নিশ্চুপ বার শুধু একটা ভুরু বাঁকা করলেন, “ইম্পেরিয়াল রুল পছন্দ করার কোনো কারণ আমার নেই।”
“অর্থাৎ অন্যভাবে বলা যায় আপনি বিশ্বাসঘাতক হতে পারেন।”
“ঠিক। আবার এভাবেও দেখতে পারেন, বিশ্বাসঘাতক না হয়ে সক্রিয় সাহায্যকারী হতে পারি।”
“এটাও ঠিক। তবে এই মুহূর্তে সাহায্য করতে না চাইলে,” জোর গলায় বললেন রিয়োজ, “সেটাকে বিশ্বাসঘাতকতা ধরা হবে।”
বার-এর দুই ভুরু এক হয়ে গেল। “চোখা বাক্যবান অধীনস্থদের জন্য তুলে রাখুন। আপনি কী চান এবং কী প্রয়োজন সেটা বলাই যথেষ্ট।”
পায়ের উপর পা তুলে বসলেন রিয়োজ। “বার, ছয় মাস আগে আমাদের কিছু আলোচনা হয়েছিল।”
“আপনার সেই জাদুকরের ব্যাপারে?”
“হ্যাঁ। আমি কী করব বলেছিলাম, সেটা আপনার মনে আছে?”
মাথা নাড়লেন বার। হাত দুটো অলসভাবে কোলের উপর ফেলে রেখেছেন। “বলেছিলেন ওদেরকে খুঁজে বের করবেন। চারমাস বেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। পেয়েছেন ওদেরকে?
“পেয়েছি,” আর্তনাদ করে উঠলেন রিয়োজ। কথা বলার সময় শক্ত হয়ে গেল ঠোঁট দুটো। যেন অনেক কষ্টে দাঁত দিয়ে পিষে ফেলা থেকে নিবৃত্ত করলেন। “প্যাট্রিশিয়ান, ওরা জাদুকর নয়; ওরা শয়তান। আউটার গ্যালাক্সির ধ্যানধারণার সাথে এর কোনো মিল নেই। একটা নখের সমান ছোট বিশ্ব সম্পদ নেই, জ্বালানি নেই, জনসংখ্যা এতই কম যে ডার্কস্টারের অন্তর্গত অনগ্রসর বিশ্বগুলোতেও এর থেকে বেশি মানুষ বাস করে। অথচ এটা নিয়েই এই অহংকারী এবং উচ্চাকাক্ষী মানুষগুলো নিঃশব্দে এবং ধাপে ধাপে গ্যালাকটিক শাসনের স্বপ্ন দেখছে।
“কেন ওরা এত নিশ্চিত, কোনো তাড়াহুড়ো করছে না। অলসভাবে একটার পর একটা বিশ্ব দখল করে নিচ্ছে; একটা করে শতাব্দীর পরিকল্পনা করে ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে; হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ছে সিস্টেমগুলোর ভেতরে।
“এবং তারা সফল হচ্ছে। থামানোর কেউ নেই। একটা জঘন্য বণিক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে ওরা, যার শিকড় বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে তাদের খেলনা জাহাজগুলো পর্যন্ত যেতে সাহস করে না। নিজেদের প্রতিনিধিদের ওরা বলে বণিক। এই বণিকরা বহু পারসেক দূরদূরান্তে চলে যেতে পারে।”
মাঝখানে বাধা দিয়ে রাগের প্রবাহ থামালেন ডুসেম বার। “তথ্যগুলোর কতখানি সঠিক; কতখানি আপনার রাগের বহিঃপ্রকাশ?”
সৈনিক শান্ত হলেন। “আমি রাগে অন্ধ হয়ে যাইনি। আপনাকে বলেছি আমি প্রথমে সিউয়েনা তারপর ফাউণ্ডেশন-এর নিকটতম বিশ্বগুলোতে গেছি, যেখানে এম্পায়ার অনেক দূরের কিংবদন্তির গল্পের মতো আর বণিকেরা জীবন্ত সত্য। বণিকদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা ছিল ভুল।”
“ফাউণ্ডেশন নিজের মুখে আপনাকে বলেছে যে তারা গ্যালাকটিক ডমিনিয়ন অর্জন করতে চায়?”
“আমাকে বলবে!” আবার রেগে উঠলেন রিয়োজ। “বলার দরকার নেই। কর্মকর্তারা ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়া আর কিছু নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু আমি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি; তাদের ধ্যানধারণা; তাদের সুস্পষ্ট গন্তব্য’, সুমহান ভবিষ্যতের ব্যাপারে তাদের নীরব অনুমোদন নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। এসব বিষয় লুকিয়ে রাখা যায় না। এমনকি এই মহাজাগতিক আশাবাদ তারা লুকিয়ে রাখার চেষ্টাও করেনি।”
সিউয়েনিয়ানের মুখে সন্তুষ্টির ছাপ। “খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই ব্যাপারটা আমার গবেষণার ফলাফলের সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে।”
“কোনো সন্দেহ নেই,” বললেন রিয়োজ, তার কণ্ঠে সীমাহীন কৌতুক। “আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রশংসা না করে পারছি না। একই সাথে এটা হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির শাসনের বিরুদ্ধে মারাত্মক বিপদ এবং হুমকিস্বরূপ।”
নিরাসক্তভাবে কাঁধ নাড়লেন বার, আর রিয়োজ হঠাৎ সামনে ঝুঁকে বৃদ্ধের কাঁধে হাত রাখলেন। তীব্র কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালেন তার চোখের দিকে।
বললেন,” শুনুন প্যাট্রিশিয়ান, ওসব বাদ। নিষ্ঠুর হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। ইম্পেরিয়ামের বিরুদ্ধে সিউয়েনার বিদ্রোহ আমার কাছে একটা বোঝার মতো, এবং যে-কোনো মূল্যে আমি সেটা দূর করব। কিন্তু আমি সামরিক লোক, বেসামরিক বিষয়ে নাক গলানো অসম্ভব। আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। বুঝতে পেরেছেন? আমি জানি আপনি বুঝতে পেরেছেন। চল্লিশ বছর আগে কি ঘটেছিল সেটা ভুলে যেতে পারি। আপনার সাহায্য আমার প্রয়োজন। খোলাখুলি স্বীকার করছি।”
তরুণের কণ্ঠে জরুরি তাগাদার সুর। কিন্তু ডুসেম বার নীরবে এবং দৃঢ়ভাবে না বোধক ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন।
আবেদনের সুরে বললেন রিয়োজ, “আপনি বুঝতে পারছেন না, প্যাট্রিশিয়ান, সন্দেহ হচ্ছে আমিও বোঝাতে পারছি না। আপনার গবেষণার বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ আপনি একজন স্কলার। তবে একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। এম্পায়ার সম্বন্ধে আপনার ধারণা যাই হোক, এটা যে বৃহৎ সার্ভিস দিচ্ছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আর্মড ফোর্স বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়ম দুর্নীতি করলেও সামগ্রিকভাবে তারা সভ্যতা, শান্তি বজায় রাখতে বাধ্য। ইম্পেরিয়াম নেভি-ই হাজার হাজার বছর একটা প্যাক্স-ইম্পেরিয়াম তৈরি করে শাসন করছে গ্যালাক্সি । পুরোনো দিনের দীর্ঘস্থায়ী বর্বরতা এবং অরাজকতা দূর করে নক্ষত্র এবং মহাকাশযান চিহ্নের অধীনে গত কয়েক হাজার বছর যে শান্তি বজায় রেখেছে তার কি কোনো মূল্য নেই?