ভীতিকর কালো পাখিগুলোকে আর ছাদে দেখা গেল না। মাটিতে নেমে এসে খাবার খুঁটে খাচ্ছে।
প্রদর্শনী শেষ।
ওরা যখন নদী তীরে পৌঁছল তখন আঁধার ঘনাচ্ছে। বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। উইল তার নৌকা বেঁধে রেখে কিশোর আর জিনার সঙ্গে তীরে নামল।
অনেক ধন্যবাদ, কিশোর বলল। বাকি পথটুকু আমরা নিজেরাই যেতে পারব।
তোমরা কোথায় থাকো? উইল জানতে চাইল।
ফ্রগ ক্রীকে, জানাল জিনা।
কোন দিক দিয়ে যাবে? উইলের প্রশ্ন।
শুনলে আপনি বিশ্বাস করবেন না, বলল জিনা। আমরা দড়ির মই বেয়ে এক ট্রী হাউসে উঠব। ট্রী হাউসটা রয়েছে ওই গাছটার উপরে। তারপর একটা বই খুলে
ইচ্ছা প্রকাশ করব শুধু, বলল কিশোর। ব্যস, বইয়ে উল্লেখ করা জায়গায় চলে যাব।
উইল মৃদু হাসল।
জীবনটা বড়ই অদ্ভুত, তাই না?
হ্যাঁ! বলল জিনা।
কিশোর মাথা ঝাঁকাল। জীবনের প্রতি উইলের দৃষ্টিভঙ্গি ভাল লাগে ওর।
এক কাজ করো, বলল উইল। তোমরা না হয় এখানে থেকে যাও। গ্লোব থিয়েটারে নাটক করবে। জিনা, আমি রানীকে অনুরোধ করব মেয়েদের নাটক করার বিধি নিষেধ থেকে তোমাকে বাদ দিতে-কারণ তুমি অসম্ভব ভাল অভিনয় করো। আর আমি তোমাদের দুজনকেই নাটক লেখা শিখিয়ে দেব।
সত্যি? একসঙ্গে প্রশ্ন করল কিশোর আর জিনা।
এর চাইতে আনন্দের আর কিছু কিশোরের কল্পনায় এল না। কিন্তু তারপরই চাচা-চাচীর কথা মনে পড়ল।
কিন্তু আমাদের গার্জেনরা–বলল ও।
আমরা তাদেরকে খুব মিস করব, বলল জিনা।
মৃদু হাসল উইল।
বুঝতে পারছি, বলল সে। এবং তাদের জায়গায় আমি হলে আমিও তোমাদেরকে মিস করতাম। বুকে হাত রাখল উইল। শুভ রাত্রি, শুভ রাত্রি। বিচ্ছেদ বড় মধুর বেদনা।
ঠিক বলেছেন, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল জিনা।
বিদায়! বলল উইল। হাত নাড়ল।
কিশোর আর জিনা পাল্টা হাত নাড়ল। এবার গোড়ালির উপর ঘুরে গিয়ে নৌকার দিকে পা বাড়াল উইল।
কিশোর আর জিনা দড়ির মইয়ের কাছে এসে ট্রী হাউসে উঠে পড়ল। ভিতরে ঢুকে; জানালা দিয়ে বাইরে চাইল ওরা।
উইল বৈঠা বেয়ে ফিরে যাচ্ছে। সাদা এক রাজহাঁস পানি কেটে ওর নৌকার পাশে পাশে ভেসে চলেছে। আকাশে উঁকি দিচ্ছে রুপোলী চাঁদ।
সে মুহূর্তে, মধুর বেদনা অনুভব করল কিশোর। প্রাচীন, আনন্দময় ইংল্যাণ্ডে আরও কিছু সময় থাকতে পারলে ভাল লাগত, ওর।
দাঁড়ান, উইল! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
কিন্তু জিনা পেনসিলভেনিয়ার বইটা তুলে নিয়েছে।
আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই, বলল সে।
বাতাস বইতে শুরু করল।
ঘুরতে লাগল ট্রী হাউস।
বন-বন করে ঘুরছে।
এবার সব কিছু নিথর।
একদম স্থির।
১০
কিশোর চোখ খুলল।
ওদের পরনে এখন আবার আগের সেই পোশাক। ট্রী হাউসের ঘনায়মান আঁধারে জোনাকির ঝিকিমিকি।
জিনা মরগ্যানের চিরকুটটা তুলে নিল। ছড়াটা পুনরাবৃত্তি করল ও:
টু ফাইও আ স্পেশাল ম্যাজিক,
ইউ মাস্ট স্টেপ ইনটু দ্য লাইট
অ্যাণ্ড উইদাউট ওয়্যাণ্ড, স্পেল, অর চার্ম,
টার্ন ডেটাইম ইনটু নাইট।
আমরা স্পেশাল ম্যাজিকটা খুঁজে পেয়েছি, বলল জিনা। নাটকের জাদু!
হ্যাঁ।
কিশোর ওর ব্যাকপ্যাক খুলল। উইলের দেয়া স্ক্রল দুটো বের করে নিল। ওরা। আনরোল করার পর কিশোর দেখতে পেল উইল কিছু একটা লিখেছে। জোরে জোরে পড়ল সে:
আমাকে সাহায্য করার জন্য তোমাদের
দুজনকে ধন্যবাদ।
তোমাদের বন্ধু
–উইলিয়াম শেক্সপীয়ার
উইলিয়াম শেক্সপীয়ার! সেই বিখ্যাত নাট্যকার! বলে উঠল জিনা। বিস্মিত।
নাম আর চেহারা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল, বলল কিশোর। শেক্সপীয়ারের ছবি তো অনেক দেখেছি।
গবেষণার বইটা বের করল ও। ইনডেক্সে শেক্সপীয়ার খুঁজে নিল। একটা পৃষ্ঠা উল্টে জোরে জোরে পড়ল:
উইলিয়াম শেক্সপীয়ার (১৫৬৪-১৬১৬)। তিনি
সাঁইত্রিশটি নাটক এবং অনেক সনেট আর কবিতা
লিখে গেছেন। অনেকে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
সাহিত্যিকের মর্যাদা দেয়।
সর্বশ্রেষ্ঠ? বলে উঠল জিনা। আমাদের উইল?
উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের অটোগ্রাফের দিকে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল কিশোর।
অ্যাই, আমরা মরগ্যানের নোটের সাথে আমাদের স্ক্রল দুটো রেখে দিতে পারি, বলল জিনা। তা হলে ও জানতে পারবে আমরা বিশেষ এক জাদু খুঁজে পেয়েছিলাম।
স্ক্রল দুটো ওরা মেঝেতে চিরকুটটার পাশে রেখে দিল। এবার দড়ির মই বেয়ে নামতে লাগল।
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটছে, মৃদুমন্দ বাতাসে কেঁপে উঠল গাছের পাতা। ছায়ারা সরে সরে যাচ্ছে। পাখিরা অলক্ষে কিচিরমিচির করছে।
জাদুর বনটার কথা মনে আছে? চাপা গলায় বলল জিনা। পরী রানী আর পরী রাজার কথা?
কিশোর মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকাল।
আর পাক, রাতের বেলা মনের আনন্দে যে ঘুরে বেড়ায়? বলল জিনা। আর উইল, আমাদের উইল।
কিশোর আবারও মাথা ঝাঁকাল।
দারুণ সময় কেটেছে আমাদের, তাই না? প্রশ্ন করল জিনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর।
হ্যাঁ, বলল ও। এবার গভীর শ্বাস টানল। স্পষ্ট উচ্চারণে গলায় আবেগ ঢেলে বলল:
বড় অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখেছি আমি।
স্বপ্ন দেখেছি….