বিখ্যাত অনেক বইয়ের নাম কিন্তু অন্য কোনো জায়গা থেকে ধার-করা। যেমন ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড, দ্য গ্রেন্স অভ র্যাথ, অভ মাইস অ্যান্ড মেন, ভ্যানিটি ফেয়ার। অন্য কোনো-না-কোনো বই থেকে নেয়া হয়েছে এসব নাম। আগাথা ক্রিস্টি তাঁর বিরাশিটা সাহিত্যকর্মের অনেক বইয়ে ব্যবহার করেছেন বাইবেল, শেক্সপিয়ার, টেনিসন, এমনকী রুবাইয়াত অভ ওমর খৈয়াম-এর কোনো কোনো নাম। আমার মতে, নামকরণের ব্যাপারে ইয়ান ফ্লেমিংকে এখনও হারাতে পারেনি কেউ। কী একেকটা নাম যে ব্যবহার করেছিলেন তিনি… ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ, ইউ অনলি লিভ টোয়াইস, লিভ অ্যান্ড লেট ডাই!
যা-হোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে, হোথর্নকে নিয়ে যে-বই লিখছি অথবা লিখতে যাচ্ছি, সেটার কোনো নাম ঠিক করিনি এখনও। বইটা আদৌ লিখে শেষ করতে পারবো কি না, সে-ব্যাপারে এখনও সংশয় রয়ে গেছে আমার মনে।
হোথর্ন চুপ করে আছে, ডুবে আছে নিজের ভাবনায়। ওকে বিরক্ত করতে ইচ্ছা করছে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। সাঁইসাঁই করে একের পর এক স্টেশন ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে আমাদের টিউব ট্রেন… ওয়েম্বলি পার্ক, সাউথ হ্যাঁম্পস্টিড, বেকার স্ট্রিট। শেষের স্টেশনটা আমাকে মনে করিয়ে দিল শার্লক হোমসের কথা।
‘হোথর্ন ইনভেস্টিগেটস’ কেমন হয়?’ হঠাৎ বলে উঠল হোথর্ন।
‘কী বললেন?’
‘বইটার একটা নাম প্রস্তাব করলাম আর কী।’
আরও লোক উঠেছে ট্রেনে। নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াল হোথর্ন, এগিয়ে এসে বসে পড়ল আমার পাশে। ‘আমি চাই, আমাকে নিয়ে যে-ক’টা বই লিখবেন আপনি, সবগুলোর প্রচ্ছদে আমার নাম থাকবে।’
সে যে কোনো একটা সিরিযের কথা ভাবছে, কল্পনাও করিনি কখনও। বলা বাহুল্য, কথাটা শুনে রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল আমার।
বললাম, ‘নামটা ভালো লাগল না।’
‘কেন?’
‘কারণ নামটা সেকেলে।’
‘তা-ই?’
‘হ্যাঁ। আগাথা ক্রিস্টির একটা বই আছে: পার্কার পাইন ইনভেস্টিগেটস। হেটি ওয়েইনথ্রপ ইনভেস্টিগেটস নামে আরেকটা বই আছে। কাজেই এই নামে বই লেখা হয়ে গেছে একাধিক
ও আচ্ছা। তা হলে অন্য কোনো নাম ভেবে বের করতে হবে আমাকে।’
‘দরকার নেই। বইটা আমি লিখছি। কাজেই নামকরণের দায়িত্বও আমার।’
‘ঠিক আছে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন নামটা যাতে ভালো হয়। …সত্যি বলতে কী… আপনার দ্য হাউস অভ সিল্ক বইয়ের নামটা মোটেও ভালো লাগেনি আমার কাছে।’
কড়া জবাব দিতে যাচ্ছিলাম কথাটার, কিন্তু তার আগেই ইউস্টন স্কোয়ারে পৌঁছে গেল আমাদের ট্রেন। বাদ দিলাম বইয়ের নামকরণের প্রসঙ্গটা, ভাবতে লাগলাম ড্যামিয়েন ক্যুপারকে নিয়ে।
ওই লোকের ব্যাপারে ইতোমধ্যে অল্পবিস্তর জানা হয়ে গেছে আমার… গতকাল রাতে গুগলে সার্চ করে কিছু তথ্য জেনে নিয়েছি।
রাডা, মানে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অভ ড্রামাটিক আর্টের ছাত্র ছিল সে; ১৯৯৯ সালে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। হ্যাঁমিল্টন হোডেল নামের একটা ট্যালেন্ট এজেন্সি তখন বলতে গেলে ছোঁ মেরে তুলে নেয় তাকে। পরের দুই বছর ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে থাকে শেক্সপিয়ার কোম্পানিতে… দ্য টেম্পেস্টে অভিনয় করেছে এরিয়েল হিসেবে, ম্যাকবেথে অভিনয় করেছে ম্যালকম হিসেবে। হেনরি ফাইভে অভিনয় করেছে নাম-ভূমিকায়।
এরপর গিয়ে যোগ দেয় টিভিতে। বিবিসি’র একটা কন্সপাইরেসি থ্রিলার ছিল … স্টেট অভ প্লে, ২০০৩ সালে প্রচারিত হতো সেটা; অভিনয় করে ওই সিরিজে। তারপর অভিনয় করে বিবিসি’র-ই একটা নাটকে, নাম ব্লিক হাউস। এতই চমৎকার হয়েছিল ওর অভিনয় যে, বিএএফটিএ নমিনেশন পেয়েছিল প্রথমবারের মতো। একই বছর দ্য ইম্পর্টেন্স অভ বিইং আর্নেস্ট নাটকের জন্য জিতে নিয়েছিল ইমার্জিং ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড। গুজব আছে, সে নাকি ডক্টর হু নামের একটা নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল, কারণ ততদিনে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে ওর। পর পর দুটো সিনেমায় অভিনয় করে ফেলল: ম্যাচ পয়েন্ট এবং প্রিন্স ক্যাস্পিয়ান ২০০৯ সালে পাড়ি জমায় হলিউডে। ম্যাড মেন-এর দুটো সিজনে অভিনয় করে সেখানে গিয়ে। তারপর সুযোগ পেয়ে যায় হোমল্যান্ড-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার। মিসেস ক্যুপার যখন মারা গেলেন, সে-সময় নাগাদ শুরু হওয়ার কথা ছিল ওই সিরিযের শুটিং।
ব্রিক লেনে দুই বেডরুমের যে-ফ্ল্যাটে থাকে সে, সেটা কবে নাগাদ কিনেছে, সে-ব্যাপারে আসলে নিশ্চিত না আমি। তবে এটা জানি, লন্ডনে যখন আসে, তখন ওখানেই গিয়ে ওঠে।
জায়গামতো হাজির হলাম আমি আর হোথর্ন। একটা গুদামের দ্বিতীয় তলায় বানানো হয়েছে ওই ফ্ল্যাট। ডাবল হাইটের লিভিংরুমটা দেখামাত্র কেন যেন মনে হলো আমার, এটা কোনো টেলিভিশন সেটের মতো মেকি। আলাদা রান্নাঘরের বদলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টাইলের কিচেন স্টেজ আছে। একটা সিটিং এরিয়া আছে, সেখানে আগের দিনের কিছু চামড়ার সোফা আছে। একটা কফি টেবিল ঘিরে আছে কয়েকটা আর্মচেয়ার। কাঁচের একটা দরজা দেখতে পাচ্ছি, ওটা দিয়ে বের হলে রুফ টেরেসে হাজির হওয়া যাবে। আরেক কোনায় দেখতে পাচ্ছি পোড়ামাটির কিছু পাত্র আর একটা গ্যাস বারবিকিউ। দূরের একদিকের দেয়াল ঘেঁষে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে একটা উরলিটজার জুকবক্স। আরেকদিকের দেয়াল ঘেঁষে একটা প্যাঁচানো সিঁড়ি উঠে গেছে উপরতলায়।