- বইয়ের নামঃ ম্যাজিক শো
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ম্যাজিক শো
১
স্টেজ থেকে আট সারি পিছনে বসেছি আমরা–আমি মুসা আমান, আমার মা-বাবা ও আমার খালাত বোন ফারিহা। স্টেজে খেলা দেখাচ্ছে জাদুকর গ্রেট ক্ল্যাণ্ড। বাড়ি আয়ারল্যাণ্ডে। পৃথিবীর নানা দেশ ঘুরে রকি বিচেও খেলা দেখাতে এসেছে। জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ঝাড়া দিল ও। চারটে ঘুঘু পাখি বেরিয়ে উড়ে গেল। একটা পাখি উড়ে এল আমাদের দিকে। রঙিন কাগজের দলা হয়ে টুপ করে ঝরে পড়ল আমার কোলের ওপর।
সত্যিই অবাক করা জাদুর খেলা। ম্যাজিক আমি অনেক দেখেছি। স্কুলের ট্যালেন্ট শোতে আমি নিজেও ছোটখাট ম্যাজিকে অংশ নিয়েছি। কিন্তু গ্রেট ক্ল্যাণ্ডরের কোন তুলনা হয় না।
রকি বিচের প্যাসিফিক থিয়েটার হলে এই ম্যাজিক দেখানোর ব্যবস্থা। করা হয়েছে। থিয়েটার হলের বাইরে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে : হুডিনির চেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ান গ্রেট ক্ল্যাক্স। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। এখন ওর খেলা দেখে বুঝলাম, ঠিকই লিখেছে। একের পর এক অসম্ভব অবিশ্বাস্য সব ম্যাজিক দেখিয়ে চলেছে ও।
শূন্য জগ দুধ দিয়ে ভরে ফেলল, সেই দুধ সাদা বল হয়ে ওপরে উঠে। গেল, ছাতে ড্রপ খেতে লাগল। জগ ওপরে তুলে বলটাকে ডেকৈ এনে আবার তাতে ভরল জাদুকর, আবার দুধ হয়ে গেল বলটা।
একটা লম্বা বেলুনকে ফুলিয়ে নিয়ে কাঁচি দিয়ে কেটে ছয় টুকরো করে ছোট ছোট বেলুন বানাল। একটা বেলুনও ফাটল না কিংবা বাতাস বেরোল না। বেলুনগুলো ছুঁড়ে দিল দর্শকদের দিকে। নেয়ার জন্য হুড়াহুড়ি লাগিয়ে দিল ছেলেমেয়েরা।
ফারিহাও একটা টুকরো কুড়িয়ে আনল। ওর হাত থেকে নিয়ে ভাল করে দেখলাম বেলুনটা। স্বাভাবিক বেলুন। কোথাও কোন ফাঁকিবাজি ধরতে পারলাম না। বাবাও দেখে অবাক হয়ে মাথা নাড়ছে। আমার মতই তারও ম্যাজিকে আগ্রহ আছে। এসব কাণ্ড কীভাবে করছে ক্ল্যাণ্ডর, বুঝতেই পারলাম না। উত্তেজনায়, আনন্দে পাগল হয়ে গেছে যেন মুগ্ধ দর্শকরা।
তাই ছোটদের মধ্য থেকে যখন একজন ভলান্টিয়ার চাইল ক্ল্যাণ্ড, জাদুর খেলায় ওকে সহযোগিতা করার জন্য, চতুর্দিক থেকে অসংখ্য হাত উঠে গেল। ওপরে, আমারটা সহ। কয়েকটা ছেলেমেয়ে তো চেয়ারে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে লাগল, ক্ল্যাণ্ডরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। কিন্তু অন্য কারও দিকে তাকাল না ও। শুরু থেকেই আমাদের ওপর নজর ছিল।
ওই ছোট্ট মেয়েটা হলে কেমন হয়, লাল টি-শার্ট পরা? ফারিহাকে দেখিয়ে বলল ও। এই মেয়ে, কী নাম তোমার?
ফারিহা, বোনের হয়ে জবাব দিলাম আমি।
হ্যাঁ, ফারিহা, স্টেজে আসবে, আমাকে সাহায্য করার জন্য? জাদুকর ডাকল।
আমি হাত তুলেছিলাম, ফারিহা তোলেনি, কিন্তু ডাক পড়ল ওরই। যেতে চাইল না ও। চেয়ারে গুটিয়ে গেল।
যাও না, অসুবিধে কী? আমি বললাম। পায়রা, টিয়া, কিছু একটা বানিয়ে দেবে। কুকুরও বানাতে পারে। তবে তাতে কোন অসুবিধে নেই। বাড়ি নিয়ে গিয়ে জেমির সঙ্গে রেখে দেব।
মুসা ভাইয়া, তুমি চুপ করবে! রেগে উঠল ফারিহা। চেয়ারে আরও নিচু করে ফেলল শরীরটা।
আপনারা কি বলেন লেডিজ অ্যাণ্ড জেন্টলম্যান? হাসিমুখে দর্শকদের জিজ্ঞেস করল জাদুকর। ছোট্ট ওই মিষ্টি মেয়েটাকে স্টেজে এনে বাতাসে উড়িয়ে দিলে কেমন হয়?
শুরু হলো চিৎকার-চেঁচামেচি। সবাই অনুরোধ করছে ফারিহাকে। বাবা ওর হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল, আরে যাও না, ও তোমাকে খেয়ে ফেলবে না। গিয়ে দেখো, মজা পাবে। তোমাকে যে ডেকেছে, এটাই তো তোমার ভাগ্য।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও সিঁড়ি বেয়ে স্টেজে উঠে গেল ফারিহা। জাদুকরের মুখোমুখি দাঁড়াল।
ফারিহা, দাঁড়িয়ে থাকো, কোন ভয় নেই! চেঁচিয়ে সাহস দিলাম ওকে।
হাত তুলে দর্শকদের চুপ করতে অনুরোধ করল গ্রেট ক্ল্যাণ্ডর। আমি এই ছোট্ট মেয়েটাকে সবার চোখের সামনে গায়েব করে দেব।
আতঙ্কিত হয়ে পড়ল ফারিহা। স্টেজ থেকে দৌড়ে পালাতে চাইল। ধরে ফেলল ক্ল্যাণ্ডর। হেসে উঠল কিছু খুদে দর্শক।
চিন্তার কিছু নেই, আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল জাদুকর। এই মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায়, একই রকম নতুন আরেকটা মেয়ে এনে দেব আপনাদেরকে।
আবার হাসি।
ঘুরে দাঁড়াল গ্রেট ক্ল্যাণ্ডর। ওর পিছনে বড় একটা কাঠের আলমারি রাখা। লাল রঙ করা। সারা গায়ে সোনালি রঙে নানা ধরনের সাঙ্কেতিক চিহ্ন আঁকা। আলমারিটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দর্শকদের দেখাল জাদুকর। কোথাও কোন। ফাঁকফোকর নেই। গায়ে চাপড় দিয়ে বোঝাল, নিরেট কাঠের তৈরি। আলমারির দরজা খুলল ও। ভিতরে কালো রঙ করা।
ফারিহার দিকে তাকাল ক্ল্যাণ্ডর। অন্ধকারকে তো ভয় পাও না তুমি, তাই না?
চোখ বড় বড় হয়ে গেল ফারিহার। না, পাই। গলা কাঁপছে ওর।
ঠিক আছে, আলোর ব্যবস্থা করছি। আস্তিন ঝুঁকি দিল জাদুকর। পরক্ষণে হাতের মুঠোয় দেখা গেল একটা টর্চ। ফারিহার হাতে দিয়ে বলল, নাও।
টর্চটা নিল ফারিহা। হাতটা কাঁপছে, পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। ভীষণ ভয় পেয়েছে ও। মনে হচ্ছে, টর্চটা ফেলে দেবে হাত থেকে।
ফারিহার হাত ধরে আলমারির কাছে নিয়ে চলল জাদুকর। গায়েব। হওয়ার আগে কাউকে কিছু বলার আছে তোমার? গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল। ও। ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ল ফারিহা। আলমারির ভিতর ওকে ঠেলে দিল ক্ল্যাণ্ডর। দরজা লাগাল না।