- বইয়ের নামঃ দ্য ওয়ার্ড ইয মার্ডার
- লেখকের নামঃ অ্যান্টনি হরোউইটয
- প্রকাশনাঃ চিরকুট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
দ্য ওয়ার্ড ইয মার্ডার
০১. শেষকৃত্যের পরিকল্পনা
দ্য ওয়ার্ড ইয মার্ডার – অ্যান্টনি হরোউইটয
রূপান্তর : সায়েম সোলায়মান
প্ৰথম প্ৰকাশ আগস্ট ২০২০
১. শেষকৃত্যের পরিকল্পনা
বসন্তের উজ্জ্বল এক সকাল। ঘড়িতে মাত্র এগারোটা বেজেছে। প্রায় সাদা সূর্যের- আলো যেন প্রতিজ্ঞা করেছে, আজ এমন এক উষ্ণতা বিলিয়ে দেবে, যা সচরাচর দেয় না। ফুলহ্যাম রোড পার হলেন ডায়ানা ক্যুপার, গিয়ে ঢুকলেন ফিউনারেল পার্লারে।
বেঁটেখাটোই বলা চলে তাঁকে। কাজের মানুষ বলতে যা বোঝায় ঠিক যেন সে- রকম। স্থির সংকল্পের ছাপ আছে দুই চোখে, রূঢ়ভাবে কাটানো চুলে, এমনকী হাঁটাচলার ভঙ্গিতেও। কেউ যদি তাঁকে হেঁটে আসতে দেখে, তা হলে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াবে… চলে যেতে দেবে। তারপরও তাঁকে দেখলে দয়া-মায়াহীন বলে মনে হয় না। তাঁর বয়স ষাটের ঘরে। চেহারা মনোরম, গোলাকার। পরনের কাপড় দামি। ফেকাসে রেইনকোটের ভিতরে দেখা যাচ্ছে গোলাপি জার্সি আর ধূসর স্কার্ট। পুঁতি আর পাথর দিয়ে বানানো ভারী একটা নেকলেস গলায়। ওটা দামি হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। কিন্তু হীরার যে-ক’টা আংটি পরে আছেন তিনি, সেগুলো নিঃসন্দেহে মূল্যবান
ফিউনারেল পার্লারটার নাম কর্নওয়ালিস অ্যান্ড সন্স। একটা টেরেসের শেষপ্রান্তে অবস্থিত ওটা। বিল্ডিঙের সামনের দিকে এবং পাশে ক্ল্যাসিকাল ফন্টে পেইন্ট-করে লেখা আছে নামটা; ফলে কোনো পথচারী যে-কোনো দিক দিয়েই আসুক না কেন, দেখতে পাবে ওই নাম। ‘কর্নওয়ালিস’ আর ‘সন্স’ শব্দ দুটো যাতে একত্রিত হতে না-পারে সেজন্য ও-দুটোর মাঝখানে, সদর-দরজার উপরে বসিয়ে দেয়া হয়েছে ভিক্টোরিয়ান একটা ঘড়ি। চলছে না ঘড়িটা… মাঝরাতের ঠিক এক মিনিট আগে, মানে ১১:৫৯ বেজে থেমে আছে।
নামটার ঠিক নিচে লেখা আছে:
Independent Funeral Directors:
A Family Business since 1820.
বাড়ির তিনটা জানালা মুখ করে আছে রাস্তার দিকে। দুটোতে পর্দা ঝুলছে। তৃতীয়টায় পর্দা নেই, তবে সেটার পাশের দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে কারও উদ্ধৃতি: মানুষের জীবনে দুঃখ যখন আসে, একাকী কোনো গুপ্তচরের মতো আসে না, বরং বিশাল এক বাহিনীর মতো আসে। বাড়ির সব কাঠ… জানালার ফ্রেম, সামনের দিক, সদর-দরজা… গাঢ় নীল আর হালকা কালো রঙে রঞ্জিত।
সদর দরজাটা খুললেন মিসেস ক্যুপার। দরজার পুরনো ধাঁচের স্প্রিং মেকানিযমের সঙ্গে যুক্ত একটা ঘণ্টা বেজে উঠল জোরে, একবার। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলেন, ছোট একটা রিসিপশন এরিয়ায় হাজির হয়েছেন। একধারে দেখা যাচ্ছে দুটো সোফা, নিচু একটা টেবিল, আর বইয়ে-ঠাসা কয়েকটা শেল্ফ। যেসব বই শুধু সাজিয়ে রাখা হয় কিন্তু পড়া হয় না, সেগুলোয় একজাতের দুঃখী-দুঃখী ভাব থাকে; ওই বইগুলোতেও সে-রকম একটা ভাব আছে। আরেকদিকে দেখা যাচ্ছে সিঁড়ি– উপরতলায় গেছে। অনতিদূরে যেন বিছিয়ে আছে সরু একটা করিডর।
মিসেস ক্যুপারের উপস্থিতি টের পাওয়ামাত্র হাজির হলো এক মহিলা। স্থূল শরীর তার, পা দুটো মোটা আর ভারী, পরনে কালো চামড়ার জুতো… সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। স্নিগ্ধ আর বিনয়ী হাসি দেখা যাচ্ছে চেহারায়। সেই হাসি যেন নিঃশব্দে বলে দিচ্ছে, পলকা আর কষ্টকর একটা ব্যবসা পরিচালনা করা হয় কর্নওয়ালিস অ্যান্ড সন্স-এ, তবে সুস্থিরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে করা হয় কাজটা। মহিলার নাম আইরিন লয। রবার্ট কর্নওয়ালিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট। একইসঙ্গে কাজ করছে রিসিপশনিস্ট হিসেবে।
‘গুড মর্নিং,’ বলল সে। ‘আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’
‘হ্যাঁ,’ বললেন মিসেস ক্যুপার। ‘আমি একটা শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাই।’
‘সম্প্রতি মারা গেছেন, এমন কারও পক্ষে কি এখানে এসেছেন আপনি?’
‘না। আমি আসলে আমার জন্যই এসেছি।’
‘ও আচ্ছা।’ চোখ পিটপিট করেনি আইরিন লয… করবেই বা কেন? নিজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না… অনেকেই চায়। ‘আপনার কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?’
‘না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট যে করতে হবে, জানা ছিল না।’
‘আমি তা হলে দেখে আসি মিস্টার কর্নওয়ালিস ফ্রি আছেন কি না। প্লিয… বসুন। চা বা কফি কিছু খাবেন?’
‘না, ধন্যবাদ।’
বসলেন ডায়ানা ক্যুপার। করিডর ধরে অদৃশ্য হয়ে গেল আইরিন লয। ফিরে এল কয়েক মিনিট পর। তার পেছনে দেখা যাচ্ছে একজন লোককে। ফিউনারেল ডিরেক্টরদের মতো কালো স্যুট আর কালো টাই পরে আছে ওই লোক। কিন্তু এমন একটা ভাব খেলা করছে তার চেহারায় যে, দেখলে মনে হয়, এখানে থাকার কারণে নিঃশব্দে ক্ষমাপ্রার্থনা করছে যেন। গভীর অনুশোচনার ভঙ্গিতে একহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে আরেক হাত। কিছুটা কুঁচকে আছে চেহারাটা, বিষাদের ছাপ পড়েছে সেখানে। পাতলা হয়ে-আসা চুল যদি আরও ঝরে যায় তা হলে টেকো হয়ে যাবে সে। দাড়ি আছে, তবে দেখলে মনে হয় পরীক্ষামূলকভাবে রেখেছে সেটা এবং সে- পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। রঙিন কাঁচের চশমা যেন চেপে বসেছে নাকের উপর, চোখ দুটো আড়াল করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা। লোকটার বয়স চল্লিশের মতো। আইরিনের মতো সে-ও হাসছে।