আমাদের আন্দোলনকে সফল করে তুলতে হলে এবং জার্মান শ্রমিকশ্রেণীকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হলে দেশের শিল্পপতিদের বিরুদ্ধেও এক প্রচারকার্য চালাতে হবে। তাদের কতগুলি ভুল ভাঙাতে হবে। শিল্পপতিদের মধ্যে সাধারণত এ ধারণা প্রচলিত আছে যে মালিকদের কাছে শ্রমিকদের সবসময় নত হয়ে চলতে হবে। শ্রমিকদের সব অর্থনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। সব সুযোগ সুবিধার দাবি ত্যাগ করতে হবে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শিল্পপতিদের আর একটি ভুল ধারণা হল এ যে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য যতই তৎপর ও সংগ্রামশীল হয়ে ওঠে, ততই তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে।
অবশ্য একথা ঠিক শ্রমিকেরা যদি কোন অলৌকিক দাবি উত্থাপন করে অথবা অসম্ভব কিছু চেয়ে বসে তবে তারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধাচারণ করে। তখন তারা জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তিটাকেই ধ্বংস করে দিতে চায়। কিন্তু শিল্পপতি ও মালিক পক্ষকেও একথা মনে রাখতে হবে যে তারা যদি শ্রমিকদের শোষণ করার জন্য কোন অমানবিক পদ্ধতি গ্রহণ করে, যদি শ্রমিকদের ন্যায্য সুযোগ সুবিধা না দেয়, তাহলে তারা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধাচারণ করে। সেক্ষেত্রে তাকে কোন ক্রমেই জাতীয়তাবাদী বলা যায় না, কারণ তখন কেউ জাতির দেহে অনৈক্য ও অসন্তোষের বীজ বপন করে।
বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যদি এমন কোন লোক থাকে যারা মনেপ্রাণে জাতীয়তাবাদী এবং দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে শ্রমিকশ্রেণীর দায়িত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম, তাদের অবশ্যই আমাদের সংগঠনের সদস্য করে নিতে হবে। কিন্তু বুর্জোয়ারা যদি তাদের প্রথাগত শ্রেণীচরিত্র না বদলায় তাহলে কোন মতেই তাদের মধ্যে থেকে কোন সদস্য নেওয়া চলবে না। বুর্জোয়াদের সামাজিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই পাল্টাতে হবে।
মোট কথা আমরা কোনক্রমেই আমাদের জাতীয়তাবাদী নীতি বা কর্মপদ্ধতির কোন পরিবর্তন করব না; বরং যারা অ-জাতীয়তাবাদী বা জাতীয়তাবাদী বিরোধী তাদের যথাসম্ভব দলে টানার চেষ্টা করব। অবশ্য আমাদের আন্দোলন ও মিছিল বুর্জোয়াদের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটাবে।
(৭) প্রচার আন্দোলনের এক বিশেষ অঙ্গ। কিন্তু প্রচারকার্যকে ফলপ্রদ করে তুলতে হলে দেখতে হবে প্রচার যেন সবসময় একমুখী হয়। যখন যেখানে কোন প্রচারমূলক বক্তৃতা দেওয়া হবে তখন দেখতে হবে সে বক্তৃতা যেন শ্রমিকশ্রেণী অথবা বুদ্ধিজীবীকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়। কারণ যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে বুদ্ধিজীবীদের সামনে বক্তৃতা দেওয়া হয়, তা’ শ্রমিকশ্রেণীর লোকেরা বুঝতে পারবে না। আবার যে ভাষায় শ্রমিকশ্রেণীর লোকেদের সামনে বক্তৃতা দেওয়া হবে তা বুদ্ধিজীবীরা পছন্দ করবে না। দেশের মধ্যে এমন বাগ্মী খুব কমই আছে যিনি আজ মেথর, কামার, মিস্ত্রী প্রভৃতি শ্রেণীর লোকদের কাছে সাফল্যের সঙ্গে বক্তৃতা দেবার পর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রদের সামনে অনুরূপ সাফল্যের সঙ্গে বক্তৃতা দিতে পারবেন। এখানে কোন নতুন ভাবাদর্শ সৃষ্টি বা বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজন নেই। এখানে দরকার হল প্রকল্পিত ভাবধারাটি সাধারণ মানুষের মনে সহজভাবে তুলে ধরা।
সামাজিক গণতন্ত্র মার্কসবাদী আন্দোলন বা আদর্শ প্রভৃতি কথাগুলো শ্রমিকদের সহজেই আকর্ষণ করে। কারণ কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা সহজেই এসব কথা বুঝতে পারে। এবং যাদের কাছে এসব কথা বলা হয় তারা সবাই একই মনোভাবাপন্ন।
বক্তৃতার প্রকাশভঙ্গি এমন হতে হবে যা সহজেই সাধারণ জনগণের বুদ্ধির স্তরে পৌঁছতে পারে। যে বিরাট জনসভায় সাধারণ জনগণ সমবেত হয়, সেখানে এমন বক্তার দরকার যিনি জনগণের হৃদয় জয় করতে পারেন। সে সভায় উপস্থিত যদি কোন শিক্ষিত ভদ্রলোক সে বক্তৃতা শুনে তা অপছন্দ করে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের এ নতুন আদর্শের পক্ষে সে একেবারে অযোগ্য। যেসব শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সাধারণ জনগণের ওপর প্রভাবের পরিমাণ দেখেও অনুকূল প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসব বক্তৃতার গুণাগুণ বিচার করে, তারাই আমাদের আন্দোলনের পক্ষে উপযুক্ত ব্যক্তি। আমাদের বক্তৃতার উদ্দেশ্য যারা জাতীয়তাবাদী নয় তাদের জাতীয়তাবাদী করে তোলা। যারা এমনিতেই জাতীয়তাবাদী তাদের জন্য এ বক্তৃতা নয়।
‘যুদ্ধপ্রচার’ এ অধ্যায়ে আমি প্রচারের নীতি ও নিয়মকানুনগুলি এবং ভঙ্গিমা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি বিশদভাবে। সেগুলির সাফল্য এ কথাই প্রমাণ করে যে সেগুলো ঠিক।
(৮) কিন্তু জনগণকে কোন বিষয়ে শিক্ষিত ও দীক্ষিত করে ভোলাই কোন রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য নয়। যে সব ভাবধারা জগতে পরিবর্তন আনতে চায়, সেই সব ভাবধারার বাস্তব রূপায়ণের জন্য এক সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতিরও প্রয়োজন হয়। কোন সামরিক অভ্যুত্থান বা কোনভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল কখনই এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য নয়। এ আন্দোলনের একমাত্র উদ্দেশ্য হল জনগণের স্বার্থরক্ষা করা এবং তাদের সর্বতভাবে জাতীয়তাবাদী করে তোলা।
(৯) আমাদের নব আন্দোলনের অন্তনিহিত গঠন প্রকৃতি হল অ-সংসদীয়। যে সব সাংগঠনিক নীতির বলে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত এবং নেতারা সাধারণের জীবনে এটা রূপায়িত করে তোলে মাত্র, সেই সব নীতি আমাদের এখানে প্রত্যাখ্যাত। আমাদের সাংগঠনিক নীতি হল ছোটবড় যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে মাত্র একজন পূর্ণ প্রভূত্ব সহকারে সকল দায়িত্ব পালন করবে।