নীরবতা ঝুলে থাকল একমিনিট। তারপর একটা সিলিন্ডার গড়িয়ে স্লটে ঢুকল। হাতে নিয়ে মেসেজ পড়লেন জেনারেল।
“প্রতিটা যুদ্ধযান পৌঁছে গেছে নির্দিষ্ট স্থানে। নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।”
হাত বাড়িয়ে টুপি তুলে নিলেন তিনি। কাঁধের উপর সেটা বাঁধতে বাঁধতে বার এর কানে ফিস ফিস করে বললেন, “এই লোকের দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। আমি ফলাফল চাই। মনে রাখবেন এটা যুদ্ধ এবং কোনো রকম ব্যর্থতা ক্ষমা করা হবে না।” দুজনকে স্যালিউট করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকল লাথান ডেভর্স। “বেশ, একটা কিছু ওকে জায়গামতো আঘাত করেছে। কী ঘটছে?”
“যুদ্ধ, অবশ্যই,” গম্ভীর গলায় বললেন বার। “ফাউণ্ডেশন তাদের প্রথম শক্তি পরীক্ষায় নামতে যাচ্ছে। তুমি চলো আমার সাথে।”
কামরার ভেতরে সশস্ত্র সৈনিক। তাদের আচরণ শ্রদ্ধাপূর্ণ হলেও চেহারা কঠোর। বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিআর্ককে অনুসরণ করে বেড়িয়ে এল ডেভর্স।
নতুন যে কামরায় ঢুকল সেটা আরো ছোট এবং খালি। শুধু দুটো বিছানা, একটা ভিজি স্ক্রিন আর গোসল করার স্যানিটারি সুবিধা। সৈনিকরা মার্চ করে বেরিয়ে গেল, দরজা বন্ধ হয়ে গেল দড়াম করে।”
“হুমম?” চারপাশে তাকিয়ে অবজ্ঞার সাথে বলল ডেভর্স। “মনে হচ্ছে স্থায়ী।”
“ঠিক তাই।” সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন বার, তারপর পিছন ফিরলেন।
বিরক্ত সুরে ডেভর্স বলল, “আপনার খেলাটা কী, ডক?”
“আমার কোনো খেলা নেই। তোমার দায়িত্ব এখন আমার ব্যাস, আর কিছু না।”
বণিক উঠে দাঁড়িয়ে অনড় প্যাট্রিশিয়ানের দিকে এগিয়ে গেল, “হ্যাঁ? কিন্তু সৈনিকদের অস্ত্রগুলো আমার দিকে যেভাবে তাক করা ছিল, আপনার দিকেও সেভাবে তাক করা ছিল। আসলে আপনারা যুদ্ধ শান্তি এগুলো নিয়ে আমি যা বলেছি তা শুনে মর্মাহত হয়েছেন।
জবাবের প্রত্যাশায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সে, “ঠিক আছে, আমি একটা প্রশ্ন করছি। আপনার দেশেও একবার আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। কারা করেছিল? আউটার নেবুলা থেকে আগত কমেট পিত্তপিল?”
মাথা তুললেন বার। “এম্পায়ার।”
“তাই? আপনি এখানে কী করছেন তা হলে?”
বার কিছু বললেন না।
ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল বণিক। ডান হাত থেকে একটা ব্রেসলেট খুলে বাড়িয়ে ধরল। “এটা দেখে আপনার কি মনে হয়?” ঠিক একই রকম আরেকটা তার বা হাতেও আছে।
গহনাটা হাতে নিলেন বার। বণিকের নির্দেশ শুনে ধীরে ধীরে হাতে জড়ালেন। দ্রুত একটা অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল তার কব্জিতে।
ডেভর্সের সুর পাল্টে গেল তৎক্ষণাৎ।”ঠিক আছে, ড, চালু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবেন। কামড়ায় আড়িপাতার ব্যবস্থা থাকলে ওরা কিছুই শুনতে পারবে না। ওটা একটা ফিল্ড ডিজটার; জেনুইন ম্যালো ডিজাইন। এখান থেকে শুরু করে আউটার রিম পর্যন্ত যে-কোনো গ্রহে পঁচিশ ক্রেডিটে বিক্রি হয়। আপনাকে বিনা পয়সায় দিলাম। কথা বলার সময় ঠোঁট নাড়বেন না, স্বাভাবিক থাকবেন। কৌশলটা রপ্ত করতে হবে আপনাকে।”
হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করলেন ডুসেম বার। বণিকের দৃষ্টি কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সংকুচিত হয়ে পড়লেন তিনি। “কী চাও তুমি?” শব্দগুলো যেন তার অনড় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বিরতিহীন ভাবে বেরোল।
“বললামই তো। আমরা যাকে দেশপ্রেমিক বলি, আপনাকে ঠিক তাই মনে হয়। এম্পায়ার আপনার গ্রহে অত্যাচার চালায়, অথচ আপনি এম্পায়ারের সাদা চুল জেনারেলের সাথে খেলছেন। ঠিক বুঝতে পারলাম না।”
“আমার অংশ আমি শেষ করেছি,” বার বললেন। “একজন অত্যাচারী ইম্পেরিয়াল ভাইসরয়ের মৃত্যুর কারণ আমি।”
“তাই? সাম্প্রতিক সময়ে?”
“চল্লিশ বছর আগে।”
“চল্লিশ–বছর–আগে!” যেন বণিকের কাছে প্রতিটা শব্দের আলাদা অর্থ আছে। “মনে রাখার জন্য অনেক দীর্ঘ সময়। জেনারেলের ইউনিফর্ম পড়া ওই বেয়ারা তরুণ জানে এটা?”
মাথা নাড়লেন বার।
ডেভর্সের চোখে গভীর চিন্তার ছাপ। “আপনি চান এম্পায়ার জিতে যাক?”
প্রচণ্ড রাগে বিস্ফোরিত হলেন বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ান।”এম্পায়ার এবং তার সবকিছু মহাজাগতিক আবর্জনায় ডুবে মরুক। প্রত্যেক সিউয়েনিয়ানের দৈনন্দিন প্রার্থনা এটা। এক সময় আমার ভাই ছিল, বোন ছিল, বাবা ছিল। কিন্তু এখন আমার ছেলেমেয়ে আছে, নাতি-নাতনী আছে। জেনারেল জানে কোথায় তাদের খুঁজতে হবে।”
অপেক্ষা করছে ডেভর্স।
নিচু সুরে বলে চললেন বার, “কিন্তু সেটা আমাকে থামাতে পারবে না, ঝুঁকি নেব। ওরা জানে কীভাবে মরতে হয়।”
বণিক নরম সুরে বলল, “আপনি একজন ভাইসরয়কে হত্যা করেছিলেন, হাহ? কিছু কিছু ব্যাপার আমার মনে পড়ছে। আমাদের একজন মেয়র ছিল, নাম হোবার ম্যালো। তিনি স্যিউয়েনায় গিয়েছিলেন। ওটাই আপনার গ্রহ তাই না? ওখানে বার নামে একজন লোকের সাথে দেখা করেন তিনি।”
কঠিন সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ডুসেম বার। “তুমি এব্যাপারে কী জানো?”
“ফাউণ্ডেশন-এর প্রতিটা বণিক যা জানে আমিও ঠিক তাই জানি। আপনি একটা বুড়ো শেয়াল। আপনি এম্পায়ারকে ঘৃণা করেন আর তারাও যে আপনার দিকে অস্ত্র ধরে রাখবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আবার আমি আপনার যোগসাজশে কিছু করার চেষ্টা করলে, জেনারেল খুশি হবে না। কোনো সম্ভাবনা নেই, ডক্।
“কিন্তু আমি আপনাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিতে চাই যে আপনি ওনাম বারের সন্তান-তার ষষ্ঠ পুত্র এবং সবচেয়ে তরুণ যে গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে যায়।”