‘গুড মর্নিং,’ মিসেস ক্যুপারকে বলল লোকটা। ‘আমার নাম রবার্ট কর্নওয়ালিস। শুনলাম একটা শেষকৃত্যের পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনাকে কি চা বা কফি খেতে বলা হয়েছে? প্লিয… এদিকে আসুন।’
করিডর ধরে সেটার শেষপ্রান্তের একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো মিসেস ক্যুপারকে। এটাও একটা রিসিপশন এরিয়া, তবে আগেরটার সঙ্গে পার্থক্য আছে। এখানে বইয়ের বদলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ফোল্ডার আর ব্রশিউর। সেগুলো যদি খোলা হয় তা হলে দেখা যাবে বিভিন্ন রকমের কফিন ও শবযানের (গতানুগতিক অথবা ঘোড়ায়-টানা) ছবি এবং সেসবের মূল্যতালিকা। শবদাহের ব্যবস্থাও আছে, আর সে-উদ্দেশ্যে দুটো শেল্ফে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটা শবাধার। ঘরের একদিকে মুখোমুখি বসিয়ে রাখা হয়েছে দুটো আর্মচেয়ার। একটা চেয়ারের পাশে দেখা যাচ্ছে ছোট একটা ডেস্ক। ওই ডেস্কের পেছনে গিয়ে বসল কর্নওয়ালিস। রূপালি একটা মন্ট ব্ল্যাঙ্ক কলম বের করল। একটা নোটপ্যাডের উপর রাখল সেটা।
‘শেষকৃত্যানুষ্ঠানটা আপনার নিজের,’ শুরু করল সে।
‘হ্যাঁ,’ হঠাৎ করেই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছেন মিসেস ক্যুপার, কাজের কথায় চলে যেতে চাইছেন সরাসরি। ‘আমার মনে হয় ওই ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই আপনাদের এখানে।’
‘সমস্যা তো নেই-ই, বরং কারও ব্যক্তিগত কোনো চাহিদা থাকলে সেটা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখি আমরা। আজকাল পূর্বপরিকল্পিত অথবা ফরমায়েশি শেষকৃত্য প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের ব্যবসার। ক্লায়েন্ট যা চায়, তা তাদেরকে দেয়াটা আমাদের কর্তব্য। এখন আমাদের মধ্যে যে-আলোচনা হবে, সেটা শেষ হওয়ার পর আমাদের সব শর্ত যদি মেনে নেন আপনি, তা হলে সে-অনুযায়ী একটা ইনভয়েস দেয়া হবে আপনাকে। সেক্ষেত্রে, বন্ধু বা আত্মীয় বলতে যাঁরা আছেন আপনার, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না তাঁদের। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিশেষ সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তাঁরা সবাই বলবেন, যা-কিছু হয়েছে, আপনার ইচ্ছা-অনুযায়ীই হয়েছে।’
মাথা ঝাঁকালেন মিসেস ক্যুপার। ‘চমৎকার। তা হলে কাজ শুরু করে দেয়া যাক, কী বলেন? …আমি চাই, কার্ডবোর্ডের কফিনে দাফন করা হবে আমাকে।
নোট নেয়া শুরু করতে যাচ্ছিল কর্নওয়ালিস, কিন্তু থমকে গেল। তার কলমের নিব যেন কাগজের উপর ভেসে-আছে বাতাসে। ‘কিছু মনে করবেন না, ম্যাডাম, আপনি কি পরিবেশ-বান্ধব কোনো শেষকৃত্যানুষ্ঠানের কথা ভাবছেন? সেক্ষেত্রে আমি পরামর্শ দেবো, রিসাইকেল-করা কাঠের কফিন ব্যবহার করতে পারেন। অথবা কার্ডবোর্ডের বদলে উইলো গাছের বাঁকানো কাঠও ব্যবহার করতে পারেন।’
‘কেন?’
‘কারণ কখনও কখনও দেখা গেছে, কার্ডবোর্ডের কফিন খুব একটা ভালো ফল দেয় না। তা ছাড়া… কিছু মনে করবেন না…উইলো কাঠ কিন্তু কার্ডবোর্ডের চেয়ে খুব বেশি দামি না। আর…ওটা দেখতেও অনেক আকর্ষণীয়।’
‘ঠিক আছে। এবার আসুন, কোন্ জায়গায় দাফন হতে চাই আমি, সে-ব্যাপারে কিছু কথা বলা যাক।
‘জী, ম্যাডাম, বলুন। ‘
‘ব্রম্পটন সেমেট্রি-তে, ঠিক আমার স্বামীর কবরের পাশে।’
‘তিনি কি কিছু দিন আগে মারা গেছেন?’
‘না, বারো বছর আগে।’ হ্যান্ডব্যাগ খুললেন মিসেস ক্যুপার, এক তা কাগজ বের করে নামিয়ে রাখলেন ডেস্কের উপর।
কাগজটার দিকে তাকাল কর্নওয়ালিস। ‘দেখা যাচ্ছে আপনি আগেই অনেক কিছু ভেবে রেখেছেন এই ব্যাপারে। যা লেখা আছে এই কাগজে, সেটার কিছুটা অংশ ধর্মীয়, বাকি অংশ… কী বলবো… মানবতাবাদী। ‘
একচিলতে হাসি দেখা দিল মিসেস ক্যুপারের ঠোঁটের কোনায় ‘একটা ধর্মসঙ্গীত, আর বিটসের একটা গানের কয়েকটা লাইন। একটা কবিতা, একটা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, আর কিছু প্রশংসাবাক্য। তবে খেয়াল রাখবেন, ওগুলো যেন বেশি বড় হয়ে না-যায়।’
‘ঠিক আছে…
.
নিজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলেন ডায়ানা ক্যুপার, এবং সেটা দরকার ছিল তাঁর জন্য। কারণ ওই পরিকল্পনা করার ঘণ্টা ছয়েক পর, সেদিনই, খুন করা হয় তাঁকে।
তিনি যখন মারা যান, তখনও তাঁর ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। কীভাবে মারা গেছেন তিনি, সে-ব্যাপারেও কিছু শুনিনি। সম্ভবত পত্রিকার হেডলাইনটা নজর কেড়ে নিয়েছিল আমার… খুন হয়েছেন অভিনেতার মা… কিন্তু যে-ছবি আর যে-গল্প ছাপা হয়েছিল, সেগুলোতে ওই মহিলার ব্যাপারে যতটা না আলোচনা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল তাঁর সেই জনপ্রিয় অভিনেতা-ছেলেকে। যে-সময়ের কথা বলছি, তখন নতুন একটা আমেরিকান টিভি সিরিযের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছে সে। একটু আগে যে- কথোপকথন উল্লেখ করেছি, সেটা প্রকৃতপক্ষে কাল্পনিক, কিন্তু পুরোপুরি বানোয়াট না। কারণ কর্নওয়ালিস অ্যান্ড সন্স-এ শেষপর্যন্ত যেতে হয়েছিল আমাকে, কথা বলতে হয়েছিল রবার্ট কর্নওয়ালিস এবং আইরিন লযের সঙ্গে। (আইরিন, কর্নওয়ালিসের চাচাতো বোন।)
ফুলহ্যাম রোড ধরে সোজা হেঁটে গেলে ওই ফিউনারেল পার্লার খুঁজে বের করতে মোটেও কষ্ট হয় না। ঘরগুলো, যেমনটা বর্ণনা করেছি ওই কাল্পনিক কথোপকথনে, ঠিক সে-রকম। অন্য বর্ণনাগুলো আমি লিখেছি প্রত্যক্ষদর্শীদের- বিবৃতি আর পুলিশ-রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে।