অধ্যায়-১২
শাহজাহান আওরঙ্গজেবকে গুজরাটে পাঠিয়ে মধ্য এশিয়ার দায়িত্বভার দিয়েছিলেন কনিষ্ঠ ও অনভিজ্ঞ মুরাদের উপর।
অধ্যায় ১৩
সমরকন্দের দিকে অগ্রসর হতে ও এটি দখল করতে মুরাদ ব্যর্থ হলে পর শাহজাহান আওরঙ্গজেবকে দায়িত্ব দেন। আওরঙ্গজেবও পরাজিত হয়। যেটিকে শাহজাহানের শাসনামলের প্রথম বাধা হিসেবে গণ্য করা হয়।
অধ্যায়-১৪
জাহাঙ্গীরের আমলে পারস্যবাসী কান্দাহার দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৬৩৮ সালে শাহজাহান পুনরায় এটি দখল করে নেন। ১৬৪৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় শাহ আব্বাসের সেনাবাহিনী আবার এ শহরকে অধিকার করে নিলে পর শাহজাহানের পদক্ষেপ সমূহ বিফলে যায়–এর একটির নেতৃত্বে ছিল দারা শুকোহ্। মোগলরা আর কখনোই কান্দাহারের উপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে পারেনি।
অধ্যায়-১৫
একটি যুদ্ধের চূড়ান্ত সময়ে বস্তুত সত্যিকার অর্থেই দেখা গিয়েছিল যে আওঙ্গজেব মাদুর বিছিয়ে হাঁটু গেড়ে নামাজ পড়া শুরু করেছিলেন। বিদেশী পর্যটক যেমন ফ্রানকোয়েজ বার্নিয়ার শাহজাহান প্রেমিকদের সম্পর্কে রটনা লিপিবদ্ধ করে গেছেন; যাদের উপর ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিতেন শাহজাহান উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজনকে কড়াইতে জীবন্ত সিদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন ম্রাট। যাই হোক, বিবাহ করার সুযোগ না পাওয়াতে প্রেমিক নির্বাচন করেছিল জাহানারা এহেন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অধ্যায়-১৬
ইনায়েত খান লিপিবদ্ধ করে গেছেন যে ১৬৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহজাহান; কনিষ্ঠ তিন পুত্র, নিজেদের বহুদূরের প্রদেশ সমূহে থেকেই সিংহাসন দখল করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন। কেউই শাহজাহানের সুস্থতার কোন প্রমাণ ছড়ানোর অনুমতি দেয়নি। মানুচ্চি দারার সমর্থক-পরবর্তীতে দাবি করেছেন যে আওরঙ্গজেব নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন শাহজাহান জীবিত আছেন এরকম কোন সংবাদ দাক্ষিণাত্যে না পৌঁছাতে পারে। পত্র পুড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি তাদের বাহকেরও তৎক্ষণাৎ মুণ্ডু কর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আওরঙ্গজেব।
অধ্যায়-১৭
মুরাদ প্রকৃতই সেনাবাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলেন মিরাট লুটপাট করার জন্য। যেন সিংহাসনের জেতার লড়াইয়ে অংশ নেবার জন্য বিশাল সেনাবাহিনী ক্রয় করে সাহায্য পেতে পারেন। নিজের অর্থমন্ত্রী আলী নাকীকে খুন করেছিলেন মুরাদ–যা কিনা পরবর্তীতে তার পতনের জন্য দায়ী হয়। দারার পুত্র সুলাইমান আর আম্বারের রাজপুত্র সেনাপতি জয় সিং, বেনারসের কাছে বাহাদুর নামক জায়গায় শাহ সুজাকে পরাজিত করে ১৬৫৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর গঙ্গা ধরে পালিয়ে যায় শাহ সুজা। পিছু ধাওয়া করতে নিজেকে দমন করতে পারেননি সুলাইমান। আওরঙ্গজেব আর মুরাদ মারওয়ানের মহারাজা যশয়ন্ত সিংয়ের নেতৃত্বে রাজকীয় মোগল সেনাবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ধর্মতে ১৬৫৮ সালের পনেরই এপ্রিল।
অধ্যায়-১৮
দারা চেষ্টা করেছিল চম্বল নদী পার হয়ে আওরঙ্গজেব আর মুরাদের সেনাবাহিনীকে বাধা দেয়ার জন্য। কিন্তু একটি অখ্যাত আর অরক্ষিত দুর্গ নদী হেঁটে পার হয়ে দ্রুত পৌঁছে যায় যৌথবাহিনী।
অধ্যায়-১৯
সামুগড় যুদ্ধ, আগ্রার পূর্বে অনুষ্ঠিত হয় ১৬৫৮ সালের উনত্রিশে মে তারিখে। সত্যিকারভাবেই যুদ্ধ যখন তার পক্ষে যাচ্ছিল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হাতি থেকে নেমে আসে দারা। মানুচ্চি, যিনি কিনা দারার সেনাবাহিনীতে লড়ছিলেন। লিখে গেছেন যে : মনে হয়েছিল যেন বিজয়কে ঠেলে ফেলে দিল দারা। খলিলউল্লাহ খানের বিশ্বাসঘাতকতার গল্পও সত্যি।
অধ্যায়-২০
দুঃখে উন্মত্ত ও উদ্বিগ্ন শাহজাহান রাজকীয় কোষাগার দারার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়ার আদেশ পাঠিয়েছিলেন দিল্লির সুবাদারের কাছে। বস্তুত একেবারে সময় মতই আগ্রা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল দারা। পরের দিন আগ্রা থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে দারার উদ্দেশে রওনা দেয়া মানুচ্চি দেখতে পায় আওরঙ্গজেবের সৈন্যরা আটকে দিয়েছিল রাস্তা। তারা মানুচ্চিকে জানায় যে ইতিমধ্যেই সরকার বদলে গেছে আর আওরঙ্গজেব বিজয়ী হয়েছে।
মালিক জিউয়ান নিজের জীবনের জন্য দারার কাছে ঋণী থাকলেও বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে আওরঙ্গজেবের হাতে তুলে দেয়।
দারার স্ত্রী নাদিরা যেভাবে একজন রাজাকে নিজের স্তন ধোয়া পানি পান করার জন্য প্রস্তাব করে তা পুরোপুরি সত্যি; যদিও ব্যক্তি হিসেবে মালিক জিউয়ান ছিল না, দারা ও তার পলায়ন পর্বের শুরুতে অন্য কোন রাজার সাথে এ ঘটনা ঘটে। ডায়রিয়া ও অতিরিক্ত ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণ করে নাদিরা।
বন্দি করার পর আওরঙ্গজেব সিপির আর দারাকে নোংরা একটি হাতির উপর চট বিছিয়ে ঘুরিয়ে আনে দিল্লির রাস্তায় রাস্তায়। এই অমর্যাদাকর শোভাযাত্রা অবলোকন করেছেন ফরাসী বার্নিয়ার।
বাস্তব জীবনে, ১৬৫৯ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে জনসমক্ষে নয়, নিজের কারাকক্ষে দারার মস্তক ছিন্ন করা হয়। দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধির চারপাশে অবস্থিত মঞ্চে সমাধিস্থ করা হয় দারাকে।
অধ্যায়-২১
এ ব্যাপারে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, প্রথমদিকে আওরঙ্গজেবের সাথে হাত মিলিয়েছিল রোশনারা। দরবারে যা ঘটছে তার প্রধান উৎস দাতা হিসেবে আওরঙ্গজেবের পক্ষে কাজ করত রোশনারা, বিশেষ করে শাহজাহানের অসুস্থতার সময়টুকুতে। আওরঙ্গজেব সত্যিকারভাবেই আগ্রা দুর্গের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কেটে দিয়েছিল।