ধীরে ধীরে চাপ কমালেন সেলডন। নামাত্রি ফ্যাসফেসে গলায় নির্দেশ দিল, “চল সবাই, জলদি।” আহত সঙ্গীকে নিয়ে সবাই পালিয়ে গেল।
মাঠ ছেড়ে আবার বাড়ির পথে হাঁটা ধরলেন সেলডন। মুখে মৃদু হাসি। আসলে আজকে নিজের চরিত্রের একটা বিপরীত দিক প্রকাশ করে ফেলেছেন। যা আদৌ তিনি চান নি। তিনি হ্যারি সেলডন, গণিতবিদ, মারকুটে কোনো মানুষ নন।
তাছাড়া সব কথাই ডর্সের কানে যাবে। সত্যি কথা বলতে কি তার নিজেরই বলে দেয়া উচিত। অন্যেরা সঠিক ব্যাখ্যা নাও দিতে পারে। তখন অবস্থা আরো খারাপ হবে।
তবে ডর্স যে খুশি হবে না তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.
৩.
অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় হেলান দিয়ে অত্যন্ত সহজ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ডর্স। এক হাত কোমড়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই একেবারে প্রথম ডর্সকে যেমন দেখেছিলেন এখনো ঠিক তেমনই আছে। হালকা পাতলা গড়ন, চমৎকার দেহ সৌষ্ঠব, কোঁকড়ানো লালচে সোনালী চুল–শুধুমাত্র তার চোখেই অপূর্ব সুন্দরী, তাও আবার শারীরিক অর্থে নয়। অবশ্য পরিচয়ের প্রথম কিছুদিন ব্যতিরেকে ডর্সকে তিনি শারীরিকভাবে মূল্যায়ন করার তেমন একটা সুযোগও পান নি।
ডর্স ভেনাবিলি! নিরুদ্বিগ্ন মুখ দেখে প্রথম এই কথাটাই ভাবলেন তিনি। অধিকাংশ গ্রহে, এমন কি এই ট্র্যানটরেরই প্রায় সব সেক্টরে স্বাভাবিকভাবেই সে ডর্স সেলডন হিসেবে পরিচিত। সেলডন এটা পছন্দ করেন না। কারণ তার মনে হয় এতে করে এক ধরনের মালিকানা প্রকাশ পায়। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা অতি প্রাচীন একটা প্রথা। এতোই প্রাচীন যে কখন থেকে এর প্রচলন শুরু হয়েছিল তার। কোনো ইতিহাস নেই।
সামান্য একটু মাথা নেড়ে মৃদু গলায় ডর্স বলল, “সব শুনেছি, হ্যারি। তোমাকে নিয়ে কি করব আমি?”
“একটা চুমু দিতে পার।”
“হয়তো, কিন্তু পুরো ঘটনা তোমার মুখ থেকে শোনার পর। ভেতরে এসো। তুমি জানো,” দরজা বন্ধ করার পর ডর্স বলল, “আমার নিজের লেকচার, গবেষণার কাজ আছে। কিংডম অফ ট্রানটরের ইতিহাস নিয়ে বিরক্তিকর গবেষণার কাজটা এখনো করছি। কারণ তুমি বলেছিলে যে ওটা তোমার কাজে লাগবে। এখন সব বাদ দিয়ে তোমার সাথে সাথে ঘোরা শুরু করতে হবে, বিপদ আপদ থেকে তোমাকে রক্ষা করতে হবে? ওটা এখনো আমার দায়িত্ব। আর যেহেতু সাইকোহিস্টোরির অগ্রগতি হচ্ছে কাজেই দায়িত্বটা আমার নিজের কাজের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”
“অগ্রগতি? সেটা হলে তো ভালোই হতো। যাই হোক আমাকে তোমার রক্ষা করার দরকার নেই।”
“তাই? তোমার খোঁজে রাইখকে পাঠিয়েছিলাম। না বলে তো কখনো এতো দেরি করো না। দুঃখিত, আমার কথা শুনে তোমার মনে হতে পারে যে আমি তোমার রক্ষক। কিন্তু আমি আসলেই তাই। তোমার রক্ষক।”
“এই কথাটা কি তুমি জানো, রক্ষক ডর্স, বন্ধনমুক্ত হতে আমার খুব ভালো লাগে।”
“তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, ডেমারজেলকে আমি কি জবাব দেব?”
“ডিনারের জন্য কি খুব বেশী দেরি করে ফেলেছি। কিচেন সার্ভিসের জন্য ক্লিক করেছ?”
“না। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আর তুমি থাকলে কখনোই আমি ক্লিক করি না। কারণ খাবার পছন্দের ব্যাপারে আমার চেয়ে তুমি অনেক বড় ওস্তাদ। আর দয়া করে কথা ঘুরিও না।”
“কেন, রাইখ নিশ্চয়ই তোমাকে এসে জানিয়েছে যে আমার কোনো বিপদ হয়নি। তাহলে আবার নতুন করে বলার কি আছে?”
“ও যখন গিয়ে পৌঁছায় ততক্ষণে পরিস্থিতি তোমার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তখন দ্রুত ফিরে এসে আমাকে জানায় যে তোমার কোনো বিপদ হয় নি। কিন্তু বিস্তারিত কিছুই এখনো জানি না। আসলে–তুমি কি করছিলে?”
শ্রাগ করলেন সেলডন। “বিনা অনুমতিতে একটা সমাবেশ হচ্ছিল, ডর্স, আমি সেটা থামিয়ে দেই। নইলে বিশ্ববিদ্যালয় অনর্থক ঝামেলায় পড়ত।”
“ওগুলো বন্ধ করার দায়িত্ব কি তোমার? হ্যারি, গায়ের জোর দেখানোর বয়স তোমার নেই, তুমি এখন–“
কর্কশ কণ্ঠে বাধা দিলেন তিনি। “বৃদ্ধ?”।
“গায়ের জোর দেখানোর ক্ষেত্রে, হ্যাঁ, তুমি বৃদ্ধ। তোমার বয়স চল্লিশ। কেমন লাগছে?”
“খানিকটা জড়তা, ব্যস।”
“বুঝতে পারছি। কিন্তু এই বয়সে নিজেকে তরুণ হ্যাঁলিকনিয়ান অ্যাথলেট প্রমাণ করতে গিয়ে হাত পা ভাঙবে। এবার সব খুলে বল আমাকে।”
“তোমাকে তো বলেছিলাম যে এমারিল আমাকে একটা ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিল। জো-জো জোরানিউম নামের এক লোক ক্ষমতা দখলের নতুন এক আন্দোলন শুরু করেছে। রক্ত গরম করা বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তুলছে। সেই লোকটা ডেমারজেলের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।”
“জো-জো, হ্যাঁ, শুনেছি। কিন্তু আজকে কি হয়েছিল জানি না।”
“মাঠে একটা সমাবেশ হচ্ছিল। ওখানে নামাত্রি নামের এক লোককে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করতে দেখি–“
“ওর পুরো নাম গ্যামবল ডিন নামাত্রি। জোরানিউমের ডান হাত।”
“তুমি আমার চেয়ে অনেক বেশী জানেনা। যাই হোক, ওখানে সমাবেশ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয় নি সে, এবং সে আশা করছিল কোনো না কোনো ভাবে একটা সংঘর্ষ তৈরি হবে। সে যদি কিছুদিনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে পারত তখন শিক্ষাব্যবস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য ডেমারজেলকে দায়ী করত। যতদূর বুঝতে পেরেছি, মন্দ সব কিছুর জন্যই ওরা ডেমারজেলকে দোষ দেয়। তাই ওদেরকে আমি বাধা দেই। কোনোরকম সংঘর্ষ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করি।”