- বইয়ের নামঃ পাহাড়ে আতঙ্ক
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
পাহাড়ে আতঙ্ক
১
মনে হচ্ছে জীবনেও পৌঁছতে পারব না, কিশোর, রবিন আর ডানার কাছে অভিযোগ করল মুসা।
বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কিশোর।
এরচেয়ে মরা পোকা-মাকড় খাওয়াও ভাল, বলল ও।
শশশ! সাবধান করল মুসা। মিসেস হকিন্স শুনে ফেলবেন। ওদের টিচার মিসেস হকিন্স বাসের সামনের দিকে বসা। আজ তার, পরনে নীল জিন্স আর হাইকিং বুট। তবে গলায় সবুজ লকেটটা ঠিকই ঝুলছে। বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ের ধারণা তাদের টিচার ভ্যাম্পায়ার এবং তার লকেটটার বিশেষ ক্ষমতা আছে।
ডানা চোখের উপর থেকে সোনালী চুল সরিয়ে বাসের চারধারে নজর বুলাল। রুবি মাউন্টেনে নেচার হাইকে যাচ্ছে ফোর্থ গ্রেডাররা। বাসে তিল ধারণের জায়গা নেই।
রুবি মাউন্টেনে দারুণ মজা হবে, কিশোরকে বলল ডানা।
মিসেস হকিন্স বলেছেন আজকে আমরা প্রকৃতির কাছে যাওয়ার সুযোগ পাব।
কিন্তু ওখানে আছেটা কী? বলল কিশোর। পচা-পচা কিছু গাছ আর ঝাঁকে ঝাকে মশা।
পাহাড়ের পাদদেশে এক মাটির রাস্তায় ঝাঁকনি খেতে খেতে চলেছে বাসটা। শেষমেশ ব্রেক কষে দাঁড়াল। মিসেস হকিন্স ধীরে। সুস্থে ওদের দিকে ঘুরে চাইলে ছেলে-মেয়েদের কথা বন্ধ হয়ে গেল। মিসেস হকিন্স কখনও গলা চড়ান না, কাজেই সবাইকে মনোযোগী। হতে হলো। বিজাতীয় সুরে কথা শুরু করলেন তিনি।
রুবি মাউন্টেনে গাছ-পালা, জীব-জন্তু অবাধে বাড়ছে, বললেন টিচার। এটা সবার জন্যে শান্তির জায়গা, আর আমাদের সায়েন্স ফিল্ড ট্রিপের জন্যে আদর্শ।
কিশোর গুঙিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। রবিন ওর পাজরে আলতো। কনুই মারল। মিসেস হকিন্সের চোখজোড়া ওদের উদ্দেশে ঝলসে গেল, তবে তিনি কথা থামালেন না।
আমাদের সবার ট্র্যাকে থাকাটা জরুরী। এই পাহাড়ে অনেক বুনো জন্তুর বাস। আমরা ওদেরকে বিরক্ত না করলে ওরাও আমাদেরকে কিছু বলবে না।
এবার তিনি ধীরে ধীরে বাসের সিঁড়ি ভেঙে নেমে গেলেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলের ব্যাকপ্যাক তুলে নিয়ে তার পিছনে সারি বাধল। তিন বন্ধু আর ডানা অপেক্ষা করছে বাসের পিছন দিকে।
কপাল ভাল হলে ভালুক কিংবা হরিণ দেখা যেতে পারে, বলল নথি।
ডানা বাসের জানালা দিয়ে বাইরে চাইল। ঘন বনভূমিতে লোমশ দেহ খুঁজছে ওর চোখ।
ট্রেইলে খাবার ফেলো না যেন, সাবধান করল কিশোর।
ভালুকদেরকে ভয় নেই, আশ্বস্ত করল মুসা। উঁচু-উঁচু পাইন গাছের দিকে দৃষ্টি ওর। রুবি মাউন্টেন আমার বাসার ব্যাকইয়ার্ডের মতই নিরাপদ।
২
এহ, বিশ্রী গন্ধটা কীসের? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
ডানা নাক টিপে ধরল।
বাসটা মনে হয় কোন স্কাঙ্ককে চাপা দিয়েছে।
হয় তাই, বলে নাক ঢাকল মুসা, আর নয়তো ওরা রুবি মাউন্টেনকে জঞ্জালের স্তূপ বানিয়ে ফেলেছে।
জায়গাটা আমার প্রথম থেকেই পছন্দ নয়, বলল কিশোর।
এসো, বাতলে দিল রবিন। বাস থেকে নেমে পড়ি। তাজা বাতাসে ভাল লাগবে। অন্যান্যদের পিছু পিছু বাস থেকে নেমে পড়ল। তিন গোয়েন্দা আর ডানা। কিন্তু বাইরে বেরনোর পর গন্ধটা কমল তো না-ই বরং বাড়ল।
মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে পড়ব, বাসের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল ডানা। কী জঘন্য গন্ধ!
তুমি মনে হয় সকালে গোসল করনি, ঠাট্টা করে বলল কিশোর।
ডানা জবাব দিতে যাবে, কিন্তু মিসেস হকিন্সকে ওদের দিকে চাইতে দেখে থেমে গেল।
প্রকৃতি বড়ই আজব, বললেন তিনি। গন্ধও অনেক সময় অদ্ভুত লাগে। কিন্তু যেসব জন্তু-জানোয়ার এখানে বাস করে তাদের কাছে এ গন্ধটা স্বাভাবিক।
ঠিক, অচেনা এক কণ্ঠ বলল। ছেলে-মেয়েরা ঘুরে দাঁড়াল। সবুজ প্যান্টে গোজা সবুজ শার্ট, হাইকিং বুট আর চওড়া ব্রিমের হ্যাট পরা এক মহিলাকে দেখতে পেল ওরা। কাঁধ থেকে স্ট্র্যাপে ঝুলছে ক্যামেরা। আমার নাম পপি, আমি রুবি মাউণ্টেনের পার্ক রেঞ্জার।
আমি আজকে তোমাদের হাইক গাইড করব।
আপনার সাথে ক্যামেরা কেন? প্রশ্ন করল ডানা।
আঙুলের নখ দিয়ে ক্যামেরায় টোকা দিলেন মহিলা।
হঠাৎ যদি নতুন ধরনের কোন জন্তুর দেখা পেয়ে যাই তাই।
মিসেস হকিন্স তার স্বভাবসিদ্ধ আধো হাসিটা হাসলেন।
বড় বড় রাস্তা আর শহর গড়ে ওঠার আগে নেচার কীরকম ছিল এরা তা জানতে এসেছে, রেঞ্জার পপিকে বললেন তিনি। আমরা কি এখন শুরু করব?
রেঞ্জার পপি মাথা ঝাঁকালেন।
ফলো মি, বললেন। সবাই কিন্তু ট্রেইলে থাকবে আর…অদ্ভুত কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবে।
হোঁতকা ম্যাকনামারা হাত তুলল।
অদ্ভুত কিছু বলতে?
গাছ-গাছালির জটলার দিকে চকিতে চাইলেন রেঞ্জার পপি। তারপর মৃদু হাসলেন।
আমি কিছু বলিনি। আমি শিয়োর আমাদেরকে কোন কিছু জ্বালাতন করবে না।
এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সরু ট্রেইল ধরে পা চালালেন। লম্বা-লম্বা গাছের আবছায়ায় হারিয়ে গেলেন ছেলে-মেয়েদেরকে পিছনে নিয়ে, তিন বন্ধু আর ডানা লাইনের শেষে থাকল।
উঁচু এক গাছ থেকে একটা পাখি ডেকে উঠলে চমকে উঠল কয়েকটা মেয়ে।
এরা আগে মনে হয় পাখির ডাক শোনেনি, বলল কিশোর।
অচেনা শব্দ শুনলে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক, ডানা বলল ওকে।
কালো পাখি আর মশা ছাড়া এখানে কিছুই নেই, বলল কিশোর। এগুলো বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডেই দেখা যায়। এত দূর আসার দরকার পড়ে না।