- বইয়ের নামঃ তিন গোয়েন্দা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার
তিন গোয়েন্দা
১
রকি বীচ, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া।
সাইকেলটা স্ট্যান্ডে তুলে রেখে ঘরে এসে ঢুকল রবিন মিলফোর্ড। গোলগাল চেহারা। বাদামী চুল। বেঁটেখাট এক আমেরিকান কিশোর।
রবিন, এলি? শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে ডাকলেন মিসেস মিলফোর্ড।
হ্যাঁ, মা, সাড়া দিল রবিন। উকি দিল রান্নাঘরের দরজায়। কিছু বলবে?
চেহারায় অনেক মিল মা আর ছেলের। চুলের রঙও এক। কেক বানাচ্ছেন মিসেস মিলফোর্ড। চাকরি কেমন লাগছে?
ভালই, বলল রবিন। কাজকর্ম তেমন নেই। বই ফেরত দিয়ে যায় পাঠকরা। নাম্বার দেখে জায়গামত ওগুলো তুলে রাখা, ব্যস। পড়াশোনার প্রচুর সুযোগ আছে।
কিশোর ফোন করেছিল, একটা কাঠের বোর্ডে কেক সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললেন মা।
কি, কি বলেছে?
একটা মেসেজ দিতে বলেছে তোকে।
মেসেজ কি মেসেজ?
বুঝলাম না। আমার অ্যাপ্রনের পকেটে আছে।
দাও, হাত বাড়াল রবিন।
একটু দাঁড়া। হাতের কাজটা সেরেই দিচ্ছি, বড় দেখে একটা কেক তুলে নিলেন মা। ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, নে, খেয়ে নে এটা। নিশ্চয় খিদে পেয়েছে।
কেকটা নিয়েই কামড় বসাল রবিন।
হ্যাঁরে, রবিন, রোলস রয়েস তো পেলি…
শুনেছ। তাহলে। আমি না, কিশোর পেয়েছে, কেক চিবুতে চিবুতে বলল রবিন। চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। একশো আশিটা বেশি বলে ফেলেছিলাম, মুসা দুশো দশটা কম।
ওই হল! কিশোরের পাওয়া মানেই তোদেরও পাওয়া। …রবিন, প্রতিযোগিতাটা কি ছিল রে?
জান না? চিবানো কেকটুকু কোৎ করে গিলে নিয়ে বলল রবিন, সে এক কাণ্ড! বড় এক জারে সীমের বীচি ভরে শোরুমের জানালায় রেখে দিয়েছিল কোম্পানি…
হ্যাঁ। ঘোষণা করলঃ জারে কাটা বীচি আছে যে বলতে পারবে, শোফারসজ একটা রোলস রয়েস দিয়ে দেয়া হবে তাকে তিরিশ দিনের জন্যে। সব খরচ-খরচা কোম্পানির। জারটা দেখে ঝটপট আনসার সাবমিট করে দিয়ে এলাম। আমি আর মুসা। কিশোর তা করল না। জারটা ভাল করে দেখল, এদিক থেকে ওদিক থেকে। বাড়ি ফিরে এল। শুরু করল হিসেব। কত বড় জার, বীচির সাইজ, প্রতিটা বীচি কতখানি জায়গা দখল করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনটে দিন শুধু ওই নিয়েই রইল। …তার উত্তরও পুরোপুরি সঠিক হয়নি, তিনটে বেশি। তবে এরচেয়ে কাছাকাছি আর কারও হয়নি। কিশোরের জবাবকেই সঠিক করে নিয়েছে কোম্পানি, আবার কেকে কামড় বসাল রবিন।
ছুটি তাহলে খুব আনন্দেই কাটছে তোদের, একটা কাপড়ে হাত মুছছেন মা। কোথায় কোথায় যাচ্ছিস?
সেটা নিয়েই ভাবছি, বাকি কেকটুকু মুখে পুরে দিল রবিন।
তারেকটা নিবি?
মাথা নাড়ল রবিন। হাত বাড়াল, মেসেজটা, মা?
পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বের করলেন মিসেস মিলফোর্ড। ইংরেজিতে বানান করে করে বলেছে কিশোর, লিখে নিয়েছেন তিনি। পড়লেন, স্যাবুজ ফ্যাটাক য়েকা ছাপা খ্যানা চালু মানে কি রে এর?
সবুজ ফটক এক দিয়ে ঢুকতে হবে। ছাপাখানা চালু হয়ে গেছে, বলতে বলতেই ঘুরে দাঁড়াল রবিন। রওনা হয়ে গেল দরজার দিকে।
ও-মা, এই এলি! আর এখুনি… থেমে গেলেন মা। বেরিয়ে গেছে। রবিন। কাঁধ বাঁকালেন তিনি।
এক ছুটে হলরুম পেরোল রবিন। দরজা খুলে প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এল। বাইরে। ধাক্কা দিয়ে সন্ট্যান্ড সরিয়েই এক লাফে সাইকেলে চড়ে বসল। পা ভাঙা, ভুলেই গেছে যেন।
ব্যথা আর তেমন পায় না। এখন। সাইকেল চালাতেও বিশেষ অসুবিধে হয় না। পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ঘটিয়েছে ঘটনাটা। ভাঙা জায়গায় ব্রেস লাগিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার আলমানজু। অভয় দিয়েছেন, শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে পা।
ছোট্ট ছিমছাম শহর রকি বীচ। একপাশে প্রশান্ত মহাসাগর, অন্যপাশে সান্তা মনিকা পর্বতমালা।
পর্বত বললে বাড়িয়ে বলা হয় সান্তা মনিকাকে, পাহাড় বললে কম হয়ে যায়। ওরই একটাতে চড়তে গিয়ে বিপত্তি ঘটিয়েছে রবিন। বেশ খাড়া। সাধারণত কেউ চড়তে যায় না। বাজি ধরে ওটাতেই চড়তে গেল সে। পাঁচশো ফুট উঠেছিল কোনমতে, তারপরই পা পিছলাল।
শহরতলীর প্রান্ত ছাড়িয়ে এল রবিন। ওই যে, দেখা যাচ্ছে জাংক-ইয়ার্ডটা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড।
দুই ভাই জাহেদ পাশা আর রাশেদ পাশা। বাঙালী। গড়ে তুলেছেন ওই জাংক-ইয়ার্ড। আগে নাম ছিলঃ পাশা বাতিল মালের আড়ত। ইংরেজি অক্ষরে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল বাংলা নামের। সঠিক উচ্চারণ কেউই করতে পারত না, খালি বিকৃত উচ্চারণ। রেগেমেগে শেষে নামটা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন রাশেদ পাশা, কিশোরের চাচা।
এখন রাশেদ পাশা একাই চালান স্যালভিজ ইয়ার্ড। ভাই নেই। ভাবীও নেই, দুজনেই মারা গেছেন এক মোটর-দুর্ঘটনায়। হলিউড থেকে ফিরছিলেন রাতের বেলা। পাহাড়ী পথ। কেন যে ব্যালান্স হারিয়েছিল গাড়িটা, জানা যায়নি। নিচের গভীর খাদে পড়ে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। কিশোরের বয়েস তখন এই বছর সাতেক।
অনেক কিছুই পাওয়া যায় পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে, তবে সবই পুরানো। আলপিন থেকে শুরু করে রেলগাড়ির ভাঙা বগি, চাই কি, জাহাজের খোলের টুকরোও আছে। নিলামে কিনে আনেন রাশেদ পাশা। বেশির ভাগই বাতিল জিনিস, তবে মাঝে মাঝে ভাল জিনিসও বেরিয়ে পড়ে। ওগুলো বেশ ভাল দামেই বিক্রি হয়। আর বাতিল জিনিসপত্রের অনেকগুলোই সারিয়ে নেয়া যায়। ওগুলো থেকেও মোটামুটি টাকা আসে। সব মিলিয়ে ভাল লাভ। তবে খাটুনি অনেক।