অবশ্য কোনো পরিবর্তন হয় নি। সে এখনও একজন কাউন্সিলম্যান। তার মূর্যাদা এবং প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলো অপরিবর্তিত রয়েছে, শুধু টার্মিনাসে ফিরে গিয়ে সেগুলো দাবি করার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফাউণ্ডেশন-এর কোলাহলমুখর পরিবেশে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না, গায়ার শান্ত পরিবেশও তার ভালো লাগে না। কোথাও গিয়ে শান্তি নেই, সে এখন সত্যিকারের ভবঘুরে।
তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, রাগের সাথে আঙুল চালালো মাথাভর্তি কালো চুলে। ভাগ্য নিয়ে হাহুতাস করার আগে তাকে খুঁজে বের করতে হবে পৃথিবী। এই অনুসন্ধান থেকে বেঁচে ফিরতে পারলে দুঃখ প্রকাশ করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। তখন হয়তো দুঃখ প্রকাশ করার জন্য আরো ভালো কোনো কারণ থাকবে।
নিজের মনোবল দৃঢ় করে নিল, তারপর আবার ডুবে গেল অতীত চিন্তায়। তিন মাস আগে সে আর আরভোলা পণ্ডিত জেনভ পেলোরেট টার্মিনাস ছেড়ে এসেছে। পেলোরেটের উদ্দেশ্য বহুদিন পূর্বে হারিয়ে যাওয়া গ্রহ পৃথিবী খুঁজে বের করা। নিজের উদ্দেশ্য গোপন রাখার জন্য ট্র্যাভিজ পেলোরেটের উদ্দেশ্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা পৃথিবী খুঁজে পায় নি, পেয়েছে গায়া। গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সে।
পেলোরেটও অপ্রত্যাশিতভাবে খুঁজে পেয়েছে কালো চুল, গভীর চোখের তরুণী ব্লিসকে, ডম, গ্রহের সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধূলিকণা বা ঘাসের মতো এই তরুণী ও গায়া। মধ্যবয়সী পেলোরেট তার অর্ধেক বয়সেরও কম বয়সী এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে, আর অস্বাভাবিকই বলতে হবে যে মেয়েটাও মনে হয় তার প্রেমে পড়েছে।
অদ্ভুত হলেও পেলোরেট সুখী, আর ট্র্যাভিজের ধারণা প্রত্যেক মানুষেরই সুখী হওয়ার নিজস্ব পদ্ধতি থাকা উচিত। এটাই হচ্ছে ইণ্ডিভিজুয়ালিটির বৈশিষ্ট্য, যে ইণ্ডিভিজুয়ালিটি সে নিজের ইচ্ছায় গ্যালাক্সি থেকে (নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে) নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে।
অস্থিরতা আবার বেড়ে গেল। যে সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে বা নিতে বাধ্য হয়েছে প্রতি মুহূর্ত সেটা তাকে খোঁচাচ্ছে। এবং–
গোলান!
তার চিন্তায় বাধা দিল কণ্ঠস্বরটা। চোখ তুলতেই সূর্যের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল।
আহ্, জেনভ, আন্তরিক গলায় বলল সে-খুব বেশি আন্তরিক সুরে বলল যেন পেলোরেট তার ভেতরের তিক্ততা ধরতে না পারে। মনের উপর জোর খাঁটিয়ে একটু হাসল, ব্লিস এর কাছ থেকে ছুটে আসতে পারলে তা হলে।
মাথা নাড়ল পেলোরেট, মৃদুবাতাসে তার রেশমের মতো সাদা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। লম্বা বিষণ্ণ মুখে আগের মতোই গাম্ভীর্যের ছাপ। আসলে পুরোনো বন্ধু, সেই আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে বলেছে। অবশ্য দেখা করার ইচ্ছা আমার নিজেরও ছিল, কিন্তু সে মনে হয় আমার থেকেও দ্রুত চিন্তা করতে পারে।
হাসল ট্র্যাভিজ। ঠিক আছে, জেনভ। তুমি বিদায় জানাতে এসেছ, তাই তো?
বেশ, ঠিক তা না। আসলে বলা যায় উল্টোটাই সত্যি। গোলান, টার্মিনাস ত্যাগ করার সময় তোমার আর আমার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবী খুঁজে বের করা। আমার জীবনের পুরোটাই আমি ব্যয় করেছি এই কাজে।
আমি সেটা শেষ করব, জেনভ, কাজটা এখন আমার।
হ্যাঁ, কিন্তু কাজটা আমারও ছিল, থাকবেও।
কিন্তু–হাত নেড়ে তার চারপাশে গ্ৰহটাকে দেখালো ট্র্যাভিজ।
পেলোরেট ফিসফিস করে বলল, আমি তোমার সাথে যেতে চাই।
তুমি নিশ্চয়ই সত্যি কথা বলছ না? ট্র্যাভিজ অবাক। বলেছিলে তুমি বাকি জীবন গায়াতে থাকবে।
যে-কোনো সময় এখানে ফিরে আসতে পারব। কিন্তু তোমাকে একা ছেড়ে দিতে পারব না।
অবশ্যই পারো। আমি নিজের দেখভাল করতে পারি।
কোনো সন্দেহ নেই, গোলান, কিন্তু তোমার জানার পরিমাণ সীমিত। আমি পুরাকাহিনী আর কিংবদন্তিগুলো জানি। তোমাকে পথ দেখাতে পারব।
ব্লিসকে ছেড়ে যাবে তুমি?
গাল হালকা লাল হয়ে গেল পেলোরেটের। আসলে ছেড়ে যেতে চাই না, ওল্ড চ্যাপ, কিন্তু সে বলেছে
কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়ল ট্র্যাভিজের। রিস কি এখন তোমাকে ছেড়ে দিতে চাইছে? আমাকে সে কথা দিয়েছিল।
না, তুমি বোঝনি। কথা শোন, গোলান। কারো কথা না শুনেই তড়িঘড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা তোমার অভ্যাস। জানি এটাই তোমার বিশেষত্ব। আর আমিও কোনো কিছু সংক্ষেপে গুছিয়ে বলতে পারি না।
বেশ, ট্র্যাভিজ নরম সুরে বলল, ব্লিস কী চায় সেটা তোমার যেভাবে খুশি বল, আমি ধৈর্য ধরে শুনব, কথা দিলাম।
ধন্যবাদ, তুমি ধৈর্য ধরলে আমিও সুস্থির হয়ে বলতে পারি। আসলে ব্লিস নিজেও আমাদের সাথে অভিযানে যেতে চাইছে।
ব্লিস যেতে চাইছে? আমি আবারও উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। না উত্তেজিত হব না। বল, জেনভ, কেন সে আমাদের সাথে যেতে চায়? আমি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করছি।
বলেনি। শুধু বলেছে তোমার সাথে সে কথা বলবে।
তা হলে এখানে আসেনি কেন?
আমার ধারণা-আমি কিন্তু ধারণার কথা বলছি-যে সে মনে করে তুমি তাকে পছন্দ করো না। আমি অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তার উপর তোমার কোনো রাগ নেই। ব্লিসের উপর কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হবে সেটা আমি ভাবতে পারি না। তবুও সে চেয়েছে আমিই তোমাকে কথাটা বলি। আমি কি গিয়ে এখন বলতে পারি তুমি তার সাথে কথা বলবে?
অবশ্যই এবং এখনই।
এবং তুমি শান্ত থাকবে। আসলে সে খুব অস্থিরতায় ভুগছে। আমাকে বলেছে তাকে অবশ্যই যেতে হবে কারণ ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।