“ঠিক,” সেলডন বললেন। “এটাই হচ্ছে অরাজক প্রভাবের মূল কথা। সমস্যা হচ্ছে ঘটনাপ্রবাহকে অনুমানযোগ্য বা প্রেডিক্টেবল করার জন্য এমন কোনো ক্ষুদ্র পরিবর্তন কি আছে? নাকি মানব ইতিহাস বাস্তবিকই প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন অবশ্যম্ভাবী এবং অপরিবর্তনীয় অরাজকতায় পূর্ণ। এই কারণেই শুরুতে আমি ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম যে সাইকোহিস্টোরি কোনো ভাবেই–“
“জানি, কিন্তু তুমি আমাকে আসল কথাটা বলতে দিচ্ছ না। যথেষ্ট ক্ষুদ্র কোনো পরিবর্তন আছে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে মিনিমালের চেয়ে বড় কোনো পরিবর্তনই অরাজকতা তৈরি করবে। হয়তো প্রয়োজনীয় মিনিমাম হচ্ছে শূন্য, কিন্তু শূন্য না হলেও তা হবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র–মূল সমস্যা হচ্ছে এমন একটি পরিবর্তন বের করা যা হবে যথেষ্ট ক্ষুদ্র কিন্তু শূন্য থেকে যথেষ্ট বড়। আমার মতে মিনিমালিজম এর প্রয়োজনীয়তা বলতে তুমি এটাই বোঝাতে চেয়েছ।”
“মোটামুটি ঠিকই বুঝতে পেরেছ। যদিও গণিতের সাহায্যে বিষয়টাকে আরো সংক্ষেপে এবং নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যদি—”
“রক্ষে কর। তুমি যদি সাইকোহিস্টোরির ক্ষেত্রে এই নিয়মটাকে সত্য বলে মানো, হ্যারি, তাহলে ডেমারজেলের ক্ষেত্রেও সত্য বলে মানতে হবে। তুমি জানো ঠিকই কিন্তু বুঝতে পারনি, কারণ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সাইকোহিস্টোরির নিয়মগুলোকে রোবোটিক্স আইনের সাথে সমন্বয় করার চিন্তা তোমার মাথায় আসে নি।”
সেলডন খানিকটা অনিশ্চয়তার সাথে জবাব দিলেন, “এখন আর বুঝতে পারছি তুমি আসলে কি বলতে চাইছ।”
“তারও মিনিমালিটির প্রয়োজন আছে, তাই না, হ্যারি? রোবোটিক্স এর প্রথম আইন অনুসারে একটা রোবট কখনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। একটা সাধারণ রোবটের জন্য এটা অলঙ্নীয় প্রধান আইন, কিন্তু ডেমারজেল অসাধারণ, তার জন্য জিরোয়েথ ল’ বাস্তব সত্য এবং তা এমন কি প্রথম আইনটার উপরও প্রাধান্য বিস্তার করেছে। জিরোয়েথ ল’ তে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি মানুষকে নিয়ে যে মানবজাতি তা একক। ইউনিট এবং একটা রোবট কখনো মানবজাতির ক্ষতি করতে পারে না। সাইকোহিস্টোরি যেমন তোমাকে একটা নির্দিষ্ট সমস্যার চক্রে আটকে রেখেছে তেমনি এই আইনটাও ডেমারজেলকে ঠিক সেভাবেই আটকে রেখেছে।”
“এবার কিছুটা বোধগম্য হচ্ছে।”
“আমারও তাই ধারণা। মাইন্ড পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকলেও, তাকে সেটা করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি না হয় আর সে যেহেতু সম্রাটের ফার্স্ট মিনিস্টার, তাকে ভাবিয়ে তোলার মতো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংখ্যা অগনিত, কোনো সন্দেহ নেই।”
“বর্তমান ঘটনার সাথে এর কি সম্পর্ক?”
“ভেবে দেখ। তুমি কাউকে বলতে পারবে না। অবশ্য আমাকে ছাড়া যে ডেমারজেল একটা রোবট, কারণ সে তোমাকে এ্যাডজাস্ট করে রেখেছে যেন বলতে না পারো। কিন্তু কতখানি অ্যাডজাস্টমেন্ট করেছে সে? তুমি কি মানুষকে বলে বেড়াতে চাও যে সে একটা রোবট? যেখানে তুমি তার সাহায্য, প্রটেকশন, প্রভাবের উপর নির্ভরশীল সেখানে তুমি কি সত্যি কথা ফাস করে দিয়ে তার কার্যকারীতা নষ্ট করে দিতে চাও? মোটেই না। সে যে পরিবর্তনটা করেছে তা অত্যন্ত ক্ষুদ্র, অসতর্ক মুহূর্তে বা উত্তেজনার বশে যেন সত্য কথাটা তোমার মুখ ফসকে বেরিয়ে না পড়ে তার থেকে তোমাকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট ক্ষুদ্র। এতই ক্ষুদ্র পরিবর্তন যে এটার আসলে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই নেই। এভাবেই ডেমারজেল এম্পায়ার চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
“আর জোরানিউম এর ঘটনাটা?”
“অবশ্যই তোমার থেকে আলাদা। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, সে ডেমারজেলের প্রতিদ্বন্দ্বী। নিঃসন্দেহে, ডেমারজেল তাকে পাল্টে দিতে পারবে, কিন্তু সেজন্য তাকে জোরানিউম এর পুরো গঠন পাল্টাতে হবে এবং ফলাফল কি হবে তা সে আন্দাজ করতে পারবে না। জোরানিউম এর ক্ষতি না করে কাজটা করতে চাইলে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে সেগুলো হয়তো অন্যদের ক্ষতি করবে, সম্ভবত পুরো মানবজাতির, কাজেই জোরানিউম যেভাবে চলছে তাকে সেভাবেই চলতে দিতে হবে, অন্য কোনো পথ নেই ডেমারজেলের অন্তত যতক্ষণ না সে অতি ক্ষুদ্র। কোনো পরিবর্তন বের করতে পারছে–অতি ক্ষুদ্র পরিবর্তন–এভাবে কোনো ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর তাই ইউগোর কথাই ঠিক, ডেমারজেল সত্যিই ভয়ংকর বিপদে।”
গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন সেলডন। কথা বললেন পুরো এক মিনিট পরে। “যদি ডেমারজেল কিছু করতে না পারে তাহলে আমি করব।”
“সে কিছু করতে না পারলে তুমি কি করবে?”
“আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। আমার কাজকর্ম রোবোটিক্স এর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, আমাকে মিনিমালিজম নিয়ে খুব বেশী না ভাবলেও চলবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা আমাকে ডেমারজেলের সাথে দেখা করতে হবে।”
ডর্সকে খানিকটা উদ্বিগ্ন দেখাল। “করতেই হবে? তোমাদের দুজনের মাঝে যে । যোগাযোগ আছে সেটা প্রকাশ না করাই ভালো।”
“আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি যে এখন আর গোপন রাখার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া আমি তো ঢাকঢোল পিটিয়ে বা হলোভিশনে ঘোষণা দিয়ে তার সাথে দেখা করতে যাব না, কিন্তু দেখা করতেই হবে।”