“এবং সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি ভিন্নমত। আমার মতে স্কলারশিপ জটিল প্রশ্নের সমাধান বের করার একটা কায়দা।”
স্যিউয়েনিয়ান গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ ভাবলেন। “হয়তো আপনিও তাদের মতো ভুলপথে চলছেন।”
“সেটা পরে বোঝা যাবে।” তরুণ জেনারেল পুনরায় খালি কাপে চা ঢেলে নিলেন, তবে স্বাদ বৃদ্ধিকারক ক্যাপসুল নিলেন না।” বলুন প্যাট্রিশিয়ান, জাদুকর কারা? সত্যিকারের জাদুকর?”
বহুদিনের অব্যবহৃত উপাধিটি শুনে কেঁপে উঠলেন বার। “কোনো জাদুকর নেই।”
“কিন্তু তাদের কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। স্যিউয়েনার আকাশে বাতাসে তাদের কাহিনী ছড়িয়ে আছে। তাদের ঘিরে একটা কাল্ট তৈরি হয়েছিল। আপনার স্বদেশী যারা তথাকথিত স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করেছে তাদের সাথে এটার অদ্ভুত একটা যোগাযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।”
মাথা নাড়লেন বৃদ্ধ। “আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি বিদ্রোহের গন্ধ পেয়েছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি?”
কাঁধ নাড়লেন রিয়োজ। “মোটেই না। মোটেই না। আবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। আপনার বাবা ছিলেন নির্বাসিত; আপনি নিজে উগ্র স্বদেশী। অতিথি হিসেবে কথাটা আমার বলা হয়তো একটু অশোভন। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। তিন প্রজন্ম পরেও সিউয়েনার সাহসিকতা কমেনি।”
প্রতিউত্তর দিতে একটু সমস্যা হল বৃদ্ধের। “মেজবান হিসেবে কথাটা বলা আমার জন্যও অশোভন। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই অনেক আগে একজন ভাইসরয় ঠিক আপনার মতোই সিউয়েনিয়ানদের পদানত রাখার কথা চিন্তা করেছিল। সেই একই ভাইসরয়ের নির্দেশেই আমার বাবা পলাতক এবং কপর্দকশূন্যে পরিণত হন, আমার ভাই হন শহীদ, আত্মহত্যা করে আমার বোন। আবার এই পরাধীন স্যিউয়েনিয়ানদের হাতেই সেই ভাইসরয় নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করে।”
“ও হ্যাঁ, আর এখানে একটা কথা আমাকে বলতেই হচ্ছে। তিন বছর আগেই সেই ভাইসরয়ের মৃত্যুরহস্য আমি সমাধান করেছি। তরুণ এক সৈনিকের আচরণ ছিল কৌতূহলউদ্দীপক। আপনি সেই সৈনিক। আমার মনে হয় না বিস্তারিত বলার প্রয়োজন আছে।”
শান্ত হয়ে গেলেন বার।”কোনো দরকার নেই। আপনার প্রস্তাব?”
“কিছু প্রশ্নের উত্তর।”
“হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমার বয়স হয়েছে, মৃত্যুর ভয় নেই।”
“মাই গুড স্যার। এখন কঠিন সময়,” অর্থবহ সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং আপনার সন্তান আছে, বন্ধু আছে, একটা দেশ আছে যাকে আপনি প্রচণ্ড ভালবাসেন। শুনুন যদি আমি শক্তি প্রয়োগ করতে চাই, তা হলে আপনাকে আঘাত করার মতো দুর্বল কিছু করব না।”
“কী চান আপনি?” ঠাণ্ডা গলায় বললেন বার।
কথা বলার সময় খালি পেয়ালা তুলে নিলেন রিয়োজ। “শুনুন, প্যাট্রিশিয়ান, এখন একজন সফল সৈনিক বলা যায় তাকেই যার মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের ময়দানে ড্রেস প্যারেডে নেতৃত্ব দেওয়া এবং হিজ ইম্পেরিয়াল এর প্রমোদতরীগুলোকে জাঁকজমকপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন অবকাশ গ্রহে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি…আমি ব্যর্থ, চৌত্রিশ বছর বয়সেই ব্যর্থ, এবং আমি তাই থাকতে চাই। কারণ আমি যুদ্ধ পছন্দ করি আর সে কারণেই ওরা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। রাজদরবারে আমি একটা উৎকট সমস্যা। নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারি না। লর্ড অ্যাডমিরালদের বিরোধিতা করি। কিন্তু মহাকাশযান এবং যে সৈনিকরা মহাকাশে নির্বাসিত হতে চায় তাদের নেতা হিসেবে আমি যথেষ্ট ভালো। কাজেই বেছে নেওয়া হল স্যিউয়েনা। এটা সীমান্তবর্তী বিশ্ব; বন্ধ্যা এবং বিদ্রোহে পরিপূর্ণ। এটা যথেষ্ট দূরে, সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো দূরে।
“কিন্তু আমি নিরাশ। দমন করার মতো কোনো বিদ্রোহ ঘটেনি, এবং সীমান্তের ভাইসরয়রাও অনেকদিন থেকে বিদ্রোহ করছে না। অন্তত যতদিন হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির স্বর্গীয় পিতার মহিমান্বিত স্মৃতি মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত করবে না।”
“একজন শক্তিশালী সম্রাট।” ফিসফিস করে বললেন বার।
“হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আরো বেশি। তিনি আমার মালিক; কথাটা মনে রাখবেন। আমি শুধু তার ইচ্ছাই রক্ষা করছি।”
নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কাঁধ নাড়লেন বার। “বর্তমান বিষয়ের সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?”
“দুই কথায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। যে জাদুকরদের কথা বললাম তারা এসেছিল সীমান্তের অনেক দূর থেকে, যেখানে নক্ষত্ররা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে”।
“যেখানে নক্ষত্রেরা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে-” আবৃত্তি করলেন বার, “এবং মহাকাশ জমে আছে ঠাণ্ডায়।”
“এটা কবিতা?” কপাল কুঁচকালেন রিয়োজ। “যাই হোক, তারা পেরিফেরি থেকে এসেছিল- সম্রাটের মর্যাদা ধরে রাখার জন্য যে অংশে আমি স্বাধীনভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারি, সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় তারা।”
“এবং হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির ইচ্ছা রক্ষা হবে আর আপনার একটা জবরদস্ত লড়াইয়ের আশা পূরণ হবে।”
“ঠিক। কিন্তু কিসের সাথে লড়ব সেটা জানতে হবে। আর এখানেই আপনার সাহায্য প্রয়োজন।”
“কীভাবে বুঝলেন?”
হালকা চালে বিস্কিটের কোণা ভাঙলেন রিয়োজ। গত তিন বছর আমি জাদুকরদের সম্বন্ধে প্রতিটা গুজব, গল্পকাহিনী অনুসরণ করেছি, বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমার মনে হয়েছে দুটো পৃথক ঘটনা আসলেই সত্য এবং পরস্পর সম্পৃক্ত। প্রথমটা হচ্ছে জাদুকররা এসেছিল সিউয়েনার ঠিক উল্টোদিকের গ্যালাক্সির একেবারে শেষ সীমানা থেকে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আপনার বাবা একজন জীবিত সত্যিকার জাদুকরের সাথে কথা বলেছিলেন।”