নেতা হবার প্রবল বাসনাই কোন নেতার একমাত্র গুণ নয়। সঙ্গে চাই ইচ্ছাশক্তি আর উদ্যম। প্রতিভা, সংকল্প আর অধ্যবসায়, এ তিনটি গুণের সমন্বয় যেকোন নেতার চরিত্রে একান্ত দরকার।
(১২) আন্দোলনের ভবিষ্যত নির্ভর করে দলের সদস্যদের আদর্শ, নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং উদ্যমের ওপর। তাদের এটা সব সময় ভাবতে হবে যে তারা ন্যায়সঙ্গত কারণেই লড়াই করছে।
অনেকে মনে করে একটি আন্দোলন অনুরূপ ধরনের আর একটি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু তাতে আন্দোলনের আয়তনটা বাড়তে পারে লোকচক্ষে। গুণগত মান তাতে বাড়বে না। বরং তার সাংগঠনিক শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোন আন্দোলন তখনই বড় হতে পারে যখন তার অন্তনিহিত শক্তিটি অব্যাহতভাবে বেড়ে যায় এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
সুতরাং আমরা নিরাপদে এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে কোন আন্দোলনের উন্নতির জন্য সংগ্রাম দরকার। এবং কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত শক্তিই কোন আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য দান করতে পারে। কোন আন্দোলন কখনো ক্ষণস্থায়ী বা মোটামুটি ধরনের জয় বা সাফল্য কামনা করে না। প্রতিটি আন্দোলনের লক্ষ্য হবে দীর্ঘ সগ্রামের মধ্য দিয়ে এক স্থায়ী জয়ের গৌরব লাভ করা। একটি আন্দোলনের সঙ্গে অন্য একটি আন্দোলনকে যুক্ত করা আর একটি চারাগাছকে গবেষণাগারে রেখে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো একই কথা। কৃত্রিমভাবে বাড়ানো এ গাছ কখনই স্বাভাবিক গাছের মত সেই অন্তনিহিত শক্তি অর্জন করতে পারে না, যে শক্তির জোরে কোন স্বাভাবিক গাছ যুগ যুগ ধরে সমস্ত ঝড় ঝঞার প্রকোপকে সহ্য করতে পারে।
(১৩) আন্দোলনের কর্মকর্তারা দলের সদস্যদের এ শিক্ষাই দেবে যে যুদ্ধ মানেই অভিশাপ বা কোন অশুভ শক্তি নয়। তাদের অস্তিত্বকে সুদূর এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে যুদ্ধের প্রয়োজন আছে। সুতরাং শত্রুদের শক্রতার ভয়ে তারা ভীত হবে না; বরং সেই শক্রতাকে বরণ করে নিয়ে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারা জয়ের পথে এগিয়ে যাবে।
আন্দোলনকারীদের সব সময় একথা মনে রাখতে হবে যে ইহুদীদের পত্রিকাগুলো তাদের বিরুদ্ধে সর্বদা মিথ্যা ও কুৎসা রটনা করে যাবে। মিথ্যাবাদী ইহুদীদের একমাত্র। অস্ত্রই হল মিথ্যা আর ছলনা।
(১৪) ব্যক্তিগত প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বের প্রতি যাতে উপযুক্ত শ্রদ্ধা দেখানো হয়, তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবে আমাদের আন্দোলন। মানবিক মূল্য বলতে যা বোঝায় তা হল ব্যক্তিগত সৃষ্টিশীল শক্তির ফল। শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সামরিক শক্তি ও বীরত্ব প্রভৃতি বিষয়ে যারা যশ অর্জন করেছে তাদের কোন বিকল্প নেই। কোন বিখ্যাত শিল্পী একটি ছবি আঁকতে তাঁর আরদ্ধ কাজ ফেলে রাখলে সে কাজ তার কোন শিষ্য বা ছাত্র তা শেষ করতে পারে না। পৃথিবীর বড় বিপ্লব, সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উন্নতি, রাজনীতিবিদদের শ্রেষ্ঠ কীর্তি, মানুষের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব সব একক মানুষের অবদান।
ইহুদীরাও এটা ভালভাবে জানে; তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি তারাই যারা মানবজাতি ও মানব সভ্যতা ধ্বংস করতে পারদর্শী।
মানুষের অন্তরাত্মা যখন মাঝে মাঝে নিবিড়তম হতাশায় ভেঙে পড়ে, যখন মানুষের মন সামনের দিকে এগিয়ে চলার কথা ভুলে গিয়ে অতীতের ছায়ার আশ্রয় নেয়, তখন এক একজন প্রতিভাধর পুরুষ এসে তাদের মনে অফুরন্ত উৎসাহ সঞ্চার করে তাদের পিছিয়ে যাওয়া মনকে আবার অগ্রগতির পথে ঠেলে দেয়।
আমাদের কেউ চিনত না। আমাদের এ আন্দোলনের ভবিষ্যত উজ্জ্বল এ বিশ্বাসকে আমরা ধর্মবিশ্বাসের মত আঁকড়ে ধরে থাকতাম। কিন্তু তখন আমাদের পার্টি মিটিংয়ে মোটেই লোক হত না। আমি যখন এ পার্টিতে ভর্তি হই, তখন আমাদের পার্টি মিটিংয়ে মোটে সাত আটজন লোক যোগদান করত।
এরপর আমরা ঠিক করি প্রতি মাসে একটা করে আমরা সাধারণ সভা করব। সেই সভার জন্য আমরা টাইপ করে ও হাতে লিখে অনেক নিমন্ত্রণপত্র ছড়ালাম। যে যার পরিচিত লোকদের সঙ্গে দেখা করে অনেক নিমন্ত্রণপত্র বিলি করা হল। কিন্তু এত কিছু করা সত্ত্বেও সেই সাতজনের বেশি একজনও এলো না।
এরপর টাইপ করে আরো নিমন্ত্রণপত্র ছড়ালাম। লোকসংখ্যা বাড়তে বাড়তে তিরিশে গিয়ে দাঁড়াল। এরপর আমরা ‘মিউনিক অবজারভার’ নামে এক নিরপেক্ষ পত্রিকায় আমাদের মাসিক সভার জন্য বিজ্ঞাপন দিলাম। মিউনিকের এক বড় হল ঘরে সভা হল। দেখা গেল একশো এগারো জন লোক সেই সভায় যোগদান করেছে। একজন অধ্যাপক প্রথমেই সেই সভায় বক্তৃতা করলেন। আমাকে বক্তৃতা দেবার জন্য সভাপতি মাত্র কুড়ি মিনিট সময় দিয়েছিল। আমি মোট তিরিশ মিনিট বক্তৃতা করলাম। জীবনে আমার সেই প্রথম বক্তৃতাতেই আমি অপ্রত্যাশিত ভাবে সাফল্য লাভ করেছিলাম। শ্রোতাদের মনে আমার বক্তৃতা গভীরভাবে রেখাপাত করে। দর্শকদের কাছে চাঁদা বা অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন জানাতে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তিনশো মার্ক লাভ করি। তাতে আমরা পার্টি ফাণ্ড গড়ে তুলি। অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে পার্টির জন্য পুস্তিকা ছাপা ও সেগুলো বিলি করার ব্যবস্থা করি।
এ সভার সাফল্যের ফলে আমরা বেশ কিছু লোককে আমাদের দলে সদস্য হিসেবে পেয়েছিলাম। এ সময় সাধারণ মানুষকে আবেগময় ভাষায় বোঝাবার মত লোক ছিল না আমাদের পার্টিতে। আমাদের দলে যে অধ্যাপক ভদ্রলোক ছিলেন তিনি সাধারণ মানুষের সামনে ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন না। অবশেষে সে ভার আমাদের কাঁধের ওপর এসে পড়ে।