কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল হোথর্ন, কিন্তু পারল না… যুবতী আর খুবই আকর্ষণীয় এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী নেমে আসছে প্যাচানো সেই সিঁড়ি বেয়ে। একহাতে ধরে রেখেছে ছোট একটা মেয়ের হাত। অন্য হাতে একটা মোবাইল ফোন।
‘ডেম,’ ডাকল মেয়েটা ড্যামিয়েনকে, ‘জেসন ফোন করেছে।’ কেমন নার্ভাস শোনাল তার কণ্ঠ। ‘বলছে, ব্যাপারটা নাকি জরুরি।’
‘ঠিক আছে,’ এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিল ড্যামিয়েন, চলে গেল টেরেসে। কিছুক্ষণ কথা বলে ফিরে এল। ‘দুঃখিত, আমার ম্যানেজার ফোন করেছিল।’
কৃষ্ণাঙ্গ ওই মেয়ের দিকে তাকালাম। সে-ই সম্ভবত গ্রেস লোভেল। কোনো সন্দেহ নেই, এ-ই মেয়ে একজন মডেল অথবা অভিনেত্রী। অথবা হয়তো কোনো এককালে তা-ই ছিল। বয়স ত্রিশের কিছু বেশি। বেশ লম্বা। চোখ আর গালের মাঝখানে হাড় দুটো বেশ উঁচু। লম্বাটে ঘাড়, পেলব কাঁধ। খুবই টাইট ফিটিং একটা জিন্স আর ঢিলেঢালা কিন্তু দামি একটা জার্সি পরে আছে। জার্সিটা ঢলঢল করছে ওর গায়ে। সঙ্গের বাচ্চাটার বয়স তিনের বেশি হবে না। বড় বড় চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটা।
‘আমি গ্রেস,’ নিজের পরিচয় দিল কৃষ্ণাঙ্গ ওই মেয়ে। ‘আর আমার সঙ্গের এই বাচ্চাটার নাম অ্যাশলি। …অ্যাশলি, হ্যালো বলো।’
কিছু বলল না বাচ্চাটা।
‘ড্যামিয়েন কি কফি অফার করেছে আপনাদেরকে?’ জিজ্ঞেস করল গ্রেস। ‘হ্যাঁ, ধন্যবাদ।’
‘আপনারা কি ডায়ানার ব্যাপারে এসেছেন এখানে?’
‘হ্যাঁ।’
‘এই ব্যাপারটা নিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছে ড্যামিয়েন। কিন্তু ওকে দেখলে বোঝা যায় না সেটা। নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখতে পারে সে।’
বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করেই ড্যামিয়েনের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করল কেন গ্রেস, ঠিক বুঝলাম না। আমার কাছে আশ্চর্য লাগল ব্যাপারটা।
হোথর্ন বলল, ‘তিনি বলেছেন, গত ক্রিসমাসে নাকি মিসেস ক্যুপারের সঙ্গে ছিলেন আপনারা।
‘হ্যাঁ। একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি আমরা। তবে আমার চেয়ে অ্যাশলির প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল ড্যামিয়েনের মায়ের।’ ফ্রিজ থেকে এক কার্টন জুস বের করল গ্রেস, প্লাস্টিকের একটা কাপে ঢালল কিছুটা। কাপটা দিল অ্যাশলির হাতে। ‘আমার চেয়ে অ্যাশলির প্রতি যে আগ্রহ বেশি ছিল ড্যামিয়েনের মায়ের, সেটা মনে হয় অস্বাভাবিক কিছু না। ওদের পরিবারের প্রথম নাতনি মেয়েটা।’
‘আপনিও কি অভিনয় করেন?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘হ্যাঁ। মানে… করতাম একসময়। অভিনয় করতে গিয়েই ড্যামিয়েনের সঙ্গে পরিচয় আমার। রয়্যাল অ্যাকাডেমি অভ ড্রামাটিক আর্টে একসঙ্গে ছিলাম আমরা। সেখানে হ্যামলেট নাটকে অভিনয় করেছিল সে। চমৎকার হয়েছিল নাটকটা। সবাই টের পেয়েছিল, একদিন বড় তারকা হতে পারবে ড্যামিয়েন। …অফেলিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম আমি ওই নাটকে।’
‘তার মানে আপনারা একসঙ্গে আছেন অনেকদিন।’
‘না। রয়্যাল অ্যাকাডেমি অভ ড্রামাটিক আর্টের পর ড্যামিয়েনকে বলতে গেলে কুড়িয়ে নেয় আরএসসি। সে তখন চলে যায় স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-এইভনে। আর আমি চুটিয়ে অভিনয় করতে শুরু করি বেশ কিছু টিভি নাটকে। সত্যি বলতে কী,
কয়েক বছর আগে আবার দেখা হয়েছে আমাদের। তারপর… একসঙ্গে থাকতে শুরু করলাম আমরা। বছর তিনেক আগে জন্ম হলো অ্যাশলির।’
‘তা হলে তো ব্যাপারটা কষ্টকর হয়ে গেল আপনার জন্য,’ বললাম আমি। ‘কাজকর্ম বাদ দিয়ে এখন বাসায় থাকতে হচ্ছে আপনাকে।
‘না। সিদ্ধান্তটা আমারই ছিল।’
কথাটা বিশ্বাস করলাম না। কারণ নার্ভাসনেস দেখতে পাচ্ছি গ্রেসের চোখে। মোবাইল ফোনটা নিয়ে এসে যখন ড্যামিয়েনের হাতে দিল সে একটু আগে, তখন তার চোখে একই রকম নার্ভাসনেস দেখতে পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নার্ভাস হয়ে পড়েছিল গ্রেস? ওর হাত থেকে মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিতে পারে ড্যামিয়েন, সে-কথা ভেবে? নাকি ড্যামিয়েনকে কোনো কারণে ভয় পায় সে? কোনো সন্দেহ নেই আমার মনে, ড্রামা স্কুলে যখন পরিচয় হয়েছিল ওই দু’জনের, তখন যে-রকম ছিল ড্যামিয়েন, সাফল্য পাওয়ার পর অনেকখানি বদলে গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হয়েছে।
কথা শেষ করে ঘরে ফিরে এল ড্যামিয়েন। ‘দুঃখিত। সবাই কেমন যেন পাগলপারা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহেই শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে আমাদের।’
জেসন কী বলল?’ জানতে চাইল গ্রেস।
‘আমি কবে ফিরছি, জিজ্ঞেস করল। লোকটা একটা বোকা। মাত্র এলাম আমি লন্ডনে, আর অমনি…’ কথা শেষ না-করে থেমে গেল ড্যামিয়েন, তাকাল হাতঘড়ির দিকে। ‘লস অ্যাঞ্জেলসে এখন ভোর পাঁচটা। অথচ ইতোমধ্যেই ট্রেডমিলে চড়ে ব্যায়াম শুরু করে দিয়েছে সে। কথার ফাঁকে ফাঁকে ওই মেশিনের আওয়াজ পেয়েছি।’
‘আপনি কবে ফিরে যাচ্ছেন তা হলে?’ জিজ্ঞেস করল হোথৰ্ন।
‘মায়ের শেষকৃত্যানুষ্ঠান হবে শুক্রবারে। শনিবারে চলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।’
‘ওহ্,’ চেহারা ঝুলে পড়েছে গ্রেসের, ‘আরও কয়েকটা দিন থাকতে পারলে ভালো হতো!’
‘হ্যাঁ, হতো, কিন্তু উপায় নেই।’ আমাদের দিকে তাকাল ড্যামিয়েন। ‘আর কোনো কিছু কি জানতে চাওয়ার আছে আপনাদের?’ বোঝা গেল, অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। ‘আসলে… আর কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাদেরকে, ঠিক বুঝতে পারছি না। যা-যা জানতাম, সবই বলেছি পুলিশকে। আর… একটা কথা বলি… এখন কেন যেন মনে হচ্ছে আমার, মায়ের খুনের তদন্ত মোড় নিচ্ছে অন্য কোনো দিকে।’