তুমি যা ভাবছ বিশ হাজার বছর তার চেয়েও দীর্ঘ সময়। এম্পায়ার এর প্রথম যুগের অনেক বিষয় গ্যালাক্সির বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত। আমরা সেগুলো বিশ্বাসও করি, কারণ কোনো বিকল্প নেই। আর পৃথিবী এম্পায়ার এর তুলনায় অনেক বেশি প্রাচীন।
কিন্তু কোনো না কোনো রেকর্ড অবশ্যই আছে। প্রিয় বন্ধু পেলোরেট প্রাথমিক পৃথিবী যুগের পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তি সংগ্রহ করেছে। এখান থেকে ওখান থেকে টুকরো টুকরো যত কাহিনী পেয়েছে সব সংগ্রহ করেছে। এটা তার পেশা, সবচেয়ে বড় কথা তার শখ। কিন্তু সবই পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তি। কোনো প্রকৃত রেকর্ড বা ডকুমেন্ট নেই।
বিশ হাজার বছরের পুরোনো ডকুমেন্টস? সব বস্তুই ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, নষ্ট হয়, অদক্ষতা বা যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়।
কিন্তু অবশ্যই রেকর্ডগুলোরও রেকর্ড থাকবে; অনুলিপি, অনুলিপির অনুলিপি, এবং অনুলিপির অনুলিপির অনুলিপি থাকবে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ বিশ সহস্রাব্দের চেয়েও পুরোনো হবে। সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ট্রানটরের গ্যালাকটিক লাইব্রেরিতে অবশ্যই পৃথিবী সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রমাণ ছিল, নিশ্চয়ই সেগুলো ঐতিহাসিক তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু এখন কিছুই নেই। শুধু রেফারেন্স থেকে জানা যায় যে লাইব্রেরিতে কিছু রেকর্ড ছিল, ভিতরের বিষয়বস্তু আর কোনোদিন জানা যাবে না।
মনে আছে নিশ্চয়ই মাত্র কয়েক শতাব্দী আগেই ট্র্যানটরে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
লাইব্রেরি অক্ষত ছিল। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন-এর কর্মীরাই সেটা রক্ষা করে। আর এই কর্মীরাই অতি সম্প্রতি আবিষ্কার করে যে পৃথিবী সম্পর্কিত ডকুমেন্টসগুলো নেই। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কেন? পায়চারী থামিয়ে চোখ গরম করে ডমের দিকে তাকালো ট্র্যাভিজ। যদি পৃথিবী খুঁজে পাই, আমি জানতে পারব সে কি গোপন করছে?
গোপন করছে?
গোপন করছে বা গোপন করে রেখেছে। একবার সেটা বের করতে পারলেই আমার অনুভূতি বলছে আমি জানতে পারব কেন ইণ্ডিভিজুয়ালিটি বাদ দিয়ে গায়া এবং গ্যালাক্সিয়াকে বেছে নিয়েছি। তারপর আমার ধারণা, অনুভূতি নয়, আমি জানতে পারব যে আমার সিদ্ধান্ত সঠিক। যদি সঠিক হয়ই, অর্থহীনভাবে কাঁধ ঝাঁকালো সে, তা হলে সেভাবেই চলবে।
তোমার তাই মনে হয়, বলল ডম, এবং যদি তুমি পৃথিবী খুঁজে বের করতেই চাও তা হলে আমরা তোমাকে সাহায্য করব। কিন্তু সেই সাহায্য হবে সীমিত। কারণ আমরা জানি না যে রাশি রাশি অসংখ্য নক্ষত্র মিলে গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছে, তার কোথায় লুকিয়ে আছে পৃথিবী।
তারপরেও আমাকে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন হলে গ্যালাক্সির সবগুলো নক্ষত্র খুঁজে দেখব। কাজটা একা করতে হলেও কোনো পরোয়া নেই।
.
ট্র্যাভিজের চারপাশে গায়ার শান্ত পরিবেশ। তাপমাত্রা বরাবরের মতোই আরামদায়ক। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, সতেজ কিন্তু গায়ে কাঁপন ধরানোর মতো ঠাণ্ডা না। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে খণ্ড খণ্ড মেঘ, যখন তখন ঢেকে দিচ্ছে সূর্যের আলো, এবং কোনো সন্দেহ নেই, উন্মুক্ত ভূ-পৃষ্ঠের প্রতি মিটার জায়গার কোথাও যদি জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়, সেটা পূরণ করার জন্য যথাসময়ে যথা পরিমাণ বৃষ্টি, হবে।
গাছপালাগুলো জন্মেছে নিয়মিত ব্যবধানে, অনেকটা সাজানো বাগানের মতো, এবং কোনো সন্দেহ নেই পুরো গ্রহে একই অবস্থা। সাগর এবং মাটিতে রয়েছে ঠিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্ভিদ এবং প্রাণী, এবং যথাযথ প্রজাতির যেন সঠিক পরিবেশগত ভারসাম্য তৈরি হয়। কোনো সন্দেহ নেই উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি হয় ধীর গতিতে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী-একইভাবে মানুষের জন্ম মৃত্যুও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সামনের দৃশ্যগুলোর মাঝে একমাত্র বেমানান বস্তু হচ্ছে তার মহাকাশযান, ফার। স্টার।
গায়ার একদল মানবীয় উপাদান দক্ষভাবে এবং যত্নের সাথে মহাকাশযান পরিষ্কার করে গুছিয়ে দিয়েছে। প্রচুর পরিমাণে খাদ্য এবং পানীয় তোলা হয়েছে স্টোররুমে। আসবাবপত্রগুলো মেরামত করা হয়েছে, প্রয়োজনে বদলানো হয়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। নিজে কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখেছে ট্র্যাভিজ।
এই মহাকাশযানের কোনো রিফুয়েলিং এর প্রয়োজন হয় না, কারণ এটা ফাউণ্ডেশন-এর অল্প কয়েকটা গ্র্যাভিটিক মহাকাশযানের একটা, গ্যালাক্সির সাধারণ গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, এবং এই গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড মানুষের সম্ভাব্য সকল মহাকাশযান বহরকে অনন্তকাল শক্তি সরবরাহ করতে পারবে, অথচ ঘনত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না।
তিনমাস আগে ট্র্যাভিজ ছিল টার্মিনাসের একজন কাউন্সিলম্যান। বা অন্য কথায় বলা যায় ফাউণ্ডেশন-এর নীতি নির্ধারণ কমিটির একজন সদস্য, গ্যালাক্সির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন। আসলেই কি তিন মাস? মনে হচ্ছে যেন তার বত্রিশ বছর জীবনের অর্ধেক সময় আগে সে ঐ পদে ছিল এবং তখন তার একমাত্র চিন্তার বিষয় ছিল সেলডন প্ল্যানের যৌক্তিকতা নিয়ে; প্ল্যানেটারি ভিলেজ থেকে গ্যালাকটিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ফাউণ্ডেশন-এর উত্থানের জন্য যে পূর্বপরিকল্পনা ছিল তার সত্যমিথ্যা যাচাই নিয়ে।