আমি জানতাম বামপন্থী দলের লোকেরা আমাদের বাধা দেবে। আমাদের জনসভা পণ্ড করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু আজ হোক বা কাল হোক এটার সম্মুখীন তো হতে হবে। এড়িয়ে গেলে চলবে না। সুতরাং জনসভার অনুষ্ঠান করতে হবেই। তাছাড়া যখন আমরা প্রথম আন্দোলনে নামি, তখন আমরা সগ্রামের মধ্যে নিজেদের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্পই করেছিলাম। আমাদের সভাপতি বীরের মত আমার প্রস্তাবের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা না করে সভাপতি পদ ত্যাগ করে চলে যায়। পরবর্তী সভাপতি ডেস্কনার আমার প্রচারের কাজে কোন বাধা দেয় না। আমরা ১৯২০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি জনসভার দিন ধার্য করি।
যেহেতু আমার ওপর প্রচারের সব ভার ছিল, আমি জনসভার জন্য আনুসঙ্গিক এবং আবশ্যকীয় সব প্রস্তুতি করতে থাকি। চারিদিকে পোস্টার দেওয়া হয়। পুস্তিকা এমনভাবে লিখি যাতে তা জনগণের মনকে সহজে আকৃষ্ট করে। এতসব করার পর আমরা এর ফল কি হয় তার প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করতে থাকি।
আমরা দলের পতাকা ও কাগজপত্রে সব ব্যাপারে লাল রঙ ব্যবহার করতে লাগলাম। তখন ব্যাভেরিয়ার ন্যাশানাল পিপলস পার্টি সরকারে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও তাদের সঙ্গে মার্কসবাদীদের আঁতাত ছিল। তাই মার্কসবাদীদের প্ররোচনায় পুলিশ রাস্তা থেকে আমাদের অনেক প্লাকার্ড বাজে অজুহাতে সরিয়ে দিল। তবু আমরা প্রচার চালিয়ে যেতে লাগলাম। তবে ব্যাভেরিয়া সরকারের অধীনে কর্মরত পুলিশের কর্মকর্তা আর্নেষ্ট পয়গর ও ডক্টর ডিক মনেপ্রাণে জাতীয়তাবাদী ছিল।
জনসভার একমাস আগেই প্রয়োজনীয় টাকাপয়সার জোগাড় হয়ে যায়। মিউনিকের এক বিরাট হলে জনসভা অনুষ্ঠিত হল। সভার কিছুক্ষণ আগে আমি গিয়ে দেখি সমস্ত হল লোকের ভিড়ে ভরে গেছে। প্রায় ছ’হাজার লোক সভায় যোগদান করেছে। সভায় প্রথম বক্তার পর আমি বক্তৃতা দিতে উঠতেই এক বাধার সম্মুখীন হই। সভার একদিকে একজন লোক ঝটিতি উঠে এসে বারে বারে আমার বক্তৃতায় বাধা দিতে থাকে। কিন্তু সভার লোক তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তাকে হল থেকে বার করে দেয়। আমি বক্তৃতা দিতে থাকি আবেগের সঙ্গে। আমার আবেগময় বক্তৃতা এক উত্তপ্ত উত্তেজনার মধ্যে শ্রোতারা শুনতে লাগল। মনে হল তারা যেন নতুন বিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। এক কঠিন সংকল্প ফুটে উঠেছে তাদের মুখে।
চার ঘণ্টা পর উল্লসিত জনতা যখন সভাগৃহ ছেড়ে যেতে লাগল তখন আমি বেশ বুঝতে পারলাম জার্মানিতে এক বিপ্লব সংগঠিত হতে চলেছে।
বুঝতে পারলাম বিপ্লবের আগুন জ্বলে উঠেছে। সে আগুনের আঁচে সেই সগ্রামের অস্ত্রগুলো শাণিত হচ্ছে, যে সংগ্রাম নবজীবন আনবে সমগ্র জার্মান জাতির মধ্যে। বুঝলাম প্রতিহিংসার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ১৯১৮ সালের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিতে চলেছে।
দেখতে দেখতে হলঘর শূন্য হয়ে গেল। তবু মনে হল বিপ্লবের অদৃশ্য রথ জয়যাত্রার পথে এগিয়ে চলেছে।