একটা গোলাকার নব চাপলেন রিয়োজ, ধীরে ধীরে মানচিত্রের সাদা কিছু অংশ গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করল, অনেকটা লাল আর গোলাপি অংশগুলোকে বৃত্তাকারে ঘিরে ফেলার মতো।
“নীল রঙের নক্ষত্রগুলো আমার সৈনিকেরা দখল করে নিয়েছে,” সন্তুষ্টির সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং তারা এখনো এগিয়ে চলেছে। কোথাও কোনো প্রতিরোধ হয়নি। অসভ্যরা একেবারে নিশ্চুপ। বিশেষ করে ফাউণ্ডেশন বাহিনীর কাছ থেকে কোনো বাধা আসেনি। তারা এখনো ঘুমের মধ্যে আছে।”
“আপনি আপনার সেনাবাহিনী বেশ ছড়িয়ে দুর্বল করে ফেলেছেন, তাই না?” জিজ্ঞেস করলেন বার।
“সত্যি কথা বলতে কি, রিয়াজ বললেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও সেটা কিন্তু হয়নি। আমার সৈনিকরা সংখ্যায় কম কিন্তু তারা বাছাই করা। সৈনিকরা ছড়িয়ে পড়লেও কৌশলগত ফলাফল অনেক বড়। অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন। যেমন আমি যে অবরোধ তৈরি করেছি তার যে-কোনো অংশ থেকে যে-কোনো দিকে যে-কোনো সময় আক্রমণ করতে পারব, কিন্তু ফাউণ্ডেশন কোনোদিক থেকেই আক্রমণ করতে পারবে না। কারণ আমি সেই সুযোগ রাখিনি।
“অবরোধের এধরনের কৌশল আগেও ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে দুই হাজার বছর আগে ষষ্ঠ লরিসের সামরিক অভিযানের সময়, কিন্তু নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়নি; কৌশল গোপন রাখা যায়নি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।”
“পুরোপুরি পাঠ্য বইয়ের উদাহরণ?” বললেন বার, কণ্ঠস্বর নিস্তেজ এবং পরিবর্তনশীল।
অধৈর্য হলেন রিয়োজ, “আপনার এখনো ধারণা আমার সৈনিকরা পরাজিত হবে?”
“অবশ্যই।”
“বোঝার চেষ্টা করুন, সামরিক ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা নেই, যেখানে নিচ্ছিদ্রভাবে প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলার পর আক্রমণকারী পক্ষ পরাজিত হয়েছে। সম্ভব হয়েছে তখনই যখন ঘেরাওয়ের বাইরে থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী নেভি সেই অবরোধকে তছনছ করে দেয়।”
“আপনি যা বলেন।”
“তারপরেও আপনি আপনার বিশ্বাসে অটল থাকবেন?”
“হ্যাঁ।”
“থাকেন, কোনো লাভ হবে না।”
কিছুক্ষণ নীরবতা জমাট বাধতে দিলেন বার, তারপর শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলেন, “সম্রাটের কাছ থেকে কোনো জবাব পেয়েছেন?”
মাথার পিছনের ওয়াল কন্টেইনার থেকে একটা সিগার বের করে ধরালেন রিয়োজ, একগাল বোয়া ছেড়ে বললেন, “রিইনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠানো অনুরোধের কথা বলছেন তো? এসেছে, কিন্তু শুধু ওইটুকুই। শুধু উত্তর।”
“কোনো যুদ্ধযান আসেনি?”
“একটাও না। আমি অবশ্য আশাও করিনি। সত্যি কথা বলতে কি, প্যাট্রিশিয়ান, আপনার কথায় প্রভাবিত হয়ে ওগুলো চেয়ে পাঠানো আমার উচিত হয়নি। আমাকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।”
“তাই?”
“নিশ্চয়ই। যুদ্ধযান এখন মহার্ঘ বস্তু। গত দুই শতাব্দীর গৃহযুদ্ধে গ্র্যাণ্ড ফ্লিটের প্রায় অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। বর্তমানে যেগুলো তৈরি হয় সেগুলো নিম্নমানের। আমার তো মনে হয় না আজকের গ্যালাক্সিতে এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে যে একটা প্রথম শ্রেণীর নিউক্লিয়ার মোটর তৈরি করতে পারবে।”
“আমি জানি,” বললেন বার, দৃষ্টিতে গভীর ছায়া। “আপনি যে জানতেন সেটা অবশ্য জানতামনা। তো সম্রাট আপনাকে অতিরিক্ত যুদ্ধযান পাঠাতে পারছে না। সাইকোহিস্টোরির সাহায্যে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়; সত্যি কথা বলতে কি করা হয়েছে সম্ভবত। বলতে বাধ্য হচ্ছি হ্যারি সেলডনের অদৃশ্যহাত প্রথম রাউন্ডে জিতে গেছে।”
কর্কশ সুরে উত্তর দিলেন রিয়োজ, “ আমার কাছে প্রচুর যুদ্ধযান আছে। আপনার সেলডন কিছুই জিতেনি। পরিস্থিতি খারাপ হলে আরো আনতে পারব। আমি সম্রাটকে এখনো সব কথা জানাইনি।”
“তাই? কোন কথাটা জানাননি?”
“অবশ্যই, আপনার থিওরি।” রিয়োজের চেহারায় কৌতুক। “আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, আপনার গল্পগুলো স্বাভাবিকভাবে সত্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়; যদি ঘটনাপ্রবাহ থেকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন, শুধুমাত্র তখনই এটাকে জীবন মরণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করব।
“তা ছাড়া তথ্য প্রমাণ ব্যতীত আপনার গল্প হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টিকে শুনিয়ে কোনো লাভ হবে না।”
বৃদ্ধ প্যাট্রিশিয়ান হাসলেন। “আপনি বলতে চান যে মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে একদল উন্মত্ত অসভ্য তার সিংহাসন দখল করার পরিকল্পনা করছে এটা তিনি মানবেন না বা বিশ্বাস করবেন না। তা হলে আপনি তার কাছ থেকে কিছুই পাবেন না।”
“হ্যাঁ, তবে একটা বিশেষ নিয়মের সুবিধা পাবো আমি।”
“যেমন?”
“আসলে এটা একটা পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতিটা সামরিক অভিযানে সম্রাটের মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকেন। অর্থাৎ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়।”
“সত্যি! কেন?”
“প্রতিটা অভিযানে সম্রাটের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার একটা পদ্ধতি। আরেকটা উদ্দেশ্য হল জেনারেলদের বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করা। যদিও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে খুব কমই সফল হওয়া যায়।”
“এটা আপনার কাজে অসুবিধা তৈরি করবে, জেনারেল।”
“কোনো সন্দেহ নেই।” চেহারা সামান্য লাল হল রিয়োজের। “তবে রিয়াজের হাতের রিসিভারের আলো জ্বলল, সামান্য একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নির্দিষ্ট সুটে ঢুকল সিলিন্ডার আকৃতির কমিউনিকেশন যন্ত্র। রিয়োজ খুললেন সেটা। “চমৎকার!”