ভয় পেয়ো না, পেল ডিয়ার। হাসিমুখে বলল ব্লিস। খাবার বা অন্য কোনোভাবে জীবাণুগুলো আমার শরীরে ঢুকে কোনো ক্ষতি করার আগেই দ্রুত গায়ায় পরিণত হবে।
খাওয়া শেষ হলো। মসলা মেশানো ফলের গরম রসে চুমুক দিয়ে পেলোরেট বলল, প্রসঙ্গ পাল্টানো যাক। মনে হয় আলোচনার বিষয় পাল্টানোর দায়িত্ব একা আমার কাঁধে চেপেছে। কেন?
ট্র্যাভিজ গম্ভীর গলায় বলল, কারণ আমি আর ব্লিস আলোচনার চেয়ে ঝগড়া করি বেশি। সেটা খারাপ পর্যায়ে যাওয়ার আগেই তুমি আমাদের থামাবে। কোন। প্রসঙ্গে আলোচনা করতে চাও, পুরোনো বন্ধু।
কমপরেলন-এর সবগুলো রেফারেন্স ঘেটে দেখলাম। গ্রহটা যে সেক্টরে অবস্থিত সেখানে প্রচুর কিংবদন্তি, গল্প, উপকথা প্রচলিত রয়েছে। বহুদূর অতীতে সেখানে বসতিস্থাপন করা হয়, হাইপার স্পেসাল ট্রাভেলের প্রথম সহস্রাব্দে। কিংবদন্তি আছে বেনবেলী নামে কেউ একজন এই গ্রহে অধিবাস প্রতিষ্ঠাতা। কেউ জানে না সে কোত্থেকে এসেছিল। গ্রহের প্রাচীন নাম ছিল বেনবেলীর বিশ্ব।
এই কাহিনীতে সত্য ঘটনা কতটুকু আছে, জেনভ?
অনুমান করা কঠিন। ইতিহাসে বেনবেলী বলে কারো নাম কখনো পাইনি। তুমি পেয়েছ?
না, তবে জানোই তো ইম্পেরিয়াল যুগের শেষ পর্যায়ে প্রি-ইম্পেরিয়াল, যুগের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। শেষ শতাব্দীর সম্রাটদের মনে হয়েছিল স্থানীয় দেশারবোধ সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিটি সেক্টরের প্রতিটি গ্রহের প্রকৃত ইতিহাস লেখা হয় নতুন করে, ট্র্যানটরকে ঘিরে।
জানতাম না ইতিহাস এত সহজে মুছে ফেলা যায়। মন্তব্য করল ট্র্যাভিজ।
আসলে মোছা যায় না। তবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং শক্তিশালী সরকার ইতিহাসের ভিত্তি দুর্বল করে দিতে পারে। যদি যথেষ্ট দুর্বল করা যায় তা হলে প্রাথমিক ইতিহাস গড়ে উঠবে এলোমেলো তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ফলে তৈরি হবে গল্প, উপন্যাস, রূপকথা, লোককাহিনী ইত্যাদি। প্রতিটা সেক্টর তাদের লোককাহিনীতে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে তারাই সবচেয়ে প্রাচীন এবং শক্তিশালী, আর যতই অবিশ্বাস্য বা অযৌক্তিক হোক, সেগুলো বিশ্বাস করা দেশপ্রেমের অংশ। তোমাকে দেখাতে পারব যে গ্যালাক্সির প্রতিটি কোণের গল্পগাথায় বলা হয়েছে সেখানে সরাসরি পৃথিবীর মানুষ বসতি স্থাপন করেছে, যদিও সবাই পিতৃপুরুষের গ্রহকে এক নামে ডাকে না।
আর কী নামে ডাকে?
অনেক নামে ডাকে। যেমন দ্য ওনলি, দ্য ওল্ডেস্ট ইত্যাদি, কখনো বলে মুনড ওয়ার্ল্ড, কারো কারো মতে বিশাল উপগ্রহের কারণে এই নাম হয়েছে। আবার কেউ বলে এই শব্দের অর্থ হারানো বিশ্ব। মুনড শব্দটি মেরুনড শব্দের বিকৃত রূপ। এবং মেরুনড প্রি-গ্যালাকটিক শব্দ যার অর্থ নিখোঁজ বা পরিত্যক্ত।
জেনভ, থামো। নরম সুরে বলল ট্র্যাভিজ। সুযোগ পেলে এভাবে চালিয়ে যাবে। তুমি বলেছ এধরনের গল্প বা রূপকথা সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে।
হ্যাঁ, প্রচুর। মানুষকে একটা সুযোগ দাও, দেখবে কোনো ঘটনাকে রঙ চড়িয়ে কোথায় নিয়ে যায়। একবার–
জেনভ! থামো! কমপরেলনের গল্পের সাথে অন্য গল্পগুলোর কোনো পার্থক্য আছে?
ওহ্! পেলোরেট একমুহূর্ত ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পার্থক্য? বেশ, তারা বলছে যে পৃথিবী তাদের কাছাকাছি অবস্থিত। এই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। অন্যান্য বিশ্বগুলো পৃথিবীর অবস্থান সম্পর্কে রহস্য তৈরি করে রেখেছে, এমন অবস্থানের
বর্ণনা দিয়েছে যা বাস্তবে নেই।
হ্যাঁ। সেশেলিয়ানরা যেমন বলেছিল গায়া হাইপারস্পেসে চলে গেছে।
কথাটা শুনে ব্লিস মুচকি হাসল।
ট্র্যাভিজ কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, সত্যি। আমাদের কাছে এই কথা বলেছে ওরা।
আমি অবিশ্বাস করছি না। বেশ মজার কথা। আমরাই চেয়েছি ওরা যেন এটা বিশ্বাস করে। এই মুহূর্তে আমাদের একা থাকতে হবে, আর হাইপারস্পেস ছাড়া কোথায় নিরাপদে থাকব?
ঠিক একই উপায়ে, ট্র্যাভিজ শুকনো গলায় বলল, কোনো কিছু মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে পৃথিবীর কোনো অস্তিত্ব নেই অথবা সেটা অনেক অনেক দূরে অথবা সেটা একটা তেজস্ক্রিয় নরক।
শুধুমাত্র, পেলোরেটের মন্তব্য, এই গ্রহ তাদের কাছাকাছি রয়েছে।
কিন্তু রেডিওএ্যাকটিভ। সকল কাহিনীতেই পৃথিবীকে দুর্গম গ্রহ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ঠিকই বলেছো।
সেশেলিয়ানরা অনেকেই মনে করত গায়া অনেক কাছে; অনেকে এমনকি নক্ষত্র পর্যন্ত চিনিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সকলেই মনে করত সেখানে যাওয়া যাবে না। হয়তো কমপরেলিয়ানদের কেউ মনে করে পৃথিবী রেডিওএ্যাকটিভ এবং মৃত কিন্তু তার নক্ষত্র দেখিয়ে দিতে পারবে। তারপর যতই দুর্গম হোক, আমরা সেদিকে এগোব।
তুমি আসো, গায়া এটাই চেয়েছিল, ট্র্যাভিজ। ব্লিস বলল, আমাদের হাতে তুমি ছিলে অসহায়, কিন্তু তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। যদি পৃথিবী আরো শক্তিশালী এবং শত্রুভাবাপন্ন হয়, তখন কি হবে?
পরিস্থিতি যাই হোক আমাকে পৌঁছতে হবে। পৃথিবী খুঁজে পেলে সেদিকে রওনা দেওয়ার আগে নেমে যাওয়ার সময় পাবে তোমরা। চাইলে তোমাদেরকে আমি নিকটস্থ ফাউণ্ডেশন বিশ্ব বা ফিরে এসে গায়ায় নামিয়ে দেব। তারপর একাই যাবো।
প্রিয় বন্ধু, পেলোরেটের গলায় চরম বিতৃষ্ণা, আর কখনো এধরনের কথা বলবে না। তোমাকে একা ফেলে যাব না আমি।