অথচ আমাদের দেশের বামপন্থীরা বলে দেশে অন্ত্র না থাকার জন্যই তারা এ বৈদেশিক নীতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু আসলে এ নীতি বিশ্বাসঘাতকতার নীতি। একথা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। মিথ্যা স্তোকবাক্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুলিয়ে রাখার ছলনামাত্র।
আমাদের দেশের দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদরাও কম দায়ী নয়। তারাও একই ভৎসনার যোগ্য। তাদের শোচনীয় কাপুরুষতার জন্য ১৯১৮ সালে ইহুদীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। এবং ক্ষমতায় আসার পর তারা জাতিকে নিরস্ত্র করে তোলে। তাদের দোষের জন্যই জার্মানি অস্ত্রহীন হয়।
সুতরাং জার্মানির জাতীয় শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে শুধু কারখানায় অস্ত্র নির্মাণ করলেই হবে না, জাতীয় আত্ম-সংরক্ষণ প্রবৃত্তিকে নতুন করে সঞ্জীবিত করে তুলতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন রাষ্ট্রের কৃতিত্ব বা যোগ্যতা শুধু অস্ত্রের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে জাতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ বাসনায় আর বীরত্বপূর্ণ সাহসের ওপর।
এদিক দিয়ে বৃটিশ জাতির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বৃটিশ জাতির মধ্যে একই সঙ্গে সরকারের নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা আর জনগণের শক্তি ও সাহস লক্ষ্য করার মত। সরকারের দৃঢ়তা জনগণের শক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ বাসনা অন্যান্য জাতির তুলনায় অন্ত্রের স্বল্পতা সত্ত্বেও তাদের জাতীয় সংগ্রামকে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় নিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে জার্মানির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জাতির মধ্যে রাজনৈতিক আত্মসংরক্ষণবোধকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং জাতীয় বিরোধী শক্তিগুলিকে জাতীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে।
জার্মানিকে সার্বভৌম ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনটিকে যদি সফল করে তুলতে হয় তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত করে তুলতে হবে। আমাদের দেশের জাতীয় বুর্জোয়ারা এমনই অপদার্থ যে তারা কোন বলিষ্ঠ অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নীতি খাড়া করতে পারেনি। আমাদের দেশের জনগণের মতকে যুদ্ধমুখী করে তোলা যায় জোর প্রচারের মাধ্যমে, কিন্তু ইহুদী ভাইয়েরা জার্মানির পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টাকে নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দেবে, যেমন তারা একদিন জার্মানির সামরিক শক্তিকে গুঁড়িয়ে দেয়। দেশে মার্কসবাদীরা সুসংগঠিত এবং তাদের সংখ্যা দেড়কোটি। এ মার্কসবাদীরা শুধু যে জাতীয় কোন বৈদেশিক নীতি খাড়া করতে দিচ্ছে না তা নয়, এরা কোনক্রমেই জার্মানিকে তার রাজনৈতিক শক্তি পুনরুদ্ধার করতে দিচ্ছে না। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই মার্কসবাদীরা এভাবে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটকথা যে সব রাজনৈতিক দলের নেতা দেশ ও জাতির সঙ্গে একইভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করছে তারা কোনক্রমেই জাতীয় পুনরুজ্জীবনের কোন প্রচেষ্টাকে সহ্য করতে পারছে না। তারা জাতির ইতিহাসে এ শিক্ষা দেয়, যারা জার্মানির এ অবস্থার জন্য দায়ী তাদের ওপর চরম প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত জার্মানি তার হারানো গৌরব পুনরায় উদ্ধার করতে পারবে না।
তাই জার্মানির সাবভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগণের মনের পরিবর্তন সাধন করে তাদের নিয়ে এক সংযুক্ত সংগ্রামী সংস্থা গড়ে তুলতে হবে।
বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যাবে জনগণ স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাসী হলে জার্মানিকে কিছুতেই বৈদেশিক বন্ধন থেকে মুক্ত করা যাবে না। অপর দিকে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বোঝা যাবে শুধু ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর নির্ভর করে বিদেশী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যায় না।
যেসব তরুণ জার্মান বুদ্ধিজীবী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগদান করে ১৯১৪ সালের ক্লাইভাসের যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেয় তাদের অভাব পরে বিশেষভাবে অনুভূত হয়। অবশ্য দেশের বিরাট সংখ্যক শ্রমিকশ্রেণী যোগদান না করলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরালো হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার জন্য অনভিজ্ঞ অশিক্ষিত শ্রমিকশ্রেণীকে উপযুক্ত সামরিক শিক্ষাদান করা উচিত। আবার ভার্সাই শান্তিচুক্তির শর্ত অনুসারে আমাদের সমগ্র জাতিকে নিরস্ত্র অবস্থায় থাকতে হয় বলে জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দান সম্ভব নয়। দেশের স্বাধীনতার পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতিও সম্ভব নয়। দেশের মধ্যে তার জন্য প্রচুর গুপ্তচর কাজ করে যাচ্ছিল। তারা আন্তর্জাতিক মার্কসবাদের দোহাই দিয়ে জাতীয় পুনরভ্যুত্থানের পথে বাধা সৃষ্টি করছিল।
এ বাধা অপসারিত করতে হলে দেশের বৃহত্তর জনসাধারণকে অবশ্যই জাতীয় স্বাধীনতার নীতিগুলোকে অন্তরের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। তারা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একাজে এগিয়ে আসে তার জন্য সর্বাগ্রে চেষ্টা করতে হবে।
জাতীয় রাজনৈতিক স্বাধীনতা আগে অর্জন না করে আমরা যদি নানারকম অভ্যন্তরীণ সংস্কারে মন দেই তাহলে সেইসব সংস্কারের সফলতা নিয়ে সেসব জাতি লাভবান হবে, যারা আমাদের দেশকে তাদের উপনিবেশ হিসাবে শোষণ করতে চায়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে যা-ই উদ্ধৃত্ত হবে, যতই দেশের সম্পদ বাড়বে ততই তাদের হাত শক্ত হবে।
এক্ষেত্রে জার্মানির কোন সাংস্কৃতিক উন্নতি বা অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ যে কোন দেশের সংস্কৃতির মান রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।