কল্পনার চোখে ভেসে উঠেছে কারাবাসের সময় টাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা শাহজাহানের চিত্র, তাকিয়ে আছেন তাজমহলের দিকে, বাতাসে ভেসে চলে যাচ্ছেন যমুনার বাঁকে আর শেকসপিয়ারের ট্রয়লাসের মত মৃত মমতাজের কথা ভেবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে তাঁর আত্মা।
ঘুরে বেরিয়েছি শাহজাহানের মাহতাব বাগে, তাঁর চন্দ্ৰআলোর উদ্যান, যেখানে বসে তাজমহলের বিমর্ষ রূপ উপভোগ করতেন তিনি। আর অবশ্যই ফিরে গেছি তাজ-এর কাছে। অনেকবারই দেখা হলেও সবসময় অত্যাশ্চর্য মনে হয়েছে। হোক সেটা সূর্যোদয়ের সময় যখন সকালের কুয়াশাতে মনে হয় পুরোপুরি অপার্থিব; অথবা সূর্যাস্তের সময় যখন গম্বুজের চারপাশে জড়িয়ে থাকে বেগুনি ছায়া; অথবা চাঁদের রুপালি আলো, সবসময়েই অসাধারণ তাজ। মতভেদ আছে কেন এটি এত নিপুণ। শিল্পের ছোঁয়া, সমাধি, সবকিছুই নিজ নিজ কাজ করেছে তারপরেও এর জাদুর মূল মন্ত্র হলো ভালোবাসা আর হারানোর নিদর্শন স্তম্ভ এই তাজমহল।
.
পাদটীকা
অধ্যায় ০১
১৬২৬ সালের শুরুতে জানুয়ারিতে সিংহাসনে আসীন হন শাহজাহান আর নিজ রাজত্বকালে বহুবারই গুপ্তঘাতকদের প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন। জন্মগ্রহণ করেছেন ১৫৯২ সালের জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে। পত্নী মমতাজ ছিলেন এক বছরের ছোট। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৬১২ সালে।
উত্তপ্ত কয়লা গলাধরণ করে মৃত্যুবরণ করেন খসরুর স্ত্রী জানী।
শাহজাহানের দরবার কবিগণ মমতাজের বহু প্রশস্তি গীতি রচনা করে গেছেন। এ গ্রন্থে উল্লিখিত কবিতা সহ, যেটি নেয়া হয়েছে কলিম এর বাদশানামা থেকে।
দাক্ষিণাত্য সংকট, যার কারণে দক্ষিণে ছুটে যান শাহজাহান, শুরু হয়েছিল ১৬২৯ এর শেষ দিকে।
অধ্যায় ০২
ভারতের পুরাতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তর বর্তমানে কাজ করছে বোরহানপুর ধাসাদ দুর্গটি সংরক্ষণের কাজে।
অধ্যায় ০৩
বোরহানপুরের চারপাশের দুর্ভিক্ষ ছিল অত্যন্ত মারাত্মক। শাহজাহানের ইতিহাসবিদ লিখে গেছেন গত বছর ধরে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি… আর ধরার অবস্থা দাঁড়িয়েছে বিশেষভাবে প্রকট…ছাগলের মাংসের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে কুকুরের মাংস আর মৃতদেহের (মানুষের) হাড়ের গুঁড়ো মেশানো হচ্ছে ময়দাতে আর বিক্রি হচ্ছে (রুটি তৈরির জন্য)… হতাশার মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে মানুষ একে অন্যকে গোগ্রাসে গিলছে, প্রিয়তমাকে এনে দিচ্ছে পুত্রের মাংস। প্রজাদের সাহায্যের নিমিত্তে কর মওকুফ করে দিয়েছিলেন শাহজাহান। এছাড়া বোরহানপুর আর অন্যান্য শহরে নোঙ্গরখানা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেখানে রুটি আর ঝোল বিলিয়ে দেয়া হত ক্ষুধার্তের মাঝে, আরো নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতি সোমবার দুঃস্থদের মাঝে ৫০০০ রুটি বিতরণের জন্য।
অধ্যায় ০৪
রোবহানপুর দুর্গের প্রাসাদের মার্বেল হাম্মামের ছাদে এখন নাজুক সব দেয়ালচিত্র ফুটে আছে। এখানে উষ্ণ সুগন্ধি পানিতে স্নান করতেন মমতাজ। সন্তান গর্ভ ধারণকালের খানিকটা সময় মমতাজ দারা শুকোহ্ ও নাদিরার বিয়ের পরিকল্পনা করে কাটিয়েছেন, শাহজাহানের সভাই পারভেজের কন্যা ছিল নাদিরা। বুদ্ধিদীপ্ত এই সম্পর্কের মাধ্যমে রাজপরিবারের ক্ষত নিরাময়েরও আশা হয়ত করেছিলেন মমতাজ। যাই হোক না কেন এর কারণ তাঁর স্বামী ও পুত্র এতে একমত হয়েছিলেন আর শাহজাহান জমকালো উৎসবের নির্দেশ দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বার্তাবাহক পাঠিয়ে দেন আগ্রাতে।
১৬৩১ সালের ৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন মমতাজ। গওহর আরা ছিল তার চতুর্দশ সন্তান যাদের মাঝে মাত্র সাতজন এ উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্র, বেঁচে ছিলেন পুর্নবয়স পর্যন্ত।
কয়েকজন পুরাতাত্ত্বিক বিশ্বাস করেন যে তারা খুঁজে পেয়েছে সেই কক্ষ, যেখান থেকে তাপ্তি নদী দেখা যায়। এ কক্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন মমতাজ।
অধ্যায় ০৫
মমতাজের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু যে শাহজাহানের শারীরিক এবং আবেগিক জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল তা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন জীবনীকারেরা।
শাহজাহানের হতাশা তুলে ধরে ফুটিয়ে তুলেছেন যে মানব জীবনের সুখময় মুহূর্ত কতটা ক্ষণস্থায়ী এমনকি একজন সম্রাটের জন্যও : হায়! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া বড়ই অস্থির। আর এর আয়েশি গোলাপি মুহূর্তগুলোও কাঁটায় পরিপূর্ণ। পৃথিবীর আস্তাকুঁড়ে, মর্মবেদনার ধুলাবিহীন বহে না কোন বাতাস; আর দুনিয়াতে মানুষের ভিড়ে আনন্দ নিয়ে কেউ কোন আসন গ্রহণ করতে পারে না দুঃখ ভরা মনে এটি শূন্য করা ব্যতীত। কতটা গভীরভাবে শোকাকুল হয়ে গিয়েছিলেন সকলে তা লিখে গেছেন জীবনীকারেরা, তুলনা করেছেন তাঁর রাতের আঁধার কাটিয়ে দেয়ার মত রত্ন আর বহুমূল্য পোশাকের সাথে প্রভাতের মত সাদা পোশাক এর–শাহজাহানের সময়কার সবচেয়ে নন্দিত কবি লিখে গেছেন : হিন্দতে তাঁর পোশাক শুভ্র করে তুলেছে চোখের জলে, শুভ্র হচ্ছে শোকের রং।
একইভাবে, একটা মাত্র রাতেই শাহজাহানের কেশ শুভ্র হয়ে যাবার কথাও লিখে গেছেন তারা। এমনকি তিনি নাকি পরিত্যাগের জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। সে সময়টা এমন এক সময় ছিল যখন বিবাহকে বর্তমানের মত কোন বন্ধন মানা হত না। কিন্তু তখনো শাহজাহান, যিনি কিনা প্রত্যহ নিজের দরবার পঞ্জীকে মুসাবিদা ও অনুমোদন দান করতেন, নিম্নের অনুভূতিকে মঞ্জুর করে গেছেন :