মুখ বিকৃত করে ফেলল হোথর্ন, দেখে মনে হলো যেন আপসেট হয়েছে ড্যামিয়েনের কথায়। ‘আপনি কি জানেন, আপনার মা নিজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলেন?’
‘না, জানি না। কারণ কথাটা আমাকে বলেনি মা।’
‘কেন করতে গেলেন তিনি কাজটা, সে-ব্যাপারে কোনো ধারণা আছে আপনার?’
‘না, নেই। মা খুব গোছানো স্বভাবের মানুষ ছিলেন। শেষকৃত্যানুষ্ঠান, উইল…
‘উইলের ব্যাপারটা তা হলে জানা আছে আপনার?’
কথাটা শোনামাত্র রেগে গেল ড্যামিয়েন। গাল দুটো লাল হয়ে গেল তার; দেখে মনে হলো, ছোট দুটো লাল বাল্ব যেন জ্বলে উঠেছে সেখানে। ‘উইলের ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই জানি আমি। কিন্তু এই ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলবো না।
‘আমার ধারণা আপনার জন্য সব কিছু রেখে গেছেন আপনার মা।
‘বললাম তো, এই ব্যাপারে কিছু বলবো না আপনার সঙ্গে। কারণ ব্যাপারটা ব্যক্তিগত।’
উঠে দাঁড়াল হোথর্ন। ‘শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে দেখা হবে আপনার সঙ্গে।’
‘আমি জানতে পেরেছি, ওই অনুষ্ঠানে আমাকে দু’-চারটা কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে গেছেন মা। আর গ্রেস একটা কবিতা পড়বে সেখানে।
‘সিলভিয়া প্লাথ,’ বলল গ্রেস।
‘মা যে প্ল্যাথের কবিতা পছন্দ করতেন, জানা ছিল না আমার। তবে… যারা মায়ের শেষকৃত্যের আয়োজন করছে, তাদের অফিস থেকে ফোন করা হয়েছিল আমাকে। একজন মহিলা… নাম আইরিন লয। কীভাবে কী করতে হবে, সেসব নাকি লিখে দিয়ে গেছেন মা।’
‘যেদিন এসব ব্যবস্থা করেছেন আপনার মা, সেদিনই খুন হয়েছেন তিনি… ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক বলে মনে হয় না আপনার?’
প্রশ্নটা শুনে, মনে হলো, ড্যামিয়েনের বিরক্তি আরও বাড়ল। ‘আমার ধারণা ব্যাপারটা কাকতালীয় ঘটনা ছাড়া আর কিছু না।’
‘মজার একটা কাকতালীয় ঘটনা।’
‘এসবের মধ্যে মজার কী খুঁজে পেলেন আপনি, বুঝলাম না,’ এগিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাটের সদর-দরজাটা খুলে ধরল ড্যামিয়েন… নিঃশব্দে বিদায় নিতে বলছে আমাদেরকে। শীতল কণ্ঠে বলল, ‘আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে এবং কথা বলে ভালো লাগল।’
বেরিয়ে এলাম আমরা। হাজির হলাম নিচের ব্যস্ত রাস্তায়।
হাঁটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না হোথর্নের মধ্যে। অন্যমনস্ক হয়ে আছে। ‘কিছু একটা মিস করছি আমি সম্ভবত।’
‘কী?’
‘জানি না। ডায়ানা ক্যুপার তাঁর ছেলেকে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছিলেন… সেটার ব্যাপারে কিছু-একটা জিজ্ঞেস করেছেন আপনি ড্যামিয়েনকে। আচ্ছা, আপনাকে না আমি মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম?’
‘আপনার সমস্যাটা কী?’ খেঁকিয়ে উঠলাম আমি, আর সহ্য করতে পারছি না। ‘আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবেন না বলে দিচ্ছি! আপনার কথা শুনছি আমি, সময়ে সময়ে নোট নিচ্ছি। কিন্তু যদি ভেবে থাকেন আপনার পেছন-পেছন সারা লন্ডনে একটা পোষা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়াবো, তা হলে ভুল করেছেন। আমি কোনো বোকা গাধা না। আর… ওই টেক্সট মেসেজের ব্যাপারে ড্যামিয়েনকে প্রশ্ন করে এমন কী ভুলটা করেছি, শুনি? মোটেও অপ্রাসঙ্গিক হয়নি আমার প্রশ্নটা।
আমার দিকে তাকিয়ে আছে হোথর্ন। ‘আপনি ভেবে দেখুন!’
‘কেন, আপনার কাছে কি অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে প্রশ্নটা?’
‘জানি না। হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, আমার প্রশ্নের জবাবে কিছু-একটা বলেছে ড্যামিয়েন এবং সেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। আসলে আমি যা বলতে চাইছি তা হলো, আমার ভাবনার ট্রেনটার যাত্রা ব্যাহত করে দিয়েছেন আপনি।’
‘ঠিক আছে। তা হলে আরও যা-যা জানতে চাওয়ার আছে আপনার ড্যামিয়েনের কাছে, সেসব ওই শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সময় জেনে নিয়েন ওর থেকে। হাঁটা ধরলাম আমি। ‘তারপর দয়া করে জানিয়ে দিয়েন আমাকে।’
‘শুক্রবার এগারোটা!’ উঁচু গলায় বলল হোথর্ন, শেষকৃত্যের সময়টা জানিয়ে দিচ্ছে আমাকে। ‘ব্রম্পটন সেমেট্রি।’
থেমে দাঁড়ালাম আমি, ঘুরলাম। ‘যেতে পারবো না। কাজ আছে আমার।’
দ্রুত পায়ে হেঁটে আমার কাছে হাজির হলো হোথর্ন। ‘আসতেই হবে আপনাকে। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। ভুলে যাচ্ছেন কেন… নিজের শেষকৃত্যানুষ্ঠান চেয়েছিলেন মিসেস ক্যুপার।’
‘না, ভুলিনি, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে আমার। দুঃখিত। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, যা-যা ঘটবে সেখানে, সেসবের নোট নিতে হবে। তারপর বিস্তারিত জানাতে হবে আমাকে। আমি নিশ্চিত, আমার চেয়ে বেশি নির্ভুল হবে আপনার পর্যবেক্ষণ।
একটা ট্যাক্সি দেখতে পেলাম, ইশারায় থামালাম ওটা। এবার আমাকে বাধা দেয়ার আর কোনো চেষ্টা করল না হোন।
ঘাড় ঘুরিয়ে যাতে না-তাকাই, সে-ব্যাপারে সচেষ্ট আছি। তারপরও ট্যাক্সির আয়নায় দেখতে পেলাম হোথর্নকে। দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়, আরেকটা সিগারেট ধরাচ্ছে।
গতি বাড়ল আমার ট্যাক্সির।