.
৫.
স্মৃতি রোমন্থন করছেন সেলডন। আট বছর আগে, যখন তিনি ট্রানটরে আসেন তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। থাকতেন হোটেলে, সামান্য যে কয়েকটা জিনিসপত্র ছিল তা একটা ঝোলায় ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে যখন তখন ট্র্যানটরের যে কোনো স্থানে চলে যেতে পারতেন।
কিন্তু এখন তিনি হাজারো কাজে ব্যস্ত থাকেন। সারাদিনে প্রচুর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অনেক বিভাগীয় মিটিং সারতে হয়। কাজেই ইচ্ছে হলেই ডেমারজেলের সাথে দেখা করার জন্য ছুটতে পারেন না। আবার তিনি ফুরসত পেলে কি হবে, ডেমারজেল তো আরো বেশী ব্যস্ত থাকে। তাই দেখা করার জন্য সময় বের করাটা সত্যি কঠিন।
আবার ডর্স যখন মাথা নেড়ে বলল, “তোমার উদ্দেশ্যটা কি আমি বুঝতে পারছি না।” তাও সহজে মেনে নিতে পারলেন না।
খানিকটা অধৈর্য হয়েই জবাব দিলেন, “আমি নিজেও জানি না, ডর্স। তবে আশা করি ডেমারজেলের সাথে দেখা হলে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।”
“তোমার প্রথম দায়িত্ব সাইকোহিস্টোরি। ঠিক এই কথাগুলোই বলবে সে।”
“হয়তো বা। দেখা যাক।”
আর ফার্স্ট মিনিস্টারের সাথে সাক্ষাতের যখন আর মাত্র আট দিন বাকী–সেই মুহূর্তে বিভাগীয় অফিস কক্ষের ওয়াল স্ক্রীনে প্রাচীন বর্ণমালায় লিখিত একটা মেসেজ পেলেন, তার সাথে মিল রেখে ভাষাটাও প্রাচীন : আমাকে সাক্ষাৎ দানে প্রফেসর সেলডনের আজ্ঞা হয়।
বিস্মিত হয়ে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলেন সেলডন। এমন কি সম্রাটও এই ধরনের শতাব্দী প্রাচীন বাক্য ব্যবহার করেন না।
তারপর রয়েছে দস্তখতের ব্যাপার। সেটাও প্রাচীন পদ্ধতিতে করা। উজ্জ্বল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা পরিষ্কার। পাঠককে কৌতূহলি করে তুলবে। জোরানিউম এর সাথে দেখা করার কোনো আগ্রহ তার ছিল না, কখনো হতো বলেও মনে হয় না। কিন্তু এবার স্থির করলেন লোকটা কি চায় সেটা দেখবেন।
সেক্রেটারিকে বলে দিলেন সাক্ষাঙ্কারের তারিখ এবং স্থান ঠিক করে রাখতে। সাক্ষাৎকার অবশ্যই তার অফিসে হবে, বাড়িতে নয়। কারণ এটা অফিশিয়াল সাক্ষাৎ। এবং জোরানিউম এর সাথে মিটিংটা হবে ডেমারজেলের সাথে মিটিং এর আগে।
সব শুনে ডর্স বলল, “আমি অবাক হই নি, হ্যারি। তুমি তার দুই জন কর্মীকে আহত করেছ। একজন আবার তার প্রধান সহকারী; তুমি তার রাজনৈতিক সমাবেশ পন্ড করে দিয়েছ; তাকে নিজের অনুগতদের সামনে বোকা বানিয়েছ। কাজেই তোমাকে সে দেখতে চাইবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে এবং নিঃসন্দেহে আমারও সাথে থাকা উচিত।”
মাথা নাড়লেন সেলডন। “রাইখকে সাথে নেব। সে আমার সব কৌশলগুলো জানে। একুশ বছরের তরুণ, গায়ে জোর প্রচণ্ড। যদিও জানি যে আমার কোনো প্রটেকশনের দরকার হবে না।”
“কিভাবে জানো?”
“জোরানিউম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমার সাথে দেখা করবে। চারপাশেই ছাত্রছাত্রীরা থাকবে। শিক্ষার্থীদের কাছে আমি বেশ জনপ্রিয় এবং ভালোমতো খোঁজ খবর না করে জোরানিউম কোনো কাজে অগ্রসর হবে বলে আমার মনে হয় না। সে ভালো করেই জানে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি নিজের বাড়ির মতোই নিরাপদ। তার আচরণ হবে মার্জিত–বন্ধুত্বপূর্ণ।
“হুম,” ঠোঁট বাঁকানো হাসির সাথে বলল ডর্স।
“এবং ভীষণ বিপজ্জনক,” শেষ করলেন সেলডন।