“আমি কিছুই বের করতে পারবো না।” অলস সুরে জবাব দিল ফোরেল। “কোথাও বাণিজ্যিক বিদ্রোহের কোনো খবর নেই। একতা আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
“দেশ প্রেম?” তৃতীয়জনের কণ্ঠে অবজ্ঞার সুর।
“গোল্লায় যাক দেশপ্রেম।” শান্ত সুরে বলল ফোরেল। “তোমার কি ধারণা ভবিষ্যৎ সেকেণ্ড এম্পায়ারের জন্য আমি তিল পরিমাণ নিউক্লিয়ার ইমেনেশন ত্যাগ করব? কোনো ট্রেড মিশনের উপর ঝুঁকি নেব? তোমার কি মনে হয় এম্পায়ারের আগ্রাসন তোমার বা আমার ব্যবসায়ে সাহায্য করবে? যদি এম্পায়ার বিজয়ী হয় তখন যুদ্ধের সুফল ভোগ করার জন্য ভূঁইফোঁড়ের মতো অনেকেই দাঁড়িয়ে যাবে।”
“ঠিকই বলেছে।” শুকনো গলায় বলল চতুর্থজন।
আচমকা নিজের নীরবতা ভাঙল দ্বিতীয়জন। রাগের সাথে এমনভাবে চেয়ারে নড়ে চড়ে বসল যার ফলে শরীরের ওজনে আর্তনাদ করে উঠল চেয়ারটা। “কিন্তু এই কথা বলে লাভ কী? এম্পায়ার জিততে পারবে না, পারবে? সেলডন নিশ্চয়তা দিয়েছেন আমরাই সেকেণ্ড এম্পায়ার তৈরি করব। এটা শুধু মাত্র আরেকটা ক্রাইসিস। আগে আরো তিনটা হয়েছিল।”
“আরেকটা ক্রাইসিস, হ্যাঁ!” ধ্যানমগ্ন সুরে বলল ফোরেল। “কিন্তু প্রথম দুটোর ক্ষেত্রে পথ দেখানোর জন্য ছিলেন স্যালভর হার্ডিন; তৃতীয়বারে ছিলেন হোবার ম্যালো। তাদের কেউই এখন আমাদের সাথে নেই।”
বাকি সবার দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে আবার শুরু করল সে, “সেলডনের সাইকোহিস্টোরির যে নিয়মের উপর নির্ভর করে আমরা ভরসা পাই তার ভেতর সম্ভবত এমন কোনো চালক আছে যার জন্য বিশেষ করে ফাউণ্ডেশন-এর জনগণের নিশ্চিত স্বাভাবিক উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। সেলডন ল’এর সহায়তা পেতে হলে আগে নিজেকে চেষ্টা করতে হবে।”
“সময়ের প্রয়োজনেই মানুষ তৈরি হয়,” বলল তৃতীয়জন। “আরেকটা প্রবাদ।”
“এটার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না,” স্বীকার করল ফোরেল। “আমার · মনে হচ্ছে, যদি এটা চার নম্বর ক্রাইসিস হয় তা হলে সেলডন পূর্বানুমান করে রেখেছেন। যদি করে রাখেন তা হলে এটা ঠেকানো যাবে এবং কোনো-না-কোনো উপায় অবশ্যই আছে।
“এম্পায়ার আমাদের চেয়ে শক্তিশালী; সবসময়ই ছিল। কিন্তু এই প্রথমবার আমরা তার সরাসরি আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি, ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাকে ঠেকানো যাবে, কিন্তু সরাসরি শক্তি প্রয়োগ না করে ঠেকাতে হবে পূর্বের ক্রাইসিসগুলোর সময়ে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে সেরকমই কোনো পদ্ধতিতে। শত্রুর দুর্বল দিক খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।”
“সেই দুর্বল দিকটা কী?” জিজ্ঞেস করল চতুর্থজন। “তোমার কোনো ধারণা?”
“না। এই কথাটাই আমি বলার চেষ্টা করছি। আমাদের অতীতের মহান নেতারা সবসময়ই শত্রুর দুর্বল দিক খুঁজে বের করে সেদিকেই লক্ষ্য স্থির করতেন। কিন্তু এখন-”
তার কণ্ঠে ফুটে উঠল অসহায়ত্ব, কিন্তু কয়েক মুহূর্ত কেউ কিছু বলল না।
তারপর চতুর্থজন বলল, “আমাদের গুপ্তচরের প্রয়োজন।”
আগ্রহের সাথে তার দিকে ঘুরল ফোরেল। “ঠিক! এম্পায়ার কখন আক্রমণ করবে জানি না। নিশ্চয়ই একটা সময় ধরা আছে।”
“হোবার ম্যালো নিজে ইম্পেরিয়াল ডমিনিয়নের ভেতরে ঢুকেছিলেন।” দ্বিতীয়জনের প্রস্তাব।
কিন্তু মাথা নাড়ল ফোরেল। “এত সরাসরি কিছু করা যাবে না। অমাদের বয়স নেই; এবং সকলেই লাল ফিতা আর প্রশাসনিক জটিলতায় ফেঁসে আছি। আমাদের প্রয়োজন তরুণ একজন যে এখনো সরাসরি ফিল্ডে কাজ করছে।”
“স্বাধীন বণিক?” জিজ্ঞেস করল চতুর্থজন। এবং মাথা নেড়ে ফিসফিস করে বলল ফোরেল, “যদি এখনো সময় থাকে।”
.
৩. অদৃশ্য হাত
বেল রিয়োজ বিরক্তিকর পায়চারী থামিয়ে তার এইডের দিকে আশা নিয়ে তাকালেন। “স্টারলেট থেকে কোনো সংবাদ?”
“কিছুই না। স্কাউটিং পার্টি প্রায় এক চতুর্থাংশ স্পেস চষে ফেলেছে, কিন্তু যন্ত্রে কিছুই ধরা পড়েনি। কমাণ্ডার ইয়ুম রিপোর্ট করেছেন তিনি পাল্টা আক্রমণের জন্য তৈরি।”
মাথা নাড়লেন জেনারেল। “না, একটা পেট্রল শিপের জন্য এখনই এত বড়ো ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। তাকে বল-দাঁড়াও! লিখে দিচ্ছি। কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে ট্রান্সমিট করবে।
কথা বলতে বলতেই মেসেজটা তিনি কাগজে লিখে ফেললেন, তারপর বাড়িয়ে ধরলেন অপেক্ষারত অফিসারের দিকে।”স্যিউয়েনিয়ান এসে পৌঁছেনি এখনো?”
“এখনো পৌঁছেনি।”
“ঠিক আছে, পৌঁছানোর সাথে সাথে আমার কাছে নিয়ে আসবে।”
কেতাদুরস্তভাবে স্যালুট করে চলে গেল এইড। আবার পায়চারী শুরু করলেন জেনারেল।
দ্বিতীয়বার দরজা খোলার পর ডুসেম বারকে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। এইডের পিছু নিয়ে ধূসর কামরায় ঢুকলেন তিনি। ছাঁদে গ্যালাক্সির, হলোগ্রাফিক মডেল এবং ঠিক তার কেন্দ্রের নিচে ফিল্ড ইউনিফর্ম পরে বেল রিয়োজ দাঁড়িয়ে আছেন।
“প্যাট্রিশিয়ান, শুভদিন!” পায়ের ঠেলায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন জেনারেল। এইড কে বললেন, “আমি না খোলা পর্যন্ত ঐ দরজা বন্ধ থাকবে। “ তারপর হাত নেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
পা ফাঁক করে সিউয়েনিয়ান এর মুখোমুখি দাঁড়ালেন তিনি, হাত পিছনে, চিন্তিত, ধীরে ধীরে পায়ের গোড়ালির উপর ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছেন।
তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন, “প্যাট্রিশিয়ান, আপনি সম্রাটের প্রতি অনুগত?”