্বাণী শুরু করবেন না।” হালকাভাবে তিনি মানচিত্রের অদৃশ্য বৃত্তাকার আউটলাইনের উপর হাত বোলালেন। “রেডিয়ান প্রজেকশনের সাহায্যে মানচিত্রের অর্থ বের করতে পারেন? পারেন? বেশ, নিজেই দেখুন। সোনালি রঙের নক্ষত্রগুলো ইম্পেরিয়াল টেরিটোরি, লালরঙের নক্ষত্রগুলো ফাউণ্ডেশন-এর বশ্যতা স্বীকার করেছে, এবং গোলাপি রঙের নক্ষত্রগুলো সম্ভবত ফাউণ্ডেশন-এর অর্থনৈতিক প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। এবার লক্ষ করুন-”

একটা গোলাকার নব চাপলেন রিয়োজ, ধীরে ধীরে মানচিত্রের সাদা কিছু অংশ গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করল, অনেকটা লাল আর গোলাপি অংশগুলোকে বৃত্তাকারে ঘিরে ফেলার মতো।

“নীল রঙের নক্ষত্রগুলো আমার সৈনিকেরা দখল করে নিয়েছে,” সন্তুষ্টির সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং তারা এখনো এগিয়ে চলেছে। কোথাও কোনো প্রতিরোধ হয়নি। অসভ্যরা একেবারে নিশ্চুপ। বিশেষ করে ফাউণ্ডেশন বাহিনীর কাছ থেকে কোনো বাধা আসেনি। তারা এখনো ঘুমের মধ্যে আছে।”

“আপনি আপনার সেনাবাহিনী বেশ ছড়িয়ে দুর্বল করে ফেলেছেন, তাই না?” জিজ্ঞেস করলেন বার।

“সত্যি কথা বলতে কি, রিয়াজ বললেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও সেটা কিন্তু হয়নি। আমার সৈনিকরা সংখ্যায় কম কিন্তু তারা বাছাই করা। সৈনিকরা ছড়িয়ে পড়লেও কৌশলগত ফলাফল অনেক বড়। অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন। যেমন আমি যে অবরোধ তৈরি করেছি তার যে-কোনো অংশ থেকে যে-কোনো দিকে যে-কোনো সময় আক্রমণ করতে পারব, কিন্তু ফাউণ্ডেশন কোনোদিক থেকেই আক্রমণ করতে পারবে না। কারণ আমি সেই সুযোগ রাখিনি।

“অবরোধের এধরনের কৌশল আগেও ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে দুই হাজার বছর আগে ষষ্ঠ লরিসের সামরিক অভিযানের সময়, কিন্তু নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়নি; কৌশল গোপন রাখা যায়নি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।”

“পুরোপুরি পাঠ্য বইয়ের উদাহরণ?” বললেন বার, কণ্ঠস্বর নিস্তেজ এবং পরিবর্তনশীল।

অধৈর্য হলেন রিয়োজ, “আপনার এখনো ধারণা আমার সৈনিকরা পরাজিত হবে?”

“অবশ্যই।”

“বোঝার চেষ্টা করুন, সামরিক ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা নেই, যেখানে নিচ্ছিদ্রভাবে প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলার পর আক্রমণকারী পক্ষ পরাজিত হয়েছে। সম্ভব হয়েছে তখনই যখন ঘেরাওয়ের বাইরে থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী নেভি সেই অবরোধকে তছনছ করে দেয়।”

“আপনি যা বলেন।”

“তারপরেও আপনি আপনার বিশ্বাসে অটল থাকবেন?”

“হ্যাঁ।”

“থাকেন, কোনো লাভ হবে না।”

কিছুক্ষণ নীরবতা জমাট বাধতে দিলেন বার, তারপর শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলেন, “সম্রাটের কাছ থেকে কোনো জবাব পেয়েছেন?”

মাথার পিছনের ওয়াল কন্টেইনার থেকে একটা সিগার বের করে ধরালেন রিয়োজ, একগাল বোয়া ছেড়ে বললেন, “রিইনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠানো অনুরোধের কথা বলছেন তো? এসেছে, কিন্তু শুধু ওইটুকুই। শুধু উত্তর।”

“কোনো যুদ্ধযান আসেনি?”

“একটাও না। আমি অবশ্য আশাও করিনি। সত্যি কথা বলতে কি, প্যাট্রিশিয়ান, আপনার কথায় প্রভাবিত হয়ে ওগুলো চেয়ে পাঠানো আমার উচিত হয়নি। আমাকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।”

“তাই?”

“নিশ্চয়ই। যুদ্ধযান এখন মহার্ঘ বস্তু। গত দুই শতাব্দীর গৃহযুদ্ধে গ্র্যাণ্ড ফ্লিটের প্রায় অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। বর্তমানে যেগুলো তৈরি হয় সেগুলো নিম্নমানের। আমার তো মনে হয় না আজকের গ্যালাক্সিতে এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে যে একটা প্রথম শ্রেণীর নিউক্লিয়ার মোটর তৈরি করতে পারবে।”

“আমি জানি,” বললেন বার, দৃষ্টিতে গভীর ছায়া। “আপনি যে জানতেন সেটা অবশ্য জানতামনা। তো সম্রাট আপনাকে অতিরিক্ত যুদ্ধযান পাঠাতে পারছে না। সাইকোহিস্টোরির সাহায্যে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়; সত্যি কথা বলতে কি করা হয়েছে সম্ভবত। বলতে বাধ্য হচ্ছি হ্যারি সেলডনের অদৃশ্যহাত প্রথম রাউন্ডে জিতে গেছে।”

কর্কশ সুরে উত্তর দিলেন রিয়োজ, “ আমার কাছে প্রচুর যুদ্ধযান আছে। আপনার সেলডন কিছুই জিতেনি। পরিস্থিতি খারাপ হলে আরো আনতে পারব। আমি সম্রাটকে এখনো সব কথা জানাইনি।”

“তাই? কোন কথাটা জানাননি?”

“অবশ্যই, আপনার থিওরি।” রিয়োজের চেহারায় কৌতুক। “আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, আপনার গল্পগুলো স্বাভাবিকভাবে সত্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়; যদি ঘটনাপ্রবাহ থেকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন, শুধুমাত্র তখনই এটাকে জীবন মরণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করব।

“তা ছাড়া তথ্য প্রমাণ ব্যতীত আপনার গল্প হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টিকে শুনিয়ে কোনো লাভ হবে না।”

বৃদ্ধ প্যাট্রিশিয়ান হাসলেন। “আপনি বলতে চান যে মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে একদল উন্মত্ত অসভ্য তার সিংহাসন দখল করার পরিকল্পনা করছে এটা তিনি মানবেন না বা বিশ্বাস করবেন না। তা হলে আপনি তার কাছ থেকে কিছুই পাবেন না।”

“হ্যাঁ, তবে একটা বিশেষ নিয়মের সুবিধা পাবো আমি।”

“যেমন?”

“আসলে এটা একটা পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতিটা সামরিক অভিযানে সম্রাটের মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকেন। অর্থাৎ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়।”

“সত্যি! কেন?”

“প্রতিটা অভিযানে সম্রাটের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার একটা পদ্ধতি। আরেকটা উদ্দেশ্য হল জেনারেলদের বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করা। যদিও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে খুব কমই সফল হওয়া যায়।”

“এটা আপনার কাজে অসুবিধা তৈরি করবে, জেনারেল।”

“কোনো সন্দেহ নেই।” চেহারা সামান্য লাল হল রিয়োজের। “তবে রিয়াজের হাতের রিসিভারের আলো জ্বলল, সামান্য একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নির্দিষ্ট সুটে ঢুকল সিলিন্ডার আকৃতির কমিউনিকেশন যন্ত্র। রিয়োজ খুললেন সেটা। “চমৎকার!”

প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে ভুরু উঁচু করলেন বার।

“আপনি জানেন,” বললেন রিয়োজ, “বণিকদের একজনকে আমরা ধরেছি। জীবিত, তার মহাকাশযানও আটক করেছি অক্ষত অবস্থায়।”

“শুনেছি।”

“বেশ, তাকে এখানে আনা হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজির করা হবে আমাদের সামনে। আপনি বসুন, প্যাট্রিশিয়ান। লোকটাকে প্রশ্ন করার সময় আপনাকে আমার দরকার। সেজন্যই আপনাকে আজকে আসতে বলেছি। কোনো কিছু আমার চোখ এড়িয়ে গেলে আপনি সেটা ধরতে পারবেন।”

দরজায় শব্দ হতেই জেনারেল গোড়ালি দিয়ে মেঝেতে শব্দ করলেন, দরজা খুলে গেল। চৌকাঠে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে লম্বা, মুখে দাড়ি। পড়নে প্লাস্টিক চামড়ার তৈরি হুডঅলা জ্যাকেট। তার হাত দুটো মুক্ত। দুইপাশে দাঁড়ানো লোকদুটো যে সশস্ত্র সেটা খেয়াল করলেও মনে হল ওতে তার কিছু আসে যায় না।

স্বাভাবিক পদক্ষেপে ভিতরে ঢুকল সে। হিসাবি দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করল চারপাশ। জেনারেলের দিকে তাকিয়ে প্রথমে হাত নেড়ে তারপর মাথা খানিকটা নিচু করে সম্মান দেখালো।

“তোমার নাম?” চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল।

“লাথান ডেভর্স”। বণিক উত্তর দিল। চওড়া, জমকালো বেল্টে আঙুল আটকে রেখেছে। “আপনিই এখানে বস?”

“ফাউণ্ডেশন-এর একজন বণিক?

“ঠিক। শুনুন, আপনি এখানের বস হলে আপনার ভাড়াটে লোকদের আমার কার্গো থেকে দূরে থাকতে বললে ভালো করবেন।”

মাথা তুললেন জেনারেল। ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকালেন বন্দির দিকে। “প্রশ্নের উত্তর দাও। অন্য কিছু বলবে না।”

“ঠিক আছে। আমার আপত্তি নেই। তবে আপনার ছেলেদের একজন বেজায়গায় হাত দিয়ে নিজের বুকে দুই ফুট গর্ত তৈরি করেছে।”

দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট এর দিকে তাকালেন রিয়োজ।”এই লোক সত্যি কথা বলছে? তোমার রিপোের্ট ছিল, ব্র্যাঙ্ক, যে কেউ নিহত হয়নি।”

“হয়নি, স্যার।” অস্বস্তি এবং আত্মরক্ষার সুরে বলল লেফটেন্যান্ট। “অন্তত সেই সময়ে হয়নি। পরে শিপটা অনুসন্ধানের সময় কিছু সমস্যা হয়, গুজব শুরু হয় যে শিপে মেয়েমানুষ আছে। তা ছাড়া স্যার, অপরিচিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, যেগুলোকে বন্দি তার বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। নড়াচড়া করার সময় তারই একটা বিস্ফোরিত হয়। যে সৈনিকের হাতে ওটা ছিল, সে মারা যায়।”

আবার বণিকের দিকে ফিরলেন জেনারেল। “তোমার জাহাজে নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোসিভ আছে?”

“গ্যালাক্সি, না। কেন থাকবে? ঐ বোকাটা একটা নিউক্লিয়ার পাঞ্চার হাতে নিয়ে ভুল প্রান্ত নিজের দিকে ফিরিয়ে রেখেছিল। সেটা করা ঠিক না। তার চেয়ে একটা নিউট-গান নিজের মাথার দিকে তাক করে রাখা ভালো। আমি অবশ্য ওকে থামাতে পারতাম। যদি পাঁচজন সৈনিক আমার বুকের উপর বসে না থাকত।”

“তুমি যেতে পারো।” অপেক্ষারত গার্ডকে নির্দেশ দিলেন রিয়োজ। “আটক শিপটা সিল করে দাও, যেন কেউ ঢুকতে না পারে। বস ডেভর্স।”

নির্দেশিত স্থানে বসল ডেভর্স। ইম্পেরিয়াল জেনারেলের কঠিন দৃষ্টি এবং সিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ানের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে বিচলিত হল না মোটেই।

“তুমি বেশ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, ডেভর্স।” বললেন রিয়াজ।

“ধন্যবাদ। আপনি আমার চেহারা দেখে খুশি হয়েছেন নাকি আপনি কিছু চান। আমি ভালো একজন ব্যবসায়ী।”

“একই কথা। তুমি বাধা দিয়ে আমাদের গোলাবারুদ ধ্বংস করতে পারতে সেই সাথে নিজেকে ইলেকট্রন ধুলায় পরিণত করতে পারতে। সেটা না করে তুমি ভালোমানুষের মতো ধরা দিয়েছ। সেকারণে তোমার ভালো ব্যবহার পাওনা হয়েছে।”

“ভালো ব্যবহারের জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি।”

“চমৎকার। আর আমি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি।” হাসলেন রিয়োজ। পাশে দাঁড়ানো ডুসেম বারকে নিচু স্বরে বললেন, “আশা করি ব্যাকুল’ শব্দের অর্থ আমি যা মনে করছি তাই হবে। আগে কখনো এমন অসভ্য শব্দ শুনেছেন?”

নম্র সুরে বলল ডেভর্স, “কিন্তু আপনি কি সহযোগিতা চান, বস? আর কোথায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা আমি এখনো জানি না।” চারদিকে তাকাল সে, “এই জায়গাটা কোথায় আর উদ্দেশ্যটা কী?”

“আহ, ভুলেই গেছি। দুঃখিত।” বেশ উপভোগ করছেন রিয়োজ। “ঐ ভদ্রলোক হলেন ডুসেম বার, প্যাট্রিশিয়ান অব দ্য এম্পায়ার। আমি বেল রিয়োজ, পিয়ার অব দ্য এম্পায়ার, এবং জেনারেল অব দ্য থার্ড ক্লাস ইন দ্য আর্মড ফোর্সেস অব হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টি।”

চোয়াল ঝুলে পড়ল বণিকের। “এম্পায়ার? অর্থাৎ সেই পুরোনো এম্পায়ার যার কথা স্কুলে আমাদের শেখানো হয়েছে। হাহ! হাস্যকর! আমার সবসময় ধারণা ছিল ওটার কোনো অস্তিত্ব নেই।

“চারপাশে তাকাও। দেখো ওটার অস্তিত্ব আছে।” হাসিমুখে বললেন রিয়োজ।

লাথান ডেভর্স তার দাড়ি সিলিংএর দিকে উঁচু করল, তারপর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তো খেলাটা কী, বস? নাকি আমি আপনাকে জেনারেল বলব?”

“খেলাটা হচ্ছে যুদ্ধ।”

“এম্পায়ার বনাম ফাউণ্ডেশন, তাই না?”

“ঠিক।”

“কেন?”

“আমার ধারণা, তুমি জানো কেন?”

ধারালো দৃষ্টিতে তাকাল বণিক, মাথা নাড়ল।

আরো কিছুক্ষণ বিবেচনা করার সময় দিলেন রিয়োজ, তারপর নরম সুরে বললেন, “কেন, তুমি জানো সেটা, আমি নিশ্চিত।”

“বেশ গরম”, ফিসফিস করল লাথান ডেভর্স। দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলল তারপর আবার বসে পা দুটো ছড়িয়ে দিল সামনে।

“বুঝতে পারছি,” আয়েশি ভঙ্গিতে বলল সে, “আপনি মনে করছেন আমি যেকোনো মুহূর্তে সামনে ঝাঁপ দিতে পারি। চাইলে যখন তখন আমি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। এই যে বৃদ্ধ ভদ্রলোক চুপচাপ বসে আছেন তিনি আমাকে থামাতে পারবেন না।”

“কিন্তু তুমি তা করবে না,” আত্মবিশ্বাসী সুরে বললেন রিয়োজ।

“না, করব না,” আন্তরিকভাবে একমত হল ডেভর্স। “প্রথম কথা আপনাকে খুন করলেই যুদ্ধ থামবে না। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে আরো অনেক জেনারেল আছে।”

“নিখুঁত হিসাব।”

“তা ছাড়া আপনাকে খুন করার দুই সেকেণ্ডের ভেতর আমি ধরা পড়ব। তারপর আমাকেও হত্যা করা হবে। দ্রুত বা ধীরে ধীরে যেভাবেই হোক, হত্যা করা হবেই। কিন্তু আমি এই বয়সে মরতে চাই না।”

“আগেই বলেছি তোমার বিচার বুদ্ধি বেশ ভালো।”

“কিন্তু একটা বিষয় আমি অবশ্যই জানতে চাই, বস। আপনি বলেছেন এম্পায়ার কেন ফাউণ্ডেশন-এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেটা আমি জানি। আমি

জানিনা; আর অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”

“হ্যাঁ। হ্যারি সেলডনের নাম শুনেছো কখনো?”

“না। বললাম তো অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”

রিয়োজ আড়চোখে তাকালেন ডুসেম বার-এর দিকে। বার শুধু একটু হাসলেন, কিছু বললেন না।

দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে রিয়োজ বললেন, “আমার সাথে খেলার চেষ্টা করো না, ডেভর্স। তোমাদের ফাউণ্ডেশনে একটা প্রথা, একটা উপকথা বা একটা ইতিহাস-যাই হোক আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই- প্রচলিত আছে যে তোমরা সেকেণ্ড এম্পায়ার গড়ে তুলবে। হ্যারি সেলডনের অর্থহীন বক্তব্য এবং এম্পায়ার এর বিরুদ্ধে তোমাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে আমি ভালোভাবেই জানি।”

“তাই?” চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল ডেভর্স। “আপনাকে এগুলো কে বলল?”

“সেটা জানার কোনো প্রয়োজন আছে?” ভয়ংকর হিমশীতল গলায় বললেন রিয়োজ। “তুমি কোনো প্রশ্ন করবে না। সেলডনের উপকথা সম্বন্ধে তুমি যা জানো আমি সেটা জানতে চাই।”

“কিন্তু এটা যদি উপকথাই হয়–”

“ডোন্ট প্লে উইথ ওয়ার্ডস, ডেভর্স।”

“আমি তা করছি না। বরং সরাসরি বলছি। আমি যা জানি আপনি তার সবই জানেন। এগুলো সবই বাজে গল্প। প্রতিটা গ্রহেই এর ডালপালা ছড়িয়ে আছে; তাদেরকে আপনি এর থেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারবেন না। হ্যাঁ, আমি এই গল্পগুলো শুনেছি; সেলডন, সেকেণ্ড এম্পায়ার আরো অনেক কিছু। মায়েরা বাচ্চাদের এই গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। তরুণ তরুণীরা পকেট প্রজেক্টরে সেলডন থ্রিলার নিয়ে অবসর সময় কাটায়। কিন্তু আমাদের মতো প্রাপ্তবয়স্করা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।”

জেনারেলের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। “আসলেই কি তাই? তোমাদের টার্মিনাসে আমি গেছি। ফাউণ্ডেশনে ঘুরে বেড়িয়েছি। তোমাদের চোখে, মুখে, আচরণে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ দেখেছি।”

“আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? আমাকে, যে কিনা গত দশবছরে একনাগারে দুমাসও টার্মিনাসে থাকেনি। যদি এই উপকথাগুলোই আপনার লক্ষ্য হয়, তবে আপনি আপনার যুদ্ধ চালিয়ে যান।”

এই প্রথম মৃদু স্বরে কথা বললেন বার, “ফাউণ্ডেশন-এর বিজয়ের ব্যাপারে তুমি তা হলে বেশ আত্মবিশ্বাসী?”

তার দিকে ঘুরল বণিক। চেহারা খানিকটা লাল হয়ে গেছে, ফলে কপালের একপাশে একটা পুরোনো ক্ষতচিহ্ন দেখা গেল। “হুমম, দ্য সাইল্যান্ট পার্টনার। আমি যা বলেছি সেখান থেকে এই তথ্যটা কিভাবে বের করলেন?”

খুব হালকাভাবে বার এর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন রিয়োজ, এবং স্যিউয়েনিয়ান নিচু স্বরে বলতে লাগলেন, “কারণ যদি তুমি ভাবতে যে ফাউণ্ডেশন এই যুদ্ধে পরাজিত হবে এবং পরাধীনতার তিক্ত স্বাদ ভোগ করবে সেটা তোমার চেহারায় পরিষ্কার হয়ে উঠত, আমি জানি, আমার গ্রহ একসময় এই কষ্ট লোগ করেছে, এখনো করছে।”

দাড়িতে হাত বোলালো লাথান ডেভর্স, পালাক্রমে প্রতিপক্ষ দুজনের দিকে তাকাচ্ছে, সামান্য একটু হাসল। “ও কি সবসময় এভাবেই কথা বলে, বস? শুনুন, একটু গুরুত্ব দিয়ে বলল, “কিসের পরাজয়? আমি অনেক যুদ্ধ দেখেছি, অনেক পরাজয় দেখেছি। বিজয়ী পক্ষ দায়িত্ব নিলে কী হবে? কে মাথা ঘামায়? আমি? আমার মতো লোক?” উপহাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে।

“শুনুন,” ডেভর্স জোর দিয়ে এবং আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলে চলেছে, “সাধারণত পাঁচ-ছয়জন চর্বিওয়ালা তোক একটা গ্রহ চালায়। মাথা ব্যথা ওদেরই হবে, আমি আমার মনের শান্তি নষ্ট করতে চাইনা। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দেখুন । তাদের কিছু মারা যাবে, বাকিদের কয়েকদিন অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা আপনিই। পরিস্থিতি একই রকম হবে, শুধু পুরোনোদের বদলে দায়িত্ব নেবে নতুন পাঁচ-ছয়জন।”

রাগে ডুসেম বারের নাকের পাটা ফুলে উঠল, কেঁপে উঠল ডান হাতের বয়স্ক মাংসপেশি, কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না।

ডেভর্স তাকিয়ে ছিল সেদিকে, তার চোখ এড়ায়নি কিছুই। সে বলল, “দেখুন বাণিজ্যের জন্য আমি সারাটা জীবন মহাকাশে কাটিয়েছি। পেটমোটা পরিচালকগুলো ওখানে বসে বসে আমার প্রতি মিনিটের আয়ের উপর ভাগ বসাচ্ছে।” বুড়ো আঙুল দিয়ে সে পিছন দিকে দেখাল। “আমার মতো আরো অনেকেই আছে। ধরা যাক আপনি ফাউণ্ডেশন চালানোর দায়িত্ব পেলেন। আমাদের প্রয়োজন হবে আপনার। পরিচালকদের চেয়ে বেশিই প্রয়োজন হবে-কারণ এই অঞ্চল আপনারা ভালোভাবে চেনেন না, আর আমরাই আপনাদের এনে দিতে পারব নগদ নারায়ণ। এম্পায়ারের সাথে আমরা আরো ভালো চুক্তি করতে পারব। আমি একজন খাঁটি বণিক; লাভের পাল্লা যেদিকে ভারি আমি সেদিকেই থাকব।”

নীরবতা ঝুলে থাকল একমিনিট। তারপর একটা সিলিন্ডার গড়িয়ে স্লটে ঢুকল। হাতে নিয়ে মেসেজ পড়লেন জেনারেল।

“প্রতিটা যুদ্ধযান পৌঁছে গেছে নির্দিষ্ট স্থানে। নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।”

হাত বাড়িয়ে টুপি তুলে নিলেন তিনি। কাঁধের উপর সেটা বাঁধতে বাঁধতে বার এর কানে ফিস ফিস করে বললেন, “এই লোকের দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। আমি ফলাফল চাই। মনে রাখবেন এটা যুদ্ধ এবং কোনো রকম ব্যর্থতা ক্ষমা করা হবে না।” দুজনকে স্যালিউট করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকল লাথান ডেভর্স। “বেশ, একটা কিছু ওকে জায়গামতো আঘাত করেছে। কী ঘটছে?”

“যুদ্ধ, অবশ্যই,” গম্ভীর গলায় বললেন বার। “ফাউণ্ডেশন তাদের প্রথম শক্তি পরীক্ষায় নামতে যাচ্ছে। তুমি চলো আমার সাথে।”

কামরার ভেতরে সশস্ত্র সৈনিক। তাদের আচরণ শ্রদ্ধাপূর্ণ হলেও চেহারা কঠোর। বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিআর্ককে অনুসরণ করে বেড়িয়ে এল ডেভর্স।

নতুন যে কামরায় ঢুকল সেটা আরো ছোট এবং খালি। শুধু দুটো বিছানা, একটা ভিজি স্ক্রিন আর গোসল করার স্যানিটারি সুবিধা। সৈনিকরা মার্চ করে বেরিয়ে গেল, দরজা বন্ধ হয়ে গেল দড়াম করে।”

“হুমম?” চারপাশে তাকিয়ে অবজ্ঞার সাথে বলল ডেভর্স। “মনে হচ্ছে স্থায়ী।”

“ঠিক তাই।” সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন বার, তারপর পিছন ফিরলেন।

বিরক্ত সুরে ডেভর্স বলল, “আপনার খেলাটা কী, ডক?”

“আমার কোনো খেলা নেই। তোমার দায়িত্ব এখন আমার ব্যাস, আর কিছু না।”

বণিক উঠে দাঁড়িয়ে অনড় প্যাট্রিশিয়ানের দিকে এগিয়ে গেল, “হ্যাঁ? কিন্তু সৈনিকদের অস্ত্রগুলো আমার দিকে যেভাবে তাক করা ছিল, আপনার দিকেও সেভাবে তাক করা ছিল। আসলে আপনারা যুদ্ধ শান্তি এগুলো নিয়ে আমি যা বলেছি তা শুনে মর্মাহত হয়েছেন।

জবাবের প্রত্যাশায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সে, “ঠিক আছে, আমি একটা প্রশ্ন করছি। আপনার দেশেও একবার আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। কারা করেছিল? আউটার নেবুলা থেকে আগত কমেট পিত্তপিল?”

মাথা তুললেন বার। “এম্পায়ার।”

“তাই? আপনি এখানে কী করছেন তা হলে?”

বার কিছু বললেন না।

ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল বণিক। ডান হাত থেকে একটা ব্রেসলেট খুলে বাড়িয়ে ধরল। “এটা দেখে আপনার কি মনে হয়?” ঠিক একই রকম আরেকটা তার বা হাতেও আছে।

গহনাটা হাতে নিলেন বার। বণিকের নির্দেশ শুনে ধীরে ধীরে হাতে জড়ালেন। দ্রুত একটা অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল তার কব্জিতে।

ডেভর্সের সুর পাল্টে গেল তৎক্ষণাৎ।”ঠিক আছে, ড, চালু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবেন। কামড়ায় আড়িপাতার ব্যবস্থা থাকলে ওরা কিছুই শুনতে পারবে না। ওটা একটা ফিল্ড ডিজটার; জেনুইন ম্যালো ডিজাইন। এখান থেকে শুরু করে আউটার রিম পর্যন্ত যে-কোনো গ্রহে পঁচিশ ক্রেডিটে বিক্রি হয়। আপনাকে বিনা পয়সায় দিলাম। কথা বলার সময় ঠোঁট নাড়বেন না, স্বাভাবিক থাকবেন। কৌশলটা রপ্ত করতে হবে আপনাকে।”

হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করলেন ডুসেম বার। বণিকের দৃষ্টি কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সংকুচিত হয়ে পড়লেন তিনি। “কী চাও তুমি?” শব্দগুলো যেন তার অনড় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বিরতিহীন ভাবে বেরোল।

“বললামই তো। আমরা যাকে দেশপ্রেমিক বলি, আপনাকে ঠিক তাই মনে হয়। এম্পায়ার আপনার গ্রহে অত্যাচার চালায়, অথচ আপনি এম্পায়ারের সাদা চুল জেনারেলের সাথে খেলছেন। ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

“আমার অংশ আমি শেষ করেছি,” বার বললেন। “একজন অত্যাচারী ইম্পেরিয়াল ভাইসরয়ের মৃত্যুর কারণ আমি।”

“তাই? সাম্প্রতিক সময়ে?”

“চল্লিশ বছর আগে।”

“চল্লিশ–বছর–আগে!” যেন বণিকের কাছে প্রতিটা শব্দের আলাদা অর্থ আছে। “মনে রাখার জন্য অনেক দীর্ঘ সময়। জেনারেলের ইউনিফর্ম পড়া ওই বেয়ারা তরুণ জানে এটা?”

মাথা নাড়লেন বার।

ডেভর্সের চোখে গভীর চিন্তার ছাপ। “আপনি চান এম্পায়ার জিতে যাক?”

প্রচণ্ড রাগে বিস্ফোরিত হলেন বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ান।”এম্পায়ার এবং তার সবকিছু মহাজাগতিক আবর্জনায় ডুবে মরুক। প্রত্যেক সিউয়েনিয়ানের দৈনন্দিন প্রার্থনা এটা। এক সময় আমার ভাই ছিল, বোন ছিল, বাবা ছিল। কিন্তু এখন আমার ছেলেমেয়ে আছে, নাতি-নাতনী আছে। জেনারেল জানে কোথায় তাদের খুঁজতে হবে।”

অপেক্ষা করছে ডেভর্স।

নিচু সুরে বলে চললেন বার, “কিন্তু সেটা আমাকে থামাতে পারবে না, ঝুঁকি নেব। ওরা জানে কীভাবে মরতে হয়।”

বণিক নরম সুরে বলল, “আপনি একজন ভাইসরয়কে হত্যা করেছিলেন, হাহ? কিছু কিছু ব্যাপার আমার মনে পড়ছে। আমাদের একজন মেয়র ছিল, নাম হোবার ম্যালো। তিনি স্যিউয়েনায় গিয়েছিলেন। ওটাই আপনার গ্রহ তাই না? ওখানে বার নামে একজন লোকের সাথে দেখা করেন তিনি।”

কঠিন সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ডুসেম বার। “তুমি এব্যাপারে কী জানো?”

“ফাউণ্ডেশন-এর প্রতিটা বণিক যা জানে আমিও ঠিক তাই জানি। আপনি একটা বুড়ো শেয়াল। আপনি এম্পায়ারকে ঘৃণা করেন আর তারাও যে আপনার দিকে অস্ত্র ধরে রাখবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আবার আমি আপনার যোগসাজশে কিছু করার চেষ্টা করলে, জেনারেল খুশি হবে না। কোনো সম্ভাবনা নেই, ডক্।

“কিন্তু আমি আপনাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিতে চাই যে আপনি ওনাম বারের সন্তান-তার ষষ্ঠ পুত্র এবং সবচেয়ে তরুণ যে গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে যায়।”

দেয়ালের তাক থেকে ধাতব বাক্সটা নামানোর সময় ডুসেম বারের হাত কাঁপতে লাগল। ধাতব বস্তুটা বণিকের হাতে দেয়ার সময় শব্দ হল রিনঝিন।

“এটা দেখো।” বললেন তিনি।

ডেভর্স তাকিয়ে আছে। ঠিক মাঝখানের সামান্য স্ফীত অংশটুকু চোখের কাছে নিয়ে দেখল সে।, “ম্যালোর মনোগ্রাম, নয়তো আমি একটা স্পেস-স্ট্রাক রকি।

এবং ডিজাইনটা পঞ্চাশ বছরের পুরোনো।”

চোখ তুলে হাসল সে।

“হাত মেলান, ডক্। একটা মানুষের সমান নিউক্লিয়ার শিল্ড- এই প্রমাণই আমার দরকার ছিল।” বিশাল থাবা বাড়িয়ে দিল সে।

Previous Post

ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

Next Post

রক্তচক্ষু – রকিব হাসান

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

No Result
View All Result
  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
Next Post
রক্তচক্ষু

রক্তচক্ষু - রকিব হাসান

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In