বৃদ্ধ সিউয়েনিয়ানের দৃষ্টি নিরাসক্ত। রিয়োজ বললেন, “আমাকে সব খুলে বললেই ভালো করবেন
“কয়েকটা ব্যাপার বললে ভালোই হবে। নিজস্ব সাইকোহিস্টোরিক এক্সপেরিম্যান্ট হবে এটা।”
“কী ধরনের এক্সপেরিম্যান্ট?”
“সাইকোহিস্টোরিক।” বৃদ্ধের মুখে নিরানন্দ হাসি। “বরং আরো চা নেন। আমি অনেক কথা বলব।”
চেয়ারে আরো ভালোভাবে হেলান দিয়ে বসলেন তিনি। দেয়াল থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে স্নান লাল আলো। ফলে এমনকি সৈনিকের কঠোর মুখাবয়বও কেমন যেন নরম হয়ে এসেছে।
ডুসেম বার শুরু করলেন, “আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা দুটো দুর্ঘটনার ফসল। প্রথম দুর্ঘটনা আমার পিতার সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়া। দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই বিশ্বের স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে জন্ম নেওয়া। ঘটনার শুরু চল্লিশ বছর আগে, ভয়ানক গণহত্যার ঠিক পরপরই যখন আমার বাবা দক্ষিণের জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আমি ছিলাম ভাইসরয়ের ব্যক্তিগত বাহিনীর একজন গোলন্দাজ। সেই একই ভাইসরয় যার নির্দেশে গণহত্যা সংগঠিত হয় এবং পরে সে নিজেও নৃশংস মৃত্যুবরণ করে।”
আমুদে ভঙ্গিতে হাসলেন বার, তারপর আবার শুরু করলেন, “আমার বাবা ছিলেন এম্পায়ারের একজন অভিজাত ব্যক্তি এবং স্যিউয়েনার সিনেটর। নাম ওনাম বার।
অধৈর্য ভঙ্গিতে বাধা দিলেন রিয়োজ, “কেন তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন আমি জানি। বিস্তারিত বলতে হবে না।”
সিউয়েনিয়ান তাকে পাত্তা না দিয়ে একই ভঙ্গিতে বলে যেতে লাগলেন, “নির্বাসিত থাকাকালে এক আগন্তুক দেখা করতে আসে তার সাথে গ্যালাক্সির শেষ সীমানার একজন বণিক; বয়সে তরুণ, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি, সমসাময়িক ইম্পেরিয়াল হিস্টোরি সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য তার কাছে ছিল একটা ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড।”
“ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড? আপনি যা বলছেন তা একেবারেই অসম্ভব। কোন ধরনের শক্তিশালী জেনারেটর মাত্র একজন মানুষের দেহের আকৃতিতে শিল্ড জমাট বাধাতে পারবে? গ্রেট গ্যালাক্সি, সে কি চাকাঅলা ছোট গাড়িতে করে নিজের সাথে পাঁচ হাজার মিরিয়াটন নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স বহন করছিল?”
“এই জাদুকর সম্বন্ধেই আপনি গুজব, গল্প-কাহিনী শুনেছেন।” শান্ত গলায় বললেন বার। “জাদুকর উপাধি এত সহজে অর্জিত হয়নি। চোখে পড়ার মতো কোনো জেনারেটর তার সাথে ছিল না, অথচ সবচেয়ে ভারী যে অস্ত্র আপনি হাতে নিতে পারবেন সেটা দিয়ে তার শিন্ডে তিল পরিমাণ ফুটো করাও সম্ভব ছিল না।”
“পুরো গল্প এইটুকুই? নির্বাসিত এবং ভুক্তভোগী একজন বৃদ্ধের কল্পনা থেকে জাদুকরের জন্ম?”
“জাদুকরের গল্প আমার বাবার জন্মের আগে থেকেই প্রচলিত, স্যার। জোরালো প্রমাণও আছে তার। উক্ত বণিক যাকে আমরা জাদুকর বলি পরে শহরের একজন টেক-ম্যানের সাথে দেখা করে। আমার বাবাই নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ঠিক নিজেরটার মতো একটা শিল্ড জেনারেটর রেখে যায় সে। নিষ্ঠুর ভাইসরয়ের মৃত্যুদণ্ডের পর নির্বাসন থেকে ফিরে এসে বাবা সেটা উদ্ধার করেন। অনেক সময় লেগেছিল–
“জেনারেটরটা আপনার পিছনে দেয়ালে ঝোলানো আছে, স্যার। কাজ করে না। প্রথম দুইদিনের পর কখনোই কাজ করেনি। তবে দেখলেই বুঝবেন যে এম্পায়ারের কেউ এটার ডিজাইন তৈরি করেনি।”
দেয়ালে ঝোলানো ধাতব বেল্ট ভালোভাবে দেখার জন্য হাত বাড়ালেন রিয়াজ। মৃদু শব্দ করে দেয়াল থেকে খুলে এলো সেটা। বেল্টের কিনারায় ডিম্বাকৃতির জিনিসটা তার মনযোগ কেড়ে নিল। আয়তনে একটা বাদামের সমান।
“এটা–” বললেন তিনি।
“জেনারেটর” মাথা নাড়লেন বার। “কীভাবে কাজ করতো এখন আর বের করা সম্ভব নয়। সাব ইলেকট্রিক অনুসন্ধানে দেখা যাবে যে এটা এক টুকরো ধাতু গলিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং বর্ণালিছটার সতর্ক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও গলিয়ে ফেলার আগে বিভিন্ন অংশগুলো কি ছিল সেটা বের করা যাবে না।”
“তা হলে আপনার জোরালো প্রমাণ শুধুই বাগাড়ম্বর যার শক্ত কোনো ভিত্তি নেই।”
“আপনি আমার কথা শুনতে চেয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন যেন কোনো কিছু গোপন না করি। এখন সন্দেহ হলে তো আমার কিছু করার নেই। কথা বন্ধ করে দেব?”
“বলে যান!” কর্কশ সুরে বললেন জেনারেল।
“বাবার মৃত্যুর পর আমি তার গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই এবং তখনই দ্বিতীয় দুর্ঘটনা যার কথা আগে বলেছি সেটার সাহায্য পাই আমি, কারণ সিউয়েনা হ্যারি সেলডনের কথা জানতে পারে।”
“হ্যারী সেলডন কে?”
“সম্রাট চতুর্থ ডালুবেন এর শাসনামলের একজন বিজ্ঞানী। তিনি একজন সাইকোহিস্টোরিয়ান; সর্বশেষ এবং সবার সেরা। তিনি একবার এখানে এসেছিলেন, যখন সিউয়েনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শিল্প এবং বিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী।”
“হুমম,” তিক্ত সুরে বললেন রিয়োজ, “কোন গ্রহটা দাবি করে না যে প্রাচীন যুগে তারাই ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী?”
“আমি দুইশ বছর আগের কথা বলছি, যখন সবগুলো নক্ষত্র ছিল সম্রাট এর শাসনাধীন: স্যিউয়েনা সীমান্তের কোনো আধা বর্বর বিশ্ব নয়, বরং ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় বিশ্ব। সেই সময় হ্যারি সেলডন ইম্পেরিয়াল পাওয়ারের পতন এবং পরবর্তীতে পুরো গ্যালাক্সি জুড়ে সীমাহীন বর্বরতার পদধ্বনি বুঝতে পারেন।”
হঠাৎ করেই হাসলেন রিয়োজ। “তিনি বুঝতে পেরেছিলেন? তা হলে ভুল বুঝেছিলেন, মাই গুড সায়েন্টিস্ট। নিজেকে বোধহয় তাই বলেন আপনি। গত এক হাজার বছরের মধ্যে এম্পায়ার এখন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সীমান্তের ঠাণ্ডা শূন্যতা আপনার বৃদ্ধ চোখকে অন্ধ করে দিয়েছে। ইনার ওয়ার্ল্ডগুলোয় আসুন একবার। কেন্দ্রের উষ্ণতা এবং প্রাচুর্য দেখে যান।”