গোলান- একবার ডেকে অপেক্ষা করতে লাগল।
ট্র্যাভিজ চোখ তুলল। জেনভ! বস-ব্লিস কোথায়?
ঘুমাচ্ছে। আমরা মহাকাশে বেরিয়ে এসেছি।
ঠিকই দেখছ। ট্র্যাভিজ তার সঙ্গীর অবস্থা দেখে অবাক হয়নি। নতুন গ্র্যাভিটিক মহাকাশযানে টেক অফ বা ল্যান্ডিঙের সময় কিছুই বোঝা যায় না। তীব্র গতির কোনো ধাক্কা নেই, ঝাঁকুনি নেই।
বাইরের গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড থেকে শক্তি সংগ্রহ করে ফার স্টার এমনভাবে উপরে উঠে যেন কসমিক মহাসাগরে ভেসে থাকা কোনো বস্তু। সেই সময় ভেতরের মাধ্যাকর্ষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে মহাকাশযানের গতি আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। আরোহীরা কিছু বুঝতে পারে না। এই মুহূর্তে ফার স্টার গায়ার মাধ্যাকর্ষণ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। তবে জাম্প করার আগে আরো সরে আসতে হবে।
গোলান, প্রিয় বন্ধু, পেলোরেট বলল, দুই-এক মিনিট তোমার সাথে কথা বলা যাবে? ব্যস্ত নও নিশ্চয়ই?
মোটেই ব্যস্ত নই। কী করতে হবে, নির্দেশ দেওয়া আছে। কম্পিউটার সামলাচ্ছে সব। কী চাই সেটা বলার আগেই আন্দাজ করে নিয়ে সেরে ফেলছে। পরম আদরে ডেস্ক টপের উপর হাত বোলাল ট্র্যাভিজ।
গোলান, অল্প সময়ে আমরা বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছি। যদিও আমার কাছে মনে হয় যেন অনেক সময় পার হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে গত কয়েকদিনে, যে আমার সারা জীবনের ধ্যান ধারণা অভ্যাস পাল্টে গেছে-
হাত তুলল ট্র্যাভিজ। জেনভ, ভূমিকা করে তুমি আসল কথা থেকে দূরে সরে যাচ্ছ। অল্প সময়ে আমরা বন্ধু হয়েছি, ঠিক। এখনও আমরা বন্ধু, অবশ্য ব্লিস এর সাথে পরিচয় আরও কম সময়ের। কিন্তু তার সাথে তোমার ঘনিষ্ঠতা আমার থেকেও বেশি।
সেই ব্যাপারটা ভিন্ন। বিব্রত ভঙ্গিতে কাশল পেলোরেট।
অবশ্যই। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের কি হলো?
তোমার কথামতো যদি আমরা এখনও বন্ধু হই, তবে ব্লিস এর ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
বল কী বলবে।
আমি জানি, গোলান, তুমি ব্লিসকে পছন্দ করো না। কিন্তু আমার মুখ চেয়ে–।
এক মিনিট, জেনভ। ব্লিস আমাকে প্রভাবিত করেনি, ঠিক। তাই বলে আমি তাকে অপছন্দ করি না। তার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। ব্লিস সুন্দরী, আর তা হলেও, তোমার খাতিরে মেনে নিতাম। আসলে আমি গায়াকে অপছন্দ করি।
কিন্তু ব্লিস আর গায়া একই কথা।
জানি, জেনভ। আর এখানেই ব্যাপারটা জটিল হয়ে পড়ছে। ব্লিসকে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু গায়া হিসেবে ভাবলেই সমস্যাটার শুরু।
তুমি গায়াকে কোনো সুযোগই দাওনি। গোলান, মাঝে মাঝে ব্লিস আমাকে তার মাইণ্ড এ ঢুকতে দেয়। এক মিনিটেরও কম সময়ের জন্য। তার বেশি না, কারণ সে বলেছে ব্যাপারটায় খাপ খাওয়ানোর জন্য আমার বয়স বেশি।–ওহ্, হেসো না, গোলান। তোমার বয়সও অনেক বেশি। আমার তোমার মতো আইসোলেট মানুষ এক বা দুই মিনিট গায়ার সাথে যুক্ত থাকলে ব্রেইনের ক্ষতি হতে পারে। আর যদি পাঁচ থেকে দশ মিনিট যুক্ত থাকে তা হলে ক্ষতি হবে অপূরণীয়। তোমার অভিজ্ঞতা থাকলে বুঝতে, গোলান।
কী? ব্রেইনের অপূরণীয় ক্ষতি? না ধন্যবাদ।
গোলান, ইচ্ছা করেই আমাকে ভুল বুঝছ তুমি। কি মিস করছ, তুমি বুঝতে পারছ না। ব্লিস বলেছে এটা আনন্দের অনুভূতি। সারা দিন তৃষ্ণার্ত থেকে এক ফোঁটা পানি পেলে যেমন আনন্দ হয় ঠিক তেমন। হাজার হাজার মানুষ পৃথকভাবে যে বিনোদন করছে তুমি তার সবগুলোতে অংশ নিতে পারবে। যদিও ক্ষণস্থায়ী; কিন্তু তোমার ভেতরে আলোড়ন উঠবে, ঝংকার তৈরি হবে।
মাথা নাড়ল ট্র্যাভিজ। বলেছে ভালোই। কিন্তু শুনে মনে হচ্ছে তুমি এমন কোনো নেশায় আসক্ত যা তোমাকে সাময়িক আনন্দ দিলেও ভয়াবহ আতঙ্কে ভুগতে হয়। আমি এ ধরনের সাময়িক আনন্দের জন্য নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে চাই না।
আমি এখনও স্বাধীন, গোলান।
কিন্তু কতদিন থাকতে পারবে, জেনভ? সময়ের সাথে সাথে তুমি আরও বেশি পেতে চাইবে, যতক্ষণ না তোমার মাথা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। জেনভ, ব্লিসকে তুমি এ কাজ করতে দিও না। ভালো হয় আমি যদি এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বলি।
না, না। তুমি রাখঢাক করে কথা বলতে পারো না। আমি চাই না ও কষ্ট পাক। চিন্তা করো না, ব্লিস আমার ভালোই যত্ন নিচ্ছে। নিজেকে নিয়ে আমি যতটুকু ভাবি তার চেয়ে বেশি ভাবে ও।
বেশ, তোমাকেই বলছি। জেনভ, আর এই কাজ করো না। বায়ান্ন বছর নিজের সুখ-দুঃখ নিয়ে কাটিয়েছ। মস্তিষ্ক তাতে অভ্যস্ত। এখন নতুন এবং অস্বাভাবিক আনন্দের জন্য ভারসাম্য নষ্ট করো না। এরজন্য চরম মূল্য দিতে হবে। এখন না হলেও ভবিষ্যতে অবশ্যই দিতে হবে।
হ্যাঁ, গোলান। নিচু স্বরে বলল পেলোরেট, চোখ নামিয়ে নিয়েছে। অন্যভাবে চিন্তা করে দেখ । ধর তুমি একটা এক কোষী প্রাণী–
ভুলে যাও। ব্লিস আর আমি আগেই কথা বলেছি এ ব্যাপারে।
হ্যাঁ, কিন্তু একটু ভেবে দেখ। ধর কোনো এককোষী প্রাণী যার মানুষের মতো অনুভূতি এবং চিন্তা শক্তি আছে, তাদেরকে জোর করে বহুঁকোষী সত্তায় পরিণত করতে চাইলে, তারা মনে করবে না তাদের স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে? ঠেকাতে চাইবে না? ভুল হবে না তাদের? তারা কি জানে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কতটুকু?
জোরে জোরে মাথা নাড়ল ট্র্যাভিজ। না, জেনভ, তোমার যুক্তি ভুল। এককোষী প্রাণীর অনুভূতি নেই, চিন্তাশক্তি নেই। এধরনের বস্তুর স্বাধীনতা হারানো কোনো ব্যাপার না, কারণ তাদের সেটা নেই। কিন্তু মানুষের চিন্তা শক্তি আছে। সত্যিকার অনুভূতি এবং স্বাধীন বুদ্ধিমত্তা আছে, যা হারাতে হবে তাকে। কাজেই তোমার যুক্তি ভুল।