‘ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেননি মা… একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’ দেখে মনে হলো, হঠাৎই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ড্যামিয়েন। পকেট হাতড়াচ্ছে সে, ধারণা করলাম সিগারেট খুঁজছে।
নিজের প্যাকেটটা বের করল হোথর্ন, একটা সিগারেট অফার করল ড্যামিয়েনকে।
ওটা নিল ড্যামিয়েন।
ওরা দু’জনে সিগারেট ধরাল।
‘আপনি কি বলতে চাইছেন, মায়ের হত্যাকাণ্ডে হাত ছিল ওই ছেলের?’ বলল ড্যামিয়েন। ‘অথচ পুলিশ একবারও ছেলেটার নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেনি আমার সামনে। পুলিশের ধারণা, কোনো একটা ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে মায়ের বাড়িতে। তখন গড়বড় হয়ে গিয়েছিল কিছু-একটা, ফলে ওই ডাকাত অথবা ডাকাতরা…’ কথা শেষ না-করে থেমে গেল।
‘সেটা পুলিশের ধারণা, মিস্টার ক্যুপার। কিন্তু আমার কাজ হচ্ছে, পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা। যা-হোক, ডিলের সেই ঘটনার ব্যাপারে আমাকে কি কিছু বলতে পারেন?’
‘মানে আমি গাড়ির ভিতরে ছিলাম কি না সেটা জানতে চাইছেন? যিশুর শপথ, গাড়ির ভিতরে ছিলাম না আমি তখন। দেখুন, ঘটনাটা দশ বছর আগের। মা তখন থাকতেন ওয়ালমার নামের একটা গ্রামে… জায়গাটা ডিলের সঙ্গে। সেখানেই জন্মেছি আমি। বাবা মারা যাওয়ার পরও ওখানেই থাকতে চেয়েছিলেন মা। যে- বাড়িতে থাকতাম আমরা, সেটার খুব কদর ছিল তাঁর কাছে। আমার মনে আছে, বিশেষ সেই দুর্ঘটনা যখন ঘটল, তখন ছিল মায়ের জন্মদিন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানে ছিলাম কয়েকটা দিন। কয়েকটা চিত্রনাট্য পড়ছিলাম, ভাবছিলাম কোন্ কাজে হাত দেয়া যায়। দুর্ঘটনাটা যেদিন ঘটল, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। গল্ফ খেলতে গিয়েছিলেন মা। কথা ছিল, সেদিন রাতে একসঙ্গে কোথাও ডিনার করতে যাবো আমরা। কিন্তু মা যখন বাসায় ফিরলেন, তখন তাঁর অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ভুলে চশমা ফেলে এসেছিলেন, আর বাড়ি ফেরার পথে একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন… কাদেরকে যেন চাপা দিয়েছেন। বললেন, বুঝতে পেরেছেন সাংঘাতিক ব্যথা পেয়েছে ওই ছেলেগুলো। কিন্তু ওই দুই ভাইয়ের একজন যে ঘটনাস্থলেই মারা পড়েছে, সে- ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না তাঁর।’
‘গাড়ি থামালেন না কেন তিনি?’
‘এখন আর সত্যি কথাটা বলতে কোনো অসুবিধা নেই, মিস্টার হোথর্ন। কারণ এখন আর মায়ের বিচার করতে পারবেন না আপনি… কেউই পারবে না। … মা তখন গাড়ি থামাননি, কারণ আমার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল তাঁর। আমার ক্যারিয়ার তখন সবে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে… চমৎকার কিছু রিভিউ পেয়েছিলাম আমি হেনরি ফাইভের জন্য, ওটা ব্রডওয়েতে প্রদর্শনের ব্যাপারে কথাবার্তাও চলছিল। মা ধরেই নেন, ওই অবস্থায় যদি খারাপ কোনো খবর ছড়িয়ে পড়ে আমাকে নিয়ে, তা হলে সেটা আমার ক্যারিয়ারের ক্ষতি করবে। আমার কথার মানে এ-ই না, পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না মায়ের। বরং ও- রকম কোনো চিন্তাই করেননি তিনি। আসলে… তিনি সবার আগে কথা বলতে চাইছিলেন আমার সঙ্গে। তা ছাড়া…’
‘কী?’ সামনে ঝুঁকল হোথর্ন।
‘একটা মেয়ে দেখাশোনা করছিল ওই ছেলে দুটোর। সে বলেছে, একই আইসক্রিম শপ দেখতে পায় ওরা, তারপর ছুটে যায় সেদিকে। কিন্তু দোকানটা বন্ধ ছিল তখন। কাজেই আমার মনে হয় না এসবের কোনো মানে আছে। আরেকটা কথা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গিয়েছিল, পরে গায়েব হয়ে যায় লোকটা।’
‘কার কথা বলছেন?’
ছেলে দুটো গাড়ির নিচে চাপা পড়ার পর যে-লোক সাহায্য করার জন্য সবার- আগে ছুটে গিয়েছিল ঘটনাস্থলে, তার কথা। কিন্তু যেইমাত্র পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স হাজির হলো, সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেল সে। পরে আর কেউ কখনও খুঁজে পায়নি তাকে। তার নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। এমনকী সাক্ষ্য দেয়ার জন্য পুলিশের কাছে অথবা আদালতেও হাজির হয়নি লোকটা।’
‘তার মানে আপনি বলতে চাইছেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিলেন না আপনার মা?’
‘না, সে-রকম কিছু বলতে চাইছি না… কিন্তু ওই দুর্ঘটনার পর মা কতখানি মুষড়ে পড়েছিলেন, সেটা যদি দেখতেন! জানেন, দুর্ঘটনার পর থেকে গাড়ি চালানোই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। মন ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। তারপর একসময় বুঝতে পারেন, ওয়ালমারে থাকা আর সম্ভব না তাঁর পক্ষে। দুর্ঘটনার কয়েক মাস পর আমাদের সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন, চলে আসেন লন্ডনে।
বাইরে, অন্য কোনো ঘরে, একটা টেলিফোন বাজছে। উঠে গিয়ে কল রিসিভ করল ড্যামিয়েন, কিছুক্ষণ কথা বলে ফিরে এল।
‘ওই পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল আপনার মায়ের?’ জানতে চাইল হোথর্ন।
‘গডউইন পরিবারের কথা বলছেন?’ আরও একবার অনিশ্চিত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল ড্যামিয়েন। ‘ছিল। তারা কখনোই ক্ষমা করতে পারেনি মাকে। আদালতের সিদ্ধান্তও মেনে নিতে পারেনি। মা মারা যাওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে গেছে ওই ছেলে দুটোর বাবা অ্যালান গডউইন।
‘জানতে পারলেন কী করে?’
‘মা বলেছিলেন আমাকে। ব্রিটানিয়া রোডের যে-বাসায় থাকতেন তিনি, সেখানে গিয়েছিল ওই লোক। বিশ্বাস হয় কথাটা? শুনেছি ব্যবসায় ধরা খেয়েছিল সে, আর সেজন্য টাকা চাইছিল মায়ের কাছে। তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন মা। পরে একটা হুমকি চিঠি পাঠায় সে মাকে। …আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তা হলে বলবো, ব্যাপারটা হয়রানি ছাড়া আর কিছু না। যা-হোক, মাকে পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলাম আমি।’