কিন্তু তখন আমাদের সভার সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল কমিউনিস্টরা। প্রথম প্রথম কমিউনিস্টরা আমাদের সভাকে বুর্জোয়াদের সভা বলে গ্রাহ্য করত না। পরে আমাদের সভার ক্রমবর্ধমান সাফল্য দেখে আমাদের সভা বসতে বসতেই তা ভেঙে দেবার চেষ্টা করত।
প্রথম প্রথম তাদের দেখলেই আমাদের সভার দর্শকেরা পালিয়ে যেত। তারা কিছু করলেও ভয় পেত। পরে দেখা গেল তারা আমাদের সভাতে কোনরকম যোগদান করতে এলেই আমাদের সভার দর্শকরাই তাদের প্রতিহত করত সঙ্গে সঙ্গে।
আমাদের সভায় যখন একশো সত্তর জন লোক যোগদান করল তখন আমি আরো বড় হলে সভা করার প্রস্তাব দিলাম। আমি এক সভায় বললাম যে শহরে সাত লক্ষ লোক বাস করে, সেখানে সপ্তাহে একটা করে সভা করা যায়। আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের পথের সামনে পর্বতপ্রমাণ বাধা বিপত্তি সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারব।
সভার লোকসংখ্যা ক্রমশই বাড়তে লাগল। দুশো থেকে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল বারশোতে। মাত্র পনেরো দিনের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় আমাদের আন্দোলন তার অন্তর্নিহিত শক্তির জোরে উদ্দাম হয়ে ওঠে। তবে এ সময় কিছু লোক আমাদের আন্দোলনকে এক রাজনৈতিক দল বলে অভিহিত করতে থাকে। আমি বুঝলাম একথা সেই সংকীর্ণমনা সমালোচকের দল বলছে যারা কোন আন্দোলনের বহিরঙ্গের শক্তি আর তার অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারে না। এটা তাদের বোঝানো কঠিন হয়ে উঠল যে কোন আন্দোলন যতদিন না তার আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে সফল করে তুলতে পারে ততদিন তা পার্টি হিসেবেই কাজ করে। যখন কোন লোক জনগণের মঙ্গলের কোন মৌলিক আদর্শকে রূপায়িত করে তুলতে চায়, তখন সে তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কিছু সমর্থক ও ভাবশিষ্যের সন্ধান করে। তখন সেই আদর্শের স্রষ্টা এবং নেতা তার সমর্থক ও শিষ্যদের কর্মপ্রচেষ্টা একটি পার্টির রূপ নেয়। কিন্তু পার্টি সংগঠন তাদের মূল লক্ষ্য নয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হল আদর্শের রূপায়ণ। তাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত এ পার্টির উদ্দেশ্য বজায় থাকবে। কিন্তু মানুষ তাদের অতীতের সংকীর্ণ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে কার্য তৎপরতাকে পার্টির নাম দেয়।
এ সময় আমি আমার সমর্থকদের আর একটা বিষয়ে সতর্ক করে দেই। যাতে বাজে কোন লোক আমাদের দলে ঢুকে পড়ে আন্দোলনকে বানচাল করে দিতে না পারে তার জন্য সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমি বলি এমন কিছু লোক আসবে যাদের আসলে কোন যোগ্যতা নেই অথচ যারা মুখে বলে বেড়াবে তারা চল্লিশ বছর ধরে এ একই আদর্শ রূপায়ণের জন্য চেষ্টা করে আসছে, সংগ্রাম করে আসছে। আমার বক্তব্য যদি কোন লোক চল্লিশ বছরে চেষ্টা করেও কাজ সফল করে তুলতে না পারে, তাহলে বুঝতে হবে সে লোক সেই কাজে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। কোন লোক চল্লিশ বছর ধরে এক খামার বানিয়ে যদি সে খামারের উন্নতি সাধন করতে না পারে, ভাল ফসল ফলাতে অক্ষম হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে লোক অযোগ্য। এ ধরনের লোকের কোন প্রয়োজন নেই আমাদের। তবে অবশ্য তাদের মধ্যে খুব কম লোকই নিঃস্বার্থভাবে নতুন আন্দোলনে যোগ দিয়ে কাজ করতে আসবে। তারা শুধু অতীতের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে বর্তমানের সব সমস্যার সমাধান করতে চায়। আসলে তারা ভীরু, মুখে বীরত্বের ভাণ করলেও কার্যক্ষেত্রে ভয়ে পালিয়ে যায়।
কিন্তু যেসব ইহুদী এক স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে চায় তাদের কাছে ঐসব হাসির নায়কদের দাম আছে। তারা কিছু না জেনেও সব জানার ভাণ করে। এসব তথাকথিত নায়কদের মধ্যে আবার দু’শ্রেণীর লোক আছে। একজন অলস অকর্মণ্য, তারা কিছুই করতে চায় না। তাদের কোন বিশেষ উদ্দেশ্য বা আদর্শ নেই। কিন্তু আর একজনের এক বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তারা ধর্মসংস্কারের নামে রাজনৈতিক আন্দোলনের সব কর্মতৎপরতা ও সংগ্রামকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। তাদের কাছে জাতীয়তাবাদের কোন মূল্য নেই। জাতীয়তাবাদের আদর্শের পতাকাতলে সমবেত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জার্মানির জনগণ লড়াই করে যাবে একটা তারা চায় না!
আমরা এসব লোককে বলতাম জনতা। আমরা দলের মধ্যে এ জনতার অনুপ্রবেশ একেবারে বন্ধ করার জন্য আমাদের দলের নামকরণ করলাম ন্যাশনালিস্ট সোশ্যালিস্ট জার্মান লেবার পার্টি।
আমাদের দলের এ নামকরণ শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাচালের দল পেছনে লাগল। কুৎসা রটনা করতে লাগল। কিন্তু তাদের ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ তাদের যা কিছু লড়াই তা শুধু কথার। আমরা আমাদের শত্রুদের সতর্ক করে প্রকাশ্য ঘোষণা করি আমাদের ওপরে যারা জোর করতে আসবে, আমরাও তাদের ওপর জোর করব।
আর এক ধরনের শক্রর সম্পর্কেও আমি সাবধান করে দিলাম আমাদের দলের লোকদের। একদল লোক আছে যারা নিজেদের নীরব কর্মী বলে প্রচার করার চেষ্টা করে, অথচ আদতে তারা অলস অপদার্থ। তারা নিজেরা কাজ না করে শুধু অপরের কাজের সমালোচনা করে। যারা কাজের লোক তাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে। আমাদের জাতীয় পুনর্গঠনের কাজকে তরান্বিত করতে হলে এসব ভদ্র তথাকথিত নীরব কর্মীদের সম্পর্কে সব সময়ে সচেতন থাকতে হবে।
১৯২০ সালের প্রথমদিকে আমি এক প্রকাশ্য বিরাট জনসভা আহ্বান করার কথা বলি। বামপন্থী সংবাদপত্রগুলো আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে লাগল আমি বলি যে এটা ভাল লক্ষণ। আমাদের বিরোধীপক্ষরা যত আমাদের সঙ্গে পারছে না, ততই আমাদের নাম প্রকারান্তরে প্রচারিত হচ্ছে। জনসাধারণ আমাদের দলের নামের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠছে। এতে আমাদের সুবিধাই হবে।