- বইয়ের নামঃ মঞ্চনাটক
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
মঞ্চনাটক
পূর্ব কথা
গরমের এক দিনে, পেনসিলভেনিয়ার ফ্রগ ক্রীক উডসে রহস্যময় এক ট্রী হাউস উদয় হয়।
তিন গোয়েন্দা হিরু চাচার বাসায় বেড়াতে এসে আবিষ্কার করে ওটা। ট্ৰী হাউসে উঠে ওরা দেখে ওটা বই দিয়ে ঠাসা।
শীঘ্রি ওরা জানতে পারে ট্রী হাউসটা জাদুর। বইতে উল্লেখ করা নানান জায়গায় ওদেরকে নিয়ে যেতে পারে। ওদেরকে শুধু কোন একটা ছবিতে আঙুল রেখে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করতে হয়। ওরা যখন অভিযানে বেরোয়, ফ্রগ ক্রীকের সময় তখন স্থির থাকে।
এক পর্যায়ে তিন বন্ধু আবিষ্কার করে ট্রী হাউসটার মালিক মরগ্যান লে ফে। রাজা আর্থারের রাজ্য ক্যামেলটের এক জাদুকরী লাইব্রেরিয়ান এই মরগ্যান। টাইম আর স্পেসে ভ্রমণ করে বই সগ্রহ করে সে।
এবার জিনার বাবা-মার সঙ্গে হিরু চাচার বাসায় বেড়াতে এসেছে। কিশোর আর জিনা।
তারপর…
১
কিশোর আর জিনা বারান্দায় বসে ছিল। গ্রীষ্মের উষ্ণ সন্ধেয় জোনাকি জ্বলছে।
আরি, উল্কা! বলে উঠল জিনা। আকাশের দিকে তর্জনী তাক করল।
মুখ তুলে চাইল কিশোর। আকাশে আঁকাবাঁকা আলোর ঝলকানিটা শেষ মুহূর্তে দেখতে পেল। ফ্রগ ক্রীক উডসের উপরে দুমুহূর্ত ঝুলে রইল আলোটা। তারপর মিলিয়ে গেল গাছের মাথাগুলোর আড়ালে।
শ্বাস চাপল কিশোর। ঘাড় কাত করে জিনার দিকে চাইল।
ওটা উল্কা না, বলল ও।
ঠিক, বলল জিনা।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ওরা। ফ্রণ্ট হল-এর ভিতর থেকে ব্যাকপ্যাক তুলে নিল কিশোর।
হিরু চাচা! আমরা একটু বাইরে যাচ্ছি, চেঁচিয়ে বলল। এখুনি ফিরব!
দেরি করিস না কিন্তু! হিরু চাচা বলল।
ঠিক আছে! বলল কিশোর। দরজা লাগিয়ে দিল। জলদি চলো!
উঠনের উপর দিয়ে আড়াআড়ি দৌড় দিল কিশোর আর জিনা। একটু পরে ছুটে চলল রাস্তা ধরে। ছুটতে ছুটতে বনভূমিতে প্রবেশ করল। সবচাইতে বড় ওক গাছটার কাছে এসে থামল। মুখ তুলে চাইল ওরা।
যা ভেবেছিলাম, বলল জিনা।
কিশোর মৃদু হাসল। মুখে কথা জোগাল না ওর।
আমাদের উল্কা, বলল জিনা। জাদুর ট্রী হাউস।
দড়ির মই চেপে ধরে উঠতে লাগল ও। অনুসরণ করল কিশোর।
ট্রী হাউসের ভিতরে ঢোকার পর দুজনেই শ্বাস চাপল। ছায়াময় এক কোণে দাঁড়িয়ে লম্বা, সাদা চুলের অপরূপা এক মহিলা।
কেমন আছ, কিশোর-জিনা? বলল মরগ্যান লে ফে।
মরগ্যান! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর আর জিনা।
মরগ্যানকে জড়িয়ে ধরল ওরা।
আপনি এখানে কেন? প্রশ্ন করল জিনা। আমাদেরকে কী করতে হবে বলুন।
তোমরা ইতিমধ্যেই আমার জন্যে অনেক করেছ, বলল মরগ্যান, এবং রাজা আর্থার আর ক্যামেলটের জন্যে। এবার আমি চাই তোমরা নিজেদের জন্যে কিছু করো। তোমরা এবার জাদু শিখবে।
বলেন কী, সোসাহে বলে উঠল জিনা। আমরা জাদুকর ইব? আপনি আমাদেরকে জাদু মন্ত্র শেখাবেন?
হেসে উঠল মরগ্যান।
কোন কোন জাদুতে মন্ত্র লাগে না, বলল সে। তোমরা পরের অভিযানগুলোয় একটা করে বিশেষ জাদু খুঁজে পাবে।
কীভাবে? কিশোরের প্রশ্ন।
গোপন এক ছড়া তোমাদেরকে প্রতিটা অভিযানে গাইড করবে, বলল। মরগ্যান। এই নাও।
জিনা মরগ্যানের হাত থেকে ছড়াটা নিয়ে জোরে জোরে পড়ল:
টু ফাইণ্ড আ স্পেশাল ম্যাজিক,
ইউ মাস্ট স্টেপ ইনটু দ্য লাইট
অ্যাণ্ড উইদাউট ওয়্যাণ্ড, স্পেল, অর চার্ম,
টার্ন ডেটাইম ইনটু নাইট।
দিনকে রাত করা? প্রশ্ন করল কিশোর, তা কীভাবে সম্ভব?
স্মিত হাসল মরগ্যান।
সেটাই তো তোমাদেরকে জানতে হবে, বলল।
কিশোরের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু ও আর কোন কথা জিজ্ঞেস করতে পারার আগেই, আকস্মিক আলোর ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে উঠল ট্রীহাউস। আলো থেকে বাঁচতে চোখ বুজে ফেলল ও। চোখ যখন খুলল, মরগ্যান লে ফে উধাও। সে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে একটা বই পড়ে রয়েছে।
মিরগ্যান আমাদেরকে সব কথা বলেনি, বলল কিশোর।
তবে এই রিসার্চ বইটা রেখে গেছে, বলল জিনা। বইটা তুলে নিল।
এটা থেকে জানা যাবে প্রথমে আমাদের কোথায় যেতে হবে। জানালার ম্লান আলোর কাছে বইটা ধরল ও।
প্রচ্ছদে দেখা গেল ব্যস্ত এক নদী, বেশ কিছু নৌকা আর একটা সেতু। শিরোনাম বলছে: মেরি ওল্ড ইংল্যাণ্ড
তারমানে আমরা জাদু খুঁজতে প্রাচীন ইংল্যাণ্ডে যাচ্ছি? বলল জিনা। শুনতে তো দারুণ লাগছে। তুমি রেডি?
হুঁ, বলল কিশোর। ও অবশ্য ভাবছিল মরগ্যানের কাছ থেকে আরও কিছু তথ্য পেলে ভাল হত। কিন্তু ও রিসার্চ বইটার প্রচ্ছদে আঙুল রাখল।
আমরা ওখানে যেতে চাই, বলল।
বাতাস বইতে শুরু করল।
ট্রী হাউস ঘুরতে লাগল।
বাতাস ক্রমেই জোরাল হচ্ছে।
এবার সব কিছু স্থির হয়ে গেল।
একদম নিথর।
২
গনগনে রোদ এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ট্রী হাউসের ভিতরে। কিশোর চোখ মেলল।
জিনার পরনে অ্যাপ্রন সহ লম্বা এক পোশাক। কিশোরের গায়ে ফোলা। হাতাওয়ালা শার্ট, নী-লেংথ প্যান্ট আর টাইটস। দুজনের পায়েই চামড়ার চটি। কিশোরের ব্যাকপ্যাক বদলে গিয়ে এখন এক চামড়ার ব্যাগ।
কাপড়গুলো অদ্ভুত, বলল কিশোর। ওর গলার স্বর চাপা পড়ে গেল নীচ থেকে আসা ওয়াগনের চাকার গুড়গুড় শব্দে।
কী হচ্ছে এখানে? জিজ্ঞেস করল জিনা।
দুজনেই বাইরে তাকাল।