“আমরা যদি ধরে নেই যে বাবার কাছে এখনো অতিরিক্ত চাবি আছে তাহলে…আসলে, লোকটা বাবা নাকি অন্য কেউ সেটা অন্য বিষয়, গভীর রাতে কেন একজনের দরজার লক খোলার প্রয়োজন পড়ল? এমন কি হতে পারে যে তাকে রুমে যেতে হয়েছিল খুনের কোন প্রমাণ সরানোর জন্য? তারপর ফেরার সময় দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিল…”
“আরও সরল একটা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। হয়ত অতিরিক্ত চাবির দরকার ছিল না। তোমার বাবা আসলেই হয়ত সেগুলো হারিয়ে ফেলেছিলেন। এমন তো হতে পারে যে খুনির অতিরিক্ত চাবির কোন প্রয়োজনই পড়েনি।”
“অ্যাঁ?”
“রিয়ুজি যখন আমাকে ওর রুমে ডেকেছিল, খুনি হয়ত ইতিমধ্যেই ওখানে ছিল। রুমের ভেতর। সে আমার ছাউনিতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে, তারপর ঐ সুযোগে রিয়ুজিকে খুন করেছে। তারপর রুমের মধ্যেই আবার লুকিয়ে পড়েছে। এটাই হয়েছে। একদম সহজ ব্যাখ্যা।”
“তারমানে, তুমি বলতে চাইছ তুমি রুমে থেকে অপেক্ষা করছিল কখন তুমি বেরিয়ে যাও?”
“হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি যখন রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম, রিয়ুজির চাবি দিয়ে দরজা লক করে দিলাম, খুনির পক্ষে আর সম্ভব হয়নি বের হওয়ার
সময় দরজা লক করে যাওয়ার। যে কারনে দরজার লক খোলা ছিল।”
“কিন্তু রিয়ুজির রুমে জায়গা কোথায় খুনির লুকানোর জন্য?”
মিকি চুপ করে ওয়ারড্রবের দিকে তাকিয়ে থাকল। ফুয়ুমির চেহারা দেখে মনে হল প্রথমে সে ব্যাপারটা ধরতে পারেনি। কিন্তু যখন ও বুঝল তখন অস্ফুটে বলে উঠল, “অ্যাঁ? তুমি বলতে চাইছ..?!”
“পুরো রুমের মধ্যে ওটাই একমাত্র জায়গা যেখানে কেউ লুকাতে পারে। সে ওখানে লুকিয়ে ছিল আর আমি ছাউনিতে যাওয়ার পর বেরিয়ে এসেছিল। তারপর অ্যাস্ট্রেটা নিয়ে রিয়ুজির মাথায় বাড়ি মারে। তারপর আবার ওয়ারড্রবে লুকিয়ে পড়ে। এটাই হয়েছে বলে আমার ধারণা।”
“আমি তো ভেবেছি রিয়ুজির লাশ ওয়ারড্রবে লুকানো হয়েছে।”
“আমিও প্রথমে সেটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করেও আমি দরজাটা খুলতে পারিনি। লকের ভেতর চাবি ঢুকিয়ে আমি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে চেষ্টা করেছি, কিন্তু মনে হচ্ছিল সেটা কোথাও আটকে যাচ্ছে, তাই আমি ভেবেছিলাম লকটা নষ্ট। রিয়ুজি বলেছিল যে লকটা মাঝে মাঝে ঝামেলা করে। আমি ভুল করে ভেবেছিলাম যে ও বুঝিয়েছে চাবিটা হয়ত একটু বেঁকে যাওয়ার কারনে মাঝে মাঝে কাজ করে না। কিন্তু আসলে ঐ রাতে হয়ত কেউ একজন ওয়ারড্রবের ভেতর থেকে কিছু একটা করেছিল যে কারনে লকটা কাজ করছিল না। যেহেতু আমি ওটার দরজাটা খুলতে পারিনি তাই আমি ওটার ভেতর লাশটা লুকাতে পারিনি। আশেপাশে তাকানোর পর আমার চোখ পড়ে আমার আনা সুটকেসটার উপর। রিয়ুজি ছোটখাট মানুষ ছিল। তাই আমার মনে হল ওকে সুটকেসে ভরে ফেলা যাক।”
“তাহলে তুমি ওকে খুনের অস্ত্রটাসহ সুটকেসে ভরে ফেলেছিলে?”
“হ্যাঁ, অ্যাস্ট্রেটায় আমার হাতের ছাপ ছিল। অবশ্য সুটকেসে আমার জামাকাপড় ছিল। লাশটা ভরার কোন জায়গা ছিল না। আমি সব কাপড় চোপড় বের করে লাশটা ঢুকাই। কাপড়গুলো রুমে ফেলে যাই।”
“তাহলে ঐ কাপড়গুলো তোমার ছিল? মেয়েদের কাপড়?”
“হ্যাঁ। আমি চাইনি ওগুলো কারো চোখে পড়ক। তাহলে সন্দেহ হত। রুমের কোণায় ইতিমধ্যে কাপড়ের একটা স্তূপ ছিল। আমি আমার কাপড়গুলো নিচে লুকিয়ে ফেলি। সবাই ঘুমানোর পর এসে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হয়নি।”
“সেকারনেই পরদিন সকালে তুমি শুধু পাতলা কাপড় চোপড় পরে ছিলে। বদলানোর মত কোন পোশাক তোমার কাছে ছিল না। এরপর তুমি রিয়ুজির রুমে গেলে তোমার কাপড় চোপড় আনতে, বই ধার করতে নয়। আমি যখন পড়ে থাকা কাপড়চোপড়গুলো ওয়ারড্রবে রাখার জন্য গেলাম তখন তুমি উতলা হয়ে পড়লে। আমার কাছ থেকে ওগুলো কেড়ে নিলে। তোমার এই অদ্ভুত আচরণ নিয়ে অবাক হয়েছিলাম আমি। তুমি ভয় পেয়েছিলে যে কাপড়ের স্তূপের মধ্যে আমি একজন নারীর পোশাকও দেখে ফেলতে পারি। অন্য কথায় বললে, তোমার পোশাক।”
“ঠিক তাই। আমার ব্রা তোমার হাতের কাছ থেকে ঝুলছিল।”
“তাহলে আবারও সেই প্রশ্ন। খুনটা কে করেছে?”
“জানি না। ঐ রাতে, রিয়ুজির রুম থেকে ইশিয়োর বেরিয়ে যাওয়া আর আমার ঢোকার মধ্যবর্তী সময়টায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও দরজাটা লক করা ছিল না। সে সময়ে যে কেউ ঢুকে থাকতে পারে।”
“দাঁড়াও দাঁড়াও। এক মিনিট। তুমি আমি যখন ইশিয়োর রুমে কথা বলছিলাম, তখন তুমি দুই ওয়ারড্রবের চাবির মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছিলে না?”
মিকি মাথা ঝাঁকাল। “সেজন্যই আমি ভেবেছিলাম লকটা নষ্ট। আসলেই ওটা খুলছিল না। খুনের রাতে খুনি ওয়ারড্রবে লুকিয়ে ছিল আর দরজা লাগিয়ে রেখেছিল। আমি চাবির ফুটোয় ঠিক চাবিটাই ঢুকিয়ে ঘুরিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমি সেটা খোলার চেষ্টা করছি, কিন্তু আসলে সেটা লক করে দিয়েছিলাম। ভেতরে যে ছিল সে সেখানে আটকা পড়ে গিয়েছিল। ওকে লকটা ভেঙে বের হতে হয়েছিল। আর ইশিরোর ওয়ারড্রবের লকটাও যখন নষ্ট দেখা গেল, সেটাও সম্ভবত এই কারনেই হয়েছিল। খুনি পুরোটা সময় ওয়ারড্রবে লুকিয়ে ছিল, আমাদের কথাবার্তা শুনছিল। খেয়াল করলে দেখবে দুটো দরজার মাঝখানে ছোট একটা ফাঁক আছে। সে হয়ত ফাঁকটায় মুখ চেপে সবকিছু দেখতে পাচ্ছিল।”