অবশ্যই।
কিন্তু গায়া যদি তার সমস্ত জ্ঞান প্ল্যানেটরি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে রাখে, তা হলে গ্রহের ক্ষুদ্র একটা অংশ হিসেবে তুমি কতদূর কি করতে পারবে?
তুমি যা করতে পারো তার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারি। আমার যা জানা প্রয়োজন সেটা হয়তো কোনো ইণ্ডিভিজুয়াল মাইণ্ডে রয়েছে। বিষয়টা যদি খুব সাধারণ হয়, যেমন-চেয়ার শব্দের অর্থ কী-এটা সবার মস্তিষ্কেই আছে। কিন্তু জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গায়ার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে থাকে। প্রয়োজন হলে আমি সেখান থেকে বের করে আনতে পারব। যদিও সময় একটু বেশি লাগবে। তোমার যখন কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হয় তখন তুমি কী করো, ট্র্যাভিজ? ঐ। বিষয়ের নির্দিষ্ট বুক ফিল্ম বা কম্পিউটার ডাটা ব্যাংকের সাহায্য নাও। আর আমি গায়ার পুরো মস্তিষ্ক স্ক্যান করি।
এত কিছু মাথায় থাকে কী করে? পড়ে যায় না?
ঠাট্টা করছ, ট্র্যাভিজ?
অভদ্রতা করো না, গোলান। পেলোরেট বলল।
ট্র্যাভিজ একবার পেলোরেট একবার ব্লিস এর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। অনেক চেষ্টার পর তার মুখের থমথমে ভাব শিথিল হলো। দুঃখিত। বাধ্য হয়ে দায়িত্ব। পালন করতে করতে আমি বিরক্ত, কীভাবে ছাড়া পাবো তাও জানি না। ব্লিস আমি আসলেই জানতে চাই। কীভাবে তুমি অন্য মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতি বের করে আনো, অথচ নিজের মস্তিষ্কে সেটা ধারণ করতে হয় না?
আমি জানি না, ট্র্যাভিজ; তোমার মস্তিষ্ক একা কীভাবে কাজ করে, সেটা তুমি যতটুক জানো, তার বেশি, আমিও জানি না। সামান্য বুঝিয়ে বলতে পারি। ধর, টার্মিনাসের সূর্য থেকে প্রতিবেশী কোনো নক্ষত্রের দূরত্ব তুমি জানো। সময়ের সাথে সাথে তুমি হয়তো সেটা ভুলে গেলে। কিন্তু প্রয়োজন হলে কোনো ডাটা ব্যাংক থেকে জেনে নিতে পারবে। গায়াকে একটা বিশাল ডাটা ব্যাংক হিসেবে কল্পনা কর। প্রয়োজন হলেই যে-কোনো ঘটনা বা স্মৃতি বের করে আনি, তারপর আবার যেখান থেকে এনেছিলাম সেখানে ফেরত পাঠাই। নিজের স্মৃতিতে ধরে রাখার প্রয়োজন হয় না।
গায়ার জনসংখ্যা কত? কতজন মানুষ বাস করে এখানে?
কম বেশি এক মিলিয়ন। সঠিক সংখ্যাটা জানতে চাও?
না, অনুমানেই চলবে। যাই হোক, এক বিলিয়ন মানুষ যার বিশাল অংশ হচ্ছে শিশু–নিশ্চয়ই একটা জটিল সামাজিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না।
গায়াতে মানুষ ছাড়াও অন্য জীব আছে। অর্থাৎ পশু পাখিও স্মৃতি ধরে রাখতে পারে? মানুষের মতো সমপরিমাণে রাখতে পারে না। তা ছাড়া সকল মস্তিষ্কেরই অধিকাংশ জায়গা জুড়ে থাকে ব্যক্তিগত স্মৃতি, যার প্রয়োজনীয়তা খুব কম। তাই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অনেকটাই প্রাণীর মস্তিষ্কে, উদ্ভিদ কোষে এবং গ্রহের ভৌগোলিক কাঠামোতেও ধারণ করা হয়।
ভৌগোলিক কাঠামো? পাথর, পাহাড়, পর্বত?
সাগর এবং বায়ুমণ্ডলেও ধারণ করা হয়। সবই তো গায়া।
কিন্তু জড়বস্তু কতটুকু স্মৃতি ধরে রাখতে পারে?
প্রচুর পরিমাণে। ঘনত্ব কম কিন্তু পরিমাণে বিশাল। ফলে গায়ার মোট স্মৃতিশক্তির বিশাল অংশ পাথরে ধারণ করা হয়। সেখানে কোনো স্মৃতি ধারণ করতে এবং বের করে আনতে খুব কম সময় লাগে। ফলে মৃত তথ্য-অর্থাৎ যেগুলো। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় খুব কম ব্যবহৃত হয় সেগুলো পাথর পাহাড় পর্বতে ধারণ করা হয়।
যার মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে, সে যদি মারা যায়?
তথ্যগুলো তো হারিয়ে যায় না। মৃত্যুর পরে মস্তিষ্কের সংগঠন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে, কিন্তু স্মৃতিগুলো গায়ার অন্যান্য অংশে সরিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। নতুন বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নতুন শিশু জন্মায়, বয়সের সাথে সাথে তাদের মস্তিষ্ক সংগঠিত হতে থাকে, তখন তারা শুধু নিজস্ব ধারণা এবং স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠে না। অন্যান্য উৎস থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান তাদের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তোমরা যাকে শিক্ষা বল, আমি/আমরা/গায়ার ক্ষেত্রে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়।
সত্যি গোলান। আমার মনে হয় এই জীবন্ত গ্রহের ধারণা বেশ উন্নত।
ট্র্যাভিজ তার সহযাত্রী ফাউণ্ডেশনারের দিকে তাকালো আড়চোখে। কোনো সন্দেহ নেই, জেনভ। কিন্তু আমার ধারণা পাল্টাচ্ছে না। এই গ্রহ বেশ বড় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ, কিন্তু একক সত্তা। একক! প্রতিটা নতুন বুদ্ধিমত্তা এর সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এখানে বিরোধিতা করার সুযোগ কোথায়। মানুষের ইতিহাসে দেখা যায় সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারাই জিতেছে, আর তাতে ইতিহাসের ধারা পাল্টে গেছে আমূল।
আমাদের ভিতরেও বিরোধ আছে, ব্লিস বলল। গায়ার সকল অংশই সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেয়নি।
সেটা খুব সামান্য। বলল ট্র্যাভিজ। একটা সিঙ্গেল অর্গানিজমের ভেতর খুব বেশি গোলযোগ থাকতে পারে না। থাকলে সেটা কাজ করবে না।
ব্লিস পুরোপুরি নিরাবেগ গলায় বলল,নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছ? এখন মত পাল্টাতে চাও?
দ্বিধান্বিত হয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করল ট্র্যাভিজ। তারপর ধীর গলায় বলল, এখনই না। কয়েকটা অজানা কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেগুলো না জানা পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারব না। এখন পৃথিবীর ব্যাপারে ফিরে আসা যাক।