“বুঝতে পারছি,” আয়েশি ভঙ্গিতে বলল সে, “আপনি মনে করছেন আমি যেকোনো মুহূর্তে সামনে ঝাঁপ দিতে পারি। চাইলে যখন তখন আমি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। এই যে বৃদ্ধ ভদ্রলোক চুপচাপ বসে আছেন তিনি আমাকে থামাতে পারবেন না।”
“কিন্তু তুমি তা করবে না,” আত্মবিশ্বাসী সুরে বললেন রিয়োজ।
“না, করব না,” আন্তরিকভাবে একমত হল ডেভর্স। “প্রথম কথা আপনাকে খুন করলেই যুদ্ধ থামবে না। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে আরো অনেক জেনারেল আছে।”
“নিখুঁত হিসাব।”
“তা ছাড়া আপনাকে খুন করার দুই সেকেণ্ডের ভেতর আমি ধরা পড়ব। তারপর আমাকেও হত্যা করা হবে। দ্রুত বা ধীরে ধীরে যেভাবেই হোক, হত্যা করা হবেই। কিন্তু আমি এই বয়সে মরতে চাই না।”
“আগেই বলেছি তোমার বিচার বুদ্ধি বেশ ভালো।”
“কিন্তু একটা বিষয় আমি অবশ্যই জানতে চাই, বস। আপনি বলেছেন এম্পায়ার কেন ফাউণ্ডেশন-এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেটা আমি জানি। আমি
জানিনা; আর অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”
“হ্যাঁ। হ্যারি সেলডনের নাম শুনেছো কখনো?”
“না। বললাম তো অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”
রিয়োজ আড়চোখে তাকালেন ডুসেম বার-এর দিকে। বার শুধু একটু হাসলেন, কিছু বললেন না।
দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে রিয়োজ বললেন, “আমার সাথে খেলার চেষ্টা করো না, ডেভর্স। তোমাদের ফাউণ্ডেশনে একটা প্রথা, একটা উপকথা বা একটা ইতিহাস-যাই হোক আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই- প্রচলিত আছে যে তোমরা সেকেণ্ড এম্পায়ার গড়ে তুলবে। হ্যারি সেলডনের অর্থহীন বক্তব্য এবং এম্পায়ার এর বিরুদ্ধে তোমাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে আমি ভালোভাবেই জানি।”
“তাই?” চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল ডেভর্স। “আপনাকে এগুলো কে বলল?”
“সেটা জানার কোনো প্রয়োজন আছে?” ভয়ংকর হিমশীতল গলায় বললেন রিয়োজ। “তুমি কোনো প্রশ্ন করবে না। সেলডনের উপকথা সম্বন্ধে তুমি যা জানো আমি সেটা জানতে চাই।”
“কিন্তু এটা যদি উপকথাই হয়–”
“ডোন্ট প্লে উইথ ওয়ার্ডস, ডেভর্স।”
“আমি তা করছি না। বরং সরাসরি বলছি। আমি যা জানি আপনি তার সবই জানেন। এগুলো সবই বাজে গল্প। প্রতিটা গ্রহেই এর ডালপালা ছড়িয়ে আছে; তাদেরকে আপনি এর থেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারবেন না। হ্যাঁ, আমি এই গল্পগুলো শুনেছি; সেলডন, সেকেণ্ড এম্পায়ার আরো অনেক কিছু। মায়েরা বাচ্চাদের এই গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। তরুণ তরুণীরা পকেট প্রজেক্টরে সেলডন থ্রিলার নিয়ে অবসর সময় কাটায়। কিন্তু আমাদের মতো প্রাপ্তবয়স্করা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।”
জেনারেলের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। “আসলেই কি তাই? তোমাদের টার্মিনাসে আমি গেছি। ফাউণ্ডেশনে ঘুরে বেড়িয়েছি। তোমাদের চোখে, মুখে, আচরণে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ দেখেছি।”
“আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? আমাকে, যে কিনা গত দশবছরে একনাগারে দুমাসও টার্মিনাসে থাকেনি। যদি এই উপকথাগুলোই আপনার লক্ষ্য হয়, তবে আপনি আপনার যুদ্ধ চালিয়ে যান।”
এই প্রথম মৃদু স্বরে কথা বললেন বার, “ফাউণ্ডেশন-এর বিজয়ের ব্যাপারে তুমি তা হলে বেশ আত্মবিশ্বাসী?”
তার দিকে ঘুরল বণিক। চেহারা খানিকটা লাল হয়ে গেছে, ফলে কপালের একপাশে একটা পুরোনো ক্ষতচিহ্ন দেখা গেল। “হুমম, দ্য সাইল্যান্ট পার্টনার। আমি যা বলেছি সেখান থেকে এই তথ্যটা কিভাবে বের করলেন?”
খুব হালকাভাবে বার এর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন রিয়োজ, এবং স্যিউয়েনিয়ান নিচু স্বরে বলতে লাগলেন, “কারণ যদি তুমি ভাবতে যে ফাউণ্ডেশন এই যুদ্ধে পরাজিত হবে এবং পরাধীনতার তিক্ত স্বাদ ভোগ করবে সেটা তোমার চেহারায় পরিষ্কার হয়ে উঠত, আমি জানি, আমার গ্রহ একসময় এই কষ্ট লোগ করেছে, এখনো করছে।”
দাড়িতে হাত বোলালো লাথান ডেভর্স, পালাক্রমে প্রতিপক্ষ দুজনের দিকে তাকাচ্ছে, সামান্য একটু হাসল। “ও কি সবসময় এভাবেই কথা বলে, বস? শুনুন, একটু গুরুত্ব দিয়ে বলল, “কিসের পরাজয়? আমি অনেক যুদ্ধ দেখেছি, অনেক পরাজয় দেখেছি। বিজয়ী পক্ষ দায়িত্ব নিলে কী হবে? কে মাথা ঘামায়? আমি? আমার মতো লোক?” উপহাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে।
“শুনুন,” ডেভর্স জোর দিয়ে এবং আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলে চলেছে, “সাধারণত পাঁচ-ছয়জন চর্বিওয়ালা তোক একটা গ্রহ চালায়। মাথা ব্যথা ওদেরই হবে, আমি আমার মনের শান্তি নষ্ট করতে চাইনা। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দেখুন । তাদের কিছু মারা যাবে, বাকিদের কয়েকদিন অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা আপনিই। পরিস্থিতি একই রকম হবে, শুধু পুরোনোদের বদলে দায়িত্ব নেবে নতুন পাঁচ-ছয়জন।”
রাগে ডুসেম বারের নাকের পাটা ফুলে উঠল, কেঁপে উঠল ডান হাতের বয়স্ক মাংসপেশি, কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না।
ডেভর্স তাকিয়ে ছিল সেদিকে, তার চোখ এড়ায়নি কিছুই। সে বলল, “দেখুন বাণিজ্যের জন্য আমি সারাটা জীবন মহাকাশে কাটিয়েছি। পেটমোটা পরিচালকগুলো ওখানে বসে বসে আমার প্রতি মিনিটের আয়ের উপর ভাগ বসাচ্ছে।” বুড়ো আঙুল দিয়ে সে পিছন দিকে দেখাল। “আমার মতো আরো অনেকেই আছে। ধরা যাক আপনি ফাউণ্ডেশন চালানোর দায়িত্ব পেলেন। আমাদের প্রয়োজন হবে আপনার। পরিচালকদের চেয়ে বেশিই প্রয়োজন হবে-কারণ এই অঞ্চল আপনারা ভালোভাবে চেনেন না, আর আমরাই আপনাদের এনে দিতে পারব নগদ নারায়ণ। এম্পায়ারের সাথে আমরা আরো ভালো চুক্তি করতে পারব। আমি একজন খাঁটি বণিক; লাভের পাল্লা যেদিকে ভারি আমি সেদিকেই থাকব।”