“দায়িত্ব যখন আরো বেড়ে যাবে তখন সহকারীদের দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিতে পারবে, ফলে সময়ও পাবে।” এমারিল বলল।
“আমি সেই ব্যাপারে আশাবাদী,” বললেন সেলডন যদিও তার কণ্ঠস্বরে সন্দেহ। “যাইহোক, ইটো ডেমারজেলের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কী যেন বলতে চেয়েছিলে, বল।”
“বেশী কিছু না। শুধু এইটুকু যে ইটো ডেমারজেল, মহান সম্রাটের অতি প্রিয় ফাস্ট মিনিস্টার আমাদের কাজে একটা বাধা তৈরি করছেন।”
ভুরু কুঁচকালেন সেলডন। “সে কেন বাধা তৈরি করবে?”
“আমি তো বলিনি যে সে ইচ্ছে করে করছে। কিন্তু করছে–জানুক বা না জানুক–এবং ডেমারজেলের শত্রুপক্ষ এই কাজে তাকে বেশ সাহায্য করছে। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই, বুঝতে পারছ। আমার মতে সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাকে প্রাসাদ থেকে, ট্র্যানটর থেকে… সম্ভব হলে এম্পায়ার এর সীমানা থেকে বহু দূরে নির্বাসন দেয়া উচিত। কিন্তু তুমি ওকে বেশ পছন্দ করো, সেজন্যই আমি তোমাকে সতর্ক করছি, কারণ আমার মনে হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাবলীর উপর যতখানি মনযোগ দেয়া দরকার তা তুমি দিচ্ছ না।”
“এটা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আমার হাতে।” হালকা চালে বললেন সেলডন।
“যেমন সাইকোহিস্টোরি। আমি একমত। কিন্তু রাজনীতির কোনো ধারণা ছাড়াই সাইকোহিস্টোরি ডেভেলপ করা যাবে সেটা আমরা কিভাবে আশা করতে পারি? আমি সমসাময়িক রাজনীতির কথা বলছি। এখন–এখনই–হচ্ছে সেই সময় যখন বর্তমান পরিণত হচ্ছে ভবিষ্যতে। শুধু অতীত নিয়ে পড়ে থাকলেই চলবে না। অতীতে কি ঘটেছিল আমরা জানি। বর্তমান এবং অদূর ভবিষ্যতের ভিত্তিতে আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল প্রয়োগ করে দেখতে হবে।”
“কেন যেন মনে হচ্ছে,” সেলডন বললেন, “এই ধরনের যুক্তিতর্ক আমি আগেও শুনেছি।”
“এবং আবারও শুনবে। যদিও আমার মনে হচ্ছে তাতে কোনো লাভ হবে না।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সেলডন, চেয়ারে হেলান দিলেন। হাসি মুখে তাকিয়ে রইলেন এমারিলের দিকে। কণিষ্ঠ এই সহকারীকে ঘঁষে মেজে নিজের মন মতো তৈরি করে নিতে পারতেন। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি, কারণ সাইকোহিস্টোরি সে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং তার প্রতিদান ও পেয়েছে।
আরো কম বয়সে হিট সিঙ্কারের কাজ করত এমারিল। সেই সময়ের কঠিন পরিশ্রমের ছাপ এখনো তার চেহারায় স্পষ্ট। চওড়া পেশীবহুল কাধ দেখলেই বোঝা যায় প্রচুর কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্থ। শরীরে মেদ জমতে দেয়নি সে। ব্যাপারটা সেলডনকেও উদ্বুদ্ধ করেছে। যার ফলে সারাদিনই ডেস্কে বসে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন না। এমারিলের মতো গায়ের জোর তার নেই, কিন্তু তিনি দক্ষ একজন টুইস্টার* [*খালি হাতে মারামারি করায় দক্ষ ব্যক্তি]–যদিও চল্লিশে পা দিয়েছেন, সেই সামর্থ্যও আর বেশীদিন থাকবে না। কিন্তু যতদিন শরীরে কুলাবে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কাজের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি হালকা কিছু ব্যায়াম করেন যে কারণে তার কোমরে এখনো মেদ জমেনি, হাত-পা এখনো সবল।
“ডেমারজেলকে নিয়ে তোমার এই দুঃশ্চিন্তা,” তিনি বললেন, “শুধুমাত্র এই কারণে না যে সে আমার বন্ধু। নিশ্চয়ই তোমার আরো কিছু বলার আছে।
“সেটা বোঝা তেমন কঠিন কিছু না। ডেমারজেলের সাথে যতদিন বন্ধুত্ব রাখতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার অবস্থান নিরাপদ থাকবে এবং সাইকোহিস্টোরি গবেষণা চালিয়ে যেতে পারবে।”
“ঠিকই বলেছ। তাহলে ডেমারজেলের সাথে বন্ধুত্ব রাখার একটা কারণ আমার আছে। সেটা বুঝতে তোমার মোটেই কোনো অসুবিধা হয়নি।”
“তুমি আসলে ডেমারজেলকে ব্যবহার করতে চাও। কারণটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু বন্ধুত্ব রাখার ব্যাপারটা আমি মোটেই বুঝতে পারি না। যাই হোক–যদি ডেমারজেল ক্ষমতা হারায়, তোমার অবস্থানের হয়তো কোনো পরিবর্তন হবে না, কিন্তু ক্লীয়ন তখন নিজের বুদ্ধিতে চলবে। ফলে এম্পায়ারের পতনের হার আরো বৃদ্ধি পাবে। হয়তো মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য সাইকোহিস্টোরি বিজ্ঞানের কার্যকর প্রায়োগিক নিয়মগুলো তৈরি করার আগেই অরাজকতা আমাদের উপর চেপে বসবে।”
“বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার মনে হয় না এম্পায়ারের পতন ঠেকানোর জন্য যথাসময়ে আমরা সাইকোহিস্টোরি গড়ে তুলতে পারব।”
“এম্পায়ারের পতন ঠেকাতে না পারলেও, পরবর্তীতে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেগুলোর জন্য সাবধান হতে পারব, তাই না?”
“হয়তো বা।”
“সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমরা যত বেশীদিন নিরাপদে কাজ করতে পারব, এম্পায়ারের পতন ঠেকানোর সুযোগ তত বাড়বে, বা অন্তত পরবর্তী অরাজকতা আরো ভালোভাবে সামাল দিতে পারব। সেজন্যই ডেমারজেলকে রক্ষা করতে হবে, আমরা বা অন্তত আমি তাকে পছন্দ করি বা না করি।”
“অথচ এইমাত্র বললে যে তাকে শুধু প্রাসাদ বা ট্রানটরই নয় সম্ভব হলে এম্পায়ার থেকে বের করে দিলেই তুমি খুশি হবে।”
“হ্যাঁ, সঠিক সময়ে। কিন্তু আমরা এখন সঠিক সময়ে বাস করছি না এবং ফাস্ট মিনিস্টারকে আমাদের প্রয়োজন, যদিও সে নির্যাতন এবং নিষ্পেষণের একটা হাতিয়ার মাত্র।”
“কিন্তু তুমি কেন ভাবছ এম্পায়ারের অবস্থা এতোই খারাপ যে ফার্স্ট মিনিস্টারকে অপসারণ করলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
“সাইকোহিস্টোরি।”
“তুমি ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য সাইকোহিস্টোরি ব্যবহার করছ? কিন্তু আমরা তো এখন পর্যন্ত একটা প্রাথমিক কাঠামোই দাঁড় করাতে পারি নি। তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করবে কিভাবে?”