যেখানে গেলে হয়তো তোমার অজানা কারণগুলো জানতে পারবে, তাই না, ট্র্যাভিজ?
হয়তো। যাই হোক, ডম বলেছে, পৃথিবীর অবস্থান সে জানে না। তুমিও তার সাথে একমত।
অবশ্যই।
তুমি আমার ভেতর থেকে কোন তথ্য বের করে নিয়েছ? সচেতনভাবে।
অবশ্যই না। শোন, গায়ার পক্ষে মিথ্যে কথা বলা সম্ভব হলেও তোমার সাথে বলবে না। তোমার সিদ্ধান্তের উপর আমরা নির্ভরশীল, এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই সেটা সঠিক হওয়া প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে, তোমাদের বিশ্বের স্মৃতিভাণ্ডার ব্যবহার করা যাক। পিছনের দিকে অনুসন্ধান করে বলো কত পুরোনো সময়ের ঘটনা মনে করতে পারবে?
কয়েক মুহূর্তের দ্বিধা। ব্লিস শূন্য চোখে ট্র্যাভিজের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। তারপর বলল, পনের হাজার বছর।
দ্বিধা করছ কেন?
সময় লাগবে। পুরোনো স্মৃতি-সত্যিকারের পুরোনো স্মৃতিগুলো রয়েছে পাহাড়ের একেবারে নিচে। তুলে আনতে সময় লাগবে।
তা হলে পনের হাজার বছর আগে। সেই সময় গায়া তৈরি হয়েছিল।
না। আমাদের জানামতে গায়া তৈরি হয়েছিল আরও প্রায় তিনহাজার বছর আগে।
অনিশ্চয়তা কেন? তুমি বা গায়া মনে করতে পারছ না।
সেটা ছিল সর্বজনীন স্মৃতিভাণ্ডার তৈরিরও আগে।
তার আগে গায়া নিশ্চয়ই রেকর্ড রাখত, ব্লিস। স্বাভাবিক রেকর্ড, যেমন ছাপানো, ফিল্ম, ইত্যাদি।
আমারও তাই ধারণা। কিন্তু এতদিন পরে নিশ্চয়ই নেই।
সেগুলো নিশ্চয় অনুলিপি করা হয়েছে বা বলা ভালো সর্বজনীন স্মৃতিভাণ্ডারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ব্লিস ভুরু কোঁচকালো। আবারও দ্বিধাগ্রস্ততা, এবার দীর্ঘ সময়ের জন্য।
এমন কোনো পুরোনো রেকর্ড আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
কেন?
জানি না, ট্র্যাভিজ। আমার ধারণা সেগুলোর তেমন কোনো গুরুত্ব ছিল না। সময়ের সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুমি জান না। শুধু ধারণা এবং অনুমান করছ। কিন্তু সঠিক জান না। গায়াও জানে না।
চোখ নামিয়ে নিল ব্লিস। তাই হবে।
তাই হবে? আমি গায়ার অংশ নই, কাজেই গায়ার মতো ধারণা করার কোনো প্রয়োজন নেই আমার-এর থেকেই আইসোলেশনের গুরুত্ব বুঝতে পারবে তুমি। আইসোলেট হিসেবে আমার ধারণা অন্যরকম।
কী ধারণা?
একটা ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো সভ্যতাই তার প্রাথমিক যুগের রেকর্ড ধ্বংস করতে চায় না। বরং সংরক্ষণের চেষ্টা করে। গায়ার প্রি-গ্লোবাল রেকর্ডগুলো ধ্বংস করা হলে সেটা নিশ্চয়ই স্বেচ্ছায় করা হয় নি।
অর্থাৎ!
ট্র্যানটরের লাইব্রেরি থেকে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের চেয়ে বড় কোনো শক্তি পৃথিবীর সব রেকর্ড সরিয়ে ফেলেছে। সম্ভবত তোমাদের চেয়েও শক্তিশালী কোনো পক্ষ গায়া থেকে সমস্ত রেকর্ড সরিয়ে ফেলেছে।
কীভাবে বুঝলে যে পুরোনো রেকর্ডগুলো সব পৃথিবী সম্পর্কে ছিল?
তোমার মতে গায়া তৈরি হয়েছিল আঠারো হাজার বছর আগে, গ্যালাকটিক এম্পায়ার তৈরির পূর্বে, সেই সময় যখন গ্যালাক্সিতে বসতিস্থাপন মাত্র শুরু হয়েছে, এবং বসতিস্থাপনকারীদের মূল ধারাটা এসেছিল পৃথিবী থেকে। পেলোরেটের কাছে প্রমাণ আছে।
হঠাৎ নিজের নাম শুনে চমকে উঠল পেলোরেট। গলা পরিষ্কার করে নিল। প্রাচীন কিংবদন্তিগুলোতে এই কথাই বলা হয়েছে। ট্র্যাভিজের মতো আমারও ধারণা মানবজাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র একটা গ্রহ থেকে এবং সেই গ্রহ হচ্ছে পৃথিবী। প্রথম যুগের বসতিস্থাপনকারীরা এসেছিল সরাসরি পৃথিবী থেকে।
সেক্ষেত্রে, ট্র্যাভিজ বলল, গায়াতে বসতি স্থাপন করা হয় হাইপারস্পেসাল ট্রাভেল-এর প্রথম যুগে, স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেয়া যায় যে পৃথিবীর মানুষ সরাসরি এখানে কলোনি তৈরি করেছিল, অথবা এমন কোনো বিশ্বের অধিবাসী যে বিশ্বে পৃথিবীর মানুষ কিছুদিন পূর্বেই কলোনি তৈরি করেছে-তাদের দ্বারা। সেকারণেই বসতিস্থাপনের পরবর্তী কয়েক হাজার বছরের রেকর্ডগুলো ছিল পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে এবং সেগুলো এখন হারিয়ে গেছে। কোনো একটা শক্তি চাইছে না গ্যালাক্সির কোথাও পৃথিবীর নামটা থাকুক। এবং তার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
কিন্তু সবই তো অনুমান। তোমার কাছে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। রাগের সাথে বলল ব্লিস।
তোমরাই বলেছো, অপর্যাপ্ত তথ্য থেকে সঠিক উপসংহার বের করার ক্ষমতা আছে আমার। কাজেই আমার কোনো ভুল হয়নি। বলো না যে প্রমাণের অভাব আছে।
ব্লিস নিশ্চুপ।
ট্র্যাভিজ কথা চালিয়ে গেল। পৃথিবী আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। ফার স্টার তৈরি হওয়া মাত্র আমি রওনা দেব। তোমরা এখনও যেতে চাও?
হ্যাঁ। একসাথে বলল ব্লিস এবং পেলোরেট।
.
২. কমপরেলন-এর পথে
ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকালো ট্র্যাভিজ। ধূসর পাথুরে বর্ণ ধারণ করেছে আকাশ।
তার মাথায় একটা বৃষ্টি নিরোধক টুপি, বৃষ্টির ফোঁটা টুপিতে পড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। টুপি থেকে ছিটকে আসা পানির বিন্দু থেকে গা বাঁচিয়ে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে আছে পেলোরেট। যদিও বৃষ্টিতে ভেজার হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো। ব্যবস্থা নেয়নি সে।
খামোখা ভেজার কোনো কারণ দেখি না, জেনভ। বলল ট্র্যাভিজ।
কোনো সমস্যা নেই, প্রিয় বন্ধু, পেলোরেট এর আমুদে গলা। বরাবরের মতোই মুখে বিষণ্ণ গাম্ভীর্য। হালকা বৃষ্টি। কোনো বাতাস নেই। তা ছাড়া পুরোনো প্রবাদ আছে : এনাক্রনে গিয়ে সেভাবেই চল, যেভাবে এনাক্রোনিয়ানরা চলাফেরা করে। ফার স্টারের কাছে দাঁড়ানো কয়েকজন গায়ানকে নির্দেশ করে শেষের কথাগুলো বলল সে। গায়ানরা শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, যেন বাগানে সাজানো গাছ। এবং কেউই বৃষ্টি নিরোধক টুপি পড়েনি।