“দশটা যুদ্ধযান, মহানুভব, সেইসাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিলিয়ারি ভেসেল। পুরোনো গ্র্যান্ড ফ্লিট থেকে উদ্ধারকৃত দুটো মোটর চালিত যান, একটার শক্তির উৎস ব্যাটারি। অন্য দুটো গত পঞ্চাশ বছরের নতুন আবিষ্কার তবে মেরামতযোগ্য।”
“যে-কোনো যুক্তিসঙ্গত দখলের জন্য দশটা যুদ্ধযান যথেষ্ট। কেন, আমার বাবা দশটারও কম যুদ্ধযান দিয়ে প্রথম যুদ্ধজয় করেননি। যে অসভ্যদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ করতে চাইছে তারা কারা?”
অবজ্ঞার সাথে একজোড়া ভুরু কপালে তুলল প্রিভি সেক্রেটারি। সে নাম বলেছে ‘ফাউণ্ডেশন’।”
“ফাউণ্ডেশন? সেটা আবার কী?”
“কোনো রেকর্ড নেই, মহানুভব। আর্কাইভ খুঁজে দেখেছি। গ্যালাক্সির যে অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে সেটা প্রাচীন অ্যানাক্রন প্রদেশের অংশ যেখানে গত দুই শতাব্দী ধরে চলছে দস্যুতা, বর্বরতা এবং অরাজকতা। ঐ প্রদেশে ফাউণ্ডেশন নামে কোনো গ্রহ নেই। তবে একটা রেকর্ডে আছে যে ঐ প্রদেশ আমাদের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে একদল বিজ্ঞানীকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল একটা এনসাইক্লোপেডিয়া তৈরি করার দায়িত্ব দিয়ে।” মুখ বাঁকা করে হাসল সে। “সম্ভবত বিজ্ঞানীরা সেটার নাম দিয়েছিল এনসাইক্লোপেডিয়া ফাউণ্ডেশন।”
“বেশ,” গম্ভীর গলায় বললেন সম্রাট, “খুব সামান্য অগ্রগতি।”
“আমি নিজে অগ্রসর হচ্ছি না, মহানুভব। ঐ অঞ্চলে অরাজকতা বেড়ে যাওয়ার পর বিজ্ঞানীদলের আর কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। যদি তাদের বংশধরেরা এখনো বেঁচে থাকে এবং একই নাম ব্যবহার করে তা হলে কোনো সন্দেহ নেই তারাও বর্বর হয়ে গেছে।”
“আর তাই সে রিইনফোর্সমেন্ট চায়।” সম্রাট হিংস্র দৃষ্টিতে তার সেক্রেটারির দিকে তাকালেন। “অদ্ভুত; প্রথমে যুদ্ধ শুরু করার অনুমতি আর আক্রমণ শুরু করার আগেই রিইনফোর্সমেন্ট। এখন এই রিয়োজের কথা আমার মনে পড়ছে। অভিজাত বংশের সন্তান। ব্রুডরিগ, এখানে এমন কোনো জটিলতা আছে আমি যা ধরতে পারছি না। আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
যে চকচকে শিট তার অসাড় পা দুটোকে ঢেকে রেখেছে সেটার উপর আনমনে আঙুল বুলালেন তিনি। বললেন, “ওখানে আমার একজন লোক দরকার; যার চোখ আছে, বুদ্ধি আছে এবং অনুগত। ব্রুডরিগ-”
অনুগতভাবে কুর্নিশ করল সেক্রেটারি। “এবং যুদ্ধযান মহানুভব?”
“এখনই না!” দেহকে একটু নড়ানোর ফলে ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করলেন সম্রাট। কাঁপা কাঁপা আঙুল তুলে বললেন, “যতক্ষণ না আমি আরো জানতে পারছি। আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ পরে কাউন্সিল অব লর্ডদের অধিবেশন শুরু করতে বল।”
বালিশের আরামদায়ক ফোর্সফিল্ডে মাথা রাখলেন তিনি, “এখন যাও, ফ্রডরিগ, এবং ডাক্তারকে পাঠিয়ে দাও। সবগুলোর মাঝে ওই বেটাই সবচেয়ে অযোগ্য।”
*
৫. যুদ্ধ শুরু
স্যিউয়েনার রেডিয়েটিং পয়েন্ট থেকে এম্পায়ারের বাহিনী সতর্কতার সাথে পেরিফেরীর অজানা অন্ধকারে পৌঁছল। যে সীমাহীন দূরত্ব গ্যালাক্সির এই প্রান্তের নক্ষত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সেই দূরত্ব পেরিয়ে তারা ছুটে চলল ফাউণ্ডেশন প্রভাবিত অঞ্চলের বাইরের সীমানার দিকে।
গত দুই শতাব্দী থেকে বিচ্ছিন্ন বিশ্বগুলো নিজেদের মাটিতে আবার অনুভব করল ইম্পেরিয়াল ওভারলর্ডদের উপস্থিতি। ভয়ানক মারণাস্ত্র দেখে তারা আত্মসমর্পণ করল বিনাশর্তে।
দখল করা প্রতিটি বিশ্বে স্থাপন করা হল গ্যারিসন। সৈনিকদের পরনে ইম্পেরিয়াল ইউনিফর্ম, কাঁধে মহাকাশযান এবং নক্ষত্রচিহ্ন। এগুলো দেখে বৃদ্ধের মনে পড়ল দাদার দাদার আমলের কথা যখন মহাবিশ্বে আসলেই শান্তি ছিল এবং এই একই চিহ্ন শাসন করত সবকিছু।
বিশাল যুদ্ধযানগুলো ফাউণ্ডেশনকে ঘিরে আরো ঘাঁটি তৈরি করার জন্য এগিয়ে চলল। কাজটা যেন কাপড়ের নিখুঁত বুনন। প্রতিটা বিশ্ব বুনটের নির্দিষ্ট স্থানে নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলার পর রিপোর্ট আসতে লাগলো নক্ষত্রের আলো বঞ্চিত এক রুক্ষ পাথুরে গ্রহে, যেখানে বেল রিয়োজ তার হেডকোয়ার্টার তৈরি করেছেন।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ডুসেম বারের দিকে ঘুরলেন তিনি, “বেশ, কী মনে হচ্ছে আপনার প্যাট্রিশিয়ান?”
“আমার? তার কি কোনো গুরুত্ব আছে? আমি বেসামরিক লোক।” দেয়াল থেকে বেরিয়ে থাকা এলোমেলো পাথরের আঁকাবাঁকা ছায়াগুলোর দিকে তিনি অস্বস্তি নিয়ে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। এই ছোট কামরার ভেতরের কৃত্রিম আলো এবং কৃত্রিম বাতাস নিপ্রাণ গ্রহে জীবনের একমাত্র অস্তিত্ব।
“আমার সাহায্যের বিনিময়ে,” বিরবির করে বললেন তিনি, “আপনি আমাকে স্যিউয়েনায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন?”
“এখন না। এখন না।” জেনারেল প্রাচীন অ্যানাক্রন প্রিফেক্ট এর চমৎকার স্বচ্ছ বৃত্তাকার মানচিত্রের দিকে চেয়ার ঘোরালেন। “এই ঝামেলাটা শেষ হলেই আপনি ফিরে যেতে পারবেন। আমি দেখব যেন পুরোনো এস্টেট আবার ফিরে পান এবং বংশ পরম্পরায় ভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করব।”
“ধন্যবাদ।” বললেন বার, কণ্ঠে তিরস্কার। “তবে আমার মনে হয় না সফল পরিসমাপ্তি হবে।”
কর্কশভাবে হাসলেন রিয়োজ। “আবার সেই আধ্যাত্মিক ভবিষ্যদ্বাণী শুরু করবেন না।” হালকাভাবে তিনি মানচিত্রের অদৃশ্য বৃত্তাকার আউটলাইনের উপর হাত বোলালেন। “রেডিয়ান প্রজেকশনের সাহায্যে মানচিত্রের অর্থ বের করতে পারেন? পারেন? বেশ, নিজেই দেখুন। সোনালি রঙের নক্ষত্রগুলো ইম্পেরিয়াল টেরিটোরি, লালরঙের নক্ষত্রগুলো ফাউণ্ডেশন-এর বশ্যতা স্বীকার করেছে, এবং গোলাপি রঙের নক্ষত্রগুলো সম্ভবত ফাউণ্ডেশন-এর অর্থনৈতিক প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। এবার লক্ষ করুন-”