মানুচ্চি স্মৃতিচারণ করে জানিয়েছেন যে প্রতিশোধপরায়ণ আওরঙ্গজেব দারার ছিন্ন মস্তক পাঠিয়েছিলেন শাহজাহানের কাছে।
অধ্যায়–২২
সত্যিকারভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে মুরাদকে বন্দি করেছিল আওরঙ্গজেব। এরপর কম্পাসের চারদিকে চারটে হাতি পাঠিয়ে দিয়েছিল যেন মুরাদের বাহিনী তার পিছু নিতে না পারে। পরবর্তীতে নিজের অর্থমন্ত্রী আলী নকীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় মুরাদকে।
১৬৫৮ সালের একুশে জুলাই সাধারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথমবারের মত নিজেকে স্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন আওরঙ্গজেব। এর প্রায় এক বছর পর ১৬৫৯ সালের পাঁচই জুন তাঁর জ্যোতিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী অত্যন্ত শুভদিন–দ্বিতীয় ও অত্যন্ত আঁকমজকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যায়-২৩
আওরঙ্গজেবকে দেয়ার পরিবর্তে নিজের মুক্তা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া শাহজাহানের গল্পটি পুরোপুরি সত্য।
এটা আমার কল্পনা যে শাহজাহান সুলাইমানের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। যাই হোক না কেন তিনি সফল হননি। আওঙ্গজেবের নির্দেশে সুলাইমানকে প্রথমে পোস্ত খাইয়ে জ্যোম্বি বানিয়ে ফেলা হয়, ধীরে ধীরে যা তাকে হত্যা করে ফেলে। বহু বছর ধরে কারাগারে রাখার পর নিজের এক কন্যার সাথে দারার অন্য পুত্র সিপিরের বিবাহ দেয় আওরঙ্গজেব।
আরাকানের জলদস্যু রাজার ভূমিতে শেষ শোনা গিয়েছিল শাহ সুজার নাম, বাংলা পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলেই সে নিঃশেষ হয়ে গেছে বলে বেশির ভাগেরই বিশ্বাস।
অধ্যায়-২৪
কারাগারের পুরো সময়টুকুতে পিতার সঙ্গী ছিলেন জাহানারা। এ সময় আওরঙ্গজেবের সাথে কখনোই দেখা হয়নি শাহজাহানের। যদিও শাহজাহানের কারাভোগের প্রথম বছরে পিতা-পুত্র পত্র বিনিময় করেছিলেন। শাহজাহানের পক্ষ থেকে পুরোটাই ছিল ভর্ৎসনা আর আওরঙ্গজেবের পক্ষ থেকে আসে ধর্মীয় আর আত্মপক্ষ সমর্থন সুলভ উত্তর। এক চিঠিতে আওরঙ্গজেব লিখেছিলেন যে, আমি বুঝতে পেরেছি যে জাহাপনা ভালোবাসেন, তবে আমাকে নয়–এ থেকেই বহু দিন ধরে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবার যে অনুভূতি তার সূত্র পাওয়া যায়।
ফরাসী জ্যা ব্যাপটিস্ট ভারনিয়ারের এর লেখনীই একমাত্র প্রমাণ যে শাহজাহান নিজের সমাধি হিসেবে কালো মার্বেলের তাজমহল নির্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। তাভারনিয়ার লিখে গেছেন যে, শাহজাহান নদীর অপর তীরে নিজের সমাধি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন; কিন্তু পুত্রদের সাথে যুদ্ধ এ পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। পূর্বে সাদা মার্বেলের সাথে সংগতি রেখে কালো মার্বেলের ইমারতের কথা বলেছিলেন শাহজাহান। যদি তিনি নিজের তাজমহল নির্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত যে এক্ষেত্রে স্থান হিসেবে বেছে নিতেন মাহতাব বাগ অথবা চন্দ্র আলোর উদ্যান। পুরাতত্ত্ববিদগণ মাহতাব বাগে এরকম কোন ইমারতের ভিত্তি খুঁজে না পেলেও এ পরিকল্পনা যে শাহজাহানের সাথে খাপ খায় না–তা নয়। কেননা শিল্পের বিশাল সমঝদার ছিলেন তিনি। এছাড়া সাদা মার্বেলের সাথে কালোর বৈপরীত্য ভালোবাসতেন তিনি। এই উদাহরণের সত্যতা নির্ণীত হয়েছে যখন তিনি ১৬৩০ সালে মমতাজ মহলের মৃত্যুর ঠিক পূর্বে কাশ্মিরের শ্রীনগরের শালিমার বাগানে নির্মাণ করেন কালো মার্বেলের মঞ্চ, তাজমহলের মাঝেও কালো মার্বেল অসংখ্যবার ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চারটি মিনারের প্রতিটি সাদা মার্বেলের ব্লক একে অন্যের সাথে কালো মার্বেল খোদাই করে জোড়া লাগান হয়েছে, সমাধি সৌধের স্তম্ভমূলের চারপাশের নিচু দেয়ালে খোদাই করা আছে একই উপাদান আর সমাধি স্তম্ভের কাঠামো আর ক্যালিগ্রাফী উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে কালো মার্বেল পানির ওপারে কালো তাজ আর বিশেষ কোন অবস্থানন্তর প্রাপ্তি ঘটাতো? যাই হোক, সত্যিটা হয়ত আর কখনোই জানা হবে না আমাদের। যেটা পরিষ্কার তা হল তাজমহলে সমাধিস্থ হবার কোন ইচ্ছে ছিল না তার, শুধুমাত্র মমতাজের জন্য এটির নকশা করেছিলেন তিনি। ভবনের একেবারে মাঝখানে আছে মমতাজের জমকালো পাথরের শবাধার। শাহজাহানের সমাধি পড়ে গেছে একপাশে, পুরো নকশাতে একমাত্র বিসদৃশ উপাদান। মমতাজের সমাধির চারপাশের কালো-সাদা টাইলের বর্ডারের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে এটি, আবাররা, সবিস্তারে বর্ণনা পেতে দেখুন অ্যা টিয়ারড্রপ অন দ্য চিক্ অব টাইম। ১৬৬৬ সালের ২২ শে জানুয়ারির প্রথম প্রহরে মৃত্যুবরণ করেন শাহজাহান। স্থান, আগ্রা দুর্গ। বিশাল রাজকীয় কোন শেষকৃত্যের অনুমোদন দান করেননি আওরঙ্গজেব। আদেশ দিয়েছিলেন যেন নীরবে তাজমহলের মাটির নিচের সমাধি স্থানে মমতাজের পাশে সমাধিস্থ করা হয় তার পিতাকে।
.
প্রধান চরিত্রসমূহঃ
শাহজাহানের পরিবার
মমতাজ মহল (প্রাক্তন আরজুমান্দ বানু), শাহজাহানের পত্নী।
জাহানারা, শাহজাহান এবং মমতাজের জ্যৈষ্ঠ জীবিত কন্যা দারা
শুকোহ, শাহজাহান আর মমতাজের জ্যৈষ্ঠ জীবিত পুত্র
শাহ সুজা, শাহজাহান ও মমতাজের জীবিত দ্বিতীয় পুত্র
রোশনারা, শাহজাহান ও মমতাজের দ্বিতীয় জীবিত কন্যা
আওরঙ্গজেব শাহজাহান ও মমতাজের তৃতীয় জীবিত পুত্র
মুরাদ, শাহজাহান ও মমতাজের কনিষ্ঠ জীবিত পুত্র
গওহর আরা, শাহজাহান ও মমতাজের কনিষ্ঠ কন্যা।