“হ্যাঁ, এবং আমরা ঠিক তাই করছি অথবা কষ্ট করে ওকে একটা উদ্দেশ্য তৈরি করে নিতে হবে না। হোবার ম্যালো বা স্যালভর হার্ডিন কাজ করতেন অন্যভাবে। পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতিপক্ষকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতেন।”
ফাঁধ নাড়ল ফোরেল। “এই মহাকাশযান তার গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। আমরা এটাকে লাভজনক দামে বেচতে পারব।” জন্ম বণিকের কণ্ঠে সন্তুষ্টির সুর। “তরুণ পুরোনো এম্পায়ার থেকে এসেছে।”
“আমরা জানি,” বিশালদেহী দ্বিতীয়জন গমগমে গলায় বলল
“আমরা সন্দেহ করেছিলাম,” হালকা গলায় সংশোধন করে দিল ফোরেল। “পয়সাঅলা কেউ এসে যদি বন্ধুত্ব এবং বাণিজ্যের প্রস্তাব দেয় তাকে নিরাশ করা উচিত হবে না, অন্তত যতক্ষণ না প্রমাণ হচ্ছে যে এর ভেতরে কোনো কূটকৌশল আছে। কিন্তু এখন-”
তৃতীয়জন যখন কথা বলল তার গলায় একটা আর্তভাব ফুটে উঠল। “আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। লোকটাকে ছেড়ে দেওয়ার আগেই সবকিছু জেনে নিতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”
“এটার ফায়সালা হয়ে গেছে,” বলল ফোরেল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো করে হাত নেড়ে বিষয়টা থামিয়ে দিল সে।
“সরকার অনেক বেশি নরম,” অভিযোগের সুরে বলল তৃতীয়জন। “মেয়র একটা ইডিয়ট।
চতুর্থজন পালাক্রমে বাকি তিনজনের দিকে তাকাল। মুখ থেকে সিগারের অবশিষ্টাংশ নামিয়ে ফেলে দিল তার ডানদিকের একটা সুটে। চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল সেটা।
তিরস্কারের সুরে বলল সে, “আশা করি যে ভদ্রলোক কথাগুলো বলেছেন তিনি অভ্যাসবশেই বলেছেন। কষ্ট করে একথা মনে করিয়ে দিতে চাই না যে আমরাই সরকার।”
সম্মতির গুঞ্জন উঠল সবার ভেতর।
চতুর্থজনের দৃষ্টি টেবিলের উপর নিবদ্ধ। “তা হলে সরকারের নিয়ম নীতি নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। এই তরুণ–এই আগম্ভক একজন সম্ভাব্য ক্রেতা হতে পারে। কিন্তু তোমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছ সে অ্যাডভান্স কন্টাক্ট হিসেবে কাজ করছে। আমাদের ভেতরে একটা ভদ্রলোকের চুক্তি থাকার পরেও তোমরা চেষ্টা করছ।”
“তুমিও করেছ,” গজগজ করে বলল দ্বিতীয়জন।
“আমি জানি,” শান্ত সুরে বলল চতুর্থজন।
“তা হলে আগে কি করেছি ভুলে যাও।” অধৈর্য ভঙ্গিতে বাধা দিল ফোরেল। “এখন কী করব সেটা ভাবো। যদি তাকে বন্দি করে রাখি বা মেরে ফেলি কী হবে তখন? তার আসল উদ্দেশ্য এখনো আমরা জানি না, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে একটা লোককে মেরে ফেললেই পুরো এম্পায়ার ধ্বংস হবে না। হয়তো তার ফেরার অপেক্ষায় অন্যদিকে নেভির পর নেভি অপেক্ষা করছে।”
“ঠিক,” একমত হল চতুর্থজন। “আটক মহাকাশযান থেকে কি জানতে পেরেছ তুমি।”
“অল্প কথাতেই সব বলে দেওয়া যাবে,” বলল ফোরেল,মুখে দন্ত বিকশিত হাসি। “সে একজন ইম্পেরিয়াল জেনারেল বা সেই সমপর্যায়ের কিছু একটা। তরুণ বয়সেই নিজের সামরিক দক্ষতা প্রমাণ করেছে। অন্তত: আমি তাই জেনেছি-এবং নিজের লোকদের কাছে সে একজন আদর্শ। কোনো সন্দেহ নেই এই লোকের সম্বন্ধে তারা যা বলেছে অর্ধেকই মিথ্যে, কিন্তু তারপরেও বলতে হবে সে এক আশ্চর্য মানুষ। বেশ রোমান্টিক ক্যারিয়ার।”
“এই ‘তারা কারা?” প্রশ্ন করল দ্বিতীয়জন।
“আটক মহাকাশযানের নাবিক। শোন, তাদের সব বক্তব্য আমি মাইক্রোফিল্মে রেকর্ড করে নিরাপদ স্থানে রেখেছি। পরে ইচ্ছা হলে তোমরা দেখতে পারবে। প্রয়োজন মনে করলে ওই লোকগুলোর সাথে তোমরা নিজেরা কথা বলতে পারো। আমি শুধু মূল বিষয়গুলো বলছি।”
“কথা বের করলে কীভাবে? কীভাবে জানো ওরা সত্যি কথা বলছে?”
ভুরু কোঁচকালো ফোরেল। “আমি ভালোমানুষের মতো ব্যবহার করিনি। হুমকি দিয়েছি, ভয় দেখিয়েছি, নির্দয়ের মতো প্রোব ব্যবহার করেছি। ওরা কথা বলেছে। বিশ্বাস করো সত্যি কথাই বলেছে।”
“প্রাচীন যুগে” অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল তৃতীয়জন, “ব্যবহার করা হতো পিওর সাইকোলজি। ব্যথাহীন এবং তুমি নিশ্চয়ই জানো তাতে মিথ্যা কথা বলার কোনো সুযোগই থাকতো না।”
“বেশ, প্রাচীন যুগের অনেক কিছুই ভালো ছিল,” শুকনো গলায় বলল ফোরেল। “এখন বর্তমান যুগ।”
“সে কি চায় এখানে,” ক্লান্ত অথচ একগুয়ে গলায় বলল চতুর্থজন। “এই অদ্ভুত রোমান্টিক চরিত্রের জেনারেল?”
তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকাল ফোরেল। “তোমার কি ধারণা সে তার অধীনস্থদের সাথে রাষ্ট্রের সব বিষয় নিয়েই কথা বলবে? ওরা কিছুই জানে না। চেষ্টা করেও কোনো কথা বের করতে পারিনি, গ্যালাক্সি জানে।”
“অর্থাৎ আমাদের সামনে একটাই পথ-”
“নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” আবার নিঃশব্দে টেবিলের উপর আঙুল দিয়ে তাল ঠুকতে লাগল ফোরেল! “এই তরুণ এম্পায়ারের একজন সামরিক নেতা, অথচ ভান করছে যেন একজন ধনী ব্যক্তি পেরিফেরির এই অদ্ভুত কোণায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নক্ষত্রগুলো ভ্রমণে বেরিয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে আসল উদ্দেশ্য সে আমাদের জানাতে চায় না। এম্পায়ার একবার আমাদের হামলা করার চেষ্টা করেছিল, এই ঘটনার সাথে এটা যোগ দিলেই একটা অশুভ সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রথম হামলা ব্যর্থ হয়েছিল। সেকারণে এম্পায়ার আমাদের ভালবাসবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।”
“তুমি কিছুই জানতে পারোনি, রক্ষনাত্মক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল চতুর্থজন, “তুমি কোনো তথ্যই বের করতে পারোনি?”