আমার ধারণা, ট্র্যাভিজ বলল, ওরা খুশি হয়েই ভিজছে। কারণ গায়ার বাকি অংশও ভিজছে। গাছ-ঘাস-মাটি-সবকিছু। এবং গায়ানদের মতো বাকি সবকিছুই সমানভাবে গায়া।
তোমার কথায় যুক্তি আছে। কিছুক্ষণ পরেই সূর্য উঠবে। ভেজা সবকিছু দ্রুত শুকিয়ে যাবে। কোনো ঠাণ্ডা নেই। আর যেহেতু কোনো জীবাণুর আক্রমণ নেই, সর্দি কাশি বা নিউমোনিয়া হবে না। কাজেই একটু ভিজলে সমস্যা কি।
যুক্তিগুলো ট্র্যাভিজও জানে। কিন্তু হার মানতে চাইল না। তারপরেও আমরা যখন চলে যাচ্ছি ঠিক তখনই বৃষ্টি হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। হাজার হোক এটা
তো স্বেচ্ছা বৃষ্টিপাত। প্রয়োজন না হলে গায়া কখনো বৃষ্টিপাত ঘটায় না। মনে হচ্ছে। যেন আমাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করছে।
সম্ভবত, তারপর পেলোরেট কৌতুকের ভঙ্গিতে ঠোঁট বাকা করে বলল, আমরা চলে যাচ্ছি, তাই গায়া দুঃখে কাঁদছে।
সে হয়তো দুঃখ পেয়েছে। আমি পাইনি।
আসলে, কথা বলে যাচ্ছে পেলোরেট, গায়ার এই অংশের মাটি একটু ভেজানেনা। প্রয়োজন। আর সেই প্রয়োজন তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হেসে ফেলল ট্র্যাভিজ। এই গ্রহ তোমার বেশ পছন্দ হয়েছে, তাই না? এমনকি ব্লিস এর চেয়েও বেশি।
হ্যাঁ, পছন্দ করি। পেলোরেট বলল কিছুটা আররক্ষার সুরে। জীবনটা আমি শান্ত আর নিরূপদ্রবে কাটাতে চেয়েছি। আর এখানে পুরো গ্রহ চেষ্টা করছে নিজেকে শান্ত নিরূপদ্রব রাখার জন্য। ভেবে দেখ গোলান, আমরা যখন ঘরবাড়ি তৈরি করি বা ওই মহাকাশযান তৈরি করার সময়-একটা নিচ্ছিদ্র আশ্রয় তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। আরামআয়েশের সব ধরনের ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করি। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি। আর এখানে সেই ইচ্ছাটাই ব্যাপক হয়ে পুরো গ্রহে ছড়িয়ে পড়েছে। সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যাটা হচ্ছে বাড়ি বা ওই মহাকাশযান তৈরি করা হয় আমার উপযুক্ত করে। কিন্তু গায়ার অংশ হলে, এই গ্রহ যত আদর্শই হোক না কেন নিজেকে পাল্টে নিয়ে
আমাকে এই গ্রহের উপযুক্ত হয়ে উঠতে হবে।
ঠোঁট ভাঁজ করল পেলোরেট। প্রত্যেক সমাজই মানুষকে গড়ে পিটে তার উপযুক্ত করে নেয়। নিজের প্রয়োজনে সমাজ বিভিন্ন প্রথা তৈরি করে মানুষকে শিকলে বেঁধে নেয়।
আমি যে সমাজগুলো জানি সেখানে যে কেউ বিদ্রোহ করতে পারে। সেখানে কিছু খ্যাপাটে লোক, এমনকি অপরাধীও থাকে।
তুমি চাও খ্যাপাটে লোক বা অপরাধী থাকুক?
কেন নয়? তুমি আর আমি খ্যাপাটে লোক। আমরা টার্মিনাসের সাধারণ মানুষের মতো নই। আর অপরাধীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। অকল্যাণকর প্রথা ভাঙার জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য, মেধার জন্য যদি অপরাধী হতে হয় আমি তাতেও রাজি।
অপরাধী হতেই হবে? এ ছাড়া মেধাবী হওয়া যায় না?
মেধাবী বা মহাপুরুষ তারাই যারা প্রচলিত নিয়মনীতির অনেক ঊর্ধ্বে থাকে। প্রচলিত নিয়ম নীতির ভেতরে থেকে তুমি এগুলো পাবে না। যাই হোক শুধু আরামদায়ক বাড়ি বলেই গায়াকে আমি মানবজাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে নির্বাচিত করিনি। সেজন্য আরও জোরালো কারণ খুঁজে বের করতে হবে আমাকে।
আসলে তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করছি না। শুধু কিছু–
থেমে গেল পেলোরেট। ব্লিস তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভিজে চকচক করছে তার কালো চুল, কালো পোশাক লেপটে আছে গায়ের সাথে। এগিয়ে আসার সময় আস্তে করে মাথা নাড়ল।
দুঃখিত, দেরি করিয়ে দিলাম। ডম-এর সাথে কথা বলতে গিয়েই দেরি হয়ে গেল।
সে যা জানে তার সবই তো তুমি জানো।
ব্যাপারটা হচ্ছে আসলে কে কীভাবে দেখবে। আমাদেরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে না এটা ঠিক। দেখ, ব্লিস বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে। তোমাদের দুটো হাত। দুটোই শরীরের অংশ। দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, শুধু একটা আরেকটার প্রতিবিম্ব। কিন্তু দুটো হাত তুমি একইভাবে ব্যবহার করো না। কিছু কাজ করো ডান হাত দিয়ে কিছু কাজ করো বাঁহাত দিয়ে। ব্যাপারটা দৃষ্টিভঙ্গির।
চমৎকার যুক্তি। সন্তুষ্টির সাথে বলল, পেলোরেট।
মাথা নাড়ল ট্র্যাভিজ। ক্ষেত্রবিশেষে বেশ কার্যকর বিশ্লেষণ। আমি অবশ্য নিশ্চিত নই। যাই হোক, আমরা এখন জাহাজে উঠতে পারি। বৃষ্টি হচ্ছে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমাদের লোকজন এটার বেশ ভালোই যত্ন নিয়েছে। তারপর হঠাৎ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি ভিজছ না। তোমাকে ধরতে পারছে না বৃষ্টির ফোঁটাগুলো।
হ্যাঁ, অবশ্যই। ভালো লাগছে না ভিজতে। কিন্তু যখন তখন বৃষ্টিতে ভেজা বেশ মজার, তাই না? নিশ্চয়ই। কিন্তু নিজের ইচ্ছায়, বৃষ্টির ইচ্ছায় না।
কাঁধ নাড়ল ব্লিস, বেশ, তোমার খুশি। আমাদের মালপত্র উঠানো হয়েছে। চল আমরাও উঠি।
তিন জন ফার স্টারের দিকে হাঁটা ধরল। বৃষ্টি কমে এসেছে, কিন্তু ঘাসগুলো ভেজা। ট্র্যাভিজ গা বাঁচিয়ে হাটছে। কিন্তু ব্লিস জুতো খুলে হাতে নিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে লাগল।
বেশ মজা। ট্র্যাভিজ তার পায়ের, দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরে বলল।
ভালো। ট্র্যাভিজ অন্যমনস্ক। তারপর বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা ওই গায়ানরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
ওরা ঘটনাটা রেকর্ড করছে। আমাদের কাছে তুমি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে দেখ, এই অভিযানের পর তুমি যদি মত পাল্টে আমাদের বিপক্ষে চলে যাও, আমরা আর গ্যালাক্সিয়া তৈরি করতে পারব না, এমনকি গায়া হিসেবেও থাকতে পারব না।