আগের চেয়ে ও ভালোভাবে কাজ করছে কম্পিউটার। এই যন্ত্রের প্রতি তার অনুভূতি ভালবাসার সাথে তুলনা করা যায়। এটা যখন তার হাত ধরে (যন্ত্রটাকে কখনো নারী বলে ভাবেনি) তার ইচ্ছাশক্তি সুনিয়ন্ত্রিত পথে বৃদ্ধি পেয়ে একটা বৃহৎ সত্তায় অংশ নেয়। যে কাজটা (তিক্তমনে ভাবল) গায়া আরও প্রসারিতভাবে করে।
মাথা নাড়ল সে। না! কম্পিউটার এবং তার বেলায় সে-ট্র্যাভিজ-তার হাতে থাকে নিয়ন্ত্রণ। কম্পিউটার পুরোপুরি তার অধীনস্থ।
ডাইনিং রুমে যথেষ্ট খাবার স্টোর করা হয়েছে। সঠিক ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তার ঘরের বুক ফিলগুলো রাখা আছে ঠিকভাবেই, এবং কোনো সন্দেহ নেই পেলোরেটের লাইব্রেরিও যথাযথভাবে আছে।
পেলোরেট! এতক্ষণে মনে পড়ল। দ্রুত পেলোরেটের ঘরে এসে ঢুকল। ব্লিস। এর জায়গা হবে এখানে, জেনভ?
হ্যাঁ, অসুবিধা হবে না।
প্রয়োজন হলে কমনরুমটাকে ওর বেডরুম বানিয়ে দিতে পারি।
মাথা তুলল ব্লিস। আলাদা বেডরুমের প্রয়োজন নেই। আমি এখানে পেল এর সাথে থাকতে চাই। তবে প্রয়োজন হলে অন্যঘর ব্যবহার করব।
যে কোনো ঘর ব্যবহার করতে পারো, আমারটা বাদ দিয়ে।
বেশ। আমিও সেই কথাই বলতে চাই। স্বভাবতই তুমিও আমাদের কোয়ার্টার থেকে দূরে থাকবে।
স্বভাবতই, বলল ট্র্যাভিজ। তারপর চোখ নামিয়ে বুঝতে পারল সে চৌকাঠ। পেরিয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি এক পা পিছিয়ে হাসিমুখে বলল, এটা কিন্তু হানিমুন কোয়ার্টার না।
গায়ার ঘরগুলো এর অর্ধেক।
তোমরা বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকবে। বলার সময় ট্র্যাভিজ চেষ্টা করল যেন হাসি না আসে।
আমরা যথেষ্ঠ ঘনিষ্ট, বলল পেলোরেট। আলোচনার মোড় ঘুরে যাওয়ায় অস্বস্তি বোধ করছে। তবে বন্ধু, আমাদের ভার আমাদের হাতেই ছেড়ে দাও।
আসলে পারি না, ধীর গলায় বলল ট্র্যাভিজ। বোঝার চেষ্টা কর। এটা হানিমুন। কোয়ার্টার না। পরস্পরের সম্মতিতে তোমরা যাই কর আমার আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো প্রাইভেসি থাকবে না তোমাদের। বুঝতে পেরেছ ব্লিস।
ওখানে একটা দরজা আছে, ব্লিস বলল, আশা করি ওটা যখন বন্ধ থাকবে তুমি আমাদের বিরক্ত করবে না।
করব না। কিন্তু শব্দ নিরোধক কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে।
অর্থাৎ তুমি বলতে চাইছ, ট্র্যাভিজ, আমাদের দুজনের আলোচনা তুমি পরিষ্কার শুনবে। এমনকি ভালবাসার সময় যে শব্দ হবে সেগুলোও।
হ্যাঁ, সেই কথাই বলছি। কাজেই তোমাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। অসুবিধা হলেও আমার কিছু করার নেই। দুঃখিত।
পেলোরেট কাশল। মৃদু গলায় বলল, এই সমস্যায় আমাকে আগেই পড়তে হয়েছে, ট্র্যাভিজ। জানই তো, ব্লিস যা অনুভব করে বা উপভোগ করে, গায়া তার সবটাই অনুভব বা উপভোগ করতে পারে।
আমিও ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমাকে বলতে চাইনি।
বেশি ভাবার কিছু নেই ট্র্যাভিজ। গায়াতে প্রতিমুহূর্তে প্রায় এক হাজার মানুষ প্রেম করছে; কয়েক মিলিয়ন মানুষ খাচ্ছে, পান করছে বা অন্য কোনো বিনোদন করছে। সবকিছু মিলে আনন্দের একটা সূক্ষ্ম প্রবাহ তৈরি হয়, গায়া সেটাই অনুভব করে। পশুপাখি, উদ্ভিদ পাথর প্রত্যেকেই আনুপাতিক হারে অংশ গ্রহণ করে। গায়া যা অনুভব করে অন্য কোনো গ্রহ তা অনুভব করে না।
আমাদের সবার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ আছে। বলল ট্র্যাভিজ ইচ্ছে হলে সেই সুখ-দুঃখ কারো সাথে ভাগ করে নেই; অথবা নিজেদের ভেতরই রেখে দিই।
যদি আমাদের সাথে যোগ দিতে, তা হলে বুঝতে তোমরা কতখানি নিঃস্ব।
তুমি কীভাবে জানো?
না জানলেও চলবে। স্বাভাবিক ভাবেই একজনের তুলনায় সকলের সম্মিলিত শক্তি অনেক বেশি।
যাই হোক, আমি আমার একার সুখ দুঃখ নিয়েই সন্তুষ্ট। কোনো পাথরের টুকরার সাথে শেয়ার করার ইচ্ছা নেই।
নাক সিটকিয়ো না। নিজের শরীরের সামান্য একটা দাঁতের অনেক গুরুত্ব দাও তুমি। অথচ একটা পাথরে সেগুলোর চেয়ে বেশি কনশাসনেস থাকে।
সত্যি কথা, ট্র্যাভিজ হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল। তবে এই বিষয়ে তর্ক করে লাভ নেই।, গায়া তোমার সুখ-দুঃখে অংশ নিলে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি শেয়ার করতে চাই না। চাই না পরোক্ষভাবে তোমার কার্যকলাপে আমাকে জড়িত করা হয়।
তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছ, বন্ধু।পেলোরেট বলল। নিজের সুবিধা অসুবিধার চেয়ে আমি তোমার সুবিধা অসুবিধা নিয়েই বেশি ভাবছি। কাজেই আমি আর ব্লিস সতর্ক থাকব। তাই না ব্লিস?
তুমি যা বলবে তাই হবে, পেল।
তা ছাড়া, মহাকাশে যতদিন আছি, তার থেকে অনেক বেশি দিন ছিলাম মাটিতে–
কোনো গ্রহের মাটিতে তোমরা কি করবে, সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই, বাধা দিয়ে বলল ট্র্যাভিজ, কিন্তু এখানে আমার কথাই শেষ কথা।
নিশ্চয়ই। পেলোরেট বলল।
বেশ,কথাটা মনে রাখবে। টেক অফ করার সময় হয়েছে।
দাঁড়াও। ট্র্যাভিজের জামার হাত ধরে টেনে থামালো পেলোরেট। টেক অফ করবে, কিন্তু যাবে কোথায়?? আমি, ব্লিস, তুমি বা তোমার কম্পিউটার জানে না পৃথিবী কোথায়। কী করার ইচ্ছা তোমার? খড়ের গাদায় সুচ খুঁজবে?
ট্র্যাভিজ হাসল আমুদে ভঙ্গিতে। গায়ার হাতে পড়ার পর মনে হচ্ছে এই প্রথম সে নিজের উপর কর্তৃত্ব ফিরে পেয়েছে।
নিশ্চিত থাকো, সে বলল। খড়ের গাদায় সুঁই খুঁজতে হবে না। আমি জানি কোথায় যেতে হবে।
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেল ট্র্যাভিজের দেখা নেই। তাকে খুঁজতে খুঁজতে পাইলট রুমে এসে ঢুকল পেলোরেট। মনযোগ দিয়ে স্টারফিল্ড পর্যবেক্ষণ করছে ট্র্যাভিজ।