প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে ভুরু উঁচু করলেন বার।
“আপনি জানেন,” বললেন রিয়োজ, “বণিকদের একজনকে আমরা ধরেছি। জীবিত, তার মহাকাশযানও আটক করেছি অক্ষত অবস্থায়।”
“শুনেছি।”
“বেশ, তাকে এখানে আনা হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজির করা হবে আমাদের সামনে। আপনি বসুন, প্যাট্রিশিয়ান। লোকটাকে প্রশ্ন করার সময় আপনাকে আমার দরকার। সেজন্যই আপনাকে আজকে আসতে বলেছি। কোনো কিছু আমার চোখ এড়িয়ে গেলে আপনি সেটা ধরতে পারবেন।”
দরজায় শব্দ হতেই জেনারেল গোড়ালি দিয়ে মেঝেতে শব্দ করলেন, দরজা খুলে গেল। চৌকাঠে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে লম্বা, মুখে দাড়ি। পড়নে প্লাস্টিক চামড়ার তৈরি হুডঅলা জ্যাকেট। তার হাত দুটো মুক্ত। দুইপাশে দাঁড়ানো লোকদুটো যে সশস্ত্র সেটা খেয়াল করলেও মনে হল ওতে তার কিছু আসে যায় না।
স্বাভাবিক পদক্ষেপে ভিতরে ঢুকল সে। হিসাবি দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করল চারপাশ। জেনারেলের দিকে তাকিয়ে প্রথমে হাত নেড়ে তারপর মাথা খানিকটা নিচু করে সম্মান দেখালো।
“তোমার নাম?” চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল।
“লাথান ডেভর্স”। বণিক উত্তর দিল। চওড়া, জমকালো বেল্টে আঙুল আটকে রেখেছে। “আপনিই এখানে বস?”
“ফাউণ্ডেশন-এর একজন বণিক?
“ঠিক। শুনুন, আপনি এখানের বস হলে আপনার ভাড়াটে লোকদের আমার কার্গো থেকে দূরে থাকতে বললে ভালো করবেন।”
মাথা তুললেন জেনারেল। ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকালেন বন্দির দিকে। “প্রশ্নের উত্তর দাও। অন্য কিছু বলবে না।”
“ঠিক আছে। আমার আপত্তি নেই। তবে আপনার ছেলেদের একজন বেজায়গায় হাত দিয়ে নিজের বুকে দুই ফুট গর্ত তৈরি করেছে।”
দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট এর দিকে তাকালেন রিয়োজ।”এই লোক সত্যি কথা বলছে? তোমার রিপোের্ট ছিল, ব্র্যাঙ্ক, যে কেউ নিহত হয়নি।”
“হয়নি, স্যার।” অস্বস্তি এবং আত্মরক্ষার সুরে বলল লেফটেন্যান্ট। “অন্তত সেই সময়ে হয়নি। পরে শিপটা অনুসন্ধানের সময় কিছু সমস্যা হয়, গুজব শুরু হয় যে শিপে মেয়েমানুষ আছে। তা ছাড়া স্যার, অপরিচিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, যেগুলোকে বন্দি তার বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। নড়াচড়া করার সময় তারই একটা বিস্ফোরিত হয়। যে সৈনিকের হাতে ওটা ছিল, সে মারা যায়।”
আবার বণিকের দিকে ফিরলেন জেনারেল। “তোমার জাহাজে নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোসিভ আছে?”
“গ্যালাক্সি, না। কেন থাকবে? ঐ বোকাটা একটা নিউক্লিয়ার পাঞ্চার হাতে নিয়ে ভুল প্রান্ত নিজের দিকে ফিরিয়ে রেখেছিল। সেটা করা ঠিক না। তার চেয়ে একটা নিউট-গান নিজের মাথার দিকে তাক করে রাখা ভালো। আমি অবশ্য ওকে থামাতে পারতাম। যদি পাঁচজন সৈনিক আমার বুকের উপর বসে না থাকত।”
“তুমি যেতে পারো।” অপেক্ষারত গার্ডকে নির্দেশ দিলেন রিয়োজ। “আটক শিপটা সিল করে দাও, যেন কেউ ঢুকতে না পারে। বস ডেভর্স।”
নির্দেশিত স্থানে বসল ডেভর্স। ইম্পেরিয়াল জেনারেলের কঠিন দৃষ্টি এবং সিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ানের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে বিচলিত হল না মোটেই।
“তুমি বেশ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, ডেভর্স।” বললেন রিয়াজ।
“ধন্যবাদ। আপনি আমার চেহারা দেখে খুশি হয়েছেন নাকি আপনি কিছু চান। আমি ভালো একজন ব্যবসায়ী।”
“একই কথা। তুমি বাধা দিয়ে আমাদের গোলাবারুদ ধ্বংস করতে পারতে সেই সাথে নিজেকে ইলেকট্রন ধুলায় পরিণত করতে পারতে। সেটা না করে তুমি ভালোমানুষের মতো ধরা দিয়েছ। সেকারণে তোমার ভালো ব্যবহার পাওনা হয়েছে।”
“ভালো ব্যবহারের জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি।”
“চমৎকার। আর আমি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি।” হাসলেন রিয়োজ। পাশে দাঁড়ানো ডুসেম বারকে নিচু স্বরে বললেন, “আশা করি ব্যাকুল’ শব্দের অর্থ আমি যা মনে করছি তাই হবে। আগে কখনো এমন অসভ্য শব্দ শুনেছেন?”
নম্র সুরে বলল ডেভর্স, “কিন্তু আপনি কি সহযোগিতা চান, বস? আর কোথায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা আমি এখনো জানি না।” চারদিকে তাকাল সে, “এই জায়গাটা কোথায় আর উদ্দেশ্যটা কী?”
“আহ, ভুলেই গেছি। দুঃখিত।” বেশ উপভোগ করছেন রিয়োজ। “ঐ ভদ্রলোক হলেন ডুসেম বার, প্যাট্রিশিয়ান অব দ্য এম্পায়ার। আমি বেল রিয়োজ, পিয়ার অব দ্য এম্পায়ার, এবং জেনারেল অব দ্য থার্ড ক্লাস ইন দ্য আর্মড ফোর্সেস অব হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টি।”
চোয়াল ঝুলে পড়ল বণিকের। “এম্পায়ার? অর্থাৎ সেই পুরোনো এম্পায়ার যার কথা স্কুলে আমাদের শেখানো হয়েছে। হাহ! হাস্যকর! আমার সবসময় ধারণা ছিল ওটার কোনো অস্তিত্ব নেই।
“চারপাশে তাকাও। দেখো ওটার অস্তিত্ব আছে।” হাসিমুখে বললেন রিয়োজ।
লাথান ডেভর্স তার দাড়ি সিলিংএর দিকে উঁচু করল, তারপর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তো খেলাটা কী, বস? নাকি আমি আপনাকে জেনারেল বলব?”
“খেলাটা হচ্ছে যুদ্ধ।”
“এম্পায়ার বনাম ফাউণ্ডেশন, তাই না?”
“ঠিক।”
“কেন?”
“আমার ধারণা, তুমি জানো কেন?”
ধারালো দৃষ্টিতে তাকাল বণিক, মাথা নাড়ল।
আরো কিছুক্ষণ বিবেচনা করার সময় দিলেন রিয়োজ, তারপর নরম সুরে বললেন, “কেন, তুমি জানো সেটা, আমি নিশ্চিত।”
“বেশ গরম”, ফিসফিস করল লাথান ডেভর্স। দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলল তারপর আবার বসে পা দুটো ছড়িয়ে দিল সামনে।